জাহাজ শিল্প থেকে স্যাটেলাইট নির্মাণের প্রাণকেন্দ্র স্কটল্যান্ড
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শুরুতে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের কেন্দ্র হয়ে ওঠা স্কটিশ শহর গ্লাসগো এখন ধীরে ধীরে স্যাটেলাইট নির্মাণের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠছে।
মহাকাশ শিল্পসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অন্য যেকোনো শহরের চেয়ে সর্বাধিক স্যাটেলাইট তৈরি করছে গ্লাসগো। বিশেষ করে তারা ছোট আকারের ‘কিউবস্যাটস’ তৈরিতে বেশ দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। এ স্যাটেলাইটগুলো আবহাওয়ার পূর্বাভাস থেকে শুরু করে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের (জিপিএস) ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
স্যাটেলাইট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ক্লাইড স্পেসের ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের প্রধান পিটার এন্ডারসন বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘জাহাজ নির্মাণে সব সময়ই স্কটল্যান্ডের সুখ্যাতি ছিল। এখন আমরা মহাকাশযান তৈরি করছি।’
ক্লাইড স্পেস ২০১৪ সালে স্কটল্যান্ডের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো স্যাটেলাইট নির্মাণ করেছে। পরবর্তী দুবছরের মাথায় প্রতি মাসে অন্তত ছয়টি করে স্যাটেলাইট নির্মাণ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
মহাকাশসামগ্রী নির্মাণের ক্ষেত্রে খুবই সম্ভাবনাময় জায়গায় রয়েছে স্কটল্যান্ড। স্কটল্যান্ডে দুটি মহাকাশ বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে বলে জানা গেছে।
ব্রেক্সিট পরিপ্রেক্ষিতে দেশে তৈরি মহাকাশসামগ্রীর প্রয়োজন বেড়েছে ব্রিটেনের। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে এলে প্রায় ১ হাজার কোটি ইউরোর গ্যালিলিও গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) থেকে বঞ্চিত হবে ব্রিটেন।
যুক্তরাজ্য গ্যালিলিওতে পূর্ণাঙ্গ প্রবেশাধিকার চায়, কিন্তু ‘নিরাপত্তা সুরক্ষার’ প্রয়োজনে ব্রিটেন থেকে স্পেনে একটি ঘাঁটি স্থানান্তর করা হচ্ছে। আগামী ২০২৬ সালে এ সিস্টেমটি পুরোদমে কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিসা মে প্রকৌশলী ও মহাকাশ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছেন। যুক্তরাজ্যের মহাকাশ সংস্থার নেতৃত্বে এ টাস্কফোর্সটি ‘ব্রিটিশদের জন্য একটি গ্লোবাল নেভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম উন্নয়নে কাজ করবে, যা ক্ষেপণাস্ত্রের পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে।’
২০১০ সালের পর থেকে স্কটল্যান্ডের মহাকাশ খাতটি ৭০ শতাংশেরও বেশি সম্প্রসারিত হয়েছে। অ্যারোস্পেস বাণিজ্য সংগঠন এডিএস স্কটল্যান্ড জানাচ্ছে, গেল বছর এ খাতে ২৭০ কোটি পাউন্ড আয় করেছে। এছাড়া এ খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে ৭ হাজার ৫০০ জন কর্মীর।
যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্পায়ার গ্লোবালের সঙ্গে যৌথভাবে ক্লাইড স্পেস ২০১৪ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৮০টি স্যাটেলাইট তৈরি করেছে।
উদীয়মান এ মহাকাশ শিল্পটি আরো ছোটখাটো বিভিন্ন স্টার্টআপকে অনুপ্রাণিত করছে। যেমন আলবাঅরবিটাল নামে একটি স্টার্ট আপ প্রতিষ্ঠান ইউনিকর্ন ওয়ান নামে তাদের প্রথম স্যাটেলাইট উেক্ষপণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
স্কটল্যান্ডের প্রত্যাশা, খুব শিগগিরই তাদের নিজস্ব লঞ্চপ্যাড থাকবে। স্কটিশ আইনপ্রণেতারা গত এপ্রিলে দেশটির পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত নর্থ ইউইস্ট দ্বীপ পরিদর্শন করেছেন এবং একটি ভার্টিকাল উেক্ষপণ কেন্দ্র নির্মাণের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
রয়াল অবজারভেটরি এডিনবার্গের গবেষক মাতজাজ ভিদমার বলেন, ‘আমরা নিকটভবিষ্যতের কোনো একসময়ে স্কটল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলীয় যেকোনো স্থানে একটি উল্লম্বিক (ভার্টিকাল) উেক্ষপণ কেন্দ্র দেখতে যাচ্ছি।
তবে খুব সম্ভব শিগগিরই প্রেস্টউইকে একটি আনুভূমিক (হরাইজনটাল) উেক্ষপণ কেন্দ্র দেখব।’
আনুভূমিক উেক্ষপণ কেন্দ্রে প্রথাগত উড়োজাহাজের মাধ্যমে রকেট বহন করে বেশ উঁচুতে নিয়ে গিয়ে কক্ষপথে ছাড়া হয়।
স্কটল্যান্ডে যে হারে স্যাটেলাইট তৈরি বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা তুলনামূলক ‘আশপাশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে অনেক বেশি’ বলে মনে করেন ভিদমার।
তিনি আরো বলেন, ‘আপনি যদি অনেক ছোট ছোট জুতার ফিতা একসঙ্গে করেন, তাহলে আপনি বেশ বড় একটি দড়ি পাবেন।’
Source:
http://bonikbarta.net/bangla/news/2018-05-29/159290/%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%9C-%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AA-%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%9F-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A3%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A3%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A6%9F%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A1/