জীবন যেন সিনেমার গল্প

Author Topic: জীবন যেন সিনেমার গল্প  (Read 975 times)

Offline Mrittika Shil

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 213
  • Test
    • View Profile
জীবন যেন সিনেমার গল্প
« on: April 30, 2018, 09:18:20 PM »


ঝোয়াও কোয়ানফেই।ঝোয়াও কোয়ানফেই।ঝোয়াও কোয়ানফেইয়ের জীবনের গল্পটা যেন সিনেমার মতো। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়ে, না খেয়ে না দেয়ে দিনপাত। কঠোর পরিশ্রম করে একসময় প্রতিষ্ঠিত হওয়া। তবে বাস্তবতা হলো কেবল প্রতিষ্ঠিত হয়েই থেমে থাকেননি তিনি। বর্তমানে নিজের চেষ্টায় বিশ্বের শীর্ষ নারী ধনী ঝোয়াও কোয়ানফেই।

উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া ধনসম্পদে নয়, বরং সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টাতেই শত কোটিপতির তালিকায় নাম লেখান ঝোয়াও কোয়ানফেই। ৪৮ বছর বয়সী এই চীনা নাগরিক বর্তমানে নিজের চেষ্টায় প্রায় ৯৮০ কোটি ডলার সম্পদের মালিক। ফোর্বস সাময়িকীর ধনীর তালিকায় চলতি বছর আবারও নিজের চেষ্টায় শীর্ষ নারী ধনীর তালিকায় উঠে এসেছে তাঁর নাম। এ ছাড়া সব মিলিয়ে বিশ্বের ১৬তম নারী ধনী তিনি। ২০১৬ সালে ফরচুনের তালিকায় এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ১৮তম প্রভাবশালী নারী হন ঝোয়াও।

চীনের পূর্বাঞ্চলে হুনান প্রদেশের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে ১৯৭০ সালে জন্ম ঝোয়াও কোয়ানফেইয়ের। খুবই কষ্টের ছিল তাঁর শৈশব। পাঁচ বছর বয়সে হারান মাকে। কারখানায় কাজ করতেন বাবা, একটি দুর্ঘটনায় দৃষ্টিশক্তি ও হাতের আঙুল হারান। এরপর থেকে ঝোয়াও একাই লড়ে বেঁচে থাকতে শিখেছেন। ক্ষুধা-কষ্টের মধ্যেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার দৃঢ়প্রত্যয় ছিল তাঁর। সিএনবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমাদের সারাক্ষণ ভাবতে হতো কী খাব এবং কীভাবে খাবার জোগাড় করব।’

অর্থের অভাবে স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারেননি ঝোয়াও। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই কারখানায় কাজ শুরু করেন। তখন দৈনিক এক ডলার মজুরি পেতেন। ১৯৮৬ সালে দক্ষিণ চীনের শেনজেন প্রদেশে একটি ঘড়ির লেন্স তৈরির কারখানায় কাজ নেন। নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করায় ওই কারখানায় ম্যানেজারের দায়িত্ব পান। তবে তাঁর স্বপ্নটা ছিল অনেক বড়।

১৯৯৩ সালে ২ হাজার ৫৪৭ ডলার সঞ্চয় আর পরিবারের আট সদস্যকে নিয়ে তিন কামরার একটি অ্যাপার্টমেন্টে চালু করেন স্ক্রিন প্রিন্টিংয়ের কারখানা। তখন ঝোয়াওয়ের বয়স মাত্র ২২। ওই বাড়িতেই কারখানা আর থাকার জায়গা ছিল তাঁদের।

সেই থেকে শুরু। দশ বছরের মাথায় নিজের কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেন ঝোয়াও। সেই সময় তাঁর কারখানায় কর্মী ছিল ১ হাজার জন। অস্ট্রেলিয়ান ফিন্যান্সিয়াল রিভিউকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ঝোয়াও বলেন, ‘চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সময়, নারীসহ সব উদ্যোক্তার জন্য প্রচুর সুযোগ তৈরি হয়। যার ফলে আমার ব্যবসা বাড়াতে সক্ষম হই। দেশটির সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা নারী উদ্যোক্তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে।’

তবে আরও পরিবর্তন বাকি ছিল ঝোয়াওয়ের জীবনে। ওই বছরই পেয়ে যান মটোরোলাতে পণ্য সরবরাহের একটি বড় সুযোগ। আর এর মাধ্যমে বিদেশের বাজারে প্রবেশের সুযোগ আসে। বর্তমানে তিনি ‘লেনস টেকনোলজি’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। প্রতিষ্ঠানটি অ্যাপল, স্যামসাং, টেলসা ও হুয়াওয়ের স্মার্টফোনের গ্লাস কভার তৈরি করে। ২০১৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে পুঁজিবাজারে যাত্রা শুরু করে ‘লেনস টেকনোলজি’। বর্তমান এর বাজারমূল্য ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার। কারখানার সংখ্যা ৩২টি, আর প্রায় এক লাখ কর্মী কাজ করেন এগুলোয়।

নিজের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে ঝোয়াও বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ২০০৩ সালে বড় বড় প্রতিপক্ষকে হারিয়ে মটোরোলার কাজটি পাওয়া।’ ওই কাজটির জন্য তিনি নিজের বাড়ি ও মূল্যবান জিনিস বিক্রি করেছিলেন। তারপরও কুলাতে পারছিলেন না। একসময় সব ছেড়েছুড়ে দিতে চেয়েছিলেন।

ঝোয়াও বলেন, ‘হতাশ হয়ে হংকংয়ের স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম থেকে ঝাঁপ দিয়ে নিজেকে শেষ করতে চেয়েছিলাম।’ কিন্তু সে সময় মেয়ের ফোন তাঁকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনে। ‘আমি বুঝতে পারি, পরিবার ও কর্মীদের জন্য আমাকে পিছু হটলে চলবে না। আমাকে এগিয়ে যেতে হবে।’

অবশেষে মটোরোলার সাহায্যে আর্থিক সংকট দূর হয় ঝোয়াওয়ের। ২০০৪ সালে ঝোয়াওয়ের লেন্স কারখানা মটোরোলার ভি-৩ মডেলের ফোনের ১০ কোটি গ্লাস সরবরাহ করে। যেটা ছিল মটোরোলার ফ্ল্যাট স্ক্রিন মোবাইল ‘হ্যালো মটো’র আইকনিক প্রযুক্তি।

এরপরের গল্পটা শুধুই এগিয়ে যাওয়ার।
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য সব সময় তিনটি পরামর্শ দেন ঝোয়াও।

১. ভালো প্রস্তুতি: উদ্যোক্তাদের সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ে নজর দিতে হবে— ক. প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে, খ. মানসিকভাবে অবশ্যই দৃঢ় হতে হবে, গ. বাজার সম্পর্কে জ্ঞান বাড়াতে হবে এবং প্রতিযোগীদের বিষয়ে জানতে হবে।

২. শেখার আগ্রহ: বড় বড় ডিগ্রি থাকলেই যে পণ্যের দাম বাড়বে, এমন ধারণা ঠিক নয়। নিজের ব্যবসা সম্পর্কে পুরো জ্ঞান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিজেকে টিকিয়ে রাখবে। এ জন্য শুরু থেকেই ব্যবসা করার পাশাপাশি সেই সম্পর্কিত বিভিন্ন কোর্স করেছেন ঝোয়াও।

৩. হাল ছাড়া যাবে না: সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো সহজে হাল ছাড়া যাবে না। তুমি যদি মাঝপথে হাল ছেড়ে দাও, তাহলে আর কখনই ফিরতে পারবে না।

Source


http://www.prothomalo.com/economy/article/1474946/%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A7%80%E0%A6%AC%E0%A6%A8-%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%97%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AA