১. ক্লাস সেভেনে প্রথম যখন ক্যাডেট কলেজে যাই তখন কিছুটা মন কেমন করলেও খুব খারাপ লাগতেছিল না। কিন্তু প্রথম টার্মের ছুটির শেষে বাসা ছেড়ে আবার যখন কলেজে যাওয়ার সময় হল তখন মন খুব খারাপ হল। আমার জীবনের অন্যতম মন খারাপের দিন। এতো খারাপ যে তিরিশ বছর আগের তারিখটাও স্পস্ট খেয়াল আছে। ৪ঠা সেপ্টেম্বর ১৯৮৬। এরপর প্রতি ছুটির শেষে মন খারাপ করে কলেজে ফিরতাম। আমাদের ক্লাসের প্রায় প্রত্যেকেই। এক বছর পর ক্লাস এইটের শেষের দিকে আমার মনে হতে লাগলো এক বাসা ছেড়ে আর এক বাসায় যাচ্ছি। অনেকটাই পছন্দ করি যে জায়গা। অর্থাৎ আমাদের সেটেল হতে মোটামুটি এক বছর লেগেছিলো। এখন আমাকে যদি জিজ্ঞেস করেন সব থেকে ভালো কলেজ কোনটা? বা তোমার সব থেকে ভালো বন্ধু কারা? বা তোমার কোথায় বার বার ফিরে যেতে ইচ্ছা করে? আমার মনে হয় এর উত্তর আপনাদের জানা আছে।
২. এই আমিই জীবনের অন্যতম মন খারাপের দিন কাটিয়েছি যেখানে যেতে হবে বলে - এখন ঠিক ওই জায়গাই প্রচন্ড মিস করি। এখন মন খারাপ থাকে সেখানে যেতে পারি না বলে।
তাহলে কোনটা সত্য? আমার ক্লাস সেভেনের মন খারাপ না এখনকার এই তীব্র আবেগ? যেটা পরের সেটা - না যেটা আগে বলা হয়েছে সেটা। কে মিথ্যাবাদী? ক্লাস সেভেনের আমি না তার পরের আমি?
৩. আমাদের মনের চোখে সব সময় এক একটি রঙিন চশমা থাকে। এক এক জনের চোখে এক এক রঙের। কখনো আবেগে, কখনো অভিজ্ঞতায়, কখনো বা দৃষ্টিভঙ্গির কারনে আমাদের চোখের চশমার রঙ বদলায়। সকালে যাকে মনে হয় রঙিন বিকালে তাকে নিশ্চিত ভাবে কাল মনে হয়। আমরা যার যার প্রিয় মানুষদের দেখি আমাদের আবেগের রঙের চশমা দিয়ে। তাই তাদের ভুল ত্রুটি আমাদের চোখে পড়ে না। একই ভাবে সব কিছুই আমরা বিচার বিশ্লেষণ করি মনের চোখে চশমা পড়ে। কেউ কেউ থাকে যাদের জীবনের সব কিছু আটকিয়ে আছে অর্থের অভাবের কারনে। তারা পৃথিবীকে যেভাবে দেখতে পায় - যারা সাহসী তারা আবার দেখে ভিন্ন ভাবে।
৪. কিছু দিন থেকে খবরে যা দেখি তাতে মনে হয় পৃথিবী খুব খারাপ সময় কাটাচ্ছে। কেউ কারো প্রতি সহানুভুতি দেখানোর মন মানসিকতায় নাই। যার যার আবেগকেই সবাই প্রাধান্য দিতেছে। একেক জন নিজের চোখের চশমার রংকেই সঠিক ভাবতেছে। অসহনিয়তা ক্রমে ক্রমে রুপ নিচ্ছে ধ্বংসাত্মক পরিণতিতে। সবাই নিজের কাছে সঠিক। এই ভ্রান্ত ধারনাকে পুঁজি করে অপরের অধিকারকে হেয় করতেছে। এইটাকেও কেউ অপরাধ মনে করতেছে না।
আমাদের মনে রাখতে হবে - আমাদের সবাইকে খালি চোখে দেখতে হবে দিনের সাদা আলোয়। কেবলমাত্র
শিক্ষা, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, চিন্তাশীলতা, সহনশীলতাই তা নিশ্চিত করতে পারে।
(ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে।)