ভুল খাদ্যাভ্যাসে বাড়তি মেদ

Author Topic: ভুল খাদ্যাভ্যাসে বাড়তি মেদ  (Read 886 times)

Offline Mafruha Akter

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 309
    • View Profile
শরীরে চর্বির পরিমাণ যত কম, শারীরিক গঠনও ততই সুন্দর হয়। তবে প্রতিদিনের কিছু সাধারণ অভ্যাসের কারণে শরীরে জমতে থাকে চর্বি।
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে সেইন্ট লুইস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জেনিফার ম্যাকডেনিয়েল, আর.ডি. বলেন, “সব অভ্যাস তো আর একদিনে পরিবর্তন করা যায় না। তাই একটি বা দুটি করে অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে।”

এক্ষেত্রে তিনি ধীরে চল পদ্ধতি অবলম্বন করার পরামর্শ দেন। কারণ গবেষণায় দেখা গেছে ইচ্ছাশক্তির জোরে আমরা অনেক কিছুই তাড়াতাড়ি করে ফেলতে পারি। তবে দীর্ঘদিনের সুফল পাওয়ার জন্য ‘ধীরে কাজ’ করলে শারীরিকভাবে বেশি সবল থাকা যায়।

প্রতিবেদনে এই অধ্যাপক খাওয়ার ব্যাপারে কয়েকটি ভুলের কথা উল্লেখ করে যা পরিবর্তন করলে শরীরে বাড়তি চর্বি জমার পরিমাণ কমিয়ে দেয়।

একবেলা না খেয়ে থাকা

অনেকেরই ধারণা একবেলার খাবার এড়িয়ে চললে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তবে না খেয়ে থাকার কারণে পরের বার খাওয়ার পরিমাণ বেশি হয়ে যেতে পারে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয় না। এছাড়া ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার ইচ্ছাও নষ্ট হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, “মস্তিষ্ক সচল রাখতে শরীরে গ্লুকোজ থাকা জরুরি। তবে সকালের নাস্তা বা কোনো একটি সময়ের খাবার বাদ দিলে এই পরিমাণ কমে আসে। তাই পরেরবার খাওয়ার সময় মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কার্যকর থাকে না। ফলে খাবার খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।”

পরিবর্তন করুন: এ অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য প্রতিদিনের তিনবেলার খাবারে প্রতিটি ৫শ’ ক্যালরিতে ভাগ করে নেওয়ার পরামর্শ দেন ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার স্পোর্টস নিউট্রিশন বিভাগের পরিচালক লিজ অ্যাপলগেট (পিএইচ. ডি)।

এছাড়া দুই বেলার নাস্তায় ১শ’ থেকে ২শ’ ক্যালরির খাবার খেতে বলেন তিনি।

যেসব পুরুষ ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন তাদের প্রতিদিন কমপক্ষে ১ হাজার ৮শ’ থেকে ২ হাজার ২শ’ ক্যালরির প্রয়োজন হয়।

তিনি বলেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হণ নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা। মনে মনে বলতে হবে আমি নতুন রুটিন শুরু করতে যাচ্ছি। খাওয়া বাদ দিচ্ছি না। বাদ দেওয়ার কথা ভাবলেই বেশি খাওয়া হয়ে যায়।”

দ্রুত খাওয়া

 ক্লিনিকাল এন্ডোক্রিনোলজি অ্যান্ড মেটাবলিজম জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণার জন্য ১৭ জন সুস্থ পুরুষকে একই পরিমাণ আইসক্রিম খেতে দেয়া হয়। তাদের মধ্যে কয়েকজন পাঁচ মিনিটেই তা শেষ করে ফেলেন আর অন্যরা সময় নেন প্রায় ৩০ মিনিট।
গবেষণাটির লেখক এম.ডি., পিএইচ.ডি. আলেকজান্ডার ককিনোসের মতে, পেট ভরে খেলে পিওয়াইওয়াই এবং জিএলপি-১ নামক দুটি হরমোন মস্তিষ্কে খাওয়া বন্ধ করার সংকেত পাঠায়। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের যারা ৩০ মিনিট ধরে আইসক্রিম খেয়েছেন তাদের মধ্যে এই হরমোনের পরিমাণ বেশি দেখা গেছে।

যারা বরাবরই দ্রুত খাবার খেয়ে থাকেন, তারা অনেক সময় পেট ভরে যাওয়ার পরও কিছুটা বেশি খেয়ে থাকেন।

পরিবর্তন করুন: সমাধানের উপায় হিসেবে ডা. ককিনোস জানান, “খাবার ধীরে এবং উপভোগ করে খাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে ‘ইয়োগা বডি ডায়েট’ ‘ব্রিদিং ট্রিকস’ অনুসরণ করা যেতে পারে। শ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত গুনে আবার শ্বাস ছেড়ে এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত গুনতে হবে। খাওয়া শুরুর আগে এই পদ্ধতি পাঁচবার অনুসরণ করা যেতে পারে। 

২০০৯ সালে দ্য আমেরিকান ডায়েটিক অ্যাসোসিয়েশনের জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় জানা গেছে, ইয়োগা করলে খাবারের প্রতি মনোযোগ বাড়ে এবং এতে ওজন বাড়ার সম্ভাবনাও কমে।

ছুটির দিনে বাড়তি খাওয়া

ছুটির দিনগুলোতে অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে পুরো সপ্তাহের পরিমিত খাওয়ার অভ্যাস বৃথা হয়ে যেতে পারে।

ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্যকারী হরমোন লেপটিনের উপর পালমিটিক অ্যাসিডের প্রভাব নিয়ে করা গবেষণা প্রকাশিত হয় ক্লিনিকাল ইনভেস্টিগেশন জার্নালে। পালমিটিক অ্যাসিড স্যাচারেইটেড ফ্যাটে পাওয়া যায়।

ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস সাউদার্ন মেডিকেল সেন্টারের ডেবরাহ ক্লেগ জানান পিএই.ডি. জানান, শরীরের ওজন অনুযায়ী খাবার খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে লেপটিনের প্রভাব তিনদিনের মধ্যে প্রতিহত করে ফেলে স্যাচারেইটেড ফ্যাট।

তাই ছুটির দিনের সন্ধ্যায় খাওয়া বার্গার, ফ্রাইস বা উইংস, কর্মদিবসে ওজন বাড়াতে সাহয্য করে।

পরিবর্তন করুন: ম্যাক ডেনিয়েলের মতে, “ছুটির দিন একবেলা বাড়তি খাওয়া যেতে পারে, পুরো সময় নয়। কারণ একদিন ইচ্ছেমতো খাওয়ার হিসেব মেলাতে গিয়ে, পুরো সপ্তাহটাই প্রায় ৩০ শতাংশ কম খেতে হবে।”

লবণজাতীয় স্ন্যাকস বেশি খাওয়া

 হিসেব ছাড়া খাওয়ার অন্যতম কারণ সোডিয়াম, যা দ্রুত শরীরে যোগ হয়ে যায়। সিনেমা দেখার সময় পপকর্ন, খেলা দেখার সময় চিপস ইত্যাদি শরীরে লবণের খাওয়ার পরিমাণ বাড়ায়।
পরিবর্তন করুন: কয়েক সপ্তাহ চেষ্টা করলেই লবণজাতীয় খাবারের আসক্তি কমে যায় বলে জানালেন বস্টোন ইউনিভার্সিটির সহযোগী প্রোভাস্ট থমাস মুর।

তিনি আরও বলেন. “রান্না করা খাবারে লবণ কম খাওয়া কিংবা সোডিয়ামের পরিমাণ কম এমন চিপস খাওয়া যেতে পারে। রান্নার সময় লবণ ব্যবহার করার চাইতে খাবারে আলাদা লবণ মাখিয়ে খাওয়া বেশি ক্ষতিকর।”

ধীরে লবণ খাওয়ার পরিমাণ কমানোর জন্য অন্যান্য খাবারেও কম লবণ খাওয়ার অভ্যাস করার পরামর্শ দেন ড. মুর।

খাওয়ার সময় টিভি দেখা

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা টেলিভিশন দেখতে দেখতে খায় না, তাদের চাইতে গড়ে প্রায় ৩শ’ ক্যালরি বেশি খেয়ে থাকেন যারা টিভি দেখার সময় খান।

টিভি দেখার সময় খাওয়ার ফলে ক্যালরি গ্রহণ করা হয় তবে সেই তুলনায় খরচ হয় না।

তাছাড়া রাতে ঘুম কম হলে বা দেরিতে ঘুমালেও বাড়তি ক্যালরি গ্রহণের সম্ভাবনা থেকে যায়।

পরিবর্তন করুন: দ্য মায়ো ক্লিনিক ডায়েটের চিকিৎসা বিভাগের প্রধান সম্পাদক ডোনাল্ড হেন্সারাড বলেন, “টিভি দেখার সময় কর্মচঞ্চল থাকুন। বা কোনো কাজ করে এসে আবার টিভি দেখতে বসুন।”

আর টিভি দেখার পাশাপাশি সময়মতো ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস করুন। যা সত্যিই খুব ভালো অভ্যাস।
Mafruha Akter
Sr. Library officer
Daffodil International University
(Uttara Campus)