সুন্দরবন ঘেঁষে বসতি

Author Topic: সুন্দরবন ঘেঁষে বসতি  (Read 1260 times)

Offline Monir Hossan

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 368
  • Be religious and surrender to Allah!
    • View Profile
    • Daffodil International University
সুন্দরবন ঘেঁষে বসতি
« on: May 28, 2018, 10:32:26 AM »

সুন্দরবনের চারপাশে দখল-দূষণে এমনিতেই ঝুঁকির মধ্যে বিশ্বের সর্ববৃহৎ শ্বাসমূলীয় এই বন। এবার স্থানীয় প্রশাসন বনটির ভোলা নদীতে জেগে ওঠা চরের জমি বন্দোবস্ত দিয়ে সুন্দরবনকে নতুন ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য এই জমির ‘দখলও বিক্রি’ হচ্ছে। একই চরে দুটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় সেখানকার মাটিভরাটের কাজ শুরু হয়েছে।

ভোলা নদীর চরটির অবস্থান বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা গ্রামে। সুন্দরবন ঘেঁষে এই চরে নতুন করে বসতি ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে ইতিমধ্যে বন বিভাগ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসনকে আলাদা চিঠি দিয়েছে। বন বিভাগ বলছে, জেগে ওঠা চরের (চরপয়স্তি) জমিতে বসতির ফলে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে। চরপয়স্তি এলাকার একদিকে বন, অন্যদিকে প্রত্যন্ত গ্রাম। ওই চরে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ছিন্নমূল মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে জঙ্গলের ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। এতে বনজ সম্পদসহ জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া সুন্দরবনের কাছে এমন প্রকল্পের ফলে বনের বাঘ কাছের গ্রামগুলোতে ঢুকে পড়তে পারে। এ ছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকাটি ভোলা নদীর চর এলাকা, যা সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে মাত্র ৫০০ ফুট দূরে।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকাকে ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ (ইসিএ) ঘোষণা করা হয়েছে। এই এলাকায় ভূমি ও পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট ও পরিবর্তন হবে, এমন কোনো কাজ করা যাবে না।

গত ৩ এপ্রিল বন অধিদপ্তর থেকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়কে এবং ২৬ এপ্রিল বাগেরহাট জেলা প্রশাসনকে ওই চরে বন্দোবস্ত না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে বন বিভাগ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ভোলা নদীতে চর জেগে ওঠায় শরণখোলা উপজেলা প্রশাসন নতুন দাগ কেটে বন্দোবস্ত দিয়েছে। ভোলা নদী এবং এই চর সুন্দরবন সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এখানে বন্দোবস্ত দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, সুন্দরবন ঘেঁষে এভাবে বসতি গড়ে তোলা হলে ভয়ংকর হুমকির মুখে পড়বে বনটি। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে প্রস্তাবিত সব প্রকল্প বাতিল করা উচিত।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর দাশেরভাবানী আশ্রয়ণ-২ নামে একই ধরনের একটি প্রকল্পের কাজ বাতিল করা হয়। ২০০৫ সালে সুন্দরবনের বনজ সম্পদ রক্ষা তথা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে সোনাতলা ১ ও সোনাতলা ২ এবং সোনাতলা ৩ আদর্শ গ্রাম প্রকল্প স্থগিত করা হয়। এ ছাড়া ২০০৪ সালে ভোলা নদীর চরে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসন আদর্শ গ্রাম প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) রিট করলে সেই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

জানতে চাইলে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোর কাছে পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, তাঁকে কোনো চিঠি দেওয়ার বিষয়টি জানা নেই। ঘণ্টাখানেক পর এই প্রতিবেদককে তিনি ফোনে বলেন, এই মাত্র তিনি জানতে পেরেছেন, এমন কিছু চিঠি বন বিভাগ থেকে এসেছে। তিনি সব বন্দোবস্ত বাতিল করে দেবেন।

বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকা থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত ভোলা নদীটি। শেষ হয়েছে জেলার শরণখোলা উপজেলায় সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ কার্যালয়ের কাছে বলেশ্বর নদে গিয়ে।

পশ্চিম রাজাপুর গ্রামের মো. নজরুল ইসলাম বলেন, নদীর তীরে কোনো কোনো এলাকায় ৩০০ থেকে ৫০০ ফুট পর্যন্ত চর জেগেছে। এই নদে একসময় জাহাজ চলত।

ভোলা নদী শুকিয়ে যাওয়ায় লোকালয় আর বনের প্রাকৃতিক নিরাপত্তাবলয় নষ্ট হচ্ছে। সুন্দরবনে দীর্ঘদিন মাছ ধরে সংসার চালাচ্ছেন নজরুল। তিনি বলেন, জোয়ার-ভাটার প্রবাহ না থাকায় বনের ভেতর পানির চলাচল নেই। বনের গাছ মরে যাচ্ছে।

রাজাপুর গ্রাম ছাড়াও সোনাতলা গ্রামে নদীচরের শতাধিক পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে, যাদের অধিকাংশ বলেশ্বর নদের ভাঙনে ঘরবাড়ি ও জমি হারিয়ে ভূমিহীন।

বন্দোবস্ত দেওয়া জমিতে বসতবাড়ি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি, পুকুর খনন থেকে মাছ চাষ—সবই হচ্ছে। বন্দোবস্তের বাইরে থাকা মাইলের পর মাইল জমিও স্থানীয়দের দখলে, যাঁদের অধিকাংশই আবার সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস থেকে অর্থের বিনিময়ে খাসজমি হিসেবে তা ভোগদখলের প্রত্যয়নপত্র নিয়েছেন। ভূমিহীন ছাড়াও আশপাশের গ্রামের সামর্থ্যবান অনেকেই দখল করেছেন চরের জমি। অর্থের বিনিময়ে এখানে বনের সেই জমির দখলও আবার বিক্রি হয়। অবশ্য কারোরই কোনো দলিল নেই। বিক্রি হয় দখলিস্বত্ব। দখলে থাকা ব্যক্তিরা বলছেন, তাঁরা এই জমির জন্য স্থানীয় ভূমি অফিসের মাধ্যমে বছর বছর খাজনা দেন।

দক্ষিণ সোনাতলা গ্রামের মডেল বাজারের মুদিদোকানি আবদুল কাদের হাওলাদার (৭৮) ভূমিহীন হিসেবে চরের দশমিক ৫০ একর জমি ভোগদখল করেন। তিনি বলেন, ‘চরের জমিতে থাকি। বছরে দুই হাজার-বাইশ শ টাকা দিতে হয় ওই জমির জন্য। এখানে চরের জমি যাঁদের দখলে আছে, তাঁদের সবাই ভূমিহীন নন। অনেকেই জমি দখল করে আছেন। কারণ, সরকার তো কখনো নিতে আসবে না। এখানে দখল বিক্রি হয়। একজন দখল করে সেই জমির দখল অন্যকে বুঝিয়ে দিয়ে টাকা নেওয়া হয়।’

ওই চরে আবদুল কাদেরের পাশের জমিতে থাকেন হারেস সরদার। তিনি প্রায় ৫০ হাজার টাকা দিয়ে দশমিক ৫০ একর জমির দখল কিনেছেন। এরপর ওই জমি ভোগদখলীয় হিসেবে ভূমি অফিসের প্রত্যয়নও নিয়েছেন তিনি।

সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুন্দরবনবিনাশী কার্যক্রমে দেশবাসী উদ্বিগ্ন। সুন্দরবন ঘেঁষে এ ধরনের বন্দোবস্ত দেওয়া বা প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়ার অর্থ হচ্ছে সুন্দরবনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া। সুন্দরবন প্রশ্নে সরকার কেন নির্লিপ্ত থাকছে, তা ঠিক বুঝতে পারছি না।’ তিনি বলেন, সুন্দরবন বাঁচাতে হলে অবিলম্বে এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।

(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন বাগেরহাট প্রতিনিধি ইনজামামুল হক)

Source: http://www.prothomalo.com/bangladesh/article/1497171/%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A6%A8-%E0%A6%98%E0%A7%87%E0%A6%81%E0%A6%B7%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%B8%E0%A6%A4%E0%A6%BF
Mohammad Monir Hossan
Senior Assistant Director (Faculty of Graduate Studies)
E-mail: monirhossain@daffodilvarsity.edu.bd

Offline Raisa

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 908
  • Sky is the limit
    • View Profile
Re: সুন্দরবন ঘেঁষে বসতি
« Reply #1 on: May 31, 2018, 12:12:04 PM »
good one
:)