সম্পদশালী হওয়া মানেই ধনী হওয়া নয়

Author Topic: সম্পদশালী হওয়া মানেই ধনী হওয়া নয়  (Read 1091 times)

Offline Mrs.Anjuara Khanom

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 478
  • Test
    • View Profile


গ্রাম থেকে এক ভিখারি এসেছে রাজার দরবারে দেখা করতে। রাত হয়ে যাওয়ায় সে কোথাও আশ্রয় না পেয়ে রাজমহলের পাশের মসজিদে শুয়ে থাকল সকাল হওয়ার অপেক্ষায়। রাতের শেষ প্রহরে সে কান্নাকাটি আর প্রার্থনার শব্দ শুনে মসজিদের কোণায় গিয়ে দেখে, কেউ একজন দু হাত তুলে বলছে, ‘হে আল্লাহ! ওগো মাওলা! আমাকে তুমি আরও দাও, আমার ক্ষমতাকে আরও বাড়িয়ে দাও, আমার বয়সকে আরও দীর্ঘ করে দাও, আমার রাজত্বের সীমানা আরও ছড়িয়ে দাও, আমার শত্র“দেরকে ধ্বংস করে দাও..ইত্যাদি।

ভিখারি লোকটি অনেকক্ষণ ধরে শুনতে থাকলো লোকটির আশা আর চাওয়ার দীর্ঘতালিকা। বুঝতে বাকি রইল না তার- এ লোকটিই এদেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাজা। তিনি গালের নীচে হাত দিয়ে ভাবতে থাকলেন, হায় আল্লাহ! এ রাজা তো দেখি আমরা চেয়ে বড় ফকির। আমার চেয়ে আরও বেশি লোভী। তিনি যখন এত বড় ফকীর, আমার মতো ভিখারিকে তিনি আর কিইবা দিতে পারেন?

ভোরের আলো ফুটতেই ফকির ঝুলিখানা কাঁেধ ঝুলিয়ে রওয়ানা হলেন নিজের গ্রামের পথে। প্রহরী জিজ্ঞেস করলো, কিহে! তুমি না কাল এসে আজ দেখা করার জন্য নাম লেখালে, চলে যাচ্ছো কেন?

ফকির হাসতে হাসতে জবাব দিল, ‘উনি আর আমি একই পথের পথিক, দু’জনই ভিখারি। তার কাছে হাত পেতে আর কী পাব, তার চেয়ে বরং ভাল- উপরওয়ালার কাছেই হাত পাতি।’

তাও তো ভাল, রাজা হাত পেতেছেন আল্লাহর কাছে। কিন্তু আজকের বাস্তবতায় এ প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমাদের দেশের সাধারণ ইউনিয়ন মেম্বার থেকে নিয়ে এমপি মন্ত্রী- পৃথিবীর যত রাজা মহারাজা- কোটিপতি কিংবা বিশ্বের শীর্ষ ধনী- সবার মনে একই বাসনা- আহা! আমি যদি আরও একটু বেশি পেতাম। আমার কতো অভাব, কতো কিছু প্রয়োজন আমার- এখনও কত গরীব আমি!

চৌদ্দশ বছর আগে এজন্যই আল্লাহর নবী সা. বলেছেন, আদম সন্তানকে যদি দুটি স্বর্ণভরা প্রান্তর দিয়ে দেওয়া হয়, তবু সে আরও একটি প্রান্তরের জন্য লালায়িত হয়ে বসে থাকবে। কবরের মাটি ছাড়া আর কিছুই তার পেট ভরাতে পারবে না।’ (তিরমিজি)

আমাদের দেশে, আমাদের সমাজের চারপাশে- কতো মহাজন ও কতো বেপারী কোটি কোটি টাকার মালিক! তবুও তাদের খায়েশ মেটে না, সম্পদের লোভ তাদের আরও বাড়ছে দিনদিন। প্রতিটি সূর্যোদয় তাদের জন্য নতুন নতুন ফন্দি নিয়ে যেন হাজির হয়।

আর এ লালসা মেটাতে গিয়ে তারা অসংখ্য নিরীহ মানুষের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, ছল চাতুরি আর প্রতারণা করে কামিয়ে নিচ্ছে শত কোটি টাকা। এর কি কোন হিসেব আছে? সৃষ্টির সূচনার পর থেকে টাকা পয়সা উপার্জনের যতো পথ ও পদ্ধতি আবি®কৃত হয়েছে- এর কোনো অভিধান নেই।

কিন্তু এতো প্রাচুর্য কিংবা সম্পদশালী হওয়ার সব গৌরব ম্লান হয়ে যায় তাদের মানসিক দীনতা ও সংকীর্ণতার কাছে। কারণ, সম্পদ কম না বেশি- এ দিয়েই কি ধনী-গরীব মাপা যায়? আল্লাহর নবী সা. এ বিষয়টিকে মনে করিয়ে দিয়ে তাই জানিয়েছেন, ধন-সম্পদের প্রাচুর্য মানেই ধনী হওয়া নয়, আসল ধনী হওয়া হচ্ছে মনের ব্যাপার। (বুখারি ও মুসলিম)

আর তাই মানসিক দিক দিয়ে যে যতবেশি উদার ও পরিস্কার এবং অন্যের সম্পদ থেকে অমুখাপেক্ষী- সে ততবড় ধনী ও সম্মানিত মর্যাদার অধিকারী।

ইমাম কুরতুবী বলেন, নির্লোভ হৃদয়ের ফকির এমন ধনীর চেয়েও বেশী সম্মানিত যে সবসময় সম্পদের জন্য লালায়িত হয়ে নিজেকে অন্যের কাছে হীন করে রাখে। অনেক সম্পদশালী হওয়া সত্ত্বেও সে মানুষের কাছে তুচ্ছ ও ঘৃণিত।

রাসুল সা. এর কাছে একজন সাহাবী এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে এমন একটি কাজ শিখিয়ে দিন যা করলে আল্লাহ পাকও আমাকে ভালবাসবেন এবং মানুষও আমাকে পছন্দ করবে।

রাসুল তাকে বললেন, দুনিয়ার প্রতি লোভ করো না, এতে আল্লাহ পাক তোমাকে ভালবাসবেন। আর মানুষেয় সম্পদ থেকে নির্লোভ থেকো, মানুষও তোমাকে ভালবাসবে।

একটু ভাবুন তো, আমরা যদি নিজের চাকরি ও জীবন যাপনে যেটুকু আল্লাহ পাক দিয়েছেন, তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকি এবং অন্যের সম্পদ থেকে চোখ ও লোভকে ফিরিয়ে রাখি, মানুষের কাছে অযথা আবদার কিংবা কৌশলে কিছু কামিয়ে নেওয়ার ফন্দি ফিকির থেকে বিরত থাকি- সমাজের কোথাও কি তখন চুরি, ডাকাতি, প্রতারণা ও দুর্নীতি খুঁজে পাওয়া যাবে?

ইসলামের এ মহান শিক্ষাটুকু আজ আমরা ভুলে অন্ধ হয়ে দৌড়াচ্ছি টাকা পয়সার পেছনে। নিজেরা ধনী হতে গিয়ে হারিয়ে ফেলছি মানসিক ও মানবিক বৈশিষ্ট্যগুলো। শহরের ইটের ফ্ল্যাটগুলোতে দিন দিন যেন বেড়ে চলেছে সম্পদলোভী কীট পতঙ্গের আবাস। জীবন বলতে তাদের কাছে শুধুই কামাই আর ভোগের সমন্বয়। এতকিছু পেয়েও কিন্তু তারা সুখী নয়।

কিন্তু কিভাবে সম্ভব আমাদের ভেতরের প্রবৃত্তিগত এ লোভ লালসা থেকে মুক্তি?

খুবই সহজ। ইসলাম আমাদেরকে শিখিয়েছে, আপনি আপনার নীচুস্তরের মানুষদেরকে দেখুন, উপরতলার লোকদের থেকে দৃষ্টিকে সংযত রাখুন। এরপরও যখন আপনার চেয়ে সম্পদশালী কারো দিকে চোখ পড়ে- নিজেকে অনুভব করুন- আপনিও তো কত গরীব অসহায়ের চেয়ে ধনী হয়ে দিন কাটাচ্ছেন, সুখে আছেন কত অসুখী মানুষের চেয়ে। মুসলিম শরীফের হাদীস, নবীজি বলেছেন, তোমার সম্পদের হিসেবে উপরের স্তরের কাউকে দেখো না, বরং নীচের গরীব লোকদের দিকে তাকিয়ে দেখো, নয়তো আল্লাহ পাকের নেয়ামত তোমার কাছে তুচ্ছ মনে যাবে। তিনি আরও বলেছেন, আল্লাহ পাক তোমাকে যা দিয়েছেন, তা নিয়ে খুশি থাকো, দেখবে তুমিই সবার চেয়ে ধনী। (মুসনাদে আহমদ)

সম্পদের মোহে যারা অন্ধ হয়ে ভুলে যান সব নৈতিকতা, পেছনের দেয়ালে সুবিশাল মক্কা মদীনার বাঁধানো ছবি ঝুলিয়েও যারা মুচকি হেসে ঘুষের বিনিময়ে ফাইলে সই করে দিচ্ছেন, নামে বেনামে একাউন্ট খুলে টাকার পাহাড় গড়ছেন যারা- সত্যিই কি তারা ধনী? স্বজন ও পরিচিতজনদের কাছে তারা কি সত্যিকার অর্থেই সম্মান ও ভালোবাসার অধিকারী? নিজের পরিবার ও আপন সন্তানদের নিয়ে কি তারা নিশ্চিন্ত ও সুখী হয়ে দিন কাটাচ্ছেন?

আল্লাহ পাক তার প্রিয় রাসুলকে সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, যাদেরকে আমি অনেক সম্পদ দিয়ে দুনিয়ার প্রাচুর্যে ভরিয়ে রেখেছি, আপনি তাদের দিকে চোখ তুলেও তাকাবেন না, তাদেরকে তো আমি এসব দিয়ে পরীক্ষা করছি, আপনার রবের দেওয়া রিজিকই সর্বোত্তম ও চিরস্থায়ী। (সূরা ত্বহা-১৩১)

আমাদের এ অশান্ত পরিবেশে চুরি-ডাকতি-দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য আইন ও বাহিনীর কোনো অভাব নেই। আধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়েও বন্ধ করা যাচ্ছে না অনৈতিকতার লেনদেন। লোভ ও হিংসার এ অপ্রতিরোধ্য গতিকে ঠেকাতে হলে নিছক শাস্তি কিংবা দন্ড নয়, আজ বড় প্রয়োজন আমাদের মানসিক শুদ্ধতা ও আত্মিক চেতনা।

আল্লাহভীতি ও পরকালের জবাবদিহিতা ছাড়া এর অন্য কোন উৎস নেই। তাকওয়া ছাড়া এর নতুন কোন তাড়না নেই, নেই বিবেকের চেয়ে বড় কোন প্রহরী।

সবাই তো ধনী হতে চাই, সুখী হয়ে বাঁচতে চাই- কিন্তু যে পথে আমরা তা খুঁজে ফিরে ক্লান্ত হয়ে হা হুতাশ করছি- আদৌ কি তা এ পথে পাওয়া যাচ্ছে নাকি আমাদের লোভ ও স্বার্থের হানাহানি আরও বাড়ছে- তা স্পষ্ট করে বলার প্রয়োজন নেই।

আরব মরুর সেই প্রিয়নবী আমাদের জন্য ধনী ও সুখী হওয়ার যে সরল পথ ও পদ্ধতি দেখিয়ে দিয়েছিলেন- এই আধুনিক কালেরও কোনো মতবাদ বা কোনো নীতি-পদ্ধতি কিংবা কোনো পরাশক্তি কি পেরেছে এর চেয়েও সহজ ও সুন্দর কোনো সমাধান দিতে?

 Source:  https://robiulislam167.wordpress.com/category/%E0%A6%87%
Mrs, Anjuara Khanom
Library Assistant Officer,
Daffodil International University
DSC Campus
02224441833/34