লা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে আসে, তার কোনো বিপদ-আপদ হয় না? কিন্তু কীভাবে জিজ্ঞেস করব। এই কথা তো বলাও যায় না।
স্যার, আপনে প্রতিবার মেলায় আসেন ক্যান?
নেশা। সবাই আসে। দেখা হয়। ভালো লাগে।
আমারও স্যার নেশা। ঘরে থাকতে পারি না...
বসন্ত এসে গেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অন্যপ্রকাশের কার্জন হল আকৃতির স্টলের ওপর চাঁদ উঠেছে। কোনো একটা গাছে বোধ হয় কোকিলও ডাকছে। আমি প্রথমার স্টলে বসে আকাশের চাঁদের ছবি তুলি মুঠোফোনে। ফেসবুক চেক করি। দেখি, একজন লিখেছে, ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত।
না। ফুলও তো ফুটেছে। মেয়েরা সব হলুদ শাড়ি পরেছেন। তাঁদের মাথায় ফুলের মুকুট। কী যে ভালো লাগছে।
নীপা আসে। ওর হাতে ফুলের মুকুট।
আমি বলি, নীপা, তোমার ফুলের মুকুটের দাম কত?
এক শ টাকা।
নাও। একটা তুমি পরো. . এই নাও টাকা...
লাগব না স্যার।
পরো।
না স্যার।
কেন?
আপনের বই আপনি পড়েন?
হা হা হা! তুমি বেশি চালাক।...
স্যার, সামনের বছরও আইবেন মেলায়...
বাঁইচা থাকলে আসব। তুমি আসবে?
না।
কেন?
আপনি কইছেন না বড় হয়া গেছি।
আসবে না কী করবে?
নীপা চুপ করে থাকে।
কী করবে? বিয়ে করবে না তো? ১৮ বছরের আগে বিয়ে না...
নীপা লজ্জা পায়। নীপা মাথা নিচু করে বইমেলার মাটিতে পায়ের আঙুল বসায়। বোঝাই যাচ্ছে, ওর মা ওকে বিয়ে দিয়ে দেবেন।
কী?
স্যার। ছোট দুইটা ভাই স্কুল যায়। আমি ফুল না বেচলে সংসার চলব না। মায়ে আর কামে যাইতে পারে না...
পাতাকুড়ানির মেয়ে তুমি কী কুড়াও? ছায়া কুড়াই-আবুল হাসানের প্যারোডি করে বিড়বিড় করি-
ফুলকুড়ানির মেয়ে তুমি কী কুড়াও? দুঃখ কুড়াই, দুঃখ।
ঈদ ওদের জীবনেও আসবে। ওরাও নতুন জামা পরে ঈদের দিন সেমাই খাবে, পোলাও খাবে। আর শিশুপার্কে গিয়ে বিনে পয়সায় দোল খাবে দোলনায়।
আনিসুল হক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও সাহিত্যিক