রুপপুর পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে মূলত চারটি ঘোরতর আপত্তির যায়গা আছে আমাদের!

Author Topic: রুপপুর পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে মূলত চারটি ঘোরতর আপত্তির যায়গা আছে আমাদের!  (Read 864 times)

Offline mdashraful.eee

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 230
  • তুমি যদি দৃশ্যমান মানুষকে'ই ভালবাসতে না পারো তাহলে
    • View Profile
রিয়েক্টর শীতলীকরণঃ
১। রিয়েক্টর শীতলীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় পানি শুষ্ক মৌসূমে নেই। সরকার যে লেইক করার কথা বলছে সেটা স্রেফ মিথ্যা আর টেকনিক্যালিও প্রায় অসম্ভব। পদ্মা বছরে ১ থেকে ১,৫ লাখ মেট্রিকটন বালি পরিবহণ করে আনে, ফলে মূল রিভার বেডে বা তার পাশে রিয়েক্টর শীতলীকরণের মত লেইক করা প্রায় অসম্ভব। মনে রাখতে হবে শুষ্ক মৌসুমে বন্ধু রাষ্ট্র পদ্মায় সর্বচ্চ ৫৫০০ কিউসেক (মাত্র) পানি দিয়েছে বিগত ২ বছর! এমতাবস্থায় স্বাভাবিক সময়ে রয়েক্টর শীতলীকরণে কিভাবে প্রতি মিনিটে ৬৩০০০ গ্যালন পানি শুষ্ক মৌসুমে সরবারহ করা হবে এই প্রশ্নের কোন সুস্পষ্ট উত্তর নেই! তবে ইমার্জেন্সিতে প্রতি মিনিটে ১ লাখ গ্যালনের বেশি পরিমাণ পানির প্রয়োজন হবে।


রিয়েক্টরের মানঃ
২। ভিভিইয়ার-১২০০ রিয়েক্টর রাশিয়ার হিসেবে লেটেস্ট, কিন্তু আন্তর্জাতিক হিসেবে এটা তৃতীয় প্রজন্মের, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র ৫ম প্রজন্মের রিয়েক্টর নিয়ে হাজির। রাশার টেকনোলজির অবস্থা নাজুক, সেখানে রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট কার্ভ খুবই স্লো। ভারতে এই রিয়েক্টর নিয়ে সমালোচনা হয়েছে এবং পরিবর্তে নতুন রিয়েক্টর বসানোর কথা হয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তারা এরকম কিছু করবে কিনা, এই দাবী সরকার বা আণবিক শক্তি কমিশন করেছে? নাকি তারা রাশান ঋণে পুরানো রাশান প্রযুক্তি প্রকল্প করে কিছু মারতে পারলেই সন্তুষ্ট? যেহেতু আনুমানিক ২০১৯-২০২০ এর দিকে রিয়েক্টর বসানো হবে, তাই ২০১৩ বা এর পূর্বের তৃতীয় প্রজন্মের রিয়েক্টর অগ্রহণযোগ্য।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনাঃ
৩। আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থা বর্জ্য নিয়ে কাজ করে না। বর্জ্য ম্যানেজমেন্ট তাদের সদস্য দেশের রিস্পন্সিবিলিটি। রাশিয়া পরিষ্কার বলেছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তাদের দায়িত্ব নয়, যদিও সরকার এটা নিয়ে মিথ্যা বলেছিল প্রথম দিকে। বাংলাদেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোন যায়গা নেই।

বিএইসির সাবেক চেয়ারম্যান এম এ কাইউম বলেন, দেশের সবাই একটি নিরাপদ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চায়। এ জন্য তেজস্ক্রিয় বর্জ্য রাশিয়ার ফেরত নেওয়ার বিষয়টির সুরাহা হওয়া দরকার। বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে সই হওয়া চুক্তিতে এ বিষয়ে প্রকৃতপক্ষে কী আছে, তা দেশের মানুষ এখন পর্যন্ত জানে না। তিনি বলেন, কোনো দেশে পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করার জন্য যে রকম জনবল থাকা প্রয়োজন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের তা নেই। রূপপুর প্রকল্পকে সামনে রেখে জনবল তৈরির যে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে, তা-ও সন্তোষজনক নয়। এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে ভাবা দরকার।

যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রায় ৩০ বছর কাজ করে অবসর নেওয়া বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম আলোচনায় অংশ নেন। তিনি বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য-ব্যবস্থাপনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ হিমশিম খাচ্ছে। তাই বর্জ্য ফিরিয়ে নিতে রাজি না হলে কোনো দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি করা উচিত নয়।

একটি গোল্টেবিল আলোচনায় পারমাণবিক দুর্ঘটনার দায় নেওয়া সম্পর্কে ড আবদুল মতিন বলেন, রূপপুরে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আশপাশের ৩০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের বৃত্তাকার এলাকা থেকে সব মানুষকে সরিয়ে নিতে হবে। তাঁদের দীর্ঘ সময়ের জন্য অন্যত্র পুনর্বাসন করতে হবে। কোনো বিবেচনায়ই বলা যায় না যে বাংলাদেশের এই সামর্থ্য আছে। তিনি বলেন, পারমাণবিক দুর্ঘটনার জন্য নির্মাণকারীদেরও দায়িত্ব নিতে হবে—এমন একটি আইন ভারত করেছে। এ রকম একটি সুরক্ষা আইন বাংলাদেশেরও করা উচিত।

কষ্ট মডেলঃ
৪। কষ্ট মডেল ভারতের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ খরুচে, এটা আরেকটা খুললাম খুল্লা দুর্নীতির যোগ করছে দেশের লুটেরা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন মডেলে।

উল্লেখ্য, ভারতের তামিলনাড়ুর কুদনকুলম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে নতুন দুটি ইউনিট (তৃতীয় ও চতুর্থ) স্থাপনের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে, তাতে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ পড়বে তিন হাজার মার্কিন ডলার। রূপপুর প্রকল্পে এই খরচ পড়ছে সাড়ে পাঁচ হাজার ডলার।

মোট ২৪০০ মেগাওয়াটের দুই ইউনিটের জন্য সই করা চুক্তিতে আমাদের ব্যয় নির্ধারিত হয়েছে ১ হাজার ২৬৫ কোটি মার্কিন ডলার। এর বাইরে আমরা ইতিমধ্যে ৫৫০ মিলিয়ন (৫৫ কোটি) ডলার ব্যয় করে ফেলেছি। এটা যুক্ত করলে হবে ১ হাজার ৩২০ কোটি ডলার। এ থেকে যদি আমরা প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের জন্য ব্যয় হিসাব করি, তাহলে রূপপুর কেন্দ্রের জন্য তা দাঁড়ায় সাড়ে পাঁচ হাজার ডলার। [রূপপুর প্রকল্পের কাজ শুরুর প্রাক্কলিত নির্মাণ ব্যয় ৩২ হাজার কোটি টাকা ছিল, যা বেড়ে ১ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছে গেছে (ডব্লিউএনআইএসআর, ২০১৭)]। লাগামছাড়া খরচ আর নির্মাণের দীর্ঘসূত্রতায় শেষ পর্যন্ত এই প্রকল্পের মোট ব্যয় কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা কেউ জানে না। বলা প্রয়োজন, শত কোটি করে উপর্যুপরি ব্যয় বৃদ্ধি বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের একটি খুব চেনা ও রাজনৈতিক ভাবে মোটিভেটেড দুর্বিত্তপনা, এখানে হাজার কোটি করেও একাধিক প্রকল্পে শুধু ব্যয় বাড়ার নজির স্থাপিত হয়েছে সাম্প্রতিক বছরে। সুতরাং রুপপুরেও খরচ প্রাক্কলন থেকে বাড়বে।

অফনোট,
পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের অফিসের নিন্ম মান স্টীল স্ট্রাকচার ঝড়ে উপড়ে গেছে! যারা একটা ভবন করার হেডোম দেখাতে পারে নাই চুরি ছাড়া, তারা দুর্ঘটনা ছাড়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করবে এবং সেটা নিরাপদে মেইন্টেইন করবে, এইটা বড়ই ভারী আশা!

পুনশ্চ, একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের উৎপাদন মডেল নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, এটার জন্য বাংলাদেশের স্থান, পানি, জনমিতিক পরিবেশ উপযুক্ত কিনা! আমাদের সেই কারিগরি সক্ষমতা আছে কিনা! নির্মাণ উত্তর প্রাক সক্ষমতা তৈরি হয়েছে কিনা! সবগুলো উত্তরে "হ্যাঁ" বলার যেখানে অবকাশ নেই, সেখানে একটি পারমাণবিক প্রকল্প হতে পারে না!
Kind Regards,

Md. Ashraful Haque
Assistant Professor
Department of (EEE)
Daffodil International University, (DIU)
Permanent Campus