কবর ভয়াবহ এক ঘাঁটি

Author Topic: কবর ভয়াবহ এক ঘাঁটি  (Read 1110 times)

Offline faruque

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 655
    • View Profile
কবর ভয়াবহ এক ঘাঁটি
« on: March 24, 2018, 09:49:20 AM »
কবর ভয়াবহ এক ঘাঁটি


কবরকে আমরা ওয়েটিং রুম হিসেবে বুঝে নিতে পারি। ওয়েটিং রুমে যেমন মানুষ তার পরবর্তী অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারে, আরামের হবে কিংবা কষ্টের হবে। আরামের হলে হেসেখেলে সময় পার করে। কষ্টের হলে এক ঘণ্টা এক বছরের মতো মনে হয় তারপরও সময় যেতে চায় না। অনুরূপ প্রত্যেকের কবরে কবরবাসীকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে সে জান্নাতি না জাহান্নামি।  জান্নাতি হলে সে বড় আরামে সময় পার করবে। আর জাহান্নামি হলে বড় কষ্টে সময় অতিবাহিত করবে। এ কবর এমন এক ঘাঁটি যেখানে সাহায্যের বা বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন বলতে কেউই থাকবে না। শুধুই নেক আমল হবে তার সাথী। দুনিয়ার হায়াতে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, কোরআন তেলাওয়াতসহ ইত্যাদি নেক আমল তাকে আজাব থেকে রক্ষা করবে। মুনকির-নকির ফেরেস্তাদ্বয়ের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে কবর উত্তম ঘাঁটি। আর উত্তর দিতে না পারলে ভয়াবহ ঘাঁটি। হজরত উসমান (রা.) যখন কোনো কবরের পাশে দাঁড়াতেন তখন এমনভাবে কাঁদতেন যে, নিজের দাড়ি মোবারক ভিজে যেত। একবার হজরতকে জিজ্ঞাসা করা হলো আপনি জান্নাত ও জাহান্নাম স্মরণ করে এত কাঁদেন না, যতটুকু কাঁদেন কবর দেখে, এর কারণ কী? তিনি বললেন, রসুল (সা.) বলেছেন, কবর হচ্ছে আখেরাতের প্রথম ঘাঁটি। এখানে যদি কেউ রক্ষা পেয়ে যায় তাহলে পরবর্তী সব ঘাঁটি তার জন্য সহজ হয়ে যায়। আর এখানে কেউ যদি রক্ষা না পায় তাহলে পরবর্তী সব ঘাঁটি তার জন্য খুব কঠিন হয়ে যায়। তিনি আরও বললেন, রসুল (সা.) বলেছেন, মেরাজের রজনীতে আমি যত ভয়াবহ দৃশ্য দেখেছি তার মধ্যে কবরের আজাবই হচ্ছে সবচেয়ে ভয়াবহ। (তিরমিজি শরিফ, হাদিস নং-২৩০৮)। প্রিয় পাঠক! বেনামাজির কবরে কী ধরনের আজাব হবে এ সম্পর্কে হাদিসে আছে, বেনামাজির কবরে তিন ধরনের শাস্তি হবে : ১. কবর তার জন্য এমন সংকীর্ণ হবে যে, এক পাশের বুকের হাড় আরেক পাশে ঢুকে যাবে। ২. তার কবরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। ৩. তার কবরে এমন একটি সাপ নিযুক্ত করা হবে যার চক্ষু হবে আগুনের। আর নখগুলো হবে লোহার। তার প্রত্যেকটি নখ লম্বা হবে একদিনের দূরত্বের পথ। সাপের আওয়াজ হবে বজ্রের ন্যায় বিকট। সাপ ওই বেনামাজিকে বলতে থাকবে ‘আমাকে আমার রব তোর ওপর নিযুক্ত করেছেন যাতে ফজরের নামাজ নষ্ট করার কারণে সূর্যোদয় পর্যন্ত তোকে দংশন করতে থাকি। জোহরের নামাজ নষ্ট করার কারণে আসর পর্যন্ত দংশন করতে থাকি। আসর নামাজ নষ্ট করার কারণে মাগরিব পর্যন্ত। আর মাগরিব নামাজ নষ্ট করার কারণে এশা পর্যন্ত। আর এশার নামাজ নষ্ট করার কারণে ফজর পর্যন্ত তোকে দংশন করতে থাকি।’

এ সাপ যখনই তাকে একবার দংশন করবে তখনই সে ৭০ হাত মাটির নিচে ঢুকে যাবে (উঠিয়ে আবার দংশন করবে) এভাবে কেয়ামত পর্যন্ত আজাব হতে থাকবে। নেক্কার ও বদকারের কবরের অবস্থা একটি দীর্ঘ হাদিসে এসেছে, হজরত বারা ইবনে আজিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, মুমিন ব্যক্তির কবরে দুজন ফেরেশতা আসে ও তাঁকে বসায়। তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করে, তোমার রব কে? সে উত্তর দেবে, আমার রব আল্লাহ। তারা তাকে জিজ্ঞাসা করে তোমার দীন কী? সে উত্তরে বলবে, আমার দীন হচ্ছে ইসলাম। তারা এবার তাকে জিজ্ঞাসা করে, ওই ব্যক্তি কে, যাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল? সে উত্তর দেবে ইনি হচ্ছেন আমাদের রসুল (সা.)। তারা এবার তাকে জিজ্ঞাসা করবে (এ উত্তরগুলো) তুমি কীভাবে জানলে? সে বলবে আমি আল্লাহর কিতাব থেকে জেনেছি এবং তাঁর ওপর ইমান এনেছি। তখন রসুল (সা.) বলেন, এটাই হচ্ছে আল্লাহতায়ালার ওই বাণীর মর্ম, যেখানে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ মুমিনদের দৃঢ় বাক্যের ওপর দৃঢ় রাখেন পার্থিব জীবনে ও আখেরাতে’ রসুল (সা.) বলেন, তখনই আসমান থেকে এক ঘোষণাকারী ডাক দিয়ে বলবেন, আমার বান্দা সত্য বলেছে। সুতরাং তাকে জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও। তাকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দাও এবং তার দিকে জান্নাতের দরজা খুলে দাও। তখন তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়। তার কাছে জান্নাতের শান্তি ও সুঘ্রাণ আসতে থাকে। কবরকে তার দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেওয়া হয়। প্রিয় পাঠক! চলুন চলুন, আমরা সবাই কবরের আজাব থেকে বাঁচার উপায় কী? তা জেনে আমলে বাস্তবায়িত করি।

হাদিসে কবরের আজাব থেকে বাঁচার কয়েকটা আমলের কথা উল্লেখ আছে, সেখান থেকে এখানে আমি মাত্র দুটি উল্লেখ করছি। (১) রসুল (সা.) বলেছেন, সূরা মূলক কবরের আজাব থেকে রক্ষাকারী। যে ব্যক্তি এ সূরা পাঠ করবে, এ সূরা তাকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবে। (কুরতুবি) রসুল (সা.) নিয়মিত রাতে ঘুমানোর আগে সূরা মূলক তেলাওয়াত করতেন। (২) কবরে আলো পাওয়ার আমল হলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। হাদিসে আছে ‘নামাজ নূর বা আলো’ কবরে ও হাশরের ময়দানের আলো হবে নামাজ। আল্লাহতায়ালা আমাদের কবরের আজাব থেকে রক্ষা করুন।  আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও খতিব বারিধারা, ঢাকা।