ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা নিয়ম করে রোজা রাখেন পুরো মাসজুড়ে। অসুস্থ থাকলেও সহসা রোজা ভাঙেন না। তবে যারা ডায়াবেটিস, পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিক আলসার, শ্বাসকষ্ট, হার্টের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এসব সমস্যায় ভুগছেন, তাদের সমস্যা হবার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এলে যেহেতু ডায়াবেটিস রোগীদের সমস্যা হয়, রোজা রাখার ব্যাপারে তাদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
ডায়াবেটিস রোগীরা খাদ্যাভ্যাস এবং ওষুধ সেবনবিধিতে কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমে নিরাপদে রোজা রাখতে পারবেন। অবশ্যই রোজা শুরু করার আগে নিজের ডাক্তারের সাথে কথা বলুন এবং তার পরামর্শ মেনে চলুন।
ডায়াবেটিস রোগীদের রোজা রাখার বিষয়ে কিছু তথ্য দিয়েছেন প্রফেসর এবিএম আবদুল্লাহ, ডিন, মেডিসিন অনুষদ, অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। তার ভাষ্যে, রোজা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে রোগীদের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ ও রহমতস্বরূপ।
ডায়াবেটিক রোগীরা সঠিক নিয়মে রোজা রাখলে নানা রকম উপকার পেতে পারেন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল উপায় হলো খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, আর রোজা হতে পারে তার এক অন্যতম উপায়। এতে সহজেই খাদ্য নিয়ন্ত্রণ সহজ ও সুন্দরভাবে করা যায়।
যারা ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীল নন, তাদের ক্ষেত্রে রোজা রাখা হতে পারে আদর্শ চিকিৎসা ব্যবস্থা। যারা ইনসুলিন নেন তাদের ক্ষেত্রেও রোজা অবস্থায় ওষুধের মাত্রা কমাতে সহায়ক। শুধু রক্তের গ্লুকোজই নয়, রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণেও রোজা মোক্ষম। এর সঙ্গে সঙ্গে রোজা রোগীকে সংযম, পরিমিতিবোধ ও শৃংখলার শিক্ষা দেয়, যা ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় অপরিহার্য।
নিরাপদে রোজা রাখতে ডায়াবেটিস রোগীরা মেনে চলতে পারেন কিছু টিপস-
১) অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে রোজা রাখুন। কোনোভাবেই নিজের উদ্যোগে ওষুধ বা ওষুধের ডোজ পাল্টাবেন না।
২) সেহেরি বাদ দেবেন না কোনোভাবেই। কোনো কারণে সেহেরিতে না খেতে পারলে সেদিন রোজা না রাখাই নিরাপদ।
৩) ইফতারের পর থেকে সেহেরি পর্যন্ত ৮ গ্লাস পানি পান করুন।
৪) রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং নিয়মিত চেক করুন। অনেকের বাড়িতেই গ্লুকোমিটার (ব্লাড গ্লুকোজ পরিমাপের ছোট যন্ত্র) থাকে। তা ব্যবহার করুন।
৫) রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি, কম বা পানিশূন্যতা দেখা দিলে রোজা ভাঙাই আপনার জন্য নিরাপদ। এ অবস্থায় দ্রত ডাক্তারের সাথে দেখা করুন। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা চার মিলিমোল/লিটারের কম বা ১৬ মিলিমোল/লিটারের বেশি হলে আপনার রোজা ভাঙা দরকার। রক্তের গ্লুকোজ কমে গেলে আপনার শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন-
- শরীর কাঁপা
- কোনো কারণ ছাড়াই ঘেমে যাওয়া
- বুক ধড়ফড় করা
- প্রচণ্ড ক্ষুধা
- মাথা ঘোরা
- বিভ্রান্তি
শরীরে পানিশূন্যতা হলেও মাথা ঘোরা এবং বিভ্রান্তির মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
৬) ইফতারের সময়ে ধীরেসুস্থে খাবার খান। অতি দ্রুত বা বেশি খেয়ে ফেলবেন না। রোজার সময়েও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নির্ধারিত খাদ্যতালিকা মেনে চলুন।