ভিন দেশের হীন নীতি
এই তার রাজনীতি
এই কিচ্ছাটি যেথায় ঘটেছে সেই অঞ্চলের নাম পাগলাদেশ। এই পাগলাদেশের সবচেয়ে বিলাসিত, চিত্তাকর্ষক জায়গায় স্থাপিত বিলাসবহুল প্রাসাদ থেকেই এই অঞ্চলের নীতি নির্ধারিত হয়। এই সুরম্য প্রাসাদে যারা আসা যাওয়া করেন তারাই নাকি পাগলাদেশের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক বা সুধীজন। এই সুধীজনের মধ্যে আবার গুটিকতক রয়েছেন অতিজন। এই অতিজনের ধ্যান ধারণার উপর নির্ভর করে সমগ্র জাতির ভাগ্য। এক বৃদ্ধের আকুতিতে ইতিহাস পড়ে অবগত হলাম এই জাতির বিরাট পটভূমি। তারা তাদের হারানো স্বকীয়তা ফিরিয়ে এনেছে এক সম্পদলোভী শিয়ালের কাছ থেকে আর একবার মাংসাশী হায়নার থেকে।বিনিময়ের মাধ্যম ছিলো জীবনের পর জীবন। এই জীবন সুধীজন বা অতিজনদের নয়, ছিলো নির্জীবদের, যারা আজও নির্জীব, নিরাকার। আর এই অর্জনের পর আশাহতভাবে জাতির অগ্রগতির দ্বায়িত্ব অর্পিত হয় অতিজনদের উপর।
পাগলাদেশের চার প্রধান নীতি নির্ধারক হলেন-বিশুদ্ধপাগলা, শুদ্ধপাগলা, অন্ধপাগলা, বদ্ধপাগলা। সৌভাগ্যক্রমে কিছুদিন পুর্বে তাদের সম্মিলিত এক সভায় আমি যোগদানে সমর্থ হই। সভায় বিশুদ্ধপাগলার এক প্রতিনিধি শুদ্ধপাগলাকে উদ্দেশ্য করে বললেন- “মাননীয় সভাপতি, উনাদের গতদিনের বিধ্বংসী কা্র্যক্রমে ডেমোক্রেসি হুমকির মুখে পড়েছে, তাদের হাতে ডেমোক্রেসি সুরক্ষিত নয়, তাদের এই গর্হিত কাজের বিচার করতেই হবে, অন্যথায় জাতি কলঙ্কমুক্ত হবে না”। শুদ্ধপাগলার এক প্রতিনিধি সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্দেশ্য করে সভাপতিকে বললেন- “মাননীয় সভাপতি,কোথায় আজ গণতন্ত্র ? গণতন্ত্র আজ ভূলুণ্ঠিত, চারিদিকে আজ স্বৈরতন্ত্রের দামামা বাজে, উনি গনতন্ত্রের কথা বলেন কোন মুখে? উনিতো গনতন্ত্রের মানেই জানেন না, উনার লজ্জা থাকা উচিত”।প্রতিউত্তরে বিশুদ্ধপাগলার এক প্রজ্ঞবান প্রতিনিধি বললেন- “Honourable speaker, Democracy is the……uuu, uuu, Honourable speaker, Democracy is the…….uuu,uuu……(democracy এর সংজ্ঞা মুখস্থ করেছিলেন কিন্তু ভুলে গেছেন)। তাই ভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিলেন, তিনি বললেন-"মাননীয় সভাপতি, সারা জীবন দেশের মধ্যে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে কী আর patriotism বোঝা যায়, আপনারা নিশ্চয় জানেন মহাকবি পাগলাদত্ত যখন বিদেশে ছিলেন কেবল তখনই তিনি patriotism অনুধাবন করেছিলেন নাহলে কি তিনি এত বড় কবি হতে পারতেন? উনি তো patriotismই বোঝেন না, democracy বুঝে লাভ কি?" তাকে সমর্থন করে তার এক পেয়াদা বললেন-“মাননীয় সভাপতি, আমাগো দাদারা স্বাধীনতা আইনা দিছিলো বোইলাতো আজকা হেই ড্যামক্রাছি, হুনার সৌভাগ্য যে হুনি হেইহানে দাড়াঁইয়া কথা কইবার পারতাছে,ড্যামক্রাছি শুধু আমাগো মুখে ছোভা পায়, হুনাদের না”। (সকলে মিলে সজরে করতালি)
এবার শুদ্ধপাগলার এক প্রতিনিধি বললেন-“মাননীয় সভাপতি, অবাক লাগে উনারা গণতন্ত্রের কথা বলেন, সারা জীবন ছিলেন বিদেশে আর এখন দেশে এসে দেশপ্রেমের কথা বলেন। উনারা ভাল করেই জানেন আমাদের পূর্বসূরীরাই গণতন্ত্রের স্থপতি আর গণতন্ত্রের স্রোতধারা অটুট রাখার জন্যই কখনও ঘরের বাহির হইনি, বিদেশে লেখাপড়ার অনেক সুযোগ পেয়েছি (স্বপ্নে, বাস্ববে নয়, কারণ কথিত আছে এই অতিজন জীবনে কোনো পরীক্ষায় পাস করেননি কিন্তু সার্টিফিকেট আছে অনেক)কিন্তু দেশের মায়ায়, দেশের ভবিষ্যত চিন্তায় যাইনি, এমনকি কখনও পত্র-পত্রিকাও পড়িনি পাছে বিদেশের প্রতি মায়া জন্মায়” (সকলে মিলে সজরে করতালি)। তাকে সমর্থন করে তার এক পেয়াদা বললেন-“মাননীয় সভাপতি, এই যে আমি জীবনে কোনো দিন বাংলা ছাড়া অন্য ভাষা ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখিনি পাছে মাতৃভাষার হানি ঘটে, গণতন্ত্র ক্ষুন্ন হয়।আর উনারা কিনা বলেন গণতন্ত্রের কথা ছি!ছি!ছি!(সকলে মিলে সজরে করতালি)
এবার অন্ধপাগলার এক সুমিষ্ট প্রতিনিধি বললেন-“মাননীয় সভাপতি, এইসব গণতন্ত্র কিংবা মাতৃভাষার কথা বলে কী আর পরজীবনে পার পাওয়া যাবে, আসুন সবাই মিলে ধর্মতন্ত্রের আলোচনা করি, স্রষ্টার ভাষায় কথা বলি"। (তিনি গণতন্ত্র বা মাতৃভাষার কথা বলতে পারলেন না এজন্য যে কথিত আছে তারা একসময় হায়নাকে সমর্থন করতেন)। তিনি নাকি গত রাতে স্রষ্ঠার কাছে গিয়েছিলেন, স্রষ্টা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন- “তুই কে?” উত্তরে তিনি বললেন-“আমি আপনারই গোলাম” “কোন গোলাম?” “জ্বি মালিক, খাঁটি গোলাম” “তোর বেশভূষাতে তো মনে হয় না” “জ্বি মালিক, প্রয়োজনে বদলে গেছি, সময় এলে পাল্টে যাব”।
এবার বদ্ধপাগলার এক আশি ঊর্দ্ধ রোমান্টিক প্রতিনিধি(যিনি একজন মহাকবিও বটে, যিনি কয়েদখানায় বসে শুধু কাব্যিক বুলি আওড়াতেন)বললেন-“মাননীয় সভাপতি, আজ সমস্ত জাতি আমাদের কথা শুনছে, আমাদের উচিত গণতন্ত্র, জনতন্ত্র, ধনতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, যৌনতন্ত্র সব বিষয় নিয়ে কথা বলা, আমার তান্ত্রিক পাগলারশির পীর বলেছেন-“তন্ত্রেই যুক্তি, তন্ত্রেই ঘটে মুক্তি”।
আলোচনা চলাকালে হঠা্ৎ বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিলে সৃষ্টিকর্তাকে অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলাম কারণ এমন সুগুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক আলোচনা যেখানে হয় সেই সভা পরিচালনায় যে টাকা খরচ হয় তা দিয়ে একটি অঞ্চলের মানুষের ভরন-পোষণ ঢালাও ভাবেই করা যায়।
সভাস্থল থেকে বেরিয়ে সুসজ্জ পথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সামঞ্জস্যতার কারণে গীতিকার খান আতাউর রহমানের একটি গান মনে পড়ল-“হায়রে আমার মন মাতানো দেশ, হায়রে আমার.................কাজের কথা মনে ধরে না”।