ক্যাস্টর অয়েল এর কিছু অজানা উপকারিতা

Author Topic: ক্যাস্টর অয়েল এর কিছু অজানা উপকারিতা  (Read 735 times)

Offline saima rhemu

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 237
  • Test
    • View Profile
ক্যাস্টর অয়েল চুল পড়া রোধে অত্যন্ত উপকারী, একথা মোটামুটি আমরা সবাই জানি। সেই দাদী- নানীদের আমল থেকে নিয়ে আজও চুল পড়া বা চুল দ্রুত বড় করার মহৌষধ হল ক্যাস্টর অয়েল বা রেড়ির তেল। আজকাল প্রায় সবার বাসাতেই শোভা পায় ছোট্ট, কাঁচের বোতলে রাখা এই তেল। কিন্তু আমরা কি এটা জানি, যে ক্যাস্টর অয়েল শুধু চুল পড়াতেই নয় বরং এর রয়েছে আরও অসংখ্য অজানা উপকারিতা?  চলুন জেনে নিই, চুল পড়া রোধ করা ছাড়া আর কী কী উপকারিতা রয়েছে এই বিশেষ তেলটির?

ছোট্ট শিশুদের পেটব্যাথা  উপশমে

জন্মের পর প্রথম কয়েক মাস অনেক বাচ্চাই প্রচুর কাঁদে। কোন কোন বাচ্চা টানা ৩/৪ ঘণ্টাও কেঁদে থাকে, যাদের বলা হয় “কলিক বেবি”। যদিও এই কান্নার পেছনের কারণ এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি, তবে চিকিৎসকেরা সবচেয়ে বেশি  ধারণা করেন যে, গ্যাসের কারণে সৃষ্ট পেট ব্যাথাই শিশুর এহেন অস্বাভাবিক কান্নার কারণ। এক্ষেত্রে ক্যাস্টর অয়েল এর ভূমিকা অভিনব! সামান্য ক্যাস্টর অয়েল গরম করে বাচ্চার পেটে মালিশ করে দিন। ক্যাস্টর অয়েল এ রয়েছে নিদ্রাসহায়ক ও ব্যথা উপশমকারী উপকরণ, যা দ্রুত শিশুকে ব্যাথা থেকে মুক্তি দেয়।

ত্বকের পিগমেন্টেশন কমাতে

আমরা অনেকেই অসম রঙের ত্বক এর সমস্যায় ভুগে থাকি, যাকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় “পিগমেন্টেশন”। এতে ত্বকের কোন জায়গায় রঙ হালকা আবার কোন জায়গায় অপেক্ষাকৃত কম হালকা হয়ে থাকে, অনেকের জন্য এই সমস্যা প্রায় বিব্রতকর পর্যায়ে চলে যায়, বিশেষত যদি মুখে এই সমস্যা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেশি থাকে। ক্যাস্টর অয়েল এ রয়েছে ফ্যাটি এসিড, বিশেষত অমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, যা ত্বককে আর্দ্র রাখার পাশাপাশি ত্বক এর উপকারী টিস্যু গুলোর বিকাশ অক্ষুন্ন রাখে,যাতে করে আপনি পাবেন দাগহীন, উজ্জ্বল ত্বক। সেজন্যই আজকাল চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরাও ত্বকের পিগমেন্টেশন কমাতে ক্যাস্টর অয়েল এর ব্যবহার এর উপর বেশি করে গুরুত্ব দিচ্ছেন।

মেকাপ রিমুভার হিসেবে

মেকাপ তুলতে  কী ব্যবহার করেন আপনি? নিশ্চয়ই  ফেসিয়াল ক্লিঞ্জার বা অন্য কোন মেকাপ রিমুভিং প্রোডাক্ট? ওগুলোতে নানান ক্ষতিকর কেমিক্যাল তো থাকেই, সেই সাথে ত্বককে রুক্ষ-শুষ্ক করে ফেলে। তাই সবচেয়ে ভালো হয়, এক্ষেত্রে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করে থাকলে। খরচও বাঁচে, সেই সাথে বাড়তি পাওনা- সুন্দর, মসৃণ ত্বক। অল্প একটু ক্যাস্টর অয়েল হাতে নিয়ে আলতো মাসাজ করুন মুখে। নরম কাপড় কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে এবার মেকাপ তুলে নিন। এভাবে ততবার করুন, যতক্ষণ মেকাপ পুরোপুরি উঠে না যাচ্ছে। আবার জোরে ঘষতে যাবেন না যেন! এতে হিতে বিপরীত ফল হবে। মেক-আপ তোলা হয়ে গেলে দেখুন তো আয়নায়, আপনাকে কত সতেজ দেখাচ্ছে!

চোখের পাপড়ি ঘন করতে

যাদের চোখের পাপড়ি হালকা এবং ছোট, তাদের জন্য ম্যাজিক এর মতো কাজ করে ক্যাস্টর অয়েল। শেষ হয়ে যাওয়া মাস্কারার ব্রাশ ক্যাস্টর অয়েল  চুবিয়ে নিন। এবার চোখের পাপড়িতে আলতো ব্রাশ করুন। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে এই কাজটি করুন অন্তত দু’ মাস।  ফলাফল দেখতেই পাবেন! এক’ই পদ্ধতিতে ভ্রুও ঘন করা সম্ভব। তবে একটা কথা, এক্ষেত্রে রাতারাতি ফল আশা না করাই ভালো।

আরথ্রাইটিস এর ব্যথা কমাতে

আগেই বলেছি ক্যাস্টর অয়েল এ আছে ব্যথা উপশমকারী উপাদান। আর তাই আরথ্রাইটিস এর সমস্যায় যারা ভুগছেন, তারা এই টিপস কাজে লাগিয়ে দেখতে পারেন। এতে লাভ হোক চাই না হোক, ক্ষতি অন্তত নেই। ক্যাস্টর অয়েল এর সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ হলুদ গুড়ো মিশিয়ে ব্যাথার জায়গায় মালিশ করুন। ব্যথা কমবে অনেকটাই। ক্যাস্টর অয়েল শরীরের থাইমাস গ্ল্যান্ড কে জাগিয়ে তোলে আর সেই সাথে এক বিশেষ ধরণের শ্বেত রক্ত কণিকার বিকাশ ঘটায়, যা শরীরের বিভিন্ন গিঁটে আড়ষ্টতা কাটিয়ে স্বাভাবিকভাবে নড়াচড়ায় সাহায্য করে।

ত্বক ফেটে যাওয়া রোধে

গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত পেটে ক্যাস্টর অয়েল মাসাজ করুন, তাহলে গর্ভ পরবর্তী কালীন সময়ে ত্বক এ ফাটা দাগ পরবে অনেক কম।

ত্বকের বলিরেখা দূর করতে

ক্যাস্টর অয়েল এ আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন – ই, যা ত্বকের ইলাস্টিন ও কোলাজেন বৃদ্ধিতে সহায়ক। এই দুটি উপাদানই মূলত আমাদের ত্বকের তারুণ্য ও সজীবতা ধরে রাখে। ক্যাস্টর অয়েল এর প্রলেপ ত্বক খুব দ্রুত শুষে নিতে পারে, যাতে করে ত্বক এ আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়, আর সেই সাথে সূক্ষ্ম বলিরেখাগুলো সহজে ছাপ ফেলতে পারে না।  এর সুফল পেতে প্রতিদিন আপনার মুখ ভালো কোন ফেসিয়াল ক্লিঞ্জার দিয়ে পরিষ্কার করে নিন, এরপর মুখ শুকিয়ে গেলে টোনার ব্যবহার করুন। (এক্ষেত্রে গোলাপজল উপকারি) এবার হাতের তালুতে একটু ক্যাস্টর অয়েল নিয়ে দু’হাতে ঘষে নিন, যাতে হাতেই তেলটা উষ্ণ হয়ে ওঠে। এরপর মুখে ম্যাসাজ করে নিন। প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এটি করে দেখুন আর হয়ে যান চিরসবুজ!

পেট পরিষ্কার রাখতে

এসিডিটি আর হজম এর সমস্যায় ম্যাজিক এর মতো কাজ করে ক্যাস্টর অয়েল ও গরম পানির মিশ্রণ। ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া গুলোকে ধ্বংস করে উপকারী ব্যাকটেরিয়া জন্ম দেয়, যা পরিপাকে খুব সাহায্য করে। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় খুব জনপ্রিয় এই পদ্ধতি। এক কাপ গরম পানিতে এক টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েল নিয়ে ভালোভাবে মেশান। দিনে দু’বার পান করুন। হ্যাঁ, গর্ভবতী মায়েরা ভুলেও ডাক্তার এর পরামর্শ ছাড়া ক্যাস্টর অয়েল সেবন করবেন না। ত্বক বা চুল এর যত্নে বাহ্যিক ব্যবহার অবশ্যই করতে পারেন, তবে সেবন এর মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই গর্ভবতী মায়েদের এই ঝুঁকি না নেয়াই ভাল।

ক্যাস্টর অয়েল এর অশেষ উপকারিতার কথা আসলে বলে শেষ করা যাবে না। যতই এর গন্ধ আপনার কাছে বিরক্তিকর লাগুক না কেন, বা এর আঠালো ভাব থেকে আপনি ১০০ হাত দূরে থাকুন না কেন, দিনশেষে ক্যাস্টর অয়েল যে কম খরচে অসাধারণ উপকার দেয়, একথা কিন্তু মানতেই হবে! এইসব অসামান্য উপকারিতার জন্যই তো যুগ যুগ ধরে ক্যাস্টর অয়েল ওষুধ বা প্রসাধনী তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে ব্যবহার এর আগে কব্জিতে সামান্য একটু ক্যাস্টর অয়েল লাগিয়ে আগেয় নিশ্চিত হয়ে নেবেন যে এতে আপনার কোন অ্যালার্জি হবার আশঙ্কা নেই, তারপর ব্যবহার করুন অনায়াসে।
Saima Amin
Assistant Coordination Officer
Department of Architecture
Email: archoffice@daffodilvarsity.edu.bd
Cell: 01847140045, Ext: 299