এথলেটিক বিলবাও: নিজ জাতিসত্ত্বার বাইরের কোনো খেলোয়াড়কে খেলায় না যে ক্লাবটি

Author Topic: এথলেটিক বিলবাও: নিজ জাতিসত্ত্বার বাইরের কোনো খেলোয়াড়কে খেলায় না যে ক্লাবটি  (Read 1121 times)

Offline nafees_research

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 344
  • Servant of ALLAH
    • View Profile
এথলেটিক বিলবাও: নিজ জাতিসত্ত্বার বাইরের কোনো খেলোয়াড়কে খেলায় না যে ক্লাবটি
স্পেনের সফল দলগুলোর নাম বলতে বললে কোন কোন দলের নাম বলবেন? নিশ্চয়ই একবাক্যে রিয়াল মাদ্রিদ আর বার্সেলোনার কথা বলবেন। এরপরই আসবে হালের এটলেটিকো মাদ্রিদ, সেভিয়ার নাম। কিন্তু তাদের সমস্ত সাফল্য কি কেবল নিজেদেরই অবদান? না।

ধরুন, রিয়ালের কান্ডারী এক পর্তুগিজ রোনালদো, বার্সার কান্ডারী আর্জেন্টাইন মেসি, এটলেটিকো মাদ্রিদের আছে ফরাসি গ্রিজম্যান। আবার দলবদলের বাজারেও এদের কর্মকান্ড বেশ চোখে পড়ার মতো। কিছুদিন আগ অবধিও দলবদলের বাজারে রিয়ালের চমক থাকতোই। ইদানীং বার্সেলোনাও কম যাচ্ছে না। বর্তমানে রিয়াল, বার্সা, পিএসজি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, সিটি, চেলসিরা যখন দলবদলের বাজারে কাঁড়িকাঁড়ি টাকা ঢালছে তখন স্পেনেরই একটি বড় দল আছে যারা কেবল নিজের প্রদেশ তথা জাতিসত্ত্বার বাইরের কোনো খেলোয়াড়কে দলে ভেড়ায় না। দলটির নাম এথলেটিক বিলবাও।

সূত্রপাত
স্পেনে মূলত যে দুটি স্বাধীনতাকামী অঞ্চল আছে তাদের একটি হলো বাস্ক। বাস্ক অঞ্চলের বড় দুটি ক্লাবের একটি হলো এথলেটিক বিলবাও ও অপরটি রিয়াল সোসিয়েদাদ। ১৮৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এথলেটিক বিলবাও ১৯১২ সালে প্রথম এই নীতি গ্রহণ করে যে, তাদের ক্লাবে যেসব খেলোয়াড় খেলবেন তারা হয় জন্মসূত্রে বাস্কের স্থায়ী নাগরিক অথবা বংশসূত্রে ‘বাস্ক’ হতে হবে। বাস্কের জনসংখ্যা কাতালোনিয়ার প্রায় সমান। ফ্রান্সের স্পেন সংলগ্ন অঞ্চলেও কিছু ‘বাস্ক’ থাকেন যারা এই ক্লাবে খেলার যোগ্য বলে বিবেচিত হন। উদ্দেশ্য ছিল নিজেদের চরম জাত্যাভিমানকে সমগ্র স্পেন তথা বিশ্বের কাছে তুলে ধরা। কিঞ্চিৎ বা অধিক যা-ই হোক, সাফল্যের সবটা আনন্দ তীব্র জাতীয়তাবোধের মিশেলে উপভোগ করা। তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল সোসিয়েদাদও একই নীতিতে চলছিল কিন্তু বিংশ শতাব্দীর শুরুতে তা ত্যাগ করে। ফলে বর্তমানে ইউরোপে বড় দলগুলোর মধ্যে কেবল এথলেটিক বিলবাওই এই সংস্কৃতি বহন করে চলেছে।

প্রকৃতপক্ষে স্পেনের তৃতীয় বৃহৎ ক্লাব এথলেটিকো মাদ্রিদ বা সোসিয়েদাদ নয়, এই এথলেটিকো বিলবাওই। ৮টি লিগ ও ২৪টি স্প্যানিশ কাপ নিয়ে ট্রফি সংখ্যায় তারা ঠিক রিয়াল ও বার্সার পিছনেই। স্পেনের যে ৩টি দলের কখনো অবনমন হয়নি তার মধ্যে রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সার সাথেই উচ্চারিত হয় এই ক্লাবের নাম। রয়েছে দারুণ এক সমর্থকগোষ্ঠী যারা বছরের পর বছর শিরোপাহীন থাকতে রাজি, কিন্তু প্রিয় ক্লাবের এই নীতিকে বিসর্জন দিতে রাজি নয়। অথচ জেনে অবাক হবেন, এই নীতি ক্লাবের কোনো নিয়মের খাতায় লিখা নেই। কোনো ক্লাব প্রেসিডেন্ট চাইলে আজই প্রথা ভেঙে নন-বাস্ক কাউকে খেলাতে পারবেন। কিন্তু বিলবাও সমর্থকদের একটি দারুণ সন্তুষ্টি যে, কোনো প্রেসিডেন্ট বা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীই এই প্রথার বাইরে যাননি বা এ নিয়ে ভাবেনওনি।

যেভাবে উঠে আসে প্রতিভা
এটা আসলেই একটি জিজ্ঞাসার বিষয় যে, কিভাবে তারা এত খেলোয়াড় নিয়ে আসে? পুরো বাস্ক প্রদেশের আয়তন আমাদের রাজশাহী বিভাগের চেয়ে (আলোচনার সুবিধার্থে একটি বিভাগকে ধরে নেওয়া হলো) খানিকটা বেশি আর বিদ্যমান বাস্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা রাজশাহীর জনসংখ্যার তিনভাগের একভাগ! এখনই চোখ কপালে তুলবেন না। এই বাস্ক জনগোষ্ঠী আবার দুই ক্লাবে বিভক্ত। তাহলে একবার ভাবুন তো, এত কম সংখ্যক জনগোষ্ঠী থেকে খেলোয়াড় বের করে করে বিলবাও আজ স্পেনের তৃতীয় বৃহৎ ফুটবল ক্লাব!

খেলোয়াড় তুলে আনার শুরুটা হয় বাস্কোনিয়া নামের একটি স্থানীয় ক্লাব থেকে। এই ক্লাবটি স্পেনের চতুর্থ বিভাগে খেলে। বাস্কোনিয়া সম্ভাব্য সকল তরুণ আগ্রহীদেরকে খেলার সুযোগ দেয়। এদের মধ্যে যারা সম্ভাবনাময় তাদের পরবর্তী ধাপের জন্য পাঠানো হয়। পরবর্তী ধাপ হলো বিলবাও বি দলে। সেখান থেকে আরো এক দফা বাছাই করে মূল দলে খেলার জন্য পাঠানো হয়। এই পুরো প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত থাকে প্রাক্তন খেলোয়াড়রা। অর্থাৎ সেই প্রদেশে কোনো তরুণের মধ্যে বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা থাকলেও তাকে ক্লাব ঠিকই নিজেদের রাডারে ধরে ফেলবে।

প্রচন্ড আগ্রহী ও ব্যতিক্রমধর্মী সমর্থকগোষ্ঠীর জন্য বিলবাও এর স্পেন জুড়েই রয়েছে অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী। মাঠের মধ্যে তারা এখনো কোরাস তুলে গান গায়, “আমাদের একাডেমি থাকতে টাকার কী দরকার!” ক্লাবটি তুলে এনেছে সাম্প্রতিক সময়ে আদুরিজ, লরেন্তে, জাভি মার্তিনেজ, হেরেরা, মুনিয়াইন, উইলিয়ামসদের মতো খেলোয়াড়। কিন্তু শ্যেন নজর তো থাকেই বড় ক্লাবগুলোর। যেহেতু বিলবাও পুরোটাই একাডেমিভিত্তিক, তাই বড় ক্লাবগুলো তক্কে তক্কে থাকে তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়ে নেওয়ার জন্য।

খেলোয়াড় বিক্রির নীতি কিছুটা বদলেছে ক্লাবটি। যেহেতু ভালো খেলোয়াড় বের করে আনা তাদের জন্য বেশি কষ্টের, তাই আগে সাধারণত খেলোয়াড় বিক্রি করতো না তারা। চুক্তি শেষ হলে তবেই তাদের ছাড়তো। বলে রাখা ভালো, চুক্তি শেষ হয়ে গেলে সেই খেলোয়াড় যদি দলবদল করে তবে আগের ক্লাব কোনো টাকা পায় না। দেখা গেল, কোনো এক খেলোয়াড়ের চুক্তির দুই বছর বাকি। বড় কোনো ক্লাব তাকে ভালো অঙ্কের টাকা দিয়ে নিতে চাচ্ছে, তা-ও বিলবাও সেই খেলোয়াড় বিক্রি করতো না।

একবছর পর ফ্রিতে ছেড়ে দিতো, কিন্তু চুক্তি শেষ হওয়ার আগে তাদের ছাড়তে দিত না। এর কারণও পরিস্কার, এত দ্রুত তাদের পক্ষে একজন খেলোয়াড়ের বদলি আরেকজন জোগাড় করা ছিল কষ্টসাধ্য। কিন্তু সাম্প্রতিককালে ক্লাব তার নীতি বদলেছে। মার্তিনেজ, হেরেরা বা লাপোর্তেদের বিক্রি করেছে চড়া দামে। উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, হেরেরাকে কিনেছিল মাত্র ৫ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে আর বিক্রি করেছিল ৪০ মিলিয়ন ইউরোতে। এই অর্থের বেশিরভাগই তারা ব্যবহার করে একাডেমিতে। তাই স্টেডিয়াম নির্মাণের সময় দাতার অভাব হয়নি তাদের।

মুদ্রার ওপিঠ
এথলেটিক বিলবাও এর এই নীতি নিয়ে বেশ সমালোচনাও আছে। অনেকের কাছেই এই নীতি প্রচন্ড বৈষম্যমূলক। অনেকে তাদের এই নীতিকে বর্ণবাদী হিসেবেও আখ্যা দিত। ২০১১ সালের আগে বিলবাও ক্লাবে কোন কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড় ছিল না। সেই ২০১১ সালেই এই সমালোচনার সমাপ্তি ঘটে। বর্তমানে ক্লাবের সবচেয়ে প্রতিভাবান ও উপভোগ্য আক্রমণভাগের খেলোয়াড় ইনাকি উইলিয়ামস কৃষ্ণাঙ্গ। এখনো কিছু সমর্থক চান যে, তাদের ক্লাবে কোনো কৃষ্ণাঙ্গ যেন না খেলেন।

খেলোয়াড়ের বেলায় ‘কেবলমাত্র বাস্ক’ নীতি থাকলেও কোচের বেলায় এই নীতি নেই। বস্তুত বিলবাও এর মূল সাফল্যই এসেছে দুই ব্রিটিশ কোচের হাত ধরে। তবে এটাও বলতে হবে যে, বিলবাও এর কোচ বাছাই দারুণ মানের। পেপ গার্দিওলার গুরু বিয়েলসা, বর্তমান বায়ার্ন কোচ হেইঙ্কেস বা হালের বার্সা কোচ ভালভার্দেরা একসময় এই ক্লাবেই কোচিং করিয়েছেন।

সমালোচনার বাইরে গিয়ে একবার ভাবুন, একটি ক্লাব নিজেদের প্রদেশকে দেশ জ্ঞান করে নিজেদের সেই দেশের প্রতিনিধি ভেবে কেবলমাত্র নিজেদের জাতিসত্ত্বার খেলোয়াড় তুলে এনেই ক্লাব চালাচ্ছে এমন এক যুগে যে যুগে টাকাই সব। বানিয়েছে বিশাল এক স্টেডিয়াম যে স্টেডিয়াম যেকোনো ক্লাবের জন্যই দুর্গ। এমন একটা সময় এমন একটা লিগে তারা তরুণ খেলোয়াড়দের সুযোগ দিচ্ছে যখন বড় দলগুলো পরীক্ষিত প্রতিভা ছাড়া দলে কাউকে জায়গা দিতে চায় না।

দুই ম্যাচ খারাপ খেললে অনেক ক্লাবে তরুণ খেলোয়াড়দের বিদায় ঘন্টা বেজে যায় যেখানে বিলবাও ম্যাচের পর ম্যাচ তরুণদের সুযোগ দেয় পরিণত হওয়ার। সেই সময়টাতে তাদেরই ভুলে ম্যাচ হারে কিন্তু সমর্থকরা তাতে নির্লিপ্ত। কী তীব্র জাতীয়তাবোধ! পকেটের টাকা খরচ করে টিকিট কেটে গিয়ে আনকোরা ভুল দেখতে কষ্ট হয় না এই সমর্থকগোষ্ঠীর, তারা এতেই সন্তুষ্ট যে, মাঠে যারা খেলছেন তারা আর গ্যালারিতে যারা বসে আছে তারা একই সত্ত্বার। ৩১ বছর আগে সর্বশেষ বড় কোনো শিরোপা জিতেছিল দলটি।

সেই সময়ে হাঁটি হাঁটি পা পা করা শিশুটিও আজ পরিণত। তারই সমবয়সী কোনো বার্সা বা রিয়াল সমর্থক যখন এক মৌসুম শিরোপা না জিতলেই গেল গেল রবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তোলে তখন সেই লাল-সাদা জার্সিতে কেবল একটি দলকে ‘দল’ হিসেবে দেখে না, দেখে নিজের জাতিসত্ত্বা হিসেবে। ২০১২ সালে বিলবাও ইউরোপা লিগের ফাইনালে এটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে হেরে যায়, প্রথমবারের মতো হারায় ইউরোপিয়ান শিরোপা জেতার সুযোগ। মাঠে কিংবা বাস্কের কোনো পানশালায় বিলবাও সমর্থকরা অনেক কেঁদেছিলেন। ধাতব শিরোপা তাদের ভাগ্যে জোটেনি ঠিকই, কিন্তু স্বজাত্যবোধের যে উদাহরণ হয়ে আছে এতদিন তার মূল্যই বা কম কিসে?

Source: https://roar.media/bangla/main/sports/athletic-bilbao-which-only-plays-basque-players/
Nafees Imtiaz Islam
Deputy Director, IQAC, DIU and
Ph.D. Candidate in International Trade
University of Dhaka

Tel.:  65324 (DSC-IP)
e-mail address:
nafees-research@daffodilvarsity.edu.bd  and
iqac-office@daffodilvarsity.edu.bd

Offline Anuz

  • Faculty
  • Hero Member
  • *
  • Posts: 1988
  • জীবনে আনন্দের সময় বড় কম, তাই সুযোগ পেলেই আনন্দ কর
    • View Profile
Anuz Kumar Chakrabarty
Assistant Professor
Department of General Educational Development
Faculty of Science and Information Technology
Daffodil International University