একজন প্রকৃত মুসলিম কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারেনা। এমনকি নিজের দুশমনের সাথেও না। মুসলিম হবে ইনসাফকারী। কোন ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষের কারনে সে সুবিচার বর্জন করবেনা। বদলা নেওয়ার রাগেও সে কারও প্রতি অন্যায় করবেনা। একটা ঘটনা শুনুন। ইবনে হিশাম, সিরাতুর রাসুল (সা.) ইত্যাদি সিরাত গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। আমি সংক্ষেপে বলছি –
মক্কার কাফেররা ষড়যন্ত্র করে কয়েকজন লোক পাঠায় মদিনায় মুহাম্মাদ (সা.) -এর কাছে। তারা মিথ্যা করে বলে, ‘আমাদের গোত্রে ইসলামের কিছু চর্চা আছে, দ্বীন শিক্ষা ও কুর’আন পড়ানোর জন্য কিছু জ্ঞানসম্পন্ন সাহাবীদের পাঠালে আমরা উপকৃত হবো।’ রাসুল (সা.) তাদের কথায় বিশ্বাস করে, দশ জনের একটি মুবাল্লিগ দল প্রেরণ করেন। কিন্তু কিছুদুর যেতেই তাদের উপর অতর্কিত হামলা করে প্রায় একশজন কাফের তীরন্দাজ। বিশ্বাসঘাতকতা করে মেরে ফেলা হয় আট জন সাহাবীকে। দুজন বেঁচে যান। তাঁরা হলেন, খোবায়েব বিন আদী (রা.) এবং যায়েদ বিন দাসেনাহ (রা.)। এই দুজনকে মক্কায় এনে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এদের কেনেন দুইজন কাফের শুধুই হত্যা করার জন্য। বদর যুদ্ধে পিতৃহত্যার অন্যায়ভাবে বদলা নেওয়ার জন্য।
হত্যা করার আগে খোবায়েব (রা.) -কে হারেশ বিন আমেরের বাড়ীতে কয়েকদিন বন্দি করে রাখা হয়। এসময় তাকে খাবার দেওয়া হতনা। এমনকি জলও না। একদিন হঠাত, হারেসের ছোট বাচ্চা ছেলেটি ধারালো ছুরি নিয়ে খেলতে খেলতে খোবায়েব (রা.) -এর কাছে চলে আসে। তিনি শিশুটিকে আদর করে কোলে বসান। এই দৃশ্য দেখে বাচ্চাটির মা ভয় পেয়ে চিৎকার করে ওঠেন। (তিনি ভেবেছিলেন খোবায়েব (রা.) হয়ত বাচ্চাটির কোন ক্ষতি করবে বা মেরে ফেলবে বদলা নেওয়ার জন্য কারণ তাঁর মৃত্যু তো নিশ্চিত!)। তখন খোবায়েব (রা.) বলেন, ‘মুসলিম কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করে না’।
*** খোবায়েব (রা.) -কে বিশ্বাসঘাতকতা করে ধরে আনা হয়, তাঁর সাথীদের হত্যা করা হয়, অন্যায়ভাবে তাঁকে বিক্রি করা হয়, কিছুদিনের মধ্যেই তাকে হত্যা করা হবে এতসব জানা সত্তেও তিনি নিজ শত্রুর বাচ্চা শিশুকে আদর করে কোলে বসান এবং কাছে ধারালো ছুরি পেয়েও বাচ্চাটিকে হত্যা করেননি বা পরিবারের অন্য কাউকেও মারেননি। বাচ্চাটির মা ভয় পেলে তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন মুসলিম কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করেনা। অর্থাৎ বুঝিয়ে দেন নিশ্চিন্ত হও, তোমার শিশুর কিছু হবেনা।
Source:https://islameraalo.wordpress.com/