হিট স্ট্রোক কি?
যত গরম বা শীতই পড়ুক না কেন, বিভিন্ন মেকানিজমের মাধ্যমে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা 97F (36.1C) to 99F (37.2C) এর মধ্যেই থাকে। এর বেশি হলে জ্বর বলা হয়, কমে যাওয়াটা সাধারনত খুবই রেয়ার। হিট স্ট্রোক একধরনের জ্বর, যেখানে শরীরের মেকানিজম গুলো বিভিন্ন কারনে শরীরের তাপমাত্রা কমাতে ব্যর্থ হয়, এবং তাপমাত্রা পৌঁছে যায় 105.1 °F বা 40.6 °C তে। সাধারনত এর নিচের তাপমাত্রা শরীর মানিয়ে নিতে সমর্থ হয়।
কি কারনে / কাদের হতে পারে -
প্রথম কারন, অবভিয়াসলি অতিরিক্ত তাপমাত্রা, এখন যেমন পড়েছে। বয়স্ক মানুষের বেশি হবার সুযোগ থাকে। চা, কফি, এলকোহল এর রিস্ক বাড়িয়ে দেয় অনেক। এবং সবশেষে আপনি যদি এই গরমে কোন ভারী কাজ বা শারীরিক পরিশ্রম করতে থাকেন, সে ক্ষেত্রে। এটা হতে পারে রিকশাওয়ালা থেকে খেটে খাওয়া যেকোন মানুষের, যারা কোন রকম ছায়া ছাড়াই অনেকক্ষণ গরমে টানা কাজ করছেন। কিংবা আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, প্রচন্ড গরমে একটা ওভারক্রাউডেড বাসের মত বদ্ধ জায়গায় খুব তাড়াতাড়িই আপনার শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে, ভেন্টিলেশনের অভাবে। হতে পারে ক্যাডেট কলেজের ছাত্রদের, বা কোন মিলিটারী পারসোনেল। হতে পারে ট্রাফিক পুলিশের, বা এই গরমে খোলা মাঠে খেলাধুলা করতে গিয়েই হিট স্ট্রোক হতে পারে।
সিম্পটম -
বমি বমি ভাব, অথবা বমি
হঠাত ক্লান্ত লাগা
মাথা ব্যাথা করা/ মাথা ঘোরানো
শরীর ব্যাথা করা।
আপনি বা ডাক্তার যেটা রোগীকে দেখে/ পরীক্ষা করে পাবেন
অনেক জ্বর, শরীর একদম শুকনো, শুষ্ক, কোন ঘাম পাওয়া যাবেনা। হাই পালস রেট, শ্বাসকষ্ট, হ্যালুসিনেশন, অদ্ভুত ব্যবহার, একদম এক্সট্রিম কন্ডিশনে খিঁচুনি, কোমা পর্যন্ত পাওয়া যেতে পারে।তবে অনেক ক্ষেত্রেই কোন সিম্পটম ছাড়াই রোগী হঠাত করেই খারাপ হয়ে যেতে পারে, বিশেষত বয়স্ক লোকের ক্ষেত্রে।
কি করবেন?
প্রথমেই মনে রাখবেন এটা একটা মেডিকাল ইমার্জেন্সী, এবং আমাদের দেশের কন্ডিশনে হাসপাতাল নেওয়ার জন্য দেরী করা যাবেনা। চিকিৎসার প্রথম টার্গেট হচ্ছে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত কমিয়ে আনা, যেটা রাস্তার পাশেই করা সম্ভব।
- প্রথমেই রোগীকে কোন ঘরে, সম্ভব না হলে ছায়ায় নিয়ে যান, কাপড় চোপড় সব খুলে আলগা করে দিন। বরফ পাওয়া গেলে খুবই ভাল, বগল আর গ্রয়েন এর নিচে বরফ দিয়ে দিন। না পাওয়া গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে সারা শরীর মুছে দিন। ভুলেও পানি ভিজানো তোয়ালে বা কাপড় দিয়ে রোগিকে পেঁচিয়ে দিবেন না, এতে তাপ বের হবার সুযোগ পাবে না।
- রোগী যদি খেতে পারে, যতটুকু সম্ভব ঠান্ডা পানি বা বেভারেজ খাইয়ে দিন, খাবার স্যালাইন ও দিতে পারেন। ফ্যানের ব্যবস্থা করা গেলে ফ্যান ছেড়ে দিন।
- পা উপর দিকে তুলে দিতে পারেন, এতে ব্রেইনের ব্লাড সার্কুলেশন বাড়বে।
রাস্তার পাশে বা বাসায় সাধারনত এর চেয়ে বেশি তেমন কিছু করার নেই, এরপর রোগীকে হাসপাতালে নেবার চেষ্টা করতে পারেন, রোগীর অবস্থা বুঝে।
হিট স্ট্রোক এড়াতে -
- হিট স্ট্রোক বা তাপমাত্রা জনিত সিম্পটম গুলোর ব্যাপারে জেনে রাখুন
- প্রচুর পানি খান
- এলকোহল, ক্যাফেইন, ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন।
- সম্ভব হলে এই গরমে ভারী কাজ, বদ্ধ এলাকা এড়িয়ে চলেন।
- আর ভারী কাজ যদি করতেই হয় সে ক্ষেত্রে প্রচুর পানির পাশাপাশি ইলেক্ট্রোলাইটের জন্য খাবার স্যালাইন খাওয়া যেতে পারে।
- হাল্কা রঙ এর কাপড় চোপড় পড়ুন, টাইট ফিট কাপড় চোপড় এড়িয়ে চলাই ভাল, সম্ভব হলে ক্যাপ/ টুপি ব্যবহার করতে পারেন।
হিট স্ট্রোক এমন একটা কন্ডিশন যেটা আমাদের দেশে গরমকালে যে কারোর-ই হতে পারে। একটু সচেতন থাকলেই এই সিরিয়াস কন্ডিশনটা এড়িয়ে চলতে পারবেন, এবং এর কোন ভিক্টিম কে রাস্তায় পেলে সহজেই আপনি প্রাথমিক চিকিৎসাটা দিয়ে একজন মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারবেন।
Collected.