মজান মাসে যারা সিয়াম সাধনায় নিমজ্জিত থাকেন, তাঁদের জন্য ঘুমের অভাব খুব সাধারণ একটি সমস্যা। কেননা রমজান বলে দৈনন্দিন জীবন তো আর থেমে থাকে না। অফিস যেতে হয়, ঘরের সকল কাজ করতে হয়, ইবাদত বন্দেগীতেও সময়টা বেশি দিতে হয়। অন্যদিকে রমজান মানে ইফতার বা সেহেরিতে কাজের চাপ বেশি, আসন্ন ঈদের প্রস্তুতি নিয়েও সময় ব্যয় করতে হয়। সব মিলিয়ে অন্যান্য সময়ের চাইতে রমজানে আক্ষরিক অর্থেই ব্যস্ততা অনেক বেশি।
যেহেতু সেহেরিতে ঘুম থেকে উঠতেই হয়, ফলে এক টানা অনেকটা সময়ের গভীর ঘুম হয়ে ওঠে না। সেহেরির পর ঘুম আসতেও অনেকের দেরি হয়। এদিকে সকাল ৭/৮ টা বাজতে না বাজতেই রোজকার ব্যস্ততা শুরু। এমন অবস্থায় কী করবেন? থাকছে প্রয়োজনীয় কিছু টিপস, যা এই রমজানে আপনার ঘুমের অভাব পুষিয়ে নিতে বেশ সাহায্য করবে।
একটু আগে ঘুমাতে যান
রাত জেগে টিভি দেখা, ফেসবুকিং করা ইত্যাদি নাহয় এই একটা মাস বন্ধই থাকুক। স্বাস্থ্য সবার আগে, তারপর তো বিনোদন। তারাবি শেষ করেই প্রয়োজনীয় কাজ সেরে ঘুমাতে চলে যান। এতে সেহেরির পূর্বে অন্তত ৪/৫ ঘণ্টা টানা ঘুমাতে পারবেন। এর ফলে গভীর রাতের ইবাদত বা সেহেরিতে উঠতেও কষ্ট হবে না।
ভারী ইফতার ও রাতের খাবার পরিহার করুন
রমজান মানে বেশি বেশি খাওয়া নয়। অতিরিক্ত খাওয়ার সাথে রমজানের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সারাদিন না খেয়ে ছিলেন মানেই আপনাকে অনেক বেশি খাবার ইফতারে বা রাতের খাবারে খেয়ে ফেলতে হবে, বিষয়টি মোটেও এমন নয়। ইফতার করুন খুব পরিমিত। পানি পান করুন বেশি পরিমাণে। যেহেতু ইফতারের সময়টা বেশ দেরি করে, সেক্ষেত্রে ইফতার ও রাতের খাবার একত্রে সেরে ফেলুন। এসিডিটি হতে পারে এমন সকল খাবার বাদ দিন। এতে কম তো খাওয়া হবেই, দেখবেন শরীর ঝরঝরে লাগছে। ঘুমেরও কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
একটু খানি বাড়তি ঘুম
যাদের অফিস একটু দেরি করে শুরু হবে, তারা তো সকালেই বাড়িতে খানিকটা ঘুমের সুযোগ পাবেন। অন্যথায় অফিস থেকে ফিরে বা সংসারের কাজের ফাঁকে দুপুরে একটু ঘুমিয়ে নিন। টানা ২/৩ ঘণ্টার ঘুম না হলেও ঘড়ি ধরে অন্তত এক ঘণ্টা দিবানিদ্রা দিন। দেখবেন অনেক ঝরঝরে লাগছে।
ঘুমের মান বাড়ান
সঠিক সময়ে রোজ ঘুমাতে যান, সঠিক সময়ে জেগে উঠুন। ইফতারের পর ঘুমিয়ে পড়বেন না, এতে রাতের ঘুমের ব্যাঘাত হবে। বরং প্রয়োজনীয় কাজ ও ইবাদত সেরে একবারে শুতে যান। শোবার সময়ে সেলফোন, টেলিভিশন ইত্যাদি দূরে রাখুন। ঘর অন্ধকার করে আরামদায়ক পরিবেশে অল্প সময়ের ঘুম অস্বস্তিকর দীর্ঘ ঘুমের চাইতে উত্তম।
সেহেরিতে পরিমিত হোক সব
সেহেরি মানে পেট ঠেসে খেয়ে ফেলা নয়। বরং, বেশি খেলেই সারাদিন আপনার কষ্ট হবে বেশি। এসিডিটি হবে, বুক জ্বলবে, শরীর ভার ভার ঠেকবে, সকল কাজের মাঝে ঘুম পাবে। সেহেরি হোক সবচাইতে পরিমিত। প্রয়োজনের চাইতে এক ফোঁটা বেশি খাবেন না। একসাথে অনেকটা পানি পান করলেও সেহেরিতে কোনো লাভ হয় না, এতে বরং খাবার হজমে অসুবিধা হয়। ইফতারের পর থেকেই অল্প অল্প করে বারবার পানি পান করুন। ৬ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করলেই যথেষ্ট। এতে সেহেরির পর ফজরের নামাজেও অস্বস্তি অনুভুত হবে না।
চা-কফি পরিহার করুন
ইফতার শেষ করেই চা-কফি পান আমাদের অনেকেরই অভ্যাস। অনেকে সেহেরিতেও পান করে থাকে। এই অভ্যাস পরিহার করুন। অসময়ে চা-কফি আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাবে। এছাড়াও বেশি চা-কফি পানে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। এমন হলে আপনার কষ্ট বাড়বে বই কমবে না।
শুভ হোক সকলের রমজান। সুস্থ থাকুন।