ক্যালসিয়াম কখন কতটুকু খাবেন?

Author Topic: ক্যালসিয়াম কখন কতটুকু খাবেন?  (Read 2229 times)

Offline Md. Zakaria Khan

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 375
  • active
    • View Profile
ক্যালসিয়াম নামের খনিজ উপাদানটি আমাদের হাড় ও দাঁত শক্ত করে, ক্ষয় রোধ করে। স্নায়ু, হৃৎস্পন্দন, মাংসপেশির কাজেও লাগে। এর অভাবে হাড় ক্ষয় বা অস্টিওপোরাসিস রোগ হতে পারে। হাড়ের ক্ষয়রোগ প্রধানত প্রবীণদের হয়ে থাকে। হরমোনজনিত কিছু তারতম্যের কারণে প্রবীণ নারীদের এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কিছু অসুখের কারণে অনেক সময় তরুণেরাও এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। কৈশোরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম-জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে পরবর্তী সময়ে ক্যালসিয়ামের ঘাটতিজনিত সমস্যাগুলো কম হবে।

অনেক সময় কিছু কিছু রোগে তরুণেরাও আক্রান্ত হতে পারেন। যেমন কিছু বাতজনিত সমস্যা। কোমরের বাত, আবার অন্ত্রের প্রদাহের কারণে এগুলো ব্যক্তি ঠিকমতো গ্রহণ করতে পারেন না। শরীরের যে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো থাকে যেমন: ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, খনিজ বা মিনারেল—এগুলো ভালোভাবে গ্রহণ করতে না পারলে অনেক আগেই হয়তো শরীরে অস্টিওপোরোসিস হয়ে যায়।

কেউ বললেই ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাবে?

একটু হাত-পা ব্যথা, জোড় বা জয়েন্টের ব্যথা, শরীর ম্যাজম্যাজ করছে বা বয়স হয়েছে বলেই ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। কেননা, দৈনন্দিন নানা খাবারেও পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম আছে। প্রতিদিন এ রকম খাবার থেকেই ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করা যায়। অনেকে আবার নিজে নিজেই ওষুধের দোকান থেকে কিনে ক্যালসিয়াম বড়ি খান, যা ঠিক নয়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধটি সেবন করতে হবে।

শরীরে ভিটামিন ‘ডি’র অভাব থাকলে কিন্তু ক্যালসিয়াম থেকে উপকার পাওয়া যাবে সামান্যই। অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণে কিডনিতে পাথর পর্যন্ত হতে পারে। আবার যাঁদের আগে কখনো কিডনিতে পাথর হয়েছিল, তাঁদের অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণে পুনরায় পাথর হওয়ার আশঙ্কা আরও বেশি। তাই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করার সময় তথ্যটি সবার আগে জানবেন। কারণ ওষুধের মাত্রা ঠিক করতে এবং সমস্যাটির জন্য বাড়তি যেসব সতর্কতা প্রয়োজন তা নির্ধারণে তথ্যটি ভূমিকা পালন করবে।

দৈনন্দিন কতটুকু ক্যালসিয়াম প্রয়োজন?

একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দৈনিক ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৬০০ ইউনিট ভিটামিন ডি হলে চলে। রজর্নিবৃত্তির (মেনোপজ) পর নারীদের এবং সত্তরোর্ধ্ব পুরুষদের ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম দরকার হয়। গর্ভবতী ও বুকের দুধ পান করান যে মায়েরা তাঁদের লাগে একটু বেশি। ভিটামিন ডি-ও খেতে হবে কেননা এটি শরীরে ক্যালসিয়ামকে শোষণ করতে সাহায্য করে। ভিটামিন ডি পাওয়া যায় সূর্যের আলো থেকে এবং দুধজাতীয় খাবার থেকে আসে ক্যালসিয়াম। এ ছাড়া সবুজ শাকসবজি, বাদাম, টফু, কমলা ইত্যাদিতে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।

ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট ছাড়া কীভাবে সমাধান পেতে পারি?

দুধ, দই, পনির, কাঁচা বাদাম, সয়াবিন, আখরোট, সামুদ্রিক মাছ, কাঁটাযুক্ত ছোট মাছ, কালো ও সবুজ কচুশাক, শজনেপাতা, পুদিনাপাতা, সরিষাশাক, কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, চিংড়ি শুঁটকি, ডুমুর ইত্যাদি হলো উচ্চ ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার। ১০০ গ্রাম দুধে ক্যালসিয়াম আছে ৯৫০ মিলিগ্রাম, একই পরিমাণ পাবদা মাছে ৩১০ মিলিগ্রাম, সামুদ্রিক মাছে ৩৭২ মিলিগ্রাম, শজনেপাতায় ৪৪০ মিলিগ্রাম, ট্যাংরা মাছে ২৭০ মিলিগ্রাম। এক কাপ টকদইয়ে থাকে আরও বেশি ৪০০ মিলিগ্রামের মতো। আধা বাটি রান্না করা সবুজ পাতা আছে এমন শাক খেলে ১০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খাওয়া হবে। এক গ্লাস কমলার রসে ১৫০ থেকে ২০০ মিলিগ্রাম।

তবে অন্ত্রে ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা দেয় কিছু জিনিস, যেগুলো ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবারের সঙ্গে না খাওয়াই ভালো। যেমন উচ্চমাত্রার চর্বি ও অক্সালিক অ্যাসিডযুক্ত খাবার। চকলেট, পালংশাক, কার্বোনেটযুক্ত পানীয় ইত্যাদিও ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা দেয়। কিন্তু ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে ভিটামিন এ, সি এবং ডি। আয়রনও ম্যাগনেশিয়ামযুক্ত খাবারও ক্যালসিয়ামের কাজে সাহায্য করে।

এরপরও প্রয়োজন হলে...

তারপরও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম বড়ি সেবন করা যাবে বটে, তবে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। সবচেয়ে সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো গ্যাস্ট্রিক, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি। বেশ কিছু ওষুধ অন্ত্রে ক্যালসিয়ামের শোষণ কমিয়ে দেয়, বিশেষ করে যেসব ওষুধ অ্যাসিডিটি কমাতে ব্যবহৃত হয়। একসঙ্গে ৫০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যালসিয়াম ওষুধ অন্ত্রে শোষিত হয় না, তাই বেশি মাত্রার ওষুধ খেয়ে লাভ হয় না। ক্যালসিয়াম অন্ত্রে শোষণ করতে ভিটামিন ডি লাগে, তাই ভিটামিন ডি কম থাকলে এটিসহ খেতে হবে। সূর্যালোকে আছে প্রচুর ভিটামিন ডি। ডিমের কুসুম, লোনাপানির মাছেও আছে ডি ভিটামিন।

বয়স একটু বেড়ে গেলেই যে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণে সমস্যায় পড়তে হয়, তা এড়াতে কৈশোর থেকেই প্রয়োজন সচেতনতা। দুধ ও দুধজাতীয় খাবারের পাশাপাশি খেতে হবে কাঁটাসহ ছোট মাছও। বাড়ন্ত এই বয়সটায় এমন খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুললে একটি মেয়ের শরীরের হাড়ের মূল অংশটা ঠিকমতো তৈরি হবে। এভাবে ভবিষ্যতে হাড়ক্ষয় বা হাড়ে ফুটো হয়ে হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়ার সমস্যা এড়ানো সম্ভব।

সহকারী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

Offline Raisa

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 908
  • Sky is the limit
    • View Profile
:)