বাংলাদেশের মোবাইল খাতের জন্য ২০১১ ছিল একটি সফল বছর। বিশেষ করে মোবাইল নেটওয়ার্ক বিস্তৃতি, নতুন নতুন সেবা প্রবর্তন, বিভিন্ন অপারেটদের মধ্যে অবকাঠামো ভাগাভাগি, ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রসার এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় মোবাইল ফোনের সুবিধা পৌঁছে দিতে সচেষ্ট থেকেছে। এই সময় মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এবছর দেশের প্রধান চারটি মোবাইল অপারেটরদের লাইসেন্স প্রাপ্তির ১৫ বছর পূর্ণ হয়। গত ১৫ বছর ধরে মোবাইল অপারেটরগণ দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের অগ্রগতিতে নেতৃত্ব দিয়েছে। তবে এই সব সাফল্যের মাঝেও সারা বছরই লাইসেন্স নবায়ন নিয়ে টেলিকম শিল্পে একধরণের অস্থিরতা বিরাজ করেছে।
একদম তৃণমূল মানুষের কাছে টেলিযোগাযোগ সেবা নিয়ে যাওয়া হয়েছে ২০১১ সালে
২০১১ তে গ্রাহক বৃদ্ধির ধারা ছিল সন্তোষজনক। বিটিআরসি’র তথ্য অনুসারে ২০১০ সালের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৬৮.৬৪৫ মিলিয়ন। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৮০.৯১১ মিলিয়নে। বছরশেষে এই সংখ্যা ৮৫ মিলিয়নে গিয়ে দাঁড়াবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এর ফলে প্রথমবারের মতো দেশের টেলিফোন ঘনত্ব শতকরা ৫০ ভাগ ছাড়িয়ে গেছে অর্থাৎ প্রতি ২ জন মানুষের মধ্যে ১ জনের হাতে টেলিফোন পৌছে গেছে। সাশ্রয়ী কল চার্জ ও সংযোগমূল্য, নতুন নতুন প্রযুক্তি প্রচলনের ফলে গ্রাহকসংখ্যা বেড়েছে।
দ্রুত গতির মোবাইল ইন্টারনেট সেবা প্রদানেও মোবাইল প্রযুক্তি এগিয়ে রয়েছে। ভয়েস সার্ভিসের চাহিদা বাড়ারা সাথে সাথে ইন্টারনেটের বাজারেও তীব্র প্রতিযোগিতা দেখা গেছে ২০১১ সালে। আর এর সুবিধা সত্যিকারভাবেই গ্রহন করে নিয়েছেন গ্রাহকরা। যার ফলশ্রুতিতে এ বছরে মোবাইল ফোন প্রতিষ্ঠানগুলো মোট বাজারের ৯০ শতাংশের বেশি দখলে রেখেছে। দেশে স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ সাইট, যেমন ফেসবুক ইত্যাদি ব্যবহার বাড়ার ফলে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের চাহিদা বেড়েছে। অনেকেই এই সব সাইটগুলোতে লগ-অন করছেন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। দেশের সবগুলো অপারেটরই তাদের গ্রাহকদের জন্য নিয়ে আসছে আকর্ষণীয় সব প্যাকেজ। এছাড়া বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং কর্পোরেট অফিসগুলোতেও বেড়েছে ইন্টারনেটের ব্যাবহার। দৈনন্দিন ই-মেইল আদান-প্রদান ছাড়াও বড় বড় ডাটা প্রেরিত হচ্ছে। ইন্টারনেট সেবার চাহিদা শুধু সমাজের একটি বিশেষ পর্যায়ের গ্রাহকদের মধ্যেই থেমে থাকেনি, চাহিদা এসছে অপেক্ষাকৃত নিন্ম আয়ের গ্রাহকদের কাছ থেকেও। আর এজন্যই গ্রাহকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে ২০১১ সালে মোবাইল প্রতিষ্ঠানগুলো ইন্টারনেট মিনি প্যাক চালু করে। এটির মূল উদ্দেশ্য ছিল ফোনের মাধ্যমে ব্যবহারকারী গ্রাহকদের কাছে সাশ্রয়ী ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়া। এর ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের হাতের নাগালে চলে এসেছে ইন্টারনেট ।
বাংলাদেশে ফিক্সড লাইন ইন্টারনেট অবকাঠামোর অভাবের ফলে মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যাপক চাহিদা আছে। এই চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে মোবাইল অপারেটররা এজ ও জিপিআরএস-এর ইন্টারনেট প্রদান করে যাচ্ছে। তবে উন্নত ব্রডব্যাড সেবা দিতে থ্রি-জি প্রযুক্তির বিকল্প নেই। আর অপারেটররা তাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে থ্রি-জি লাইসেন্স-এর জন্য। এই প্রযুক্তি চালু হলে ইন্টারনেটের ব্যবহার আরও বাড়বে এবং নতুন নতুন সেবা চালু করা সম্ভব হবে। গ্রামেও ইন্টারনেট সেবার প্রসার ঘটবে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। তবে এই বিষয়ে সরকার ও বিটিআরসি এর কাছ থেকে এখনো কোন সবুজ সংকেত পাওয়া যায় নি। থ্রিজি প্রচলনের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা এদেশের মানুষকে তথ্য প্রযুক্তির পূর্ণ সুফল থেকে বঞ্চিত করবে এবং দেশও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
রিমোট এলাকাতে মোবাইল সেবা প্রদান ছিল ২০১১ সালের মূল লক্ষ্য। হবিগঞ্জের আজমেরি গঞ্জ উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে সৌর চালিত বিটিএস। ছবি: গ্রামীণফোন
নতুন নতুন সার্ভিস প্রদানের ক্ষেত্রে মোবাইল প্রতিষ্ঠানগুলো সবসময়ই এগিয়ে থেকেছে। ইউটিলিটি বিল পরিশোধ,ট্রেন টিকেট ক্রয়, অর্থ স্থানান্তর থেকে শুরু করে ইংরেজি শেখা সবই সম্ভব হচ্ছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। গ্রামীণফোনের মবি ক্যাশের মাধ্যমে এখন ২৫% ইউটিলিটি বিল পরিশোধ এবং ২০% ট্রেন টিকেট ক্রয় করা হচ্ছে। এছাড়াও রবি সম্প্রতি নতুন সেবা চালু করেছে “রবি অর্থ†যা গ্রাহকদের মোবাইলের মাধ্যমে ইউটিলিটি বিল (ওয়াসা, ঢাকা অঞ্চল) দিতে সাহায্য করছে। এইসব সুবিধার কারণে মানুষের জীবনযাত্রা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। এখন বিল পরিশোধ করতে ব্যাংকের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার কোন প্রয়োজন নেই, এবং এটি একটি সম্পূর্ণ নিরাপদ সেবা। গ্রামীণফোন ও বাংলালিংকের জরুরী চিকিৎসা বিষয়ক উপদেশ এবং সমর্থনের জন্য হেলথ লাইন সেবা চালু করেছে যা একটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ। সম্প্রতি ব্র্যাক ব্যাংক মোবাইল অপারেটরদের সহযোগিতায় বি-ক্যাশ নামে একটি সেবা চালু করেছে যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলেও টাকা উত্তোলন, জমা দেয়া ও অর্থ হস্তান্তর করতে পারবেন। রবি প্রথম অপারেটর হিসাবে বিক্যাশের সাথে যুক্ত হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে অন্যান্য মোবাইল প্রতিষ্ঠানগুলো শীঘ্রই এর সাথে যুক্ত হবে। যেকোন মোবাইল ব্যবহারকারী একটি বি-ক্যাশ অ্যাকাউন্ট খুলে তাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সহজ, সুবিধাজনক এবং নির্ভরযোগ্য উপায়ে লেনদেনের জন্য নিবন্ধন করতে পারেন। একই রকম সেবা দিচ্ছে ডাচ বাংলা ব্যাংক। মোবাইল ব্যাংকিং এবং পেমেন্ট বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি আনতে পারে। মোবাইল ফোন প্লাটফর্ম-কে ব্যবহার করে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে বিবিসি। বিবিসি জানালার মাধ্যমে বাংলাদেশের ২.৫ কোটি মানুষের ইংরেজি ভাষা শিক্ষার উন্নতির জন্য বিবিসির ইংলিশ ইন অ্যাকশান কার্যক্রম চালু হয়েছে। মোবাইল ফোনের ব্যবহারের কারণে এই উদ্যোগটি দ্রত জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং ২০১১ তে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করে। এর মধ্যে আছে জিএসএমএ পুরস্কার, এমবিলিয়ন্থ পুরস্কার এবং ওয়ার্ল্ড ইনোভেশন সামিট অন এডুকেশন পুরস্কার।
নেটওয়ার্ক বিস্তৃতির দিকে যদি তাকাই তাহলে দেখা যাবে যে, ২০১১ সালে মোবাইল অপারেটররা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও তাদের সেবার বিস্তার ঘটিয়েছে। অপারেটররা সারা দেশে এ পর্যন্ত স্থাপিত প্রায় ৩৩,০০০ বিটিএস-এর জন্য ১৯,০০০ সাইট/টাওয়ার স্থাপন করছে। শুধু ২০১১ সালে সকল অপারেটর মিলে নির্মিত নতুন বিটিএস সাইটের সংখ্যা ১,৩০০ এর কাছাকাছি। এ বছর নতুন অপারেটর এয়ারটেল অনেক নতুন এলাকায় তার নেটওয়ার্কের বিস্তার ঘটিয়েছে। মোবাইল প্রতিষ্ঠানগুলোর এই নেটওয়ার্ক সম্প্রসারন এখন দেশের ৯৯ শতাংশ জনসংখ্যা এবং ৯০ শতাংশ ভৌগলিক এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। নেটওয়ার্ক সম্প্রসারনের এমন দৃষ্টান্ত পৃথিবীর অনেক দেশেই পাওয়া যায় না। এছাড়াও অবকাঠামো ভাগাভাগির মাধ্যমে ব্যবহৃত হয়েছে ১,৩২৫ টি সাইট, যার মধ্যে ৮০০ সাইটই গ্রামীণফোনের। ২০১১ সালের নেটওয়ার্ক বিস্তৃতির ৫১ ভাগই সম্পন্ন হয়েছে অবকাঠামো ভাগাভাগির মাধ্যমে। অবকাঠামো ভাগাভাগি অনুশীলন ২০০৯-এর শেষ থেকে শুরু হয়েছিল এবং ২০১০ সালে জিপির ভুমিকা ছিল অগ্রণী। ২০১১ সাল থেকে সব অপারেটররা সম্পূর্ণরূপে অবকাঠামো ভাগাভাগির ব্যবহার শুরু করে। অবকাঠামো ভাগাভাগির ফলে অপারেটররা অনেকগুলো সুবিধা পাচ্ছে। এর ফলে তাদের মূলধনী ব্যয় কমার পাশাপাশি জমি ও বিদ্যুতের ব্যবহার সাশ্রয় হয়েছে, কম কার্বন নির্গমন, দ্রুত নেটওয়ার্ক বিস্তার করতে পেরেছে। এই অবকাঠামো ভাগাভাগির ফলে বিদ্যমান নেটওয়ার্কের সর্বোচ্চ ব্যবহার সম্ভব হয়েছে।
সোলার পাওয়ার দিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে মোবাইল সেবা
মোবাইল কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের সংগীতকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। অডিও পাইরেসির কারণে বাংলাদেশের সংগীত শিল্প প্রায় ধ্বংসের মুখে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট শিল্পী এবং অডিও ব্যাবসায়িরা। অডিও শিল্পকে এই পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছে মোবাইল কোম্পানিগুলো। ইতিমধ্যে তারা অনেক জনপ্রিয় শিল্পীদের অ্যালবাম ডিজিটালি রিলিজ করছে। এতে যেমন শিল্পীরা পাইরেসি থেকে রক্ষা পাচ্ছেন, তেমনি গ্রাহকরাও তাদের পছন্দের শিল্পীর গান সহজেই ডাউনলোড করে শুনতে পাচ্ছে। এর মাধ্যমে অডিও পাইরেসি আনেকাংশে কমে এসেছে এবং শিল্পীরা তাদের যথাযথ সম্মানী পাচ্ছেন।
ভূমি স্বল্পতা, পরিবেশ দূষণ কমানো ও বিদ্যুৎ ব্যাবহার সাশ্রয়ী করার জন্য অপারেটররা পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকছেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন অপারেটর সৌর বিদ্যুৎ-চালিত বিটিএস স্থাপন করেছে। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারে গ্রামীণফোন এগিয়ে রয়েছে। গ্রামীণফোনের পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি বেছে নেয়ার পেছনে বড় কারণ তীব্র বিদ্যুৎ সংকট যা মোবাইল নেটওয়ার্কের ভবিষ্যতের বিস্তারে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। বিদ্যুৎ চাহিদা এবং সরবরাহের মাঝে বিস্তর ফাঁক থাকাতে এই উদ্যোগ একটি বিকল্প ভুমিকা পালন করবে। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির কারণে অবকাঠামো ভাগাভাগি, সাশ্রয়ী খরচ, কম শক্তি ব্যয়, দ্রুত বাজারজাতকরণ সম্ভব হবে। ৩৭ টি সোলার সাইট ইতিমধ্যে স্থাপিত হয়েছে এবং প্রতিটি সাইটে প্রতি বছর প্রায় ২৫ টন কার্বন ডাই অক্সাইড সংরক্ষণ করা হয় ও আনুমানিক ৯,০০০ লিটার জ্বালানী সঞ্চয় হয়। এই উদ্যোগের ফলে মোবাইলফোন অপারেটররা পরিবেশ রক্ষার কাজে অগ্রণী ভুমিকা পালন করছে। এই প্রযুক্তি এখন সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগাতে এগিয়ে এসেছে মোবাইল অপারেটরগণ। গ্রামীণফোন তাদের একটি সৌরবিদ্যুত চালিত বেসস্টেশনে উৎপাদিত অতিরিক্ত বিদ্যুত আশে পাশের ১৩৬ টি পরিবারের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ব্যবহার করছে।
তবে বিভিন্ন রেগুলেটরি ইস্যু নিয়ে পুরো বছরই টেলিকম খাতে অস্থিরতা বিরাজ করেছে। বছরের শুরু থেকেই ছিল প্রধান চারটি মোবাইল অপারেটর-এর লাইসেন্স নবায়ন নিয়ে জটিলতা। লাইসেন্স নাবায়নের জন্য অস্বাভাবিক অংকের ফি দাবি করা হলে নবায়নকারী অপারেটররা হতাশা প্রকাশ করে। এছাড়া লাইসেন্স নবায়নের সাথে বিভিন্ন লাইসেন্স বহির্ভূত শর্ত যোগ করার চেষ্টা করা হয়। এই বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমেও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে দীর্ঘ আলোচনার পর নবায়ন ফি অনেকটা হ্রাস করা হয়। তবে স্পেকট্রাম ফি নির্ধারনের ক্ষেত্রে এমসিএফ নামের একটি ফ্যাক্টর নিয়ে গ্রামীনফোনের পক্ষ থেকে আপত্তি থাকলেও শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ব্যবসা অব্যাহত রাখার স্বার্থে বিষয়টি মেনে নেওয়া হয়। একই পরিমান স্পেকট্রাম নবায়ন করলেও এমসিএফ অনুযায়ী গ্রামীনফোন মোট স্পেকট্রাম মুল্যের উপর আরও ১.৪৮ গুন বেশি টাকা প্রদান করেছে। বাংলালিংক দিয়েছে ১.০৬ গুন বেশি। অন্যদিকে রবির এমসিএফ .৯৯ এবং সিটিসেলের ০.৩৩ হওয়ায় এ দুটি অপারেটরকে কোন অতিরিক্ত মূল্য দিতে হয়নি বরং অপেক্ষাকৃত কমমূল্য দিতে হয়েছে। বিটিআরসি নবায়নের চূড়ান্ত চিঠিতে মোবাইল অপারেটরদের ২০০৮ সালে ক্রয়কৃত স্পেকট্রামের উপর এমসিএফ ধরে অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করতে নির্দেশ প্রদান করে। যে কারনে নবায়ন প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে এসে নতুন করে জটিলতার সৃষ্টি হলে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
এ বছর প্রথমবারের মতো বিটিআরসি মোবাইল অপারেটরদের কর্মকান্ড নিরীক্ষা (অডিট) করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু অডিটর নিয়োগ দেয়ার সময় থেকেই এই নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয় এবং শেষ পর্যন্ত তা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। যদিও দুটি অপারেটর এর অডিট হবার কথা ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায় শুধু মাত্র গ্রামীণফোনের অডিট করা হয়েছে। এই অডিটের মান নিয়ে কোম্পানিটি সংশয় প্রকাশ করে এবং বিটিআরসি অডিটের ভিত্তিতে বকেয়া পাওনা দাবী করলে প্রতিষ্ঠানটি আইনের আশ্রয় নেয়। এসব কারণে এই খাতে বিনিয়োগকারীরা শংকা প্রকাশ করেন। এছাড়াও অনেক বিশেষজ্ঞ টেলিকম খাতে লেভেল প্লেইং ফিল্ড বিনষ্ট হবার আশংকা প্রকাশ করেন।
আমরা আশা করি ২০১১ সালের অগ্রগতির ধারা ২০১২ সালেও অব্যাহত থাকবে এবং নতুন নতুন সেবা চালু হবে। মোবাইল ফোন আমাদের জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। মুলত এই পরিবর্তনের ধারা শুরু হয়েছে ১৯৯৭ সালে টেলিযোগাযোগখাত উম্মুক্ত করার মাধ্যমে। এইসময় টেলিকম শিল্পের চালচিত্র উল্লেখযোগ্যভাবে বদলে যেতে থাকে। সাশ্রয়ী মূল্যে গ্রাহকরা মোবাইল সেবা উপভোগ করার সুযোগ পান। গ্রামীণফোনের উন্নত ও বিস্তৃত নেটওয়ার্ক বাজারে শীর্ষস্থান ধরে রাখতে সাহায্য করে। মোবাইলফোন কো¤পানিগুলো উন্নত প্রযুক্তি চালুর করার মধ্য দিয়ে দেশের সার্বিক উন্নয়নে সহযোগিতা করেছে। আমরা আশা করি, এই ধারা অব্যাহত থাকবে এবং বাংলাদেশ সরকারের “ডিজিটাল বাংলাদেশ†এর স্বপ্ন বাস্তবায়নে এটি গুরুত্বপূর্র্ণ ভূমিকা পালন করবে।
[লেখক গ্রামীনফোনের চিফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার]