১৫ বছর আগে আমার ভাগ্নি ক্লাস ওয়ানে পড়তো। কুমিল্লা থেকে ছুটিতে বেড়াতে এসেছিল। তাকে নিয়ে যখন বাইরে যেতাম রাস্তার পাশের কোন দেওয়ালে কোন লেখা দেখলেই দাঁড়িয়ে যেত - বানান করে পড়তো লেখা গুলো। খুব মজা লাগতো আমার। তখন আবার সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন সামনে ছিল। তাই দেওয়াল লিখনের অভাব ছিল না।
এরপর আমার ছেলে পড়া শিখলো। সেও রাস্তায় বের হয়ে দেওয়ালের লেখা পড়ার জন্য দাড়িয়ে যেত। একই ভাবে বানান করে পড়ে চলতো লেখা গুলো। এছাড়াও বাসার ভিতরের দেওয়ালে চলত তার স্কুলের লেখা ও ছবি আঁকা। এমন কোন বাচ্চা নাই যে ছোট বেলায় দেওয়ালে লিখে নাই বা ছবি আকে নাই। আমার ছেলে কিছুটা বড় হয়েছে। বাসা রং করা হয়েছে। এইবার আমার মেয়ে লেখা শিখেছে। সেও লিখে চলে দেওয়ালে। তাই আবার বাসা রং করার সময় এসেছে।
প্রথমবার আমাদের বাসা রং করার পর মন কিছুটা খারাপ হয়েছিল। কেননা ছোটদের লেখা যেমন দেওয়ালে ছিল - তেমন কোন জায়গায় হয়ত আমাদের ছোট বড় সবার উচ্চতার দাগ কাঁটা ছিল। বাসা রং করার পর মনে হল সুন্দর হলেও অনেক স্মৃতি চিহ্ন হারিয়ে গেছে। বারান্দার রং সাদা থেকে ধূসর করায় আলোও কিছুটা কম ও পরিবর্তিত হয়েছিল। নতুনের মাঝে কি এক বিষাদ কাজ করতেছিল আমার মনে।
১৫ - ১৬ বছর আগে এয়ারপোর্ট পার হওয়ার সময় একটি লেখা দেখতাম "অপেক্ষায় - নজির"। পেপারেও লেখা হয়েছিল এই দেওয়াল লিখনটি নিয়ে। রহস্যের অন্ত ছিল না - কে এই নজির? কিসের জন্য তার অপেক্ষা?
সময় চলে যায়। কিন্তু ফিরে ফিরে আসে দেওয়াল লিখন। বাসার ভিতরের দেওয়াল লিখন একটি পরিবারের বিভিন্ন স্মৃতির চিহ্ন বহন করে। তেমন একমাত্র দেওয়ালই সাক্ষী থাকে একটি দেশের কালপরিক্রমার।
(আমার আগের ফেসবুক পোস্ট থেকে।)