আখেরাতের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবেদুনিয়ার জীবনের জন্য প্রতিটি মানুষকে আখেরাতের জীবনে হিসাব দিতে হবে। দুনিয়ার জীবনে তারা আখেরাতের জীবনের জন্য যে সঞ্চয় করবেন তার ভিত্তিতে তারা জান্নাতের দ্বারা পুরস্কৃত হবেন। দুনিয়ার জীবনে যারা সে সঞ্চয় অর্থাৎ ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানে ব্যর্থ হবেন তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি। হজরত আসমা (রা.) বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে শুনেছি, কিয়ামতের দিন সব মানুষ এক স্থানে জমা হবে এবং ফেরেশতারা যে কোনো আওয়াজই দেবেন সবাই তা শুনতে পাবে। ওই সময় ঘোষণা করা হবে কোথায় ওইসব লোক, যারা সুখ-দুঃখ সর্বাবস্থায় আল্লাহতায়ালার প্রশংসা করত, তা শুনে একদল উঠবে এবং বিনাহিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আবার ঘোষণা করা হবে কোথায় ওইসব লোক যারা সারা রাত জেগে থেকে আরামের বিছানা ত্যাগ করে ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকত, অতঃপর এক জামাত উঠবে এবং বিনাহিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আবার ঘোষণা করা হবে কোথায় ওইসব লোক, যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বেচাকেনা অবস্থায় আল্লাহ স্মরণ হতে গাফেল করত না। অতঃপর এক জামাত উঠবে এবং বিনাহিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অন্য হাদিসে এ ঘটনার সঙ্গে এও বর্ণিত হয়েছে যে, তখন ঘোষণা করা হবে, আজ হাশরবাসী দেখতে পাবে যে সম্মানিত লোক কারা? আরও ঘোষণা করা হবে কোথায় ওইসব লোক, যাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যস্ততা আল্লাহর জিকির ও নামাজ থেকে বাধা দিত না। যখন এসব লোক বিনাহিসাবে মুক্তি পেয়ে যাবে তখন জাহান্নাম থেকে একটি লম্বা গর্দান বের হয়ে লোকদের ডিঙিয়ে চলে আসবে। তার দুটি উজ্জ্বল চক্ষু থাকবে এবং তার ভাষা খুবই স্পষ্ট হবে।
সে বলবে, আমি ওইসব লোকের ওপর নিযুক্ত হয়েছি, যারা অহংকারী ও বদমেজাজি এবং সমবেত লোকদের মধ্য থেকে তাদের এমনভাবে বেছে নেবে যেভাবে পশুপক্ষী তাদের খাদ্য বেছে নেয়। তাদের বেছে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। অতঃপর এরূপ দ্বিতীয়বার বের হয়ে বলবে, এবার আমি ওইসব লোকের ওপর নিযুক্ত হয়েছি, যারা আল্লাহ ও তার রসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে কষ্ট দিয়েছে। তাদেরও দল হতে বেছে নিয়ে যাবে। অতঃপর তৃতীয়বার বের হয়ে আসবে এবং এবার ছবি অঙ্কনকারীদের বেছে নিয়ে যাবে। এই প্রকারের লোক ময়দান থেকে পৃথক হওয়ার পর হিসাব-নিকাশ আরম্ভ হবে। (শু’আবুল ইমান [বায়হাকী] ৩/১৬৯ হা. ৩২৪৪, ৩২৪৫, তাম্বীহুল গাফেলীন ২৩৫)। কিয়ামতের দিন বা আখিরাতের জীবনে জান্নাত লাভ করতে চাইলে বা জাহান্নাম থেকে রেহাই পেতে চাইলে দুনিয়ার জীবনে তাকওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানে ব্রতী হতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সে তাওফিক দান করুন।