ঊনিশ শতকের মানুষের কল্পনায় যেমন ছিল একুশ শতকের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি

Author Topic: ঊনিশ শতকের মানুষের কল্পনায় যেমন ছিল একুশ শতকের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি  (Read 1291 times)

Offline 710001113

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 493
    • View Profile
By Sirajam Munir Shraban
কখনো ভেবে দেখেছেন কি আজ থেকে ১০০ বছর পরের মানুষেরা কত উন্নত উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করবে? উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের জীবন কতটা আয়েশে ভরপুর হয়ে উঠবে? অবশ্যই ভেবেছেন। আপনি মানুষ, করোটির নীচে বুদ্ধিদীপ্ত মস্তিষ্ক আছে, আপনাকে ভাবতেই হবে। দেড় দশক আগেও একটা সময় ছিল যেখানে মানুষ বিস্তর চিঠিপত্র আদান-প্রদান করতো। দেশের এক প্রান্তে জন্ম নেয়া শিশুর আগমনের খবর আরেক প্রান্তে গিয়ে পৌঁছাত এক সপ্তাহ পরে। এখন সেটা মোবাইলের কয়েকটি সংখ্যা এবং ঘড়ির কয়েকটি সেকেন্ডের ব্যাপার মাত্র।
১৫-১৬ বছর আগের সময়ের সাথে আজকের সময়ের কী বিস্তর পার্থক্য! এই পার্থক্য যদি কারো নজরে আসে তাহলে অবশ্যই এটাও নজরে আসবে যে আজ থেকে ১৫-১৬ বছর পরে কিংবা ১০০ বছর পরে কী হবে? আর যদি সায়েন্স ফিকশন গল্প-উপন্যাস পড়ার অভ্যাস থাকে কিংবা সায়েন্স ফিকশন চলচ্চিত্র দেখার অভ্যাস থাকে, তাহলে তো এই চিন্তা মাথায় না প্রায় অসম্ভব। সায়েন্স ফিকশনের কোনো ভক্ত যদি আজ থেকে ১০০ বছর পরে প্রযুক্তিগত কী উন্নতি হবে তা কল্পনা না করে, তাহলে তাকে রীতিমতো অপরাধই বলা চলে।
তেমনই ঊনিশ শতক ও বিংশ শতকের মানুষেরাও তাদের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি সম্বন্ধে জল্পনা-কল্পনা করেছে। তাদের কল্পিত ভবিষ্যতে বসবাস করছি আজকের আমরা। কেমন ছিল তাদের কল্পনা? তাদের কল্পিত ভবিষ্যৎ আর বর্তমানের মূর্তিমান বাস্তবতার মাঝে মিল কতটুকু?
যে সময়টার কথা বলছি তখন সায়েন্স ফিকশন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। জুল ভার্ন এবং এইচ. জি. ওয়েলস তাদের সায়েন্স ফিকশনগুলোতে মানুষের ভাবনাগুলোকে নাড়িয়ে দিয়েছেন। ভবিষ্যতের সম্ভাব্য অনেক উন্নত যন্ত্রপাতির সম্বন্ধে আলোকপাত করেছেন জুল ভার্ন। তার কল্পনার প্রভাব পড়েছে সে সময়ের চিত্রকরদের মাঝেও। এর পাশাপাশি তখন যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে শিল্প-বিপ্লব সংঘটিত হয়ে গেছে। অবিশ্বাস্য সব যন্ত্রপাতি। মানুষ কল্পনাও করতে পারেনি এমন সব কাজ দেদারসে করে ফেলছে যন্ত্রপাতি। সায়েন্স ফিকশনের আবির্ভাব এবং শিল্প-বিপ্লবের ছোঁয়া তখনকার মানুষকে অবাক করেছে এবং ভাবিয়েছে একশত বা এক হাজার বছর পরে কোন পর্যায়ে যেতে পারে পারে প্রযুক্তির উন্নয়ন।
কল্পনার আধুনিক একুশ শতককে চিত্রায়িত করেছিলেন দুজন ফরাসী চিত্রকর। তখন ১৮৯৯ সাল চলে এসেছে। ১৯০০ সাল প্রবেশ করে ফেলবে ফেলবে করছে। সেই সময় থেকে ১০০ বছর পরে ২০০০ সালের ফ্রান্সের অবস্থা চিত্রায়িত করতে চেয়েছে সেখানের একটি সিগারেট কোম্পানি। এখন যেমন সিগারেটের প্যাকেটে ক্যান্সার আক্রান্ত বীভৎস গলা, পচে যাওয়া ফুসফুসের ছবি ইত্যাদি থাকে, তখন সেরকম ছিল না। তো সিগারেট কোম্পানি সিদ্ধান্ত নিলো তাদের সিগারেটের প্যাকেটে ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির কিছু কল্প-বৈজ্ঞানিক ছবি ছাপাবে।
সেজন্য দুজন চিত্রশিল্পীকে তলব করা হলো। এদের মাঝে একজন হচ্ছে ভিলেমার্ড এবং আরেকজন হচ্ছে জাঁ মাখ কোত। তাদের আঁকা সেই ছবিগুলো তুলে ধরছি এখানে।
ছবিগুলো দেখে কারো কারো হাঁসি পেতে পারে। তবে এটা মানতেই হবে যে, ঐ সময়ের জন্য এই ধারণাগুলোই ছিল অকল্পনীয়। আগামী শতাব্দী নিয়ে আমরা যা কল্পনা করছি, হতে পারে আজ থেকে ১০০ বছর পরের মানুষ আমাদের কল্পনা নিয়েও হাসাহাসি করবে। প্রযুক্তি কখন কোন দিকে মোড় নেয় তা আগে থেকে বলা আসলে মুশকিল।
১. গৃহস্থালি কাজের রোবট


২. ভয়েস রিকগনিশন
কত গ্যালন তেল, কত বস্তা চাল, কত বান্ডিল কাঠ মজুদ আছে তা মাইক্রোফোনে বলে দিলেই পাওয়া যাবে উত্তর। তখনকার সময়ের মতো খাতায় কষে কষে বের করতে হবে না।

৩. লাইভ ভিডিও

ভিডিও কলের একটি প্রযুক্তি। এখানে তাদের কল্পনাটি ছিল সরল। তখনকার সময়ে কথা বলার জন্য টেলিফোন এবং ছবি দেখার জন্য প্রজেক্টরের ব্যবহার ছিল। কোনো একজন মানুষ এই দুই জিনিসকে একত্র করে লাইভ ভিডিওর মতো কিছু একটা কল্পনা করবে তা আর অবাক করার মতো কী? বরঞ্চ এটা আমাদের জন্য অনেকটা লজ্জার ব্যাপার। সরল ধারণার এই প্রযুক্তিটিকে বাস্তবে রূপ দান করতে আমরা অনেক দেরি করে ফেলেছি।

৪. যান্ত্রিক নাপিত


৫. রোবটিক নির্মাণকর্মী
ইট, বালু, সিমেন্ট দিয়ে দালান তৈরি করছে যন্ত্র। তখনকার সময়ে কী অসাধারণ কল্পনা!


৬. কৃষি প্রযুক্তি
ধান কাটছে এবং প্রক্রিয়াজাত করছে যন্ত্র। কৃষি কাজেও যন্ত্রের দাপট আসবে এটা বুঝতে পেরেছিল তারা। তবে এখানে একটা জিনিস লক্ষ্যণীয়। এসব যন্ত্রে তারের উপস্থিতি। তারবিহীন প্রযুক্তিতেও যে যন্ত্র চালানো যায় এটা তখনকার মানুষ জানতো না তেমন। উল্লেখ্য নিকোলা টেসলার হাতে তারবিহীন প্রযুক্তির শুরুই হয় ১৮৯৮ সালে।


৭. উড়ন্ত দমকল কর্মী


৮. এয়ার শিপ
বাতাসে ভর করে উড়ে উড়ে চলার জন্য। বিশাল আকারের বেলুনে বায়ু ভর্তি করে তাতে জাহাজ জুড়ে দেয়া। হ্যাঁ, এই জাহাজ জলেরই জাহাজ!


৯. ডেলিভারি সার্ভিস
দ্রুত সময়ে চিঠি বা মালামাল ডেলিভারি দেবার জন্য এরকম উড়ার ব্যবস্থা। বলা যায় পারসোনাল প্লেন। আজকের যুগে অ্যামাজনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ড্রোনের মাধ্যমে ক্রেতার কাছে মালামাল ডেলিভারি দেবার চিন্তা-ভাবনা করছে।


১০. সমস্যা-সীমাবদ্ধতা
মানুষেরা যদি উড়ে তাহলে যে যে সমস্যা দেখা দিতে পারে তার মাঝে অন্যতম হচ্ছে পাখির সাথে সংঘর্ষ। বড় আকারের পাখিগুলো হতে পারে দুর্ঘটনার কারণ। সেটা নিয়েও আছে চিত্র।


১১. ফ্লায়িং ট্যাক্সি
পুরোদস্তর অত্যাধুনিক চলাচল। স্টার ওয়ার্স সিনেমার মতো!


১২. হেলিকপ্টার
উড়ার যন্ত্র হিসেবে তো ভালোই দেখাচ্ছে। কিন্তু নীচের দিকে ল্যান্ডিং গিয়ার না দিয়ে তীক্ষ্ণ অংশটি কেন দিলো?


১৩. পাখি শিকার
কিছু কিছু পাখি আছে এভাবে মাছ শিকার করে। এরকম স্থানে মাছকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করে মানুষ শিকার করছে পাখি! চিন্তার অসাধারণত্ব দেখে মাথা একদমই আউলে গেলো!


১৪. মাছের যান
না বললেও চলে এটা একটা তার ছেড়া আইডিয়া। অক্সিজেন মাস্ক লাগিয়ে পানির নীচে মানুষ অপেক্ষা করছে মাছের যান আসার জন্য। সে মাছে চড়ে মানুষ দূর দূরান্তে যাবে এটা নেহায়েতই পাগলামি। প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে বেচারা আর্টিস্ট হয়তো বুঝতে পারেনি। তবে মানানসই হোক আর না হোক, এই ছবিতে আর্টিস্টের কল্পনা একদম মহাকাব্যিক! সৃজনশীলতার মাত্রা- অবিশ্বাস্য।






১৫. চলাচলে সক্ষম স্কুল


১৬. লেটেস্ট ফ্যাশন


১৭. ডিম থেকে বাচ্চা তৈরির যন্ত্র


১৮. পাখি শিকার


১৯. উড়ন্ত পুলিশ

২০. আধুনিক শ্রেণীকক্ষ


২১. ইলেকট্রিক ট্রেন

২২. ডুবন্ত জাহাজকে বাঁচাতে উদ্ধারকারী বায়ু জাহাজ

২৩. টর্পেডো প্লেন


২৪. তেজস্ক্রিয় মৌল রেডিয়ামের মাধ্যমে ঠাণ্ডা ঘরে দ্রুত উত্তাপ তৈরি করা
কাঠ কিংবা জীবাশ্ম জ্বালানির কী দরকার!

২৫. খবরের কাগজ পড়ে শোনাচ্ছে যন্ত্র

মন্তব্য ১
তখনকার সময়ে সায়েন্স ফিকশন খুব বেশি জনপ্রিয় ছিল না। সায়েন্স ফিকশনের পুরো ব্যাপারটিই ছিল সাহিত্যের নব-আবিষ্কৃত একটি ধারা। ঐ ধারায় তখন হাঁটাহাঁটিও করেছেন খুব কম মানুষ। জুল ভার্ন আর এইচ. জি. ওয়েলসকে বাদ দিলে উল্লেখযোগ্য আর কাউকেই পাওয়া যায় না সেখানে। সেই হিসেবে এই চিত্রকর্মগুলো ঐ সময়ের জন্য অনেক আধুনিক কল্পনা ছিল।
মন্তব্য ২
ছবিগুলো সিগারেটের প্যাকেটে ছাপা হয়েছিল। একসময় মানুষ ভুলেও গিয়েছিল তাদের। পরবর্তীতে কীভাবে কীভাবে যেন সায়েন্স ফিকশনের গ্র্যান্ড মাস্টার ‘আইজ্যাক আসিমভ’-এর কাছে এর খবর পৌঁছায়। আসিমভ অনেক খেটেখুটে সেসব চিত্রকর্মগুলো সংগ্রহ করেন এবং সেগুলোকে একত্র করে একটি বইও বের করেন। ঐ বইটির নাম ছিল Futuredays: A Nineteenth Century Vision of the Year 2000।

চিত্র: আইজ্যাক আসিমভের বইয়ের প্রচ্ছদ।
উল্লেখ্য ফ্রান্স সরকার এই ছবিগুলোকে একসময় পোস্টকার্ড হিসেবেও ব্যবহার করেছিল। এ থেকে বোঝা যায় ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে ছবিগুলো কতটা মূল্যবান।
তথ্যসূত্র
The 21st Century, As Imagined In The 19th Century, SciFi Ideas
19th Century Postcards Predicted the World in the Year 2000, My Modern Met
Jean-Marc Côté’s Visions of the Year 2000 (1899), Paleo Future
What 19th-Century Germans Thought Life Would Be Like in 2000, Mental Floss
French Prints Show the Year 2000 (1910), Paleo Future
A 19th-Century Vision of the Year 2000, Public Domain Review
Futuredays: A Nineteenth Century Vision of the Year 2000, Issac Asimov