পুষ্টিগুণে ভরপুর লিচু।
এখন লিচুর সময়। যাঁরা ওজন কমানোর মিশনে নামতে চান, তাঁদের জন্য লিচু একটি দারুণ কার্যকর ফল। প্রতিদিন শরীরের জন্য যে পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ প্রয়োজন, এক কাপের (২৪০ গ্রাম) সমপরিমাণ লিচু খেলে তার চেয়েও বেশি পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায়। ক্ষত নিরাময় এবং রক্তক্ষরণ প্রতিরোধের পাশাপাশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবেও কাজ করে এই ভিটামিন।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, লিচু থেকে মিলবে প্রচুর শক্তি। ক্যালরি মান ভালো থাকলেও ফ্যাট আর সোডিয়াম কম থাকায় লিচু বেশ স্বাস্থ্যকর। তাই মৌসুমের রসাল, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এই ফল আপনার খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন।
১০০ গ্রাম লিচু বলতে মাঝারি আকারের প্রায় ১০টি লিচুকে বোঝায়। মার্কিন ওষুধ প্রশাসন বিভাগ বলছে, প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে ৬৬ কিলোক্যালরি শক্তি ও ১৬ গ্রাম শর্করা রয়েছে। চর্বি একেবারেই নেই। আরও আছে ৭১ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’, ১৭০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ১৪ মাইক্রোগ্রাম ফলেট এবং সামান্য পরিমাণ (১ মিলিগ্রাম) সোডিয়াম।
লিচুতে আরও আছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ‘বি’, যা প্রতিদিনের খাবার থেকে শরীরে শক্তি জোগাতে সহায়তা করে। এগুলোর মধ্যে ফোলেট নামের উপাদানটি শরীরে নতুন কোষ এবং লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীর প্রতিদিন ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট প্রয়োজন, যার ২৭ মাইক্রোগ্রাম পরিমাণ পাওয়া যায় এক কাপ লিচু থেকে।
এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, লিচুতে আছে পটাশিয়ামও, যা আমাদের শরীরে পানির সমতা রক্ষা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও মাংসপেশির সংকোচনে সহায়ক। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় লিচু।
ওজন কমাতে লিচু খাওয়ার কৌশল: গ্রীষ্মে নানা রঙিন ফল পাওয়া যায়। আম, পেঁপে, তরমুজ, তাল, এমনকি লিচু। এ সময় গরমে ঘাম হয় প্রচুর। এ ছাড়া গরমের সময় সকালে ওঠা সহজ। যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁরা এ সময়টাকে কাজে লাগাতে পারেন। তাঁদের জন্য তাই সকালের নাশতা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা সকালের নাশতায় ভাজাপোড়ার বদলে ফল খাওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ, এতে শরীরে অনেক পুষ্টি মেলে। নাশতার সময় তাই লিচু রাখতে পারেন। এ ছাড়া ডেজার্ট হিসেবে লিচু খাওয়া যেতে পারে। এর ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার দারুণ কাজে দেবে। তবে লিচুর জুস করে বা অন্য কোনো উপায়ে খাওয়ার চেয়ে খোসা ছিলে খাওয়ায়ই ভালো।
লিচুর বিশেষ ৪ গুণ
১.
লিচু খেল ওজন কমে, সে তথ্য তো আপনার জানা। ওজন কমানোর কথা যাঁরা চিন্তা করছেন, তাঁদের মনে রাখতে হবে, শরীর থেকে যাতে বিষাক্ত উপাদান দূর হতে পারে, সে জন্য খাবার ও ফলের সমন্বয় রাখতে হবে। লিচু এ জন্য উপকারী। এ ছাড়া লিচুতে ক্যালরি খুব কম।
২.
লিচুর গুণ হিসেবে বলা যায় এর হজম সহায়ক উপাদানের কথা। এতে যে ফাইবার থাকে, তাতে সহজে হজম হয়। ওজন কমাতে গেলে অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। এ সমস্যা কাটাতে তাই এ সময় খাবারে ফাইবার খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফাইবারযুক্ত খাবার না খেলে হজমে সমস্যা হবে এবং সব সময় অস্বাভাবিক বোধ হবে। তাই ওজন কমানোর প্রক্রিয়াটি স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে।
৩.
লিচুতে পটাশিয়াম থাকায় তা রক্তচাপে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের অনেক সময় ওজন বেশি থাকে। তাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকে। লিচু খেলে সমস্যা দূর হতে পারে।
৪.
যাঁদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁরা দ্রুত মুটিয়ে যেতে পারেন। দুর্বল বোধ করলে অনেক সময় ওষুধ বা বেশি ক্যালরির খাবার খাওয়ার ফলে ওজন বাড়তে থাকে। লিচুর প্রয়োজনীয় ভিটামিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে।
সতর্কতা: যাঁদের ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে, তাঁরা লিচু খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত কোনো কিছু খাওয়া শরীরের জন্য ভালো নয়। তাই লিচুও পরিমিত খেতে হবে। যাঁরা নিয়ম মেনে খাবার খান এবং ব্যায়াম করার অভ্যাস আছে, তাঁরা দিনে ১০-১২টি লিচু খেলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।