প্রতিদিন সন্ধ্যার সময়ই বাসায় ফেরা হয়। আমাদের চারিপাশে আমার পরিচিত কাউকে পাইনা কথা বলার জন্য। অথচ ঢাকা শহরে প্রায় ২ কোটি মানুষ বসবাস করে। এর থেকে ছোটবেলায় প্রতিদিন অনেক বেশী মানুষের সাথে কথা হত। তখন বলা হত যে ঢাকা শহরের লোকসংখ্যা মাত্র ৩০ লক্ষ।
এর কারণ হল আমার পরিচিত যতজন তার অর্ধেক মানুষ তখন অফিস থেকে ফেরার পথে জ্যামে বসে আছে। আর বাকি অর্ধেক তখনও অফিস করতেছে।
এই বার আসি হিসাবে। আমাদের ছোটবেলায় এই ঢাকাতে তিন তলার বেশী উচু বিল্ডিং ছিল না। সেই হিসেবে তিন তলা বাড়ীতে তিনটি ফ্যামেলী বসবাস করতো। তখন এক একটি ফ্যামেলীতে ৬ জন করে হিসেব করলে মোট ১৮ জন মানুষ। এর বাইরে ১ জন করে কাজের লোক ধরলে মোট ২১ জন হয়। (কোন কোন ফ্যামেলী তে ২ জন করে কাজের লোক থাকতো।)
এখন ওই একই পরিমাণ জায়গায় ১০ টি ফ্ল্যাট থাকে। প্রতি ফ্যামেলীতে ৪ জন করে ধরলে ৪০ জন মানুষ হয়। কাজের লোকেরা এখন সবই কাজ শেষে যার যার বাড়ি চলে যায়। এই ৪০ জন মানুষ আছে ৫ টি ফ্লোরে। অর্থাৎ প্রতি ফ্লোরে আছে ৮ জন। আবার এই ৮ জন দুই ফ্ল্যাটে ভাগ হয়ে প্রতি ফ্ল্যাটে আছে ৪ জন।
আগে ফ্লোর ছিল ৩ টি। বা তিনটি বাসা। এখন হয়েছে ১০ টি বাসা। প্রতি বাসায় লোক সংখ্যা ৪ জন। একজন বাবা একজন মা আর দুই সন্তান। কেউ কারো সমবয়সী বন্ধু নয়।
আমার প্রশ্ন হল বন্ধুর অভাবে আমরা যদি ফেসবুকে বসে থাকি তাহলে দোসের কোন কারণ আছে কি? ছেলেমেয়েরা যদি গেম খেলে সময় কাটায় তাদের দোষ দেয়া যায় কি? মায়েরা যদি টিভিতে সিরিয়াল দেখে সময় পার করে কাকে আপনি দোষ দিবেন?
আমাদের শহরের লোক সংখ্যা বাড়লেও আমরা ডিভাইডেড ভাবে সংখ্যায় কমে গেছি। এপার্টমেন্ট সংস্কৃতি, ট্রাফিক জ্যাম, অফিসের ব্যাস্ততা আমাদের সামাজিক ব্যালেন্স নষ্ট করে দিয়েছে।
(আমার ফেসবুক পোস্ট থেকে।)