আপনি কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। পাওনা ছুটি জমিয়ে না রেখে নিয়ে নেন প্রায়ই। বিস্তর আড্ডা দেন, পরিবারকে সময় দেন। আড্ডার মধ্যে আপনি আপনার কাজের ক্ষেত্রে ভালো আইডিয়া পেয়ে যেতে পারেন। অর্থাৎ ছুটি নেওয়ার মাধ্যমেই কর্মক্ষেত্রে আপনি অবদান রাখতে পারেন।
শ্রম ও উৎপাদনশীলতা সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মঘণ্টা বেশি হলেই উৎপাদনশীলতা বাড়ে তো নাই-ই, বরং কাজের মান খারাপ হয়। অতিরিক্ত কাজ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় এবং বোধবুদ্ধি ও সৃজনশীলতা নষ্ট করে। অতিরিক্ত কাজে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ার হার ধূমপানের সমান। অতিরিক্ত কাজের কারণে জাপানে অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটে, যা ‘কারোসি’ নামে পরিচিত।
আর কাজের ক্ষেত্রে বিরতি নিলে মনোযোগ ধরে রাখা যায় এবং কর্মদক্ষতা বাড়ে। আর পরিপূর্ণ বিশ্রাম বলে কিছু নেই। কেননা, মস্তিষ্ক সব সময় সচল থাকে। আমরা যখন বিশ্রামে থাকি, তখন মস্তিষ্কের একটি অংশ সক্রিয় হয়, যা ডিফল্ট মোড নেটওয়ার্ক (ডিএমএন) নামে পরিচিত। মস্তিষ্কের এই অংশ সৃজনশীলতার জন্মস্থান।
লেখক জোস ডেভিস তাঁর ‘দারুণ দুই ঘণ্টা’ (টু অসাম আওয়ার্স) গ্রন্থে মানসিক কাজের বিষয়ে উল্লেখ করেছেন, ধরা যাক, আপনি বিরাট কোনো কর্মযজ্ঞ সাধন করতে চান, যে কাজ শারীরিক নয়, মানসিক। সবচেয়ে কার্যকর পন্থায় আপনি যদি কাজটি করেন, তবে হয়তো বিরতি ছাড়াই অনেকে কষ্টে একবারেই আপনি কাজটি করতে পারেন। কিন্তু এর পরিবর্তে আপনি যদি অন্য কাজের মধ্যে অল্প অল্প করে কাজটি করতে থাকেন, তবে হয়তো কয়েক সপ্তাহেই কাজটি হয়ে যাবে কোনো কষ্ট ছাড়াই। ডেভিস বলেন, ‘আসলে মস্তিষ্ক অনেকটাই মাংসপেশির মতো।’
আমাদের অনেকেই মনে করেন, মস্তিষ্ক মাংসপেশির মতো নয়, মস্তিষ্ক কম্পিউটারের মতো নিরবচ্ছিন্ন কাজ করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধারণা কেবল মিথ্যাই নয়, বিরতি ছাড়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করলে তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ‘অটোপাইলট’ গ্রন্থের লেখক অ্যান্ড্রিউ স্মার্ট বলেন, ‘নিরবচ্ছিন্ন কাজ করলে ধীরে ধীরে মানসিক চাপ তৈরি হতে থাকে। এরপরও কাজ অব্যাহত থাকলে তা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।’
এক গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা হৃদ্রোগের ঝুঁকি ৪০ শতাংশ বাড়ায়। আর ধূমপানের ফলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ে ৫০ শতাংশ। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা দীর্ঘ সময় কাজ করেন, তাঁদের স্ট্রোকের চরম ঝুঁকি রয়েছে। যাঁরা দিনে ১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন, তাঁরা সাত-আট ঘণ্টা কাজ করা ব্যক্তিদের তুলনায় আড়াই গুণ বেশি অবসন্নতায় ভোগেন। এ ক্ষেত্রে জাপানিদের উদাহরণ দেওয়া যায়। অতিরিক্ত কাজের কারণে জাপানে মৃত্যুর ঘটনা খুবই সাধারণ বিষয়। তাই দেশটিতে ‘কারোসি’ নামে এর স্বতন্ত্র একটি সংজ্ঞার জন্ম হয়েছে। ২০১৫ সালে কারোসিতে (বেশি কাজের ফলে) মারা যায় ২ হাজার ৩১০ জন জাপানি।
http://www.prothom-alo.com/international/article/1389806/%E0%A6%85%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9F-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%A4%E0%A6%BF