সেই প্রথম যখন ফ্যাক্টরিতে চাকুরী শুরু করি তখন শিফট ডিউটি করতে হত। এক সপ্তাহে সকালে তার পরের সপ্তাহে নাইট ও তার পরেরটায় দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত ডিউটি চলত। ফ্যাক্টরির মাইক্রবাসের জন্য যখন মেইন রোডে অপেক্ষা করতাম মাথায় ঘুরতে থাকতো আমার প্রিয় কোন গান।
ফ্যাক্টরিতে ডিউটি শেষে বাসায় ফিরেই আমার ক্যাসেট প্লেয়ারে খুজে বের করে শুনতাম সেই গান। তখন থেকেই ইউ টু এর গান আমার খুব পছন্দ। প্রথম দিকে ভাল লাগত মিউজিকের জন্য। এর পরে গানের লিরিক বের করে করে পড়ে দেখতাম গানের কথা গুলো। কথা গুলো কিছুটা দুর্বোধ্য মনে হত।
আস্তে আস্তে গান গুলোর লিরিক ও সুর আমার মুখস্ত হয়ে গেল। আমার মনে হত গান গুলো আমাকে উদ্দেশ্য করেই লেখা। আর কাউকে না হলেও - ইউ টু কে আমি কিছুটা হিংসাও করতাম। এতো সুন্দর গান কম্পোজ করে কিভাবে? যেন এই গান গুলো আমারই তাদের আগে গাওয়ার কথা ছিল। খুবই অবাস্তব চিন্তা ভাবনা কাজ করতো আমার মনে।
এখনও প্রায়ই হঠাৎ মনে ভেসে উঠে কোন একটা আগে শোনা গান। কয়েকদিন আগে কন্টিনিয়াস শুনলাম ইনক্সসের আই এম জাস্ট এ ম্যান। কয়েক দিন ধরে মাথায় ঘুরতেছে আরোস্মিথের আমাজিং গানটি। কয়েকদিন ধরে এইটাও কন্টিনিউয়াস ভাবে চলতেছে। যখনি কম্পিউটারে বসি থাকি শুনতেছি আরোস্মিথের এই গানটি।
এইবার আসি এতো দীর্ঘ কাহিনী লেখার কারণ।
আমরা আমাদের সমাজ দ্বারা খুব বেশী প্রভাবিত হই। সমাজে সবাই যা করে তার নৈতিক ভিত্তি স্থাপিত হয়ে যায়। হোক তা অন্যায়। আমার ক্ষেত্রেও এই একই কথা প্রযোজ্য। ছোটবেলা থেকেই আমাদের কাছে গান শোনা কোন অন্যায় বলে ধরা হয় না। গান শোনা একটি খুব স্বাভাবিক ব্যাপার আমাদের সমাজে। আর যারা গান গায় তারাতো এক এক জন হিরো ও হিরোইন।
এখন আমার মাথায় মাঝে মাঝেই কোন গান গুন গুন করে উঠে। পরে কন্টিনিউয়াস ভাবে শুনি চলি গানটি। খুজতে যাই গানের কথার অর্থ।
কখনো বা জীবনের সাথে এর মিল খুজি কখনো বা কখনো বা দার্শনিক ভাব চলে আসে।
আমার বাবা প্রায় ২০ বছর আগে মারা গেছেন। তার কথা মনে হলেই তার জন্য মনে মনে দোয়া করি। ভেবে দেখলাম কখনো তো মনে গান আসে না। আমার মৃত্যুর পর আমিও তো ভাবি না যে আমাকে স্মরণ করে গান মনে করবে কেউ। সবাই যেন মন থেকে দোয়া করে এইটাই চাই মনের অন্তঃস্থল থেকে। ভাবলে মনে হয় - গান গাইলে তো আরো শাস্তি বাড়বে।
এখন মাঝে মাঝে মনে গান গুন গুনিয়ে উঠে। কেননা আমার ছোটবেলা থেকেই এই গুলো শুনে আসতেছি। এই গান গুলো আমার জীবনে কোন সমাধান এনে দেয় নাই। বরঞ্চ অনেক ক্ষেত্রেই মনের অশান্তির কারণ হয়েছে।
এর থেকে ধর্মীও পরিবেশে বড় হলে আমার মনে মহৎ কিছু গুন গুনিয়ে উঠত। যার অর্থ অনেক মহৎ। আমার জীবনের অনেক কিছুর সমাধানও তাতে পেয়ে যেতাম।
(যময্র ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া।)