একটি স্মার্টফোন তৈরি করতে কোম্পানিগুলোর আসলে কত টাকা খরচ হয়?

Author Topic: একটি স্মার্টফোন তৈরি করতে কোম্পানিগুলোর আসলে কত টাকা খরচ হয়?  (Read 679 times)

Offline sheikhabujar

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 273
  • Life is Coding !
    • View Profile
    • Sheikh Abujar Personal Profile
By Fuad Hasan Shishir
বর্তমান যুগ স্মার্টফোনের যুগ। স্মার্টফোনের সহজলভ্যতা ও উপকারিতার কারণে মানুষের হাতে হাতে একটি করে স্মার্টফোন দেখতে পাওয়া যায়। বর্তমানে বেশ স্বল্পমূল্যেই উন্নত স্মার্টফোন পাওয়া যায়। পাশাপাশি গুণগত মান, সফটওয়্যার, ক্যামেরা এবং অন্যান্য দিক দিয়ে একদম ভালো মানের স্মার্টফোনও পাওয়া যায়। প্রযুক্তির ভাষায় যাকে বলে লেটেস্ট অ্যান্ড গ্রেটেস্ট  স্মার্টফোন।


স্যামসাং নোট-৮;

নামীদামী মোবাইল কোম্পানিগুলো সব ধরনের ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখেই সাধারণত তাদের ফোনগুলো বাজারজাত করে থাকে। একদম কম দাম থেকে মধ্যম দামের এবং সব দিক থেকে উন্নত বেশি দামী স্মার্টফোনও তারা বাজারজাত করে থাকে। এদিক থেকে দেখলে অ্যাপল কোম্পানি একটু আলাদা। তারা সবসময়েই সমাজের অভিজাত সদস্যদের লক্ষ্য করে বেশি দামী স্মার্টফোন তৈরি করে থাকে। যেমন ২০১৭ সালে অ্যাপল তাদের আইফোন টেন বের করেছে। যা বিক্রি হচ্ছে রেকর্ড পরিমাণ দাম ১ হাজার মার্কিন ডলারে। বাংলাদেশে যার দাম রাখা হচ্ছে লাখ টাকার উপরে। বিগত তিন বছর থেকে স্মার্টফোনগুলোর দাম দিনদিন বেড়েই চলেছে। এখান থেকে মনে প্রশ্ন জাগতে পারে স্মার্টফোনগুলো তৈরিতে খরচ কেমন হয়?

স্মার্টফোন প্রস্তুত করতে কত খরচ হয়?
এত টাকা দামের ফোনগুলো তৈরি করতে কোম্পানিগুলোর কত টাকা খরচ হয়? তারা কতই বা মুনাফা অর্জন করে থাকে ফোনগুলো থেকে? জেনে হয়তো অবাক হবেন কিছু কিছু স্মার্টফোন থেকে কোম্পানিগুলো প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি লাভ করে থাকে। চলুন দেখা যাক কিছু স্মার্টফোন তৈরি করতে কত টাকা খরচ হয়, কত টাকায় বিক্রি করা হয় এবং কত টাকা লাভ করা হয়।

১. অ্যাপল আইফোন টেন (৬৪ জিবি)
তৈরিকৃত খরচ- ৩৭০.২৫ মার্কিন ডলার
বিক্রিত দাম- ৯৯৯ মার্কিন ডলার
লাভ- ৬২.৯৩%

আইফোন টেন;

২. অ্যাপল আইফোন ৮ (৬৪ জিবি)
তৈরিকৃত খরচ- ২৫৫.১৬ মার্কিন ডলার
বিক্রিত দাম- ৬৯৯ মার্কিন ডলার
লাভ- ৬৩.৪৯%
৩. গুগল পিক্সেল এক্সএল (৩২ জিবি)
তৈরিকৃত খরচ- ২৮৫.৭৫ মার্কিন ডলার
বিক্রিত দাম- ৭৬৯ মার্কিন ডলার
লাভ- ৬২.৮৪%



৪. স্যামসাং এস ৯ প্লাস
তৈরিকৃত খরচ- ৩৭৯ মার্কিন ডলার
বিক্রিত দাম- ৮৩৯ মার্কিন ডলার
লাভ- ৫৪.৮%
৫. স্যামসাং গ্যালাক্সি এস ৮
তৈরিকৃত খরচ- ৩০৭.৫০ মার্কিন ডলার
বিক্রিত দাম- ৭২০ মার্কিন ডলার
লাভ- ৫৭.৩%
 

 

এই দামগুলো কীভাবে নির্ধারিত হয়?
একটি স্মার্টফোনের মূল্য সামগ্রিকভাবে সরল একটি সংখ্যা হলেও এর দাম নির্ভর করে বিভিন্ন যন্ত্রাংশের উপর। যেমন ডিসপ্লে, ক্যামেরা, টাচ, চিপসেট, বডি ইত্যাদি। এ অংশগুলো আলাদাভাবে তৈরি করা হয়ে থাকে। পরবর্তীতে এসব আলাদা যন্ত্রাংশগুলো একসাথে যুক্ত করা হয়। যাকে প্রযুক্তির ভাষায় ম্যানুফ্যাকচারিং বলা হয়। চলুন অ্যাপল আইফোন টেন ও স্যামসাং গ্যালাক্সি এস ৮-এর শুধু যন্ত্রাংশগুলোর উপর ভিত্তি করলে তাদের কত টাকা খরচ হয় সে বিষয়ে জানা যাক।

IHS Markit এর একটি গবেষণাপত্রের বিশ্লেষণ থেকে পাওয়া গেছে অ্যাপল আইফোন টেন-এর উৎপাদন খরচ মাত্র ৩০৭.২৫ মার্কিন ডলার (Techwalls-এর মতে ৩৮৯.৫০ মার্কিন ডলার)। যা কোম্পানিটির একইসাথে বের করা আইফোন ৮-এর তুলনায় ৪৫% বেশি। এই দুই স্মার্টফোনের যন্ত্রাংশের দামের মধ্যে প্রায় ১২২ মার্কিন ডলার পার্থক্য রয়েছে। কারণ প্রতিটি আইফোন টেনের স্ক্রিনের পেছনে অ্যাপলকে ১১০ ডলার করে খরচ করতে হয়েছে। অন্যদিকে আইফোন ৮ এর স্ক্রিনের দাম ৫২.৫০ ডলার। আইফোন টেনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এর ফেস আইডি। যা ‘ট্রু ডেপথ ক্যামেরা’-র উপর ভিত্তি করে তৈরি। এক্ষেত্রে অ্যাপলের প্রতিটি ফোনে খরচ হয়েছে ১৭.৭০ মার্কিন ডলার। আইফোন টেনের কেসিংয়ে ব্যবহৃত স্টেইনলেস স্টিলের কারণে প্রতিটি ফোনে খরচ লেগেছে ৬০ ডলার করে যা আইফোন ৮-এর চেয়ে ১০ ডলার বেশি।

এভাবে প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা যন্ত্রাংশের দাম এক করলে আইফোন টেনের সত্যিকারের উৎপাদন খরচ আসে ৩০৭.৫০ ডলার। এই দামের সাথে পরবর্তীতে বিজ্ঞাপন, মার্কেটিং, কর, শোরুম, ম্যানুফ্যাকচারিং ইত্যাদি খরচ যোগ হয়। তবে এসব হিসেবে আনলেও অ্যাপল তার প্রতিটি আইফোন টেন থেকে দ্বিগুণেরও বেশি লাভ করে থাকে।

এবার আসি স্যামসাং-এর গ্যালাক্সি এস ৮-এর যন্ত্রাংশের দামের ব্যাপারে। IHS Markit-এর মতে প্রতিটি গ্যালাক্সি এস ৮-এর যন্ত্রাংশের পেছনে স্যামসাংয়ের খরচ পড়ে ৩০১.৬০ মার্কিন ডলার। এটি ম্যানুফ্যাকচার করতে স্যামসাংয়ের আরো ৫.৯ ডলার করে খরচ হয়। ফলে মোট দাম আসে ৩০৭.৫০ মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২৫ হাজার ৫০০ টাকা।


স্যামসাং গ্যালাক্সি এস-৮ এর যন্ত্রাংশ;

IHS Markit-এর মতে ফোনটির ন্যান্ড ফ্ল্যাশ মেমরি এবং ডির‍্যাম-এর পেছনে খরচ পড়ে প্রায় ৪১.৫০ মার্কিন ডলার। ফোনটির প্রতি ৩০০০ এমএএইচ ব্যাটারিতে খরচ পড়ে মাত্র ৪.৫০ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যা মাত্র ৩৭৩ টাকা। মূলত ৭২০ মার্কিন ডলারে বিক্রি করলেও কিছু বিশেষ ক্যাম্পেইন ও অফারে স্যামসাংকে তাদের গ্যালাক্সি এস ৮ সর্বনিম্ন ৪১২ মার্কিন ডলারেও বিক্রি করতে দেখা গেছে। কিন্তু এই দামে বিক্রি করলেও স্যামসাংয়ের প্রায় ১০০ ডলারের মতো লাভ থেকে যায়।

স্মার্টফোনগুলি কোথায় প্রস্তুত করা হয়?
অধিকাংশ স্মার্টফোন কোম্পানি তাদের ফোনগুলোর ম্যানুফ্যাকচার করে থাকে চীনে। এর পেছনে কারণ হলো, এই কোম্পানিগুলোকে একসাথে লক্ষ লক্ষ স্মার্টফোন প্রস্তুত করতে হয়। অধিক সংখ্যক স্মার্টফোন প্রস্তুত করতে অধিক শ্রমশক্তির প্রয়োজন। চীনের শ্রম বাজার একই সাথে সস্তা এবং অভিজ্ঞ। সবদিক থেকে স্বল্প খরচে এবং ভালো মানের উৎপাদনের জন্য কোম্পানিগুলো চীনকেই বেছে নেয় সবার আগে।

চীনে প্রতিটি স্মার্টফোনের পেছনে কোম্পানিগুলোর মাত্র ৪ ডলার থেকে সর্বোচ্চ ১০ ডলার ম্যানুফ্যাকচারিং খরচ হয়। অধিক জনসংখ্যা এবং সুলভ শ্রমশক্তি থাকার কারণে বর্তমানে বড় বড় কোম্পানিগুলো ভারতেও তাদের স্মার্টফোন তৈরি করার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করছে।


একটি স্মার্টফোন ফ্যাক্টরি;

স্মার্টফোনের দাম দিনদিন কেন বেড়ে চলেছে?
স্মার্টফোনগুলোর যে আকাশচুম্বী দাম, এর পেছনে কারণ কী? একটু ভেবে দেখলেই আমরা এর কারণটি ধরতে পারবো। স্মার্টফোনগুলোর দাম বৃদ্ধির পেছনে মূল কারণ আমরা নিজেরাই। মানুষের চাহিদার শেষ নেই। বর্তমানের একটি ৩০০ ডলার দামের স্মার্টফোন সবধরনের কাজই সম্পন্ন করতে সক্ষম। মধ্যম দামের প্রায় সকল স্মার্টফোনই যেকোনো অ্যাপস, গেমস, মাল্টিমিডিয়া ইত্যাদির কাজ দ্রুত করতে সক্ষম। তবুও মানুষ সবসময় চায় লেটেস্ট আইটেম। অনেকে চায় তাদের কাছে অন্য সকলের চেয়ে সবচেয়ে ভালো ফোনটি থাকুক।

অনেকেই আছে যারা টাকা নিয়ে প্রস্তুত থাকে বিশেষ কোম্পানির লেটেস্ট স্মার্টফোন বের হওয়া মাত্র তা লুফে নেওয়ার জন্য। যেখানে ক্রেতারা নতুন ফোন যেকোনো দামে নিতে প্রস্তুত থাকে সেখানে কোম্পানিগুলোর বেশি দামে ফোন বের করতে কোনো বাধা থাকে না। তারা তাদের এই বেশি দামী ফোনগুলো দিয়েই সর্বোচ্চ লাভ করে থাকে। অন্যান্য আয়ের মানুষদের জন্যও তাদের রয়েছে বিভিন্ন মানের ও দামের স্মার্টফোন। তাই তারা এভাবে প্রায় সকল শ্রেণীর মানুষদেরকেই ধরে রাখার চেষ্টা করে।


অ্যাপল স্টোরের সামনে লম্বা লাইন;

তাদের মূল লক্ষ্য থাকে সমাজের অভিজাত শ্রেণীর উপরেই। মানুষ চাইছে আগের তুলনায় দ্রুত গতির প্রসেসর, উন্নত এবং আলাদা ফিচার, উচ্চ রেজুলেশনের ডিসপ্লে, অতিরিক্ত মেমোরি ও র‍্যাম এবং উন্নত ক্যামেরা। এসব ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোও মানুষের চাহিদা যথাসাধ্য পূরণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই মান উন্নয়নে পূর্বের তুলনায় কোম্পানিগুলোর একটু বেশি খরচ হচ্ছে যদিও তবুও এগুলোকে যুগান্তকারী কোনো উন্নয়ন বলা যায় না। তবুও ফোনগুলোর পেছনে তাদের এই অতিরিক্ত খরচের তুলনায় তারা অনেক বেশিই দাম রাখছে।


যখন নতুন আইফোন বের হয় তখন আসক্ত ক্রেতার অবস্থা!

অ্যাপলের কথা বলা যেতে পারে এক্ষেত্রে। অ্যাপলের রয়েছে বিরাট ফ্যানবেজ। নতুন আইফোন বের হওয়া মাত্রই বিশাল লাইন ধরে তা কিনতে প্রস্তুত থাকে তারা। এক্ষেত্রে অ্যাপল তাদের স্মার্টফোনের দাম বেশি হাঁকালেও তারা তা-ই কিনবে। কারণ তারা অ্যাপলের স্মার্টফোনের গুণগত মান, সফটওয়্যার সাপোর্ট এবং বিক্রয়োত্তর সেবা সম্পর্কে সবসময় নিশ্চিন্ত। তবে অনেক কোম্পানি রয়েছে, বিশেষ করে কিছু চীনা স্মার্টফোন কোম্পানি; স্বল্পমূল্যে বেশ ভালোমানের স্মার্টফোন প্রদান করছে। যে ফোনগুলো এই নামীদামী কোম্পানিগুলোর ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনের মতোই পারফরমেন্স এবং সুবিধা প্রদান করে থাকছে। তাহলে তারা কীভাবে দাম কম রাখছে? সে বিষয়ে পরবর্তীতে খুঁটিনাটি আলোচনা করা হবে।

Web-link: https://roar.media/bangla/main/tech/actual-cost-of-manufacturing-a-smartphone/
Sheikh Abujar
Lecturer, Department of CSE
Daffodil International University
Cell: +8801673566566
Email: sheikh.cse@diu.edu.bd
Site: http://www.sheikhabujar.ml