নিয়ম মেনে ডায়েট

Author Topic: নিয়ম মেনে ডায়েট  (Read 878 times)

Offline Mafruha Akter

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 309
    • View Profile
নিয়ম মেনে ডায়েট
« on: March 21, 2018, 10:45:47 AM »
অধিকাংশ মানুষই ডায়েটের সঠিক নিয়ম না জেনে ওজন কমানোর চেষ্টা করেন। এতে নানারকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

অনেকের ধারণা কম খেলে বা একবেলা না খেয়ে ডায়েট করা যায়। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।

পুষ্টিবিদদের মতে, ডায়েটের জন্য মৌলিক খাদ্যগোষ্ঠী অর্থাৎ কার্বোহাইড্রেট, তেল-চর্বি, প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ উপাদান ও পানি– এই সব কয়টি উপাদান নিয়মিত গ্রহণ করতে হবে। ব্যক্তির বয়স, উচ্চতা, ওজন, পরিশ্রমের ধরণ ও শারিরিক অবস্থার ভেদে খাদ্যের এক একটি উপাদান গ্রহণের পরিমাণের পার্থক্য ঘটতে পারে। তবে অবশ্যই খাদ্যের ছয়টি উপাদানই খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।

বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ফারাহ মাসুদা বলেন, “ডায়েট মানে না খেয়ে থাকা নয়। ডায়েট অর্থ পরিমিত খাওয়া ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। সঠিকভাবে ডায়েট করতে হলে অবশ্যই পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। এর মধ্যে সময়মত খাবার খাওয়া অন্যতম। তাছাড়া খাবার তৈরির শুরু থেকে খাবার খাওয়া পর্যন্ত সকল পর্যায়েই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।”

তার মতে, স্বাস্থ্য সচেতন হতে হলে সময় সচেতনও হতে হবে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার ২০ মিনিটের মধ্যে নাস্তা শেষ করা উচিত। দুপুরের খাবার ১টা থেকে ২টার মধ্যে খাওয়া ভালো।

তিনি আরও বলেন, “বেশি রাতে খাবার খাওয়া মানুষের মোটা হওয়ার জন্য দায়ী। তাই সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে নেওয়া উচিত। রাতের খাবার গ্রহণ ও ঘুমের সময়ের মাঝে দূরুত্ব যত বাড়বে খাবার তত ভালোভাবে হজম হবে।”

আর রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধ পান করলে শরীর সঠিকভাবে পুষ্টি লাভ করবে বলে জানান তিনি।

ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য শাকসবজি ও শস্যজাতীয় খাবার বেশ উপকারী। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় নানাধরণের সবজি ও অন্তত এক প্রকারের শাক রাখা উচিত।

যাদের হজমে সমস্যা আছে তারা রাতে শাক না খেয়ে দিনের খাদ্য তালিকায় শাক রাখতে পারেন। শাক খাওয়ার পরিমাণ বাড়ানো ত্বক, চুল ও হজমক্রিয়ার জন্য বেশ উপকারী।

অনেক বাড়ন্ত শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ডায়েট করার প্রবণতা কাজ করে। তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সকালের নাস্তা না করে বা দুপুরে না খেয়ে ডায়েট করেন।

এটি একটি মারাত্মক ভুল। সকালের নাস্তা না করলে মানুষের শরীরে অনেকটা ফোলা ভাব চলে আসে। তাছাড়া না খেয়ে থাকার কারণে অনেকের বৃদ্ধি কম হয় ও নানা রকম অসুখ দেখা দেয়।

ফারাহ মাসুদা সুস্বাস্থের জন্য কিছু গাইডলাইন অনুসরণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন। তা হল:

- প্রতিদিন নিয়ম অনুযায়ী খাওয়া।

- যতদূর সম্ভব প্রাকৃতিক খাবার খাওয়া।

- মৌসুমী সবজি ও ফল খাওয়া।

- অতিভোজন না করা।

- চিনি, লবণ ও মসলা পরিমিত পরিমাণে খাওয়া।

- তেল, চর্বি ও কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার কম খাওয়া।

- নিজের ওজনের প্রতি খেয়াল রাখা প্রতি দুই মাস পর পর ওজন মাপা।

- নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম করা।

তিনি বলেন, “ডায়েট করতে হলে প্রতি বেলায়ই খেতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যেন খাদ্যের ৬টি উপাদান পরিমাণ মতো খাদ্য তালিকায় থাকে।”

এই পুষ্টিবিদ পরামর্শ দেন, বাড়ন্ত শিশুদের খাদ্য তালিকায় প্রোটিনের পরিমাণ বাড়ানো উচিত। এর পাশাপাশি ভিটামিনের চাহিদা পূরণের জন্য শাকসবজি, ফলমূল ও প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা প্রয়োজন।

প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে তাদের পরিশ্রম অনুযায়ী কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করা উচিত। তবে খেয়াল রাখতে হবে কোনোভাবেই অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করা যাবে না। যারা শারীরিক পরিশ্রম বেশি করেন তাদের কার্বোহাইড্রেট ও বীজজাতীয় খাবার খাওয়া দরকার।

প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য সপ্তাহে দুটি ডিম খাওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি বড় ও ছোটমাছ খাওয়া উচিত। প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য উদ্ভিজ প্রোটিনের উপর নির্ভর করার পরামর্শ দেন ফারাহ মাসুদা।

ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।

অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিক সময় ও নিয়ম অনুযায়ী ডায়েট করেও অনেকে আশানুরূপ ফল পাননি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে হতাশা ও অবসাদ।

খুব বেশি দুশ্চিন্তা করলে ও অবসাদগ্রস্ত থাকলে ওজন বৃদ্ধি পায়। এই সমস্যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে মহিলা ও শিশুদের মধ্যে দেখা যায়।

অনেক শিশু পড়াশুনার চাপে হিমশিম খেয়ে যায়। এতে তারা খুব সহজেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। খাওয়ায় অরুচি দেখা দেয় যা তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাঁধা দেয়। তাই যতটা সম্ভব দুশ্চিন্তামুক্ত ও হতাশা থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে।
Mafruha Akter
Sr. Library officer
Daffodil International University
(Uttara Campus)