অনলাইনে পণ্য বিক্রয়ের প্রথা আধুনিক বিশ্বে নতুন নয়। উন্নত দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশেও এর প্রসারতা লক্ষ করার মতো। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশেও এর ব্যাপক প্রচার বিভিন্ন ইলেকট্র্রনিকস, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আমরা লক্ষ করছি। কিন্তু অনলাইনের মাধ্যমে ব্যবসার প্রসারতার সঙ্গে সঙ্গে তার শরয়ি বৈধতা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কিছু শর্তসাপেক্ষে এভাবে অর্থাৎ অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় বৈধ। শর্তগুলো নিম্নরূপÑ
ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ যেন প্রতারিত না হয় : কারণ রাসুল (সা.) মদিনার বাজারে আটার ঝুড়ির ভেতরে হাত দিয়ে যখন দেখতে পেলেন বাইরে শুকনো আটা থাকলেও ভেতরে ভেজা আটা রয়েছে তখন বলেছিলেন, যে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করল সে আমাদের (উম্মতের) অন্তর্গত না। (মুসলিম : ২৯৫)।
ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের স্বাধীনতা থাকতে হবে : বিশেষ করে, ‘খিয়ারে রুইয়াত’ অর্থাৎ পণ্য দেখার পর কোনো দোষত্রুটি ধরা পড়লে ক্রেতার কোনো ধরনের ক্ষতি হওয়া ব্যতীত সেই পণ্য ফেরত দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত থাকা।
পণ্যের বিবরণ ও বর্ণনা বিস্তারিত ও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা : পণ্যটির বিস্তারিত বর্ণনা, যেমনÑ কোথায় তৈরি, কী দিয়ে তৈরি, গুণগতমান, ওয়ারেন্টি বা গ্যারন্টি আছে কি না, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ওজন কিংবা সাইজ কতটুকু, তা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের লুকোচুরি করলে তার পরিণাম ভয়াবহ। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘মন্দ পরিণাম তাদের জন্য, যারা মাপে কম দেয়। যারা লোকের কাছে থেকে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে এবং যখন তাদের জন্য মাপে বা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে মহাদিবসে।’ (সূরা মুতাফফিফিন : ১-৫)।
পণ্য ও দামের ভেতর কোনো ধরনের গরমিল না থাকা : উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, পণ্যটি সেটা কোনো বস্তু কিংবা প্রাণী হোক তার যে ছবি এবং বিস্তারিত বর্ণনা অনলাইনে দেওয়া থাকবে প্রকৃতপক্ষে তার সঙ্গে মিল থাকা চাই। সেটার রং, সাইজ, গুণগতমান ইত্যাদি বর্ণনা মোতাবেক হতে হবে। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘মেপে দেওয়ার সময় পূর্ণভাবে দেবে এবং ওজন করবে ঠিক দাঁড়িপাল্লায়, এটাই উত্তম এবং পরিণতি উৎকৃষ্ট।’ (সূরা বনি ইসরাইল : ৩৫)।
সবচেয়ে ভালো হয়, যদি পণ্য হাতে পেয়ে দাম পরিশোধের ব্যবস্থা থাকে : কারণ বিক্রেতার চেয়ে ক্রেতার এক্ষেত্রে প্রতারিত বা ঠকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই ক্রেতা দেখার পরে দাম পরিশোধ করতে পারলে অনেকাংশে তা থেকে মুক্ত থাকতে পারবে। অনেক ক্ষেত্রে আগেই দাম পরিশোধ করে পণ্যে কোনো ত্রুটি থাকার কারণে ফেরত দিলেও পরিশোধিত টাকা পেতে বিলম্ব ও হয়রানি দুটিরই অভিজ্ঞতা আছে অনেকের।
পরিশেষে বলব, ব্যবসায়ে ইসলামের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলোÑ ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করা। সেখানে কেউ নিশ্চিত লাভবান হবে আর কেউ ক্ষতির সম্মুখীন হবে, এমন সব লেনদেন থেকে মুক্ত রেখে উভয়ের কল্যাণ সাধিত হয় এ উদ্দেশ্যে শরিয়ত বিভিন্ন শর্তারোপ করে থাকে। তাই ইসলামের বিধিবিধান সঠিকভাবে মেনে এ ধরনের ব্যবসা করাতে কোনো দোষ নেই, বরং ভালো বলে আমরা মনে করি।
ইসলামের দৃষ্টিতে সৎ ব্যবসায়ীদের মর্যাদা নবী, রাসুল ও শহীদদের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সৎবাদী, আমানতদার ও বিশ্বাসী ব্যবসায়ী ব্যক্তি কেয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক এবং শহীদদের দলে থাকবেন।’ (তিরমিজি, দারা কুতনি ও দারেমি)। সুতরাং এই অপার সুযোগ থেকে কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তিই বঞ্চিত হতে চাইবে নাÑ এটাই কি স্বাভাবিক নয়?