অলিম্পিক মূল্যবোধ শিক্ষণ উদ্দেশ্য ও উপযোõ

Author Topic: অলিম্পিক মূল্যবোধ শিক্ষণ উদ্দেশ্য ও উপযোõ  (Read 1799 times)

Offline Mohammed Abu Faysal

  • Administrator
  • Full Member
  • *****
  • Posts: 230
    • View Profile
২০০১ সালে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত আইওসি সেশনে ২০০৮-এর ২৯তম অলিম্পিয়াড বেইজিংকে অর্পণ করা হয়। পরের বছরই বেইজিং অলিম্পিক গেমস সাংগঠনিক কমিটি এক বিস্ময়কর কর্মসূচি গ্রহণ করে। তা হলো গণচীনব্যাপী এক অলিম্পিক শিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়িত করা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, গোটা গণচীনের চলি্লশ কোটি স্কুল ছাত্রছাত্রী এতে অংশগ্রহণ করে। বয়সে তারা সবাই তরুণ-তরুণী। এর ক'বছর বাদে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি সূচিত অলিম্পিক মূল্যবোধ শিক্ষণ কর্মসূচির সঙ্গে বেইজিং অলিম্পিক গেমস সাংগঠনিক কমিটি কর্তৃক বাস্তবায়িত অলিম্পিক শিক্ষা কার্যক্রমের অনেক সাদৃশ্য সত্ত্বেও এটা ছিল এক বিশাল জাতীয় উদ্যোগ। চীনে পরিচালিত এ কর্মসূচি অনেক জাতীয় অলিম্পিক কমিটির কাছেই হয়ে ওঠে এক অনুপম অনুপ্রেরণার উৎস এবং অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। বস্তুতপক্ষে বিশ্ব যুব সমাজ সংশ্লিষ্ট কৌশল ও সামাজিক দায়বদ্ধতার নীতি থেকেই আইওসি অলিম্পিক মূল্যবোধ শিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ ও সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করে আসছে। এটা একটি দাতা সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প। খেলাধুলার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে সম্পৃক্ত বিশ্ব যুব সমাজকে অলিম্পিক মতবাদে (অলিম্পিজমে) দীক্ষিত ও প্রশিক্ষিত করার লক্ষ্যেই এ কার্যক্রমের সূত্রপাত ঘটে ২০০৫ সালে। বিশ্ব যুব সম্প্রদায়কে অলিম্পিক মূল্যবোধ শিক্ষাদানের পশ্চাতে অলিম্পিক আন্দোলন বা আইওসির উদ্দেশ্যগুলোর অন্যতম হচ্ছে...
ক্রীড়ার সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে সংশ্লিষ্ট বিশ্ব যুব সমাজকে নয়া অলিম্পিজমের ভাবধারায় দীক্ষিত করা। তরুণ-তরুণী ও যুবক-যুবতীদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা দান, যাতে তারা অলিম্পিকবাদের নৈতিক ও আর্দশিক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে নিজ নিজ দেশ, সমাজ ও সংস্কৃতির বিকাশ বা উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনের শক্তি সঞ্চয় ও প্রয়োজনীয় মানসিক প্রস্তুতি নিতে পারে।
ক্রীড়ানুশীলন ও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি, সৌভ্রাতৃত্ব, সহমর্মিতা স্থাপনে যুব সমাজকে প্রয়োজনীয় নৈতিক ও আদর্শিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা এবং এ ব্যাপারে যথাযথ দীক্ষা দান।
সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠে বাস্তব জীবন বা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে যাতে তারা নিজ নিজ সমাজ বা দেশের ক্রীড়া ও যুব উন্নয়ন সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সক্ষমতা অর্জন করতে পারে, সে ব্যাপারে তাদের সচেতন করা।
যুব মানসে নয়া অলিম্পিজমের আদর্শিক ও নৈতিক শক্তি সঞ্চারের মৌলিক লক্ষ্যেই আইওসির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও অলিম্পিক আন্দোলনের কর্ণধার ড. জ্যাক রগ যুব অলিম্পিক গেমসের ধারণার সূত্রপাত করেন। তার মস্তিষ্কপ্রসূত এ ধারণা আইওসির ১১১ জন সদস্যের সমর্থন লাভ করে। ফলে ২০১০-এ সিঙ্গাপুরে প্রথম যুব অলিম্পিক গেমসের আয়োজনের মধ্য দিয়ে ড. জ্যাক রগের ওই ধারণা সার্থকভাবে বাস্তবায়িত হয়। এতে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী খেলোয়াড়রা অংশগ্রহণের উপযোগী। যুব অলিম্পিয়াডে তিন হাজারের কিছু বেশি তরুণ-যুবা অ্যাথলেট ও আটশ' অফিসিয়ালের অংশগ্রহণের সুযোগ আছে। শীতকালীন যুব অলিম্পিকসে এ সংখ্যা হবে যথাক্রমে এক হাজার ও ছয়শ'র কাছাকাছি।
যুব অলিম্পিক গেমসের উদ্দেশ্যও তরুণ ও যুব সমাজকে অলিম্পিক মূল্যবোধে প্রশিক্ষিত করা হলেও এই গেমসের সংস্কৃতি ও শিক্ষা কর্মসূচি কাঠামো ও পদ্ধতিগত দিক থেকে আইওসি প্রণীত অলিম্পিক মূল্যবোধ শিক্ষণ কর্মসূচির স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। ওই কর্মসূচির সঙ্গে জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ২নং লক্ষ্য 'সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা' সম্পর্কযুক্ত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২০০৫ থেকে ২০১৪ সময়সীমাকে 'টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষা' শীর্ষক দশক হিসেবে ঘোষণা করেছে। এদিকে অলিম্পিক মূল্যবোধ শিক্ষণ কর্মসূচির অন্যতম উদ্দেশ্যও বিশ্বের তরুণ-যুব সম্প্রদায়কে সর্বজনীন শিক্ষার সুযোগ দান।
এ লক্ষ্য সামনে রেখেই তরুণ-যুবাদের মধ্যে যারা যুব অলিম্পিকসে অংশগ্রহণকারী এবং যারা অংশ নেয়নি অথবা যাদের এতে প্রতিযোগিতা করার মতো ক্রীড়া প্রতিভা নেই, তাদের সবার জন্যই অলিম্পিক মূল্যবোধ শিক্ষণ কর্মসূচির সুবিধা অবারিত। জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেস্কোর আইওসির এ শিক্ষাদান কর্মসূচির সহায়তায় সম্পৃক্ততা এতে এক নতুন মাত্রা সংযোজিত হয়েছে। ইউনেস্কো এ আইওসি কার্যক্রমের বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত ও সহজসাধ্য করতে গোটা বিশ্বে 'সহযোগী স্কুল নেটওয়ার্ক' গড়ে তুলেছে। পৃথিবীর সব মহাদেশেই এ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। তবে ইউরোপে এর বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট হলো আন্তর্জাতিক পিয়েরে দ্য কুঁর্বাতিন কমিটি। এ কমিটি অলিম্পিক মূল্যবোধ শিক্ষার সুযোগদানকল্পে স্কুল ছাত্রছাত্রীদের জন্য দ্বিবার্ষিক ফোরামের আয়োজন করে। আগে এ ফোরামে অংশ নেওয়ার সুযোগ শুধু ইউরোপীয় ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিল। এ সুযোগ আইওসির সহায়তা এখন ইউরোপ ছাড়া অন্যান্য মহাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্যও উন্মুক্ত।
এদিকে অলিম্পিকিজমের বিকাশ সাধন ও এ কর্মসূচিকে অলিম্পিক বিশ্বে সর্বজনীন করার লক্ষ্যে আইওসির আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন বিভাগের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় এ কর্মসূচিকেন্দ্রিক সেমিনার আয়োজন করা হয়। 'আইওসি-ওসিএ ওভিইপি' শীর্ষক এ ধরনের এক সেমিনার সম্প্রতি মালয়েশিয়ার অলিম্পিক কাউন্সিলের ব্যবস্থাপনায় কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনও এতে অংশগ্রহণ করে। ওসিএর অধিভুক্ত ৪৫টির মধ্যে ৩০টি দেশের জাতীয় অলিম্পিক কমিটি ও কাউন্সিলের প্রতিনিধি এতে যোগদান করেন। ওভিইপি সেমিনারে মূলত পাঁচটি অলিম্পিক মূল্যবোধ, যেমন_ কর্মোদ্যমের আনন্দ, ফেয়ারপ্লে, অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, উৎকর্ষতা অর্জনের প্রয়াস এবং দেহ, মন ও ইচ্ছাশক্তির ভারসাম্য বিধানের ওপর বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়। আইওসি অলিম্পিক মূল্যবোধ শিক্ষণ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন এনওসি হতে প্রশিক্ষক নির্বাচিত করে। প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য অলিম্পিজমের তিনটি মৌলিক উপাদান ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও পরিবেশের ওপর বিশেষ গুরুত্ব নিবদ্ধ করে বর্ণিত পাঁচটি অলিম্পিক মূল্যবোধ সারা বিশ্বের তরুণ-যুবাদের শিক্ষাদানের জন্য একটি বিস্তারিত প্রশিক্ষণ সহায়িকা প্রকাশ করেছে। বিশ্ব যুব সমাজকে ক্রমবর্ধমান নৈতিক অবক্ষয় থেকে মুক্ত করতে অলিম্পিক মূল্যবোধ শিক্ষণ কর্মসূচি এক অনবদ্য ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই তরুণ ও যুব সম্প্রদায়ভুক্ত। স্কুলগামী বাংলাদেশি তরুণদের বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়ানোর খবর হামেশাই জাতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে থাকে। এটা খুবই উদ্বেগজনক। তারুণ্যে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশেও জাতীয় অলিম্পিক কমিটি অলিম্পিক মূল্যবোধ শিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে ব্রতি হলে দেশের অগণিত ক্রীড়াপ্রেমী তরুণ-যুবাদের জন্য তা অবশ্যই সুফল বয়ে আনতে পারে। তারুণ্যে, বিশেষত স্কুলগামী ছাত্রদের মধ্যে নৈতিক অধঃপতন রোধ করতে বাংলাদেশের স্কুল ও ইউনেস্কোর সহযোগী স্কুল নেটওয়ার্কের অঙ্গীভূত করার প্রচেষ্টা নেওয়া যেতে পারে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর অধীনে শিক্ষা বোর্ডগুলোর সহায়তা নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশের স্কুল ও অলিম্পিক মূল্যবোধ শিক্ষাদান কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে ইউনেস্কোর সহযোগী স্কুল নেটওয়ার্কভুক্ত হতে পারে। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বা সরাসরি বাংলাদেশে কর্মরত জাতীয় ইউনেস্কো কমিশনের সহযোগিতা চাওয়া যেতে পারে। মূল কথা_ তারুণ্যে উদ্দীপ্ত বাংলাদেশে অলিম্পিক মূল্যবোধ শিক্ষাদানের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্যর্, যেহেতু জনসংখ্যাধিক্যে ভারাক্রান্ত এ উন্নয়নকামী দেশে তারুণ্যের অবক্ষয়ের লক্ষণ প্রতিনিয়তই বিভিন্নভাবে প্রকাশমান।
« Last Edit: April 23, 2013, 01:25:04 PM by Faysal230 »