বন্য প্রাণী ও পাখি সংরক্ষণের দায়িত্ব কার?

Author Topic: বন্য প্রাণী ও পাখি সংরক্ষণের দায়িত্ব কার?  (Read 1051 times)

Offline kekbabu

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 78
  • Test
    • View Profile
    • https://daffodilvarsity.edu.bd/
বন্য প্রাণী ও পাখি সংরক্ষণের দায়িত্ব কার?
ড. কুদরাত-ই-খুদা বাবু          ১৫ মার্চ, ২০১৮ (কালের কণ্ঠ)

 
আমাদের দেশে বন্য প্রাণী ও পাখি শিকার, নিধন ও পাচারের ঘটনা নতুন কোনো বিষয় নয়। বরং পত্রিকার পাতা খুললে প্রায়ই দেখা যায় নানা ধরনের বন্য প্রাণী ও পাখি শিকার, নিধন ও পাচারসংক্রান্ত খবরাখবর। সমাজের এক শ্রেণির অসাধু, অর্থলোভী, অসচেতন ও ‘শিকারপ্রিয়’ লোকজন এসব বন্য প্রাণী ও পাখি শিকার, পাচার ও নিধনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বন্য প্রাণী ও পাখি শিকার, পাচার ও নিধনের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা না নেওয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সচেতনতার অভাবে দেশে বন্য প্রাণী ও পাখি শিকার, পাচারসহ নিধনের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বন বিভাগের গবেষণা ও পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী গত সাত বছরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ৪২ হাজার বন্য প্রাণী পাচারের সময় আটক হয়েছে। এর মধ্যে সুন্দরবনের ১৩টি বাঘসহ বাঘের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রয়েছে। পাচার হওয়া প্রাণীদের মধ্যে সুন্দরবনের বাঘ, হরিণ, সাপ, তক্ষক, কচ্ছপের পরিমাণ বেশি। এসব বন্য প্রাণীর একটি অংশ দেশের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য এবং বাকিগুলো দেশের বাইরে পাচারের চেষ্টা হচ্ছিল। তবে খোঁজ নিলে দেখা যাবে, দেশের ভেতরে যেসব বন্য প্রাণী হত্যা ও পাচার হয়, তার বড় অংশই ধরা পড়ে না এবং এগুলো বিদেশে পাচার হয়।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশের কোন এলাকা থেকে কোন ধরনের বন্য প্রাণী পাচার হয়, তা নিয়ে যৌথভাবে একটি গবেষণা চূড়ান্ত করে ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটি (ডাব্লিউসিএ) বাংলাদেশ এবং ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্স (সিসিএ)। ‘বাংলাদেশের বন্য প্রাণী পাচারের বিরুদ্ধে লড়াই : বর্তমান অবস্থা ও পরবর্তীতে করণীয়’ শীর্ষক ওই গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া বন্য প্রাণীদের একটি বড় অংশের উৎস সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী দুই বিভাগ খুলনা ও বরিশাল। এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকার আশপাশের বনাঞ্চল থেকে বন্য প্রাণী পাচার হয়। পাচার হওয়া বন্য প্রাণীর ৮২ শতাংশই হরিণ। এ ছাড়া রয়েছে তক্ষক, সাপ, কচ্ছপ ও বাঘজাতীয় প্রাণী। বিশ্ব বন্য প্রাণী তহবিলের হিসাব অনুযায়ী ১৯০০ সালে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা ছিল প্রায় এক লাখ। ২০১৪ সালে তা কমে চার হাজারে নেমে আসে। বাংলাদেশে ২০০৪ সালে পায়ের ছাপ গুনে বাঘের সংখ্যা নির্ণয় করার জরিপে বলা হয়, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৪৪০। বলা বাহুল্য, বন্য প্রাণী ও পাখি আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। দিন দিন অব্যাহতভাবে বন্য প্রাণী ও পাখি শিকার ও নিধনের ঘটনা ঘটতে থাকলে তা আমাদের পরিবেশের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আর এর কুফল ভোগ করতে হবে আমাদের সবাইকে। নির্বিচারে বন্য প্রাণী ও পাখি শিকারের ফলে আমাদের দেশ থেকে দ্রুত বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। Red Book of The Threatened Animals : IUCN-Bangladesh নামক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, বিগত শতাব্দীতে এ দেশের বনাঞ্চল থেকে প্রায় এক ডজনেরও বেশি প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এক হিসাবে দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রায় ৩৮৮ প্রজাতির দেশীয় পাখি রয়েছে। এ ছাড়া শীতকালে প্রায় ২৪০ প্রজাতির অতিথি পাখি প্রতিবছর বাংলাদেশে আসে। কিন্তু নির্বিচারে বনভূমি উজাড়, জলাশয় ভরাট, পাখি শিকার এবং পরিবেশদূষণের সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় নানা জাতের পাখি যেমন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, তেমনি অতিথি পাখির আগমনও উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাচ্ছে। অথচ দেশীয় এবং অতিথি পাখি আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বন্য প্রাণী ও পাখি সংরক্ষণের জন্য দেশে অনেক আগে থেকেই আইন রয়েছে। ব্রিটিশ আমলেও এ সম্পর্কিত বিশেষ আইন ও বিধিমালা ছিল। এ আইনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে Act for the Preservation of Wild Elephants, 1879; The Wild Birds and Animals Protection Act, 1912; The Bengal Rhinoceros Preservation Act, 1932 প্রভৃতি। এ ছাড়া The Indian Forest Act, 1927-এর মাধ্যমে কোন কোন বনাঞ্চলে শিকার করা যাবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত বিধিবিধান করা হয়েছিল এবং সে অনুযায়ী সরকারকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। এ আইনটি বাংলাদেশে The Forest Act, 1927 নামে কার্যকর আছে। পাশাপাশি দেশে ‘বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২’ নামেরও একটি আইন আছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অজ্ঞাত কারণে এসব আইন বন্য প্রাণী সংরক্ষণে বিশেষ কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি কিংবা পারছে না। ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশের মাধ্যমে Bangladesh Wildlife (Preservation) Act পাস করা হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৪ সালে এ আইনের কিছু সংশোধন করা হয়। এ আইনটির মাধ্যমে Bangladesh  Wildlife Advisory Board গঠনসহ ন্যাশনাল পার্ক ঘোষণা ও প্রাণী অভয়ারণ্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এ আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা ধরনের শাস্তি ও জরিমানার ব্যবস্থা। ভ্রাম্যমাণ আদালত স্থাপন, সরকারি কর্মকর্তাদের দায়দায়িত্বসহ বন্য প্রাণী সংরক্ষণের বিভিন্ন বিধি-বিধান বর্ণনা করা হয়েছে আইনটিতে। কোনো বন্য প্রাণীর বৃদ্ধি যদি সেই এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় হুমকি হিসেবে দেখা দেয়, অথবা কোনো বন্য প্রাণী যদি মানুষের জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়। তবে সেই ধরনের প্রাণী হত্যা করা যাবে। আইনের দ্বিতীয় তফসিলে কিছু প্রাণীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলোর চামড়া আইনগত সার্টিফিকেট ছাড়া কোনোভাবেই দখলে রাখা যাবে না। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি যদি সরকারের পূর্বানুমতি ছাড়া ঘরের শোভা বৃদ্ধি করার জন্য হরিণ বা বাঘের চামড়া দেয়ালে টাঙিয়ে রাখেন, তবে তা বেআইনি হবে। তৃতীয় তফসিলে ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪৬১ প্রজাতির পাখি এবং ৬৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে; যেগুলো সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা হবে এবং এগুলো কোনোভাবেই শিকার, হত্যা বা ধরা যাবে না। এ প্রাণীগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাঘ, চিতাবাঘ, ভালুক, বনরুই, উল্লুক, লজ্জাবতী বানর, হাতি, হনুমান, চিত্রা হরিণ, মায়ামৃগ, কুমির, শকুন, বাজ, ধনেশ, মদনটাক, নীলকণ্ঠ, বেগুনি কবুতর, লাল ঘুঘু, ময়ূর, কোকিল ইত্যাদি। আইনটির ১৩ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি সরকারের অনুমতি ছাড়া বন্য প্রাণী আমদানি বা রপ্তানি করতে পারবে না। ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি পেশা বা ব্যবসা হিসেবে বন্য প্রাণী ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে না, করলে ছয় মাসের জেলসহ জরিমানা হবে। আবার কোনো ব্যক্তি আগ্নেয়াস্ত্র কিংবা ফাঁদ বা অন্য কোনো উপায়ে বন্য প্রাণী শিকার করলে তার এক থেকে দুই বছরের জেলসহ জরিমানা হবে।
দেশে বন্য প্রাণী ও পাখি সংরক্ষণের জন্য আইন ও বিধিবিধান থাকলেও সেগুলো পর্যাপ্ত লোকবল সংকট, সচেতনতা, তদারকি ও জবাবদিহির অভাব; রাজনৈতিক প্রভাবসহ নানা কারণে কার্যকর হচ্ছে না। ফলে দিন দিন দেশে বন্য প্রাণী ও পাখি শিকার ও নিধনের ঘটনা বেড়েই চলেছে, যা পরিবেশের জন্য এক অশনিসংকেতই বটে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ জরুরি ভিত্তিতে এসব বন্য প্রাণী ও পাখি সংরক্ষণের জন্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ জরুরি। প্রয়োজন বন্য প্রাণী অপরাধ দমন বিভাগকে জরুরি ভিত্তিতে শক্তিশালী করা। সর্বোপরি সরকার, বন বিভাগ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ সবারই এ ক্ষেত্রে দ্রুত একযোগে এগিয়ে আসা প্রয়োজন; যেন বাংলার এই সবুজ প্রাকৃতিক ভূমি বন্য প্রাণী ও পাখিদের জন্য নিরাপদ অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
kekbabu@yahoo.com

Link: http://www.kalerkantho.com/print-edition/sub-editorial/2018/03/15/613446
Dr. Kudrat-E-Khuda (Babu).
Associate Professor (Dept. of Law), Daffodil International University;
International Member of Amnesty International;
Climate Activist of Greenpeace International; Column Writer;
Mobile Phone: +8801716472306
E-mail: kekbabu.law@diu.edu.bd

Offline Sharminte

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 352
  • Test
    • View Profile
Sharmin Akter
Lecturer
Department of Textile Engineering
Permanent Campus
Email: sharmin.te@diu.edu.bd