সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন কি চলতেই থাকবে? (কালের কণ্ঠ, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮; পৃ.১৫)

Author Topic: সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন কি চলতেই থাকবে? (কালের কণ্ঠ, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮; পৃ.১৫)  (Read 966 times)

Offline kekbabu

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 78
  • Test
    • View Profile
    • https://daffodilvarsity.edu.bd/
সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন কি চলতেই থাকবে?
ড. কুদরাত-ই-খুদা বাবু
৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ (কালের কণ্ঠ)

আমাদের দেশে সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনা নতুন কোনো বিষয় নয়। অনেক আগে থেকেই এ ধরনের ঘটনা ঘটে চললেও বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন, হয়রানি ও আক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে, যা দেশের গণমাধ্যমজগতের জন্য এক অশনিসংকেতই বটে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাগুলো সংবিধানস্বীকৃত স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার খর্ব করে, যা কোনো সুশাসিত ও গণতান্ত্রিক দেশে কাম্য নয়। দেশে সাংবাদিক হত্যার সর্বশেষ ঘটনা ঘটল গত ২৮ আগস্ট রাতে। ওই দিন পাবনা পৌর সদরের রাধানগর এলাকার পাওয়ার হাউস পাড়ায় সুবর্ণা নদী নামের এক নারী সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত ওই নারী সাংবাদিক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আনন্দ টিভি ও দৈনিক জাগ্রত বাংলা পত্রিকার পাবনা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন।

বাক্স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংগঠন আর্টিকল ১৯-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন, হয়রানি ও আক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালে বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতনের হার ছিল ১২.৫ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে ২০১৪ সালে এই হার হয় ৩৩.৬৯ শতাংশ। ২০১৩ সালের তুলনায় ২০১৪ সালে সাংবাদিকদের হয়রানির পরিমাণ বেড়েছে ১০৬ শতাংশ। হয়রানির মধ্যে মানহানির দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলাও রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালে মোট ২১৩ জন সাংবাদিক ও আটজন ব্লগার বিভিন্নভাবে আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে চারজন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, গুরুতর জখম হয়েছেন ৪০ জন। আর শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬২ জন সাংবাদিক। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত পেশাগত কারণে ২৬ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। কিন্তু এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে শুধু সমকাল পত্রিকার ফরিদপুর ব্যুরোপ্রধান গৌতম দাস হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকায় ঘটনার প্রায় সাড়ে সাত বছর পর ২০১৩ সালের ২৬ জুন ৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তদের হাতে চারজন খুন ও দুজন অপহরণসহ ৩০১ জন সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ওই সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, দেশে ২০১৪ সালে দুজন সাংবাদিক খুন হয়েছেন, ২৩৯ জন সংবাদকর্মী বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। গণমাধ্যম উন্নয়ন সংস্থা ম্যাসলাইন মিডিয়া সেন্টারের (এমএমসি) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১২ সালে ২১২টি ঘটনায় ৫১২ জন সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সাংবাদিক সাগর-রুনি দম্পতিসহ খুন হয়েছেন পাঁচ সাংবাদিক। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউসের ২০১৩ সালের এক সমীক্ষায় বলা হয়, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিচারে বিশ্বের ১৯৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৫। এর আগে ওই প্রতিষ্ঠানের হিসাবে ২০১২ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১২। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা প্যারিসভিত্তিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স প্রকাশিত ২০১৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০১৪ সালে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৬। সূচকে বাংলাদেশের অবনতির কথা উল্লেখ করে বলা হয়, এর আগে ২০১৩ সালে ১৭৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৪।

সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন ও হামলাকারীরা ‘অদৃশ্য শক্তির’ প্রভাবে ছাড় পেয়ে যাওয়ার ঘটনাও সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন ও হয়রানিকে ত্বরান্বিত করছে। আর এ কারণেই হয়তো সাংবাদিক সাগর-রুনি, শামসুর রহমান, মানিক সাহা, হুমায়ুন কবির বালুসহ অনেক সাংবাদিক পরিবার দীর্ঘদিনেও তাদের স্বজন হারানোর বিচার পায় না। আর প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত সাংবাদিকদের এই স্লোগান লিখতে হয়, ‘বিচার পাই না—তাই বিচার চাই না’। একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশে এর চেয়ে দুঃখজনক বিষয় আর কী হতে পারে?

অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, দেশে অগণতান্ত্রিক চর্চা, স্বৈরাচার, সাম্প্রদায়িকতা, অনিয়ম, দুর্নীতি, দুঃশাসন, সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যম সব সময়ই বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে সোচ্চার ও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে আসছে। তবে হ্যাঁ, যদি কখনো কোনো সংবাদপত্রে বা কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অসত্য ও ভিত্তিহীন হয়, তাহলে যাঁর বিরুদ্ধে এ ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তিনি বা সেই সংস্থা বা সংগঠনের সঙ্গে সংশিষ্ট ব্যক্তিরা স্বাভাবিকভাবে ক্ষুব্ধ হতেই পারেন। সে ক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধরা প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ পাঠালে সংশ্লিষ্ট পত্রিকা বা গণমাধ্যম ওই প্রতিবাদ ছাপাতে বাধ্য। এ ছাড়া তাঁরা প্রতিকারের জন্য প্রেস কাউন্সিল বা আইনের আশ্রয়ও নিতে পারেন।

দেশে একের পর এক সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের ঘটনাবলিকে আজ আর বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করা যায় না। দেশের সরকার ও জনগণ নিশ্চয় সংবাদপত্র তথা গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। দেশ ও জনগণের সার্বিক মঙ্গলের স্বার্থেই সাংবাদিক ও সংবাদপত্র দমননীতির মনোভাব প্রকাশ থেকে সবারই দূরে থাকা উচিত। ভবিষ্যতে আর যেন কোনো সাংবাদিককে হত্যা-নির্যাতনের শিকার হতে না হয়, তাঁদের ওপর আর যেন কোনো প্রকার অন্যায়, জুলুম, নির্যাতন, হয়রানি না চলে সে বিষয়গুলো সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে দেশে সংঘটিত সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িতদের সঠিক তদন্তের ভিত্তিতে খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করা তথা তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক। অন্যথায় দেশের গণতন্ত্র, সুশাসন, উন্নয়ন, রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশসহ সব কিছুই বাধাগ্রস্ত হবে—যা কারো কাম্য নয়।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ,ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সদস্য

Link: http://www.kalerkantho.com/print-edition/muktadhara/2018/09/04/676186

Dr. Kudrat-E-Khuda (Babu).
Associate Professor (Dept. of Law), Daffodil International University;
International Member of Amnesty International;
Climate Activist of Greenpeace International; Column Writer;
Mobile Phone: +8801716472306
E-mail: kekbabu.law@diu.edu.bd