ভেবে দেখলাম সাইন্স, কমার্স ও আর্টসের মধ্যে সব থেকে সহজ হল সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং।
কেননা আপনি সেখানে যা নিয়ে পড়তেছেন - তা নিজ চোখে দেখতে পারতেছেন মেশিন ও কলকব্জায়। এইখানে ল্যাবে আপনি কাজ করতেছেন - শিখতেছেন সব কিছু হাতে কলমে। পরীক্ষায় উত্তরে লিখতেছেন যা দেখেছেন তা।
কমার্সের কিছু জিনিস আছে ধারনা মূলক বা কনসেপচুয়াল। অনেক ক্ষেত্রেই খালি চোখে দেখা যায় না। কিন্তু কাগজে লিখে বা হিসেব করে বুঝিয়ে দেয়া যায়।
এইবার আসি আর্টস ও হিউমানিটিজে। এই বিষয় গুলোর পুরোটাই মন ও হৃদয় দিয়ে অনুভব করার বিষয়। এইখানে যা শিখতেছেন তার কিছুই আপনি চোখে দেখবেন না। কাগজে লিখেও শিখানোর কিছু নাই এই সব বিষয়ে। এইবার যা দেখেন নাই তা বর্ণনা করে চলুন লিখিত ভাবে পরিস্কার ভাষায়। আমার মতে এইটা খুবই কঠিন ব্যাপার হওয়ার কথা।
আমাদের সময় আমরা ক্লাস এইট পর্যন্ত ইতিহাস পড়েছিলাম। যতটুকু মনে পড়ে ভূগোল ৪০, পৌরনীতি ৪০, ও ইতিহাস ২০ এই তিনটি বিষয় মিলে ১০০ নাম্বারের একটি সাবজেক্ট যার নাম ছিল সোস্যাল সাইন্স - সেই বিষয়টি পড়তে হত।
এখন স্কুল বা কলেজের কোন লেভেলে ইতিহাস পড়ানো হয় কিনা - তা আমার জানা নাই। তবে ছোটদের কথোপকথোন শুনে ইতিহাস সাবজেক্টের কোন অস্তিত্ব বর্তমানে আছে বলে মনে হয় না। এখন আমরা সবাই সাইন্স বিষয়টি আমাদের জীবনের একমাত্র সমাধান এইটা মেনে নিয়েছি।
ভেবে দেখলাম আমাকে সব থেকে বেশী ভাবিয়েছে বা যে সব প্রশ্ন মনে কষ্ট জাগিয়েছে তার সব গুলোই আর্টস ও কোন কোন ক্ষেত্রে কমার্সের। সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রবলেম গুলো যে মাথায় আসেনি তা নয়। কিন্তু অল্প চেষ্টাতে প্রশ্ন গুলোর সমাধান পাওয়া যায় এই ধারণা হয়েছে। এর উত্তর গুলো বই, নেট, ল্যাব ও ফিল্ডে কিছুদিন কাজ করলেই পাওয়া সম্ভব। এই বিষয়ের প্রশ্ন গুলো মনে কষ্ট জাগায় না। নিতান্তই পেশাগত কারণে প্রশ্ন গুলো চলে আসে। কিন্তু এর বাইরে যেসব প্রশ্ন আর্টস ও হিউমানিটিজ সাবজেক্টের তা তত সহজে পাওয়া সম্ভব নয়। অনেক ক্ষেত্রেই উত্তর গুলোতে অস্পস্টতা ও মতান্তর আছে।
এক সময় বলা হত - আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থা ব্রিটিশরা এমন ভাবে করেছিল যেন তারা তাদের অফিসে কাজ করার জন্য ভাল কেরানী পায়। আমার মনে হয় বর্তমানের এই টাকার উপর নির্ভরশীল কর্পোরেট দুনিয়া কৌশলে শিক্ষা ব্যাবস্থাকে এমন ভাবে সাজিয়েছে যেন তার কর্পোরেট অফিসের জন্য একনিষ্ঠ কর্মী পায়। এর বেশী কিছু নয়। এই জন্যই বিলিওনিয়ার ব্যাবসায়িকে অনেক উচ্চাসনে উঠিয়ে প্রচার করা হয়।
আমাদের মনে যে সব জিজ্ঞাসা ও দ্বন্দ্ব কাজ করে তার কোন সমাধান করার কোন সুযোগ পড়াশোনার কোন পর্যায়ে রাখা হয়নি। যেন সে নিজেকে চেনার ও জানার কোন সুযোগ না পায়। তার যে কিউবিকলের বাইরেও একটি জগৎ আছে তা লুকিয়ে রাখা হয়েছে সুনিপুণ ভাবে। ঠিক যেভাবে ফার্মের মুরগি বড় করা হয় ঠিক সেই ভাবেই তাকে লালন পালন করা হচ্ছে। কিছুই স্লো হবে না, সব হতে হবে স্মারটার। এইটাই আমাদের মন ও মননে গেথে দেওয়া হচ্ছে নিপুন দক্ষতায়।
(উদাহরণ স্বরূপ সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিঙয়ের কিছু কমন প্রশ্নের স্ট্রাকচার দেয়া যেতে পারে। কম্পিউটার মোবাইল সহ বিভিন্ন সামগ্রী কিভাবে কাজ করে? এই সব ক্ষেত্রে সর্ব শেষ আবিস্কার কি? সব সামগ্রীর আরো উন্নতি করা ও খরচ কমানই বিভিন্ন সাইন্স সাব্জেক্টের মূল মাথা ব্যাথা থাকে। ম্যান মেশিন ম্যাটেরিয়াল মানি ও ম্যানেজমেন্ট এর সমতা আনাতেই এর সময় চলে যায়। এই প্রশ্ন গুলো ও তার উত্তর কেবল মাত্র আমাদের পেশাগত জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে। আমাদের মানসিক ও আত্মিক উন্নয়নে এই গুলোর সমাধান কোন প্রভাব ফেলে না। আমাদের ভাবায় না বা মনে কষ্ট জাগায় না। মানুষ হিসেবে আমাদের যত ভাল ভাল অর্জন তা আর্টস ও হিউমানিটিজ সাবজেক্ট গুলোতেই শিখি। সাইন্সের সাবজেক্ট গুলো আমাদের দ্রুত করতে করতে বর্তমানে মনে হচ্ছে মানুষের থেকে রোবট ও কম্পিউটার হয়ে জন্ম নিলে সার্থকতা বেশী হত। সাইন্সের যার যে বিষয়ে বিচরণ সে সেইটা নিয়েই মেতে থাকে। কিন্তু জন্ম হওয়া মাত্রই বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক গন্ডির বাইরে সব মানুষেরই মনে কমন কিছু প্রশ্ন জাগে। যা কিনা আর্টস ও হিউমানিটিজ বিষয়ে আলোচ্য। এই বিষয় গুলো পড়ার সময় নিজেদের মানুষ হিসেবে খুঁজে পাই। অপরপক্ষে সাইন্সের বিষয়ে আমরা কেবল মাত্র যন্ত্রপাতির স্তুতি করা শিখি। অথচ এই গুলো ছাড়া অসংখ্য মানুষ হাজার বছর পার করেছে এবং করে যাচ্ছে।
অথচ আমরা ধীরে ধীরে নিজেদের গুরুত্ব কমাতে কমাতে নিঃশেষ করে ফেলতেছি।)