WHO (World Health Organisation ) এর মতে, স্বাস্থ্য হল শরীর, মন এবং সমাজের ভাল দিকগুলির মেলবন্ধন। এই ভাবনার সঙ্গে রোগ বা দুর্বলতার দিকটি যুক্ত নয়। "WHO ' আরও বলেছে যে, সুচিন্তার অধিকারী মানুষ তার দক্ষতা বাড়াতে সব সময়ই সচেষ্ট, এই দক্ষতাই তাকে জীবনের বিপর্যয়গুলির মোকাবিলা করে সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সাহায্য করে, উৎপাদনশীল কাজে সে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে এবং নিজের গোষ্ঠী ও সমাজের জন্যও অবদান রেখে যেতে পারে।
অফিসের যে নীতিমালা কর্মীকে তাদের কাজের জায়গায় নিরুৎসাহিত করে তোলে, তা হচ্ছে— উদার ও নৈতিক পরিবেশ না থাকা, কর্মীর কাজের সাফল্যকে চিহ্নিত করতে না পারা, চাকরি যাওয়ার ভয়, অতিরিক্ত কাজের চাপ ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল। কর্পোরেট বিশ্বে বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কর্মীকে লাভ বাড়ানোর জন্য, ক্লায়েন্ট বাড়ানোর জন্য যে চাপ দেওয়া হয়, তা সত্যিই ভয়াবহ। এসব প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে যারা কাজ করছেন, তারা সকলেই জানেন কোম্পানির লাভ বাড়ানোর জন্য চাপ ও তাপ কতপ্রকার এবং কী কী। প্রতিনিয়ত লাভের পেছনে ছুটতে ছুটতে মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি শারীরিক অবস্থাও খারাপ হয়ে পড়ছে।
গুগল এর নির্বাহীরা মনে করেন গুগুলের সাফল্য নিহিত আছে এই প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবনী শক্তি ও সমন্বয়ের উপর। তাদের ভাষায়, আমরা কথা বলে কাজ করি। আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের মধ্যে সব ধরনের মনস্তাত্ত্বিক বাধা সরিয়ে দিতে চাই এবং এই পদ্ধতিই চালিয়ে নিয়ে যেতে চাই। গুগলে কর্মরত একজন কর্মী বলেছেন, ‘এখানে আমাদের দেখাতে হয় না যে আমরা কাজ করছি, অথবা কাজের অভিনয়ও করতে হয় না। এখানে কাজের সংস্কৃতি হচ্ছে ছুটির দিনে ছুটি কাটাও। কারণ মানুষের একটা জীবন আছে।’
আমাদের দেশে সাধারণত আট ঘণ্টা কাজ করতে হয়। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে বাড়তি শ্রম ঘণ্টাও কাজ করতে হয়। তবে এর চেয়েও বড় কষ্ট কর্মস্থলে পৌঁছানোর জন্য ঢাকার একজন চাকুরীজীবী বা পেশাজীবীকে গণপরিবহনে রীতিমত যুদ্ধ করতে হয়। এতসব কষ্ট মাথায় নিয়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে, রাস্তার ধুলাবালি-কাদা গায়ে মেখে একজন মানুষ তার কর্মস্থলে পৌঁছায়। তখন সে চায় বাকি ৮টি ঘণ্টা বা এর চেয়েও বেশি কিছুটা সময় সে এখানে কাজ করবে, নিজের মেধা ও সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটাবে, সহকর্মীদের সাথে কথা বলবে, কাজের বিষয়ে আলোচনা করবে, নিজেদের ব্যক্তিগত দু:খ-সুখ ভাগ করে নেবে। কারণ কাজের জায়গাটা একজন কর্মীর জন্য দ্বিতীয় পরিবার।
কর্মী যদি একবার তার কাজের জায়গাকে ভালবেসে ফেলে বা নিজের বলে মনে করে, তখন এমনিতেই সে চেষ্টা করে নিজের সব শক্তি দিয়ে প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করতে। প্রতিষ্ঠান যদি কর্মীর সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে, কাজের স্বাধীনতা দেয়, কাজের মূল্যায়ন করে, যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ বণ্টন করে তখন কর্মী প্রতিষ্ঠানকে নিজের বলে ভাবতে পারে। আর একবার যদি কর্মী বুঝতে পারে প্রতিষ্ঠান তাকে মূল্য দিচ্ছে, তখন সে নিবেদিতভাবে কাজ করবেই।
একজন কর্মী তার কাজের জায়গায় যা যা দেখতে চায় -- তা হচ্ছে, কাজের প্রশংসা, সার্বিকভাবে তার অন্তর্ভুক্তি, বিশ্বাস, উন্নয়ন, স্বাধীনতা, পারস্পরিক যোগাযোগ, পুরস্কার, ক্ষমতায়ন, দিকনির্দেশনা, প্রমোশন, সম্মান, প্রফেশনাল চ্যালেঞ্জ, স্বচ্ছতা, নমনীয় কর্মঘণ্টা, নিরাপত্তা, প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এবং দায়িত্বপ্রাপ্তি।
একটি অফিসে সবার কাজের ধরন বা যোগ্যতা একরকম হয় না। একেক জনের ক্ষমতা একেক রকম। প্রতিটি স্টাফের কথার ও কাজের ডেলিবারেশনে পার্থক্য থাকবেই। মালিক বা বস বা সিনিয়র লাইন ম্যানেজারদের অধিকার আছে তাদের অধীনস্থ কর্মীদের কাজের মূল্যায়ন করার এবং সে মাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার। তারা যদি তাদের মূল্যায়নের মাপকাঠি ঠিক রাখেন, তাহলে কর্মীরা সন্তুষ্ট থাকেন। সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট কর্মীদের দুর্বলতা চিহ্নিত করার পাশাপাশি তাদের দিকনির্দেশনা দেবে, এমনটাই চায় কর্মীরা।