যাকাত কখন ফরয হয়?

Author Topic: যাকাত কখন ফরয হয়?  (Read 1540 times)

Offline Farhana Israt Jahan

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 413
    • View Profile
যাকাত কখন ফরয হয়?
« on: May 14, 2018, 11:04:18 AM »
যাকাত কখন ফরয হয়?

প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের ওপর যাকাত ফরয হয়, যদি তার কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর পর্যন্ত থাকে।

নেসাবের ব্যাখ্যা: নেসাব হলো সম্পদের একটি পরিমাপ; সর্বনিম্ন যে পরিমাণ সম্পদ থাকলে ব্যক্তির ওপর যাকাত ফরয হয় এবং তাকে বলা হয় সাহিব-এ-নিসাব।

রাসূল স. সোনা-রূপা, পশু ও ফসলের ভিন্ন ভিন্ন নেসাব বর্ণনা করে গেছেন। তবে যেহেতু পশু ও ফসল ভিন্ন অন্য সব খাতে সোনা-রূপার নেসাবই ধর্তব্য, তাই আমরা কেবল সেটা নিয়েই আলোচনা করব।

রাসূল স. এর বর্ণিত হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে সোনার নেসাব হয় ৮৭.৪৮ গ্রাম বা ৭.৫ ভরি। আর রূপার নেসাব হয় ৬১২.৩৬ গ্রাম বা ৫২.৫ ভরি। বর্তমান বাজারমূল্য হিসেবে সোনার নেসাব দাঁড়ায় প্রায় তিন লাখ টাকা। আর রূপার নেসাব দাঁড়ায় প্রায় বায়ান্ন হাজার পাঁচ শত টাকা। এই পরিমাণ সম্পদের মালিক কেউ হলে সে সাহিবে নেসাব বা নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে।

যেহেতু যাকাত গরীবের হক, তাই গরীবের যে নেসাবে হিসাব করলে উপকার বেশি হবে, সেটাই হিসাব করা উচিৎ। সে হিসেবে সামর্থ্যবানদের উচিৎ রূপার নেসাবে হিসাব ধরে যাকাত আদায় করা। হ্যাঁ, যদি কারো সামর্থ্য কম থাকে বা কোনো আয়ের কোনো উৎস না থাকে, তাহলে তিনি সোনার নেসাবে উত্তীর্ণ হলেই যাকাত আদায় করবেন।

এক বছর অতিক্রান্ত হওয়া ব্যাখ্যা: যেদিন নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে, সেদিন থেকে এক চান্দ্র বছর পর যাকাত হিসাব করতে হবে। যেমন কেউ এ বছর রমজানের এক তারিখে নেসাবের মালিক হলো। তাহলে পরের বছর রমজানের এক তারিখ তাকে যাকাত হিসাব করে আদায় করতে হবে।

নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার পর বছরের মাঝে যদি সম্পদের পরিমাণ নেসাব থেকে কমে আসে, কিন্তু যাকাত হিসাব করার তারিখে নেসাব অটুট থাকে, তাহলে যাকাত আদায় করতে হবে। যেমন, কেউ রমজানের এক তারিখে তিন লাখ টাকার মালিক হলো। তাহলে সোনার নেসাব অনুসারে সে সাহিবে নেসাব বলে গণ্য হবে। কিন্তু দু মাস পরেই তার পঞ্চাশ হাজার টাকা ব্যয় হয়ে গেল। এখন দেখতে হবে যাকাত হিসাব করার তারিখে, অর্থাৎ পরের বছর রমজানের এক তারিখে তার কাছে কত টাকা আছে। যদি তিন লাখ বা তদুর্ধ্ব হয়, তাহলে যাকাত আদায় করতে হবে। যদি নেসাব থেকে কম হয়, তাহলে যাকাত আদায় করতে হবে না। পরবর্তীতে আবার যেদিন নেসাবের মালিক হবে, সেদিন থেকে এক বছর হিসাব করতে হবে।

আরেকটি বিষয় হলো, সব সম্পদের ওপর ভিন্ন ভাবে এক বছর অতিক্রান্ত হওয়া জরুরী নয়। বরং যাকাত হিসাবের তারিখে যাকাতযোগ্য যত সম্পদ আছে, সব হিসাব করতে হবে। তা একদিন আগে হাতে আসলেও।

বিষয়টা আরেকটু পরিষ্কার করা যাক। নেসাবের মালিক হওয়ার পর এক বছরের শর্ত দেয়ার কারণ হলো, ব্যক্তির সম্পদের মালিকানা স্থিতিশীল কিনা তা যাচাই করা। নেসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর স্থায়ী থাকলে তা সম্পদের স্থিতি প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে। তাই প্রত্যেক সম্পদে আলাদা ভাবে এক বছর অতিক্রম হওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং যাকাত হিসাবের তারিখে সকল যাকাতযোগ্য সম্পদ হিসাব করে ২.৫% যাকাত আদায় করতে হবে।

কোন কোন সম্পদে যাকাত আসে?

ব্যবহারের সম্পদে সাধারণত যাকাত আসে না। রাসূল স. বলেছেন, “একজন মুসলিমের ওপর তার দাস ও তার ব্যবহারের ঘোড়ার ক্ষেত্রে যাকাত নেই”।[8]

এছাড়া ছয় প্রকার সম্পদের ক্ষেত্রে যাকাত আসে। সোনা-রূপা, নগদ অর্থ, ব্যবসার সম্পদ, জীবজন্তু, কৃষিজ উৎপাদন ও খনিজ সম্পদ। এই প্রবন্ধে আমরা কেবল প্রথম তিন প্রকার নিয়ে আলোচনা করব।

সোনা-রূপা: সোনা-রূপাতে সর্বাবস্থায় যাকাত হিসাব করতে হয়। তা ব্যবহারের হোক বা ব্যবসার হোক।

নগদ অর্থ: নগদ অর্থ বলতে ব্যাংকে থাকা টাকা, হাতে থাকা নগদ অর্থ এবং এমন যে কোনো বিনিয়োগ, যা খুব সহজেই তরল করা যায়। যেমন বন্ড ইত্যাদি।

ব্যবসার সম্পদ: ব্যবসার সম্পদ হলো যাকাতযোগ্য সম্পদের অন্যতম খাত। ব্যবসার সম্পদ বলতে প্রত্যেক ঐ সম্পদ, যা ক্রয়ের সময় বিক্রয়ের নিয়্যত বা ইচ্ছা থাকে। সাধারণত কোনো সম্পদ ক্রয়ের সময় কয়েক রকম নিয়্যত থাকতে পারে।

১. নিজে ব্যবহারের নিয়্যত – এ ক্ষেত্রে এতে যাকাত হিসাব করতে হবে না।

২. ভাড়া দেয়ার নিয়্যত – এ ক্ষেত্রে সম্পদটির ওপর যাকাত হিসাব করতে হবে না। তবে ভাড়া যদি হাতে থাকে বা ব্যাংকে থাকে, তাহলে তাতে যাকাত হিসাব করতে হবে।

৩. বিক্রয়ের নিয়্যত – এ ক্ষেত্রে সম্পদের বিক্রয়মূল্য বা বাজারমূল্যের ওপর যাকাত হিসাব করতে হবে।

৪. ক্রয়ের সময় কোনো নিয়্যত করা হয় নি – এ ক্ষেত্রে সম্পদের ওপর কোনো যাকাত হিসাব করতে হবে না।

মোটকথা, বিক্রয়ের ইচ্ছায় ক্রয় করে থাকলে তা ব্যবসার সম্পদ বলে গণ্য হবে এবং তাতে যাকাত আসবে। অন্যথায় যাকাত আসবে না। এটাই মূলনীতি।

এবার বিভিন্ন সম্পদ আলাদা ভাবে আলোচনা করা যেতে পারে।

জমি, প্রপার্টি, প্লট, ফ্ল্যাট – ইত্যাদি যদি ক্রয়ের সময় বিক্রয়ের ইচ্ছায় ক্রয় করে থাকে, তাহলে সেগুলো যাকাতের জন্য হিসাব করতে হবে। অন্যথায় করতে হবে না। কাজেই উত্তরাধিকার সূত্রে যদি কেউ এসবের মালিক হয়, বা কেউ উপহার হিসেবে দিয়ে থাকে, তাহলে যাকাত হিসাব করতে হবে না। কারণ এখানে ক্রয়ই হয়নি, বিক্রয়ের ইচ্ছায় ক্রয় তো পরের বিষয়।

শেয়ার যদি সেকেন্ডারী মার্কেটে বিক্রয় করার ইচ্ছায় ক্রয় করে থাকে, তাহলে যাকাত হিসাবের তারিখের বিনিময়মূল্য যাকাতে হিসাব করতে হবে। যদি কেবল কোম্পানীর মুনাফা বা ডিভিডেন্ডের জন্য ক্রয় করে থাকে, তাহলে যাকাতের জন্য হিসাব করতে হবে না।

ফ্যাক্টরীর কাঁচামাল, তৈরীকৃত পণ্য, তৈরীর প্রক্রিয়াধীন পণ্য – এসবের ওপর যাকাত হিসাব করতে হবে। কেননা এ সবই বিক্রয়ের ইচ্ছায় ক্রয় করা হয়েছে। কিন্তু কোম্পানীর গাড়ী, ফ্ল্যাট, ফিক্সড এ্যাসেট, মেশিনারিজ – এসবের ওপর যাকাত হিসাব করতে হবে না। কারণ এগুলো ক্রয়ের সময় বিক্রয়ের ইচ্ছায় ক্রয় করা হয়নি।

উল্লেখ্য যে, যাকাত হিসাবের সময় সম্পদের মূল্য হিসাব করতে হয়। আর সম্পদের মূল তা-ই, যা দিয়ে তা বাজারে বিক্রয় করা যায়। কাজেই, সম্পদের বিক্রয়মূল্যই যাকাতের ক্ষেত্রে হিসাব করতে হবে। তা ক্রয়মূল্য বা বাজারমূল্য থেকে কম-বেশী যা-ই হোক।

উদাহরণস্বরূপ, রাশেদ একটি প্লট ক্রয় করেছে চল্লিশ লাখ টাকা দিয়ে। ক্রয়ের সময়ই তা পুন:বিক্রয়ের নিয়্যতে ক্রয় করেছে। যাকাত হিসাবের তারিখে যাচাই করে দেখা গেল যে, প্লটটি এখন পঞ্চাশ লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রয় করা যাবে। তখন প্লটটির মূল্য পঞ্চাশ লাখ টাকা ধরেই যাকাত হিসাব করতে হবে।

আবার খালেদ আশি হাজার টাকার শেয়ার ক্রয় করেছে, সুযোগ পেলেই বিক্রয় করে দিবে। কিন্তু যাকাত হিসাবের তারিখে বাজারে তার শেয়ারের বিনিময় মূল্য দাঁড়িয়েছে ত্রিশ হাজার টাকা। কাজেই তাকে ত্রিশ হাজার টাকাই যাকাতের জন্য হিসাব করতে হবে।

যাকাত হিসাবে ঋণের প্রভাব:

যাকাত হিসাব করার সময় ঋণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই এ বিষয়ে আলোচনা করা যাক।

ঋণ দুই রকম হতে পারে।

এক. প্রাপ্য ঋণ বা যে ঋণ অন্যের কাছ থেকে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

দুই. প্রদেয় ঋণ বা যে ঋণ অন্যকে আদায় করতে হবে।

প্রাপ্য ঋণের ক্ষেত্রে বিধান হলো, যখন হাতে আসবে তখন পেছনের বছরসহ যাকাত আদায় করে দিতে হবে। কাজেই পাওয়ার সম্ভাবনাময় ঋণগুলো প্রতিবছর যোগ করে হিসাব করে যাকাত আদায় করে দেয়াই ভালো।

প্রদেয় ঋণ দুই রকম হতে পারে। একবারে পরিশোধযোগ্য ও কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য।

যেসব ঋণে কিস্তির সুবিধা নেই এবং তা নগদ আদায় করে দিতে হবে, সেগুলোকে যাকাতের হিসাব থেকে বিয়োগ করে নিতে হবে।

আর যেসব ঋণে কিস্তিতে পরিশোধের সুবিধা আছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে পরবর্তী এক বছরের কিস্তি যাকাতের হিসাব থেকে বিয়োগ করতে হবে। পুরো ঋণ বিয়োগ করা যাবে না।

যেমন, রাশেদ একটি গাড়ী ক্রয় করল, যার মূল্য বিশ লাখ টাকা। এবং তা পাঁচ বছরে পরিশোধযোগ্য। তো, যাকাত হিসাব করার সময় কেবল এক বছরের প্রদেয় তথা চার লাখ টাকা বিয়োগ দিতে পারবে।

তবে ঋণ যদি প্রয়োজনিতিরিক্ত সম্পদ ক্রয়ের জন্য নেয়া হয়ে থাকে, যেমন, অতিরিক্ত একটি বাড়ি বা গাড়ি, কিংবা ফ্যাক্টরীর একটি অতিরিক্ত মেশিন, যেটার ওপর জীবন নির্ভর করে না, তাহলে তা যাকাতের হিসাব থেকে বাদ দেয়া হবে না। বরং, এই ঋণ ঐ সম্পদের বিপরীতে ধরা হবে। অর্থাৎ, ঋণ আদায়ে অপারগ হলে তা ঐ সম্পদ বিক্রয় করেই পরিশোধ করা হবে।

বিষয়টা আরেকটু ব্যাখ্যা করা যাক। যাকাতের হিসাব থেকে প্রদেয় ঋণ বিয়োগ দেয়ার কারণ হলো, যেহেতু ঋণ আদায় করতে হবে এই টাকা দিয়েই, তাই তা থেকে খরচ না করা।

কিন্তু প্রয়োজনিতিরক্ত সম্পদে বিনিয়োগের জন্য ঋণ করা হলে, সমস্যা হলে তা বিক্রয় করেই ঋণ আদায় করা সম্ভব। এবং এতে ব্যক্তির জীবন চালাতে কোনো ক্ষতি হবে না। কাজেই এই ঋণ যাকাতের হিসাব থেকে বাদ দেয়া হবে না।

উদাহরণস্বরূপ, রাশেদ একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেছে চল্লিশ লাখ টাকায়। উদ্দেশ্য, দাম বাড়লে বিক্রয় করে দেয়া। রাশেদ তা পাঁচ বছরের কিস্তিতে ক্রয় করেছে। তার মোট প্রদেয় ঋণের পরিমাণ পঁয়ত্রিশ লাখ টাকা। কিন্তু রাশেদের আরো একটি বাড়ি আছে, যেখানে সে ও তার পরিবার থাকে। কাজেই এই ফ্ল্যাটের টাকা অন্য খাত থেকে পরিশোধ করতে অসমর্থ হলে তা বিক্রয় করেই পরিশোধ করা সম্ভব। কাজেই এই ঋণের টাকা যাকাতের হিসাব থেকে বিয়োগ দেয়া হবে না।

যাকাত কীভাবে হিসাব করবে?

প্রথমবার নেসাবের মালিক হওয়ার এক চান্দ্র বছর পর যাকাত আসে এমন সমুদয় সম্পদের মূল্য টাকায় (বা অন্য কোনো মুদ্রায়) রূপান্তর করে নিবে। এরপর সব যোগ করবে। প্রাপ্য ঋণ থাকলে তাও যোগ করবে। প্রদেয় ঋণ থাকলে, তা নগদে পরিশোধ করতে হলে, পুরোটা বিয়োগ দিবে। আর কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য হলে কেবল পরবর্তী এক বছরের কিস্তি বিয়োগ দিবে। এরপর বিয়োগফলের ২.৫% যাকাত হিসাব করবে।

যাকাতের সম্পদ + প্রাপ্য ঋণ – প্রদেয় ঋণ (নগদ) – প্রদয়ে ঋণ (পরবর্তী এক বছরের কিস্তি) = মোট সম্পদ X ২.৫% = যাকাত

যাকাত কাকে দেয়া যায়:

বৈবাহিক সম্পর্ক ও ঔরষজাত সম্পর্কের মানুষকে যাকাত দেয়া যায় না। কাজেই স্বামী-স্ত্রী, পিতা-পুত্র, দাদা-নাতী কাউকে যাকাত দেয়া যাবে না। অনুরূপভাবে রাসূল স. এর বংশের কাউকে যাকাত দেয়া যাবে না।

এছাড়া যে কোনো গরীবকে যাকাত দেয়া যাবে। গরীব বলতে এমন ব্যক্তিকে বুঝায়, যার হয়ত কোনো সম্পদই নেই। কিংবা আছে, তবে তার প্রয়োজনীয় সম্পদ ও জীবন যাপনে প্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিলে তা নেসাবের চেয়ে কম হয়।

আল্লাহ তায়ালা যাকাত আদায়ের সাতটি খাত উল্লেখ করেছেন। ফকীর, মিসকীন, যাকাত উসুল ও আদায়ের কাজে নিয়োজিত, ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, জেহাদকারীর জন্য এবং মুসাফির[9]।

যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে আত্মীয়-স্বজনকে প্রাধান্য দেয়া উচিৎ। যাকাত আদায়ের সময় ‘যাকাতের টাকা’ উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। আদায়ের সময় বা যাকাতের টাকা আলাদা করার সময় নিয়্যত করলেই হবে। তবে এই দুই সময়ের কোনোটাতেই নিয়্যত না করলে যাকাত আদায় হবে না। এমনিতে কাউকে টাকা দিয়ে পরে তা যাকাতের খাত থেকে দিয়েছে নিয়্যত করলে যাকাত আদায় হবে না।

এখানে উল্লেখ্য যে, যাকাতের ক্ষেত্রে গরীবকে মালিক বানিয়ে দেয়া শর্ত। কাজেই যাকাতের টাকা দিয়ে মসজিদ বানানো, মাদ্রাসা বানানো, রাস্তাঘাট নির্মাণ, কূপ খনন ইত্যাদি করা যাবে না। বরং সরাসরি গরীবকে যাকাতের টাকার মালিক বানিয়ে দিতে হবে।

কোনো গরীবকে পড়াশোনা, চিকিৎসা, বিবাহ দেয়ার জন্যও যাকাত দেয়া যেতে পারে। তবে তাকে সে টাকার মালিক বানিয়ে দিতে হবে।

যাকাতের টাকা নগদ না দিয়ে গঠনমূলক কিছু ক্রয় করে দেয়া যেতে পারে। যেমন, কেউ কাজ করার সামর্থ্যবান হলে তাকে সেলাই মেশিন, রিক্সা, ভ্যান, কম্পিউটার ইত্যাদি ক্রয় করে দেয়া যেতে পারে। যেন তা দিয়ে উপার্জন করে সে স্বাবলম্বী হতে পারে। এবং এক সময় তাকে আর যাকাত গ্রহণ করতে না হয়।

অল্প অল্প করে অনেককে না দিয়ে প্রতিবছর প্ল্যান করে কিছু মানুষকে বেশি করে দিলে সে তাকে গঠনমূলক কাজে লাগাতে পারবে।

হারাম সম্পদে যাকাত ও অনাদায়কৃত যাকাত:

যাকাত ফরয হওয়ার পর যাকাত আদায় না করা হলে পরবর্তীতে পূর্বের অনাদায়কৃত সব বছরের যাকাত আদায় করে দিতে হবে।

হারাম সম্পদে যাকাত আসে না এবং হারাম সম্পদ দিয়ে যাকাত আদায়ও করা যায় না। যাকাত তো হল সম্পদের কেবল ২.৫ শতাংশ। আর হারাম সম্পদ তো পুরো একশ শতাংশই দান করে দেয়া ওয়াজীব। কারণ এ সম্পদের মালিক ব্যক্তি নয়। কাজেই সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, অন্যায়ভাবে দখলকৃত সম্পত্তি ইত্যাদি সব প্রকার হারাম সম্পদ তাৎক্ষণিক ভাবে সওয়াবের নিয়্যত ছাড়া দান করে দায়মুক্ত হতে হবে।

ট্যাক্স এবং যাকাত:

সরকারী ট্যাক্স এবং যাকাত এক নয়। যাকাত একটি ইবাদত। কাজেই ট্যাক্সের টাকাকে যাকাত বলে গণ্য করা যাবে না। তবে হ্যাঁ, ট্যাক্সে প্রদেয় টাকা যাকাতের হিসাব থেকে বিয়োগ দেয়া যাবে। কারণ এটিও একটি ঋণ, যা ব্যক্তির কাছে রাষ্ট্র পাবে।

যাকাতুল ফিতর বা সাদাকাতুল ফিতর:

সাদাকাতুল ফিতর অর্থ ফিতরের দিনের সদকা। ফিতর বলতে ঈদুল ফিতর বোঝানো হয়। অর্থাৎ,ঈদুল ফিতরের দিন দেয়া সদকা। একে যাকাতুল ফিতরও বলা হয়ে থাকে।

সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজীব। হাদীসে আছে,ইবনে ওমর রা. বলেন, “রাসূল স. সাদাকাতুল ফিতর আবশ্যক করেছেন। এর পরিমাণ হলো, এক সা যব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার ওপরই এটা আবশ্যক”। [10]

সাদাকাতুল ফিতর প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিম ব্যক্তির ওপর ওয়াজীব। ‘সামর্থ্যবান’ শব্দের ব্যাখ্যা হলো,প্রয়োজনিতিরিক্ত সম্পদের পরিমাণ যাকাতের নেসাব পরিমাণ হওয়া। যাকাতের সাথে এর পার্থক্য হলো, এখানে প্রয়োজনতিরিক্ত সম্পদ নেসাব পরিমাণ হলেই তা ওয়াজীব। সোনা-রূপা বা ব্যবসায়িক সম্পদেই তা হতে হবে, এমন নয়। আবার যাকাতের ন্যায় এক্ষেত্রে এক বৎসর অতিক্রান্ত হওয়াও জরুরী নয়। বরং ঈদের আগের দিনও কেউ্ এই পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তাকেও তা আদায় করতে হবে।

সাদাকাতুল ফিতর নারী-পুরুষ সবার ওপরই ওয়াজীব। নিজের পক্ষ থেকে এবং নিজের অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান বা অবিবাহিত মেয়ের পক্ষ থেকে তা আদায় করতে হবে। সন্তানের নামে সম্পদ থাকলে সেখান থেকে আদায় করা যাবে। প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের পক্ষ থেকে আদায় করা ওয়াজীব নয়। কোনো এতিম শিশুর ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়ে থাকলে তার পক্ষ থেকেও আদায় করতে হবে।

ঈদুল ফিতরের ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজীব হয়। কাজেই সেদিন ভোরের আগে যে জন্ম নিয়েছে,বা এই পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছে,তাকেও এই সদকা আদায় করতে হবে।

কেউ যদি সেদিন ভোরের আগে মারা যায়,তার ওপর সদকা ওয়াজীব হবে না। আবার ভোর হবার পর কেউ জন্ম নিলে তার পক্ষ থেকেও সদকা আদায় করা ওয়াজীব হবে না।

ঈদুল ফিতরের দিন সকালে ঈদের নামায পড়তে যাওয়ার আগে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা উত্তম। তবে সময়ের আগেও আদায় করা যেতে পারে। আবার কোনো কারণে সময় মতো আদায় করতে না পারলে পরেও আদায় করা যাবে। কেউ আদায় না করে মৃত্যুবরণ করলে তার পক্ষ থেকে তার উত্তরাধিকারী আদায় করে দিলেও আদায় হয়ে যাবে।

হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী যেসব শস্য দিয়ে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা যায় সেগুলো হলো: যব, খেজুর, কিসমিস ও পনীর :এক সা। গম: আধা সা। সা –এর বর্তমান পরিমাপ: ১ সা = ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম। আর ১/২ সা = এক কেজি ৬৫০ গ্রাম।

হাদীসে এই পাঁচ প্রকার শস্যের কথা এসেছে। এই পাঁচ প্রকার শস্য সরাসরি দিলেও হবে,আবার এসবের মূল্য দিলেও হবে। তবে অন্য কোনো শস্য দিতে চাইলে এই পাঁচ প্রকারের কোনো এক প্রকারের মূল্য হিসাব করে দিতে হবে।

এই সদকা দেয়ার উদ্দেশ্য হলো ঈদের দিন গরীবের প্রয়োজন পূরণ করা, যেন তাকে কোথাও চাইতে না হয়। কাজেই সামর্থ্যানুযায়ী বেশি মূল্যটা আদায় করাই উত্তম হবে।

যব, খেজুর, কিসমিস বা পনীর হিসাব করে দিলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর মূল্য দেয়া যাবে। আর গম হিসাবে দিলে এক কেজি ৬৫০ গ্রাম বা এর মূল্য দেয়া যাবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ঘোষণা অনুযায়ী এ বছর গম বা আটা দিয়ে আদায় করলে অর্ধ সা’ বা ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ৫৫ টাকা আদায় করতে হবে। খেজুর দিয়ে আদায় করলে এক সা’ বা তিন কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য এক হাজার ৩২০ টাকা। কিশমিশ দ্বারা আদায় করলে এক সা’ বা তিন কেজি ৩০০ গ্রাম, এর বাজারমূল্য দেড় হাজার টাকা। আর পনির দিয়ে আদায় করলে এক সা’ বা তিন কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য দেড় হাজার টাকা আদায় করতে হবে।

যাকাতের আদায়ের খাতসমূহে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা যাবে। পরিবারের কয়েক জনের সদকা মিলিয়ে একজন গরীবকে একসঙ্গে দেয়া যেতে পারে।

উপসংহার:

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০৯ এ বাংলাদেশে মিলিয়নেয়ারের (ব্যাংকে ন্যূনতম দশ লাখ টাকা সঞ্চয়কারী) সংখ্যা ২৩,৩১০ জন। যাদের সমুদয় সঞ্চয়ের পরিমাণ ১,০০,৫৪৪ কোটি টাকা। যা পুরো ব্যাংক সঞ্চয়ের ৩৩ শতাংশ[11]। এই ২৩,৩১০ জনের মধ্যে ৮০% মুসলিম ধরলে তাদের যাকাত আসে ২০০০ কোটির টাকার বেশি। আর যাকাত তো দশ লাখ টাকায় নয়, আরো অনেক কম টাকায় ফরয হয়। তাহলে সবার সমষ্টিগত যাকাত হিসাব করলে ন্যূনতম পাঁচ হাজার কোটি টাকা হবে। যা নি:সন্দেহে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটের উন্নয়ন খাতের অনেক উপখাতের বাজেটের তুলনায় বেশী। যাদের ওপর যাকাত ফরয, তারা সবাই যাকাত দিলে দেশে আর কোনো দরিদ্র অবশিষ্ট থাকত কিনা সন্দেহ।

Sources-

[1] বুখারী ও মুসলিম

[2] বুখারী ও মুসলিম

[3] সূরা নূর: ৫৬

[4] আল কুরআন, সূরা বাক্বারা: ২৭৬

[5] সূরা তাওবা: ১০৩

[6] সূরা যারিয়াত: ১৯

[7] সূরা তাওবা: ৩৪-৩৫

[8] বুখারী ও মুসলিম

[9] সূরা তাওবা: ৬০

[10] বুখারী : ১৫১২

[11] বাংলানিউজ২৪ ডট কম, ১০ আগষ্ট ২০১০
Farhana Israt Jahan
Assistant Professor
Dept. of Pharmacy

Offline fahad.faisal

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 734
  • Believe in Hard Work and Sincerity.
    • View Profile
Re: যাকাত কখন ফরয হয়?
« Reply #1 on: January 31, 2019, 01:39:39 PM »
Thanks for sharing.
Fahad Faisal
Department of CSE