বাংলাদেশের কোন কোন খাবারে শুকরের চর্বি আছে এবং কিভাবে আছে তার বর্ণনা

Author Topic: বাংলাদেশের কোন কোন খাবারে শুকরের চর্বি আছে এবং কিভাবে আছে তার বর্ণনা  (Read 2705 times)

Offline ishaquemijee

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 305
    • View Profile
শূকরের মাংস ইউরোপ জুড়ে তাদের প্রোটিন বা আমিষ সরবরাহের অন্যতম একটা মাধ্যম। এক হিসেবে দেখা গেছে যে, একমাত্র ফ্রান্সেই প্রায় বিয়াল্লিশ হাজারেরও বেশী শূকরের খামার রয়েছে। ইংল্যন্ডরও আনাচে কানাচে রয়েছে শূকরের খামার।

বাণিজ্যিকভাবে এইসব খামারগুলো পুরো ইংল্যন্ড জুড়েই শূকরের মাংস সরবরাহ করে আসছে। আর ইংল্যন্ডে বসবাস করার কারণে নিত্যদিন চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি ইংরেজদের খাদ্য তালিকায় শূকরের মাংস একটি অতি আবশ্যকীয় ও উপাদেয় তালিকা। কেবল ইংল্যন্ডই নয় বরং পুরো ইউরোপ, আমেরিকা আর প্রাচ্য, অর্থাৎ পুরো খৃষ্ট বিশ্বেই প্রকৃত অবস্থাটি এমনই। এমনকি মুসলিম বিশ্বের কোথাও কোথাও, বিশেষ করে, মুসলিম দেশসমুহে বসবাসকারী অমুসলিম ধর্মালম্বীদের কাছে শূকরের মাংস অতি কাংক্ষিত একটি খাদ্য মাধ্যম।

এই মাধ্যমটি যে আজ নতুন সৃষ্টি হয়েছে তা নয় বরং সেই মধ্যযুগের কিংবা তারও আগে থেকেই এটি বিদ্যমান। শূকরের দেহে সবচেয়ে বেশী চর্বি থাকে এবং সেই চর্বির মধ্যে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর চর্বিও রয়েছে। বস্তুুতান্ত্রিক চিন্তা চেতনায় উজ্জীবিত ইউরোপ জ্ঞান বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে এইসব চর্বিকে বিভিন্নভাবে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে এ থেকে ব্যবহার্য বা খাদ্য জাতিয় বিভিন্ন প্রকার উপকরণ যেমন উদ্ভাবন করেছে তেমনি তা সারা বিশ্ব জুড়েই বাজারজাতও করেছে।

আজকাল পুরো ইউরোপ, আমেরিকা আর পশ্চিমা বিশ্ব, এমনকি সমগ্র বিশ্বব্যাপি স্বাস্থ সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে মানুষ খাদ্যে অতিরিক্ত ফ্যাট নিয়ে বড় বেশী চিন্তিত এবং সজাগ। খাদ্যে চর্বির আধিক্যই হৃদরোগের প্রধান কারণ, সেটা বিশ্ববাসী খুব ভালো করেই জেনে গেছে বিজ্ঞানের সুবাদে।

শূকরের দেহে সবচেয়ে বেশী চর্বিই কেবল থাকে না বরং সেই চর্বির মধ্যে ক্ষতিকারক উপাদানটির আধিক্যও সবচেয়ে বেশী। ফলে ইউরোপের সচেতন মানুষ শূকরের মাংস খেলেও এর চর্বিকে সব সময় যথাসম্ভব এড়িয়ে চলে বা চলার চেষ্টা করে। এর ফলে শূকর ব্যবসায়ী ও তার মাংস সরবরাহকারীদের একটা বড় অংশই অপচয় হবার সম্ভাবনা দেখা দেয়।

এইসব অপচয় থেকে বাঁচার জন্যই ইউরোপ শূকরের চর্বির বিকল্প ব্যবহার উদ্ভাবন করেছে। শূকরের চর্বিকে তারা বিভিন্নভাবে বাজারজাত করেছে। এর বহুবিধ ব্যবহারকে নিশ্চিত করেছে প্রসাধনী সামগ্রীর কাঁচামাল, ঔষধের মাধ্যম বা ঔষধ হিসেবে ব্যবহার, শল্য চিকিৎসায় ব্যবহার্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি নির্মাণ এবং সবচেয়ে বড় কথা হলো মনুষ্য ও পশু খাদ্য সামগ্রির বিভিন্ন উপাদান হিসেবে এই ক্ষতিকারক বস্তুটিকে ব্যবহার করছে। প্রথমে শূকরের চর্বি দিয়ে সাবান বানানো হয় এবং তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এর পরে একইভাবে ঐ চর্বিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন রকম তরল প্রসাধনী, ক্রিম ইত্যাদি উৎপাদন এবং বাজারজাত করা হয়, এটাও ব্যবসায়িক সফলতা পায়। বন্দুকের কার্তুজে এই শূকরের চর্বি ব্যবহার শুরু হয় সর্বপ্রথমে, উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি কিংবা তারও আগে।

যা হোক, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীগুলোও তাদের উৎপাদিত ঔষধ ও চিকিৎসা সামগ্রীতে এর ব্যবহার শুরু করে। সর্বপ্রথমে শরীরের অভ্যন্তরে সেলাই করার জন্য এমন এক ধরনের সুতোর দরকার পড়ে, যা ক্ষত শুকোনোর পরে খূলে ফেলার প্রয়োজন পড়বে না, এবং শরীরের ভেতরে হবার কারণে তা সম্ভবও নয়, বরং সেলাই কাজে ব্যবহৃত এই সুতো আপনা আপনিই মানুষের মাংসের সাথে মিশে যাবে। এ চিন্তা থেকেই চিকিৎসকরা বেড়ালের অন্ত্রের চর্বি দিয়ে তৈরী করেন এক বিশেষ ধরনের সুতো, যা দিয়ে মানুষের দেশে অস্ত্রোপচারের সময় আভ্যন্তরীণ ক্ষত জোড়া দিতে ব্যবহার করা যাবে। শল্য চিকিৎসক বা সার্জনরা মানুষের শরীরে এরকম যে সুতোর ব্যবহার করেন তাকে ‘ক্যটগাট’ বলা হয়।

বেড়ালের চেয়ে শূকরের প্রচলন বেশী এবং শূকরের মাংস ও চর্বি সহজ লভ্য হবার সুবাদে ইউরোপের শূকর খামার ব্যবসায়ী ও চিকিৎসকরা এগিয়ে আসেন এই সুতো নির্মাণে বেড়ালের পরিবর্তে শূকরের চর্বি ব্যবহারে। এবং তারা তা শুরুও করেন।

কিন্তু কিছু সচেতন মুসলমান ইউরোপীয় পণ্যসামগ্রীর গা’এ লিপিবব্ধ উপাদানের তালিকায় pig fat শব্দটি দেখে আঁতকে উঠেন। কারণ যে কোন মুসলমানের কাছে এই pig fat বা শূকরের চর্বি, তার মাংস বা রক্ত সকল কিছুই হারাম, এর যে কোন ধরনের পরোক্ষ ব্যবহারও হারাম। তারা তাদের ভাষণে-বিবৃতিতে, লেখা-লেখনীতে এ ব্যপারে জনগণকে যেমন সতর্ক করেন, তেমনি সরকারের কাছেও দাবী জানাতে থাকেন এইসব ইউরোপীয় পণ্য দেশে আমদানী করারা অনুমতি না দেবার। এর ফলে ইউরোপীয়রা তাদের পণ্যতে pig fat শব্দটির পরিবর্তে ‘animal fat’ শব্দটি ব্যবহার শুরু করে।

ফলে ইউরোপীয়ান বাবস্যায়ীরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার হারাতে বসে। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতেই তারা বিকল্প পন্থা উদ্ভাবন করে। আর এই বিকল্প পন্থাটইি হলো উৎপাদিত কোন বস্তু, তা খাদ্য সামগ্রী হোক বা ঔষধ পথ্য কিংবা প্রসাধনী কিংবা অন্য কিছু, তার গা’এ ইউরোপীয়ান আঈন অনুযায়ী উপাদান সমুহের নাম লেখা হবে বটে তবে সেই সব নামগুলো লেখা থাকবে বৈজ্ঞানিক কোন টার্ম কিংবা সাংকেতিক নাম ব্যবহার করে যেন সাধারণ জনগণ সেই সব নাম, সেইসব টার্ম পড়ে বুঝে উঠতে না পারে, আসলে এই জিনিসগুলো কী?

করপোরেট বাণিজ্যের এই বিশ্বে ব্যবসাীয় মহলের চাপে নতী স্বীকার করে সরকার উৎপাদকদের সাথে আপোষ করে এবং উৎপাদিত পণ্যের গা’এ সাংকেতিক ভাষায় উপাদানসমুহের নাম লিপিবদ্ধ করার অনুমিত দেয়। সেই থেকে শিল্পকারখানায় উৎপাদিত পণ্য, বিশেষ করে, খাদ্য সামগ্রী কিংবা তা প্রস্তুতে ব্যবহৃত উপাদানসমুহে, প্রসাধনী, ঔষধ কিংবা পথ্যের উৎপাদনে সাংকেতিক ভাষায় বিশেষ নাম বা E-Codes ব্যবহার করা হয়, যা আমাদের মত সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য একটি বিষয়।

এরকমই একজন মুসলিম টেকনিশিয়ান কাজ করতেন ফ্রান্সের Pegal শহরে অবস্থিত Departments of Food Administration এর মান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে বা ল্যবরেটরিতে। তিনি অনূসন্ধিৎষূ মন নিয়ে দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় বের করেছেন বেশ ক’টি E-Codes যার প্রত্যেকটিই শূকরের চর্বিকে ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে। একটি ওয়েব সাইটে Are we eating Pork? শিরোণামে মুসলমানদের উদ্দেশ্যে এক পাকিস্থানী বিজ্ঞানী ড: এম আমজাদ খান কর্তৃক প্রচারিত উক্ত তালিকায় শুকরের চর্বি থেকে প্রস্তুত E-Codes এর তালিকা নিম্নরুপ:
E100, E110, E120, E 140, E141, E153, E210, E213, E214, E216, E234, E252, E270, E280, E325, E326, E327, E334, E335, E336, E337, E422, E430, E431, E432, E433, E434, E435, E436, E440, E470, E471, E472, E473, E474, E475, E476, E477, E478, E481, E482, E483, E491, E492, E493, E494, E495, E542, E570, E572, E631, E635, E904. I

উক্ত তালিকায় উল্লেখিত E-Codes গুলোর বেশ ক’টি আমাদের দেশে প্রাত্যহিক ও দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত জনপ্রিয় খাদ্যতালিকায় উপস্থিত দেখতে পাওয়া যায়। তার দু‘একটা নমুণা দেখুন, যেমন; নিচে উল্লেখিত তালিকায় খাদ্য দ্রব্যের নামের পাশে তাতে ব্যবহৃত E-Codes ও তুলে দেয়া হলো:
1 Cadburrys chocolate – E476
2 Igloo Ice Cream -E471,E433
3 Baskin Robbins Ice Cream E471
4 Foster Clarks Custard Powder-E110
5 Fadeco Ice Cream-E471
6 Nova Chewing Gum -E422
7 Demah Fresh -E422
8 Big Babool Chewing Gum
বলা বাহুল্য, উপরের তালিকায় উল্লেখিত প্রায় সবকটিই আমাদের দেশসহ প্রায় সকল মুসলিম দেশে ছেলে বুড়ো’সহ সকলের কাছেই খুবই প্রিয়।

আল কুরআনে অন্তত চারটি জায়গায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন শূকরের মাংস এবং মৃত জন্তু জানোয়ার আর সেইসব জানোয়ার যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নাম নিয়ে জবাই করা হয়েছে, মুসলমানদের জন্য হারাম করেছেন। তারই একটি আয়াত দেখুন:
তিনি তোমাদের উপরে হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত শূকর মাংশ এবং সেসব জীব জন্তু যা আল্লাহ ব্যতিত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং না-ফরমানী ও সীমালংঘনকারী না হয়, তার জন্য কোন পাপ নেই। নি:সন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু (সুরা আল বাক্বারা- ১৭৩)

এটা মোটমুটি অমুসলিম ব্যবসায়ীরা জানে, অন্তত তাদের সরকার ও জনগোষ্ঠির সচেতন অংশটি খুব ভালো করেই জানে, কিন্তু তারপরেও তারা ভিন্ন কৌশলে মুসলমানদেরকে আকর্ষণীয় উপস্থাপনায় সেই হারাম বস্তু খাওয়াতে মনে হয় উঠে পড়ে লেগেছে। এর পেছনে কেবল যে তাদের আর্থিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থই আছে তাই নয় বরং এর পেছনে রয়েছে ধর্মীয় বিদ্বেষজনিত এক আগ্রাসী মনোভাব, যার মিল রয়েছে একমাত্র ক্রসেডের সাথেই।

লেখক: Prof. Dr Mohammad Nurul Huq

Offline Monir Hossan

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 368
  • Be religious and surrender to Allah!
    • View Profile
    • Daffodil International University
Mohammad Monir Hossan
Senior Assistant Director (Faculty of Graduate Studies)
E-mail: monirhossain@daffodilvarsity.edu.bd

Offline Mohammad Salek Parvez

  • Faculty
  • Sr. Member
  • *
  • Posts: 387
    • View Profile


Offline mosharraf.xm

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 96
    • View Profile
This has been under the discussion for a long time. Important post. May Allah save us all from taking haram food. Thank you.
Md. Mosharraf Hussain
Senior Assistant Controller of Examinations
Office of the Controller of Examinations
Daffodil International University
Email: mosharraf.exam@daffodilvarsity.edu.bd
Cell: 01847140069