ভূমিকম্প মুদ্রণ ইমেল
ভূমিকম্প
earthquake_1.jpg
চিত্র: ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত দালান
চিত্রসুত্র: www-ed.fnal.gov/lincon/w01/projects/earthquakes
প্রকৃতির নিয়মে ভূ-অভ্যন্তরে সৃষ্ট ভূআলোড়নের কারণে ভূ-পৃষ্ঠের কোনো কোনো অংশ হঠাত্ কেপেঁ উঠলে তাকে আমরা বলি ভূমিকম্প৷ এধরনের কম্পন প্রচন্ড,মাঝারি বা মৃদু হতে পারে৷ পৃথিবীতে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৬ হাজার ভূমিকম্প হয়৷ কিন্তু এর বেশিরভাগই মৃদু ভূমিকম্প বলে সাধারণত আমরা অনুভব করি না৷ পৃথিবীর ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে (seisemic zone) বাংলাদেশ অবস্থিত বলে এদেশে মাঝে মাঝে ভূমিকম্প সংঘটিত হয়৷ প্রায় একশ বছর আগে ১৮ঌ৭ সালে এদেশের পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়৷ ১ঌঌ৭ সালের ২১শে নভেম্বর চট্টগ্রাম ও এর আশেপাশের এলাকায় প্রচন্ড এক ভূমিকম্প আঘাত হানে৷ এছাড়া ১ঌঌঌ সালে জুলাই-আগস্ট মাসে মহেশখালী ও পার্শ্ববতী এলাকায় ৪ দফা ভূমিকম্প হয়৷ এসব ভূমিকম্পের ফলে বেশ কিছু মানুষ মারা যায় এবং অনেক বাড়িঘর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়৷
সুনামি
earthquake_3.jpg
চিত্র: ২০০৪সালের সুনামির ভয়াবহতা
চিত্রসুত্র: alwayswow.blogspot.com
পৃথিবীতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ছয় হাজার ভূমিকম্প সংঘটিত হয়৷ তবে বেশিরভাগই মৃদু আকারে হয় বলে সাধারণত তা অনুভূত হয় না৷ আবার অনেকসময়ই সমুদ্রের তলদেশে ভূকম্পন সংঘটিত হয় যাকে সুনামি বলা হয়৷ যদিও বেশিরভাগ সময় স্থলভাগে এর প্রভাব অনুভূত হয় না৷ কিন্তু অনেকসময় সুনামির কারণে প্রচন্ড জলোচ্ছ্বাস হয় এবং উপকুলীয় লোকজন, সমুদ্রে কর্মরত ব্যক্তিব॔গ ও জেলে-নৌকাসমূহ বিপদের সম্মুখীন হয়৷ গতবছর অথাᐂত্ ২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ভয়াবহ সুনামি আঘাত হানে৷
ভূমিকম্প কেন হয়
ভূবিজ্ঞানীগণ ভূমিকম্পের বিভিন্ন কারণ বা উত্স চিহ্নিত করেছেন ৷ তারমধ্যে প্রধান হচ্ছে:
ক) হঠাত্ আন্দোলন বা টেকোনিক ভূমিকম্প
খ) আগ্নেয়গিরির কারণে ভূমিকম্প
গ) মানুষ সৃষ্ট ভূমিকম্প
ভূমিকম্প পরিমাপ
যে স্থান বা জায়গায় ভূমিকম্পের উত্পত্তি হয় তাকে এর কেন্দ্র বলে এবং কেন্দ্র থেকে তা ঢেউ বা তরঙ্গের মতো চারদিকে প্রসারিত হয়৷ এধরনের তরঙ্গ সিসমোগ্রাফ (Seismograph) বা ভূকম্পন লিখনযন্ত্রের সাহায্যে মাপা হয়৷ সাধারণত অনেক ভূমিকম্প আমরা অনুভব করি না৷ ভূকম্পন যখন মাত্রাধিক হয় এবং ঘরবাড়ি, দালানকোঠা,গাছপালা ইত্যাদি যখন নড়তে থাকে তখন আমরা অনুভব করি৷
ভূমিকম্পের মাত্রা দু'ভাবে পরিমাপ করা হয়-
তীব্রতা (Magnitude)
প্রচন্ডতা বা ব্যাপকতা (Intensity)
ভূমিকম্পের তীব্রতা সাধারণত রিখটার স্কেলে মাপা হয়৷ আর রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ৫ এর উপরে উঠলে যথেষ্ট বিপদের আশন্কা রয়েছে বলে মনে করা হয়৷
রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা
তীব্রতা ক্ষয়ক্ষতির আশন্কা
৫-এর বেশি বিপদের সম্ভবনা
৬-৬.ঌ ব্যাপক
৭-৭.ঌ ভয়াবহ
৮ বা এর বেশি অত্যন্ত ভয়াবহ
রিখটার স্কেলের মাত্রা ১ বৃদ্ধি পেলেই ভূকম্পনের মাত্রা ১০ থেকে ৩০ গুণ বেড়ে যায়৷
প্রচন্ডতা বা ব্যাপকতা
ভূমিকম্প হওয়ার পর এর ক্ষয়ক্ষতির মধ্যদিয়ে ব্যপকতাকে মাপা হয়৷ প্রচণ্ডতার দিক দিয়ে একে ভয়াবহ (violent), প্রচন্ড (severe), মাঝারি (moderate), মৃদু (mild) ইত্যাদি ভাগে ভাগ করা হয়৷
ভূমিকম্পপ্রবন এলাকা
earthqua_map.jpg
চিত্র: ভূমিকম্পপ্রবন এলাকা
চিত্রসুত্র:
www.sos-arsenic.net/ images/earthqua1.jpg
বাংলাদেশে ১ঌঌ৩ সালে ভূমিকম্প বলয় মানচিত্র তৈরি হয়েছে৷ সিসমিক রিস্ক জোন হিসাবে বাংলাদেশকে প্রধান তিনটি বলয়ে ভাগ করা হয়েছে৷ বলয়গুলো হলো :
প্রথম বলয় (প্রলয়ন্কারী ভূমিকম্প) : বান্দরবান, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও রংপুর এই বলয়ে অবস্থিত এবং এই বলয়ে ভূমিকম্পের সম্ভাব্য মাত্রা রিখটার স্কেলে ৭ ধরা হয়েছে৷
দ্বিতীয় বলয় (বিপদজনক ভূমিকম্প) : ঢাকা, টাঙ্গাইল, বগুড়া, দিনাজপুর, কুমিল্লা ও রাঙ্গামাটি এতে অবস্থিত এবং এখানে ভূমিকম্পের সম্ভাব্য মাত্রা রিখটার স্কেলে ৬ ধরা হয়েছে৷
তৃতীয় বলয় (লঘু অঞ্চল) : উপরোক্ত এলাকাগুলো ছাড়া দেশের অন্যান্য এলাকাগুলো যা মোটামুটি নিরাপদ সেগুলো এবলয়ে অবস্থিত৷ এসব অঞ্চলে ভূমিকম্পের সম্ভাব্য মাত্রা রিখটার স্কেলে ৬ এর নিচে ধরা হয়েছে৷
বাংলাদেশে ভূমিকম্প-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাসমূহ
অত্যধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা
লালমনিরহাট (প্রায় অর্ধাংশ) পঞ্চগড় চাঁপাইনবাবগঞ্জ (অধিকাংশ)
কুড়িগ্রাম ঠাকুরগাঁও রাজশাহী (অধিকাংশ)
রংপুর (কিছু অংশ) নীলফামারী নাটোর (কিছু অংশ )
গাইবান্ধা (প্রায় অর্ধাংশ) দিনাজপুর পাবনা(কিছু অংশ)
শেরপুর রংপুর (অধিকাংশ) কুষ্টিয়া
জামালপুর (প্রায় অর্ধাংশ) গাইবান্ধা (অর্ধাংশ) মেহেরপুর
ময়মনসিংহ (অধিকাংশ) লালমনিরহাট (প্রায় অর্ধাংশ) লালমনিরহাট (প্রায় অর্ধাংশ)
নেত্রকোনা জয়পুরহাট চুয়াডাঙ্গা
কিশোরগঞ্জ (অধিকাংশ) নওগাঁ ঝিনাইদহ
সুনামগঞ্জ বগুড়া মাগুরা
হবিগঞ্জ জামালপুর (প্রায় অর্ধাংশ)
ফরিদপুর
ব্রাক্ষণবাড়িয়া (কিছু অংশ)
রাজশাহী (কিছু অংশ) যশোর
সিলেট চাঁপাইনবাবগঞ্জ (কিছু অংশ) নড়াইল
মৌলভীবাজার নাটোর (অধিকাংশ) গোপালগঞ্জ
সিরাজগঞ্জ মাদারীপুর
পাবনা (অধিকাংশ) শরীয়তপুর
টাংগাইল চাঁদপুর (কিছু অংশ)
ময়মনসিংহ (কিছু অংশ) সাতক্ষীরা
কিশোরগঞ্জ (কিছু অংশ) খুলনা
ব্রাক্ষণবাড়িয়া (অধিকাংশ) পিরোজপুর
গাজীপুর বরিশাল
মানিকগঞ্জ লক্ষ্মীপুর
ঢাকা বাগেরহাট
মুন্সিগঞ্জ ঝালকাঠি
নারায়ণগঞ্জ ভোলা
নরসিংদী নোয়াখালী (অধিকাংশ)
কুমিল্লা পটুয়াখালী
চাঁদপুর (অধিকাংশ) বরগুনা
নোয়াখালী (কিছু অংশ) ফেনী (কিছু অংশ)
ফেনী (অধিকাংশ)
খাগড়াছড়ি (পার্বত্য)
রাঙ্গামাটি (পার্বত্য)
চট্টগ্রাম
বান্দরবান (পার্বত্য)
কক্সবাজার
সুত্র : দুর্য়োগ ব্যবস্থাপনা বু᐀রো,২০০১: ৩ঌ-৪০
ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্পগুলো
বাংলাদেশে ভূমিকম্প সবসময় না হলেও এর আশংন্কা রয়েছে৷ গত কয়েকবছরে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমিকম্পের প্রচন্ডতা ও ব্যাপকতা লক্ষ্যণীয়৷ যেমন,
২০০১ সাল : ঐ বছর ২৬শে জানুয়ারি গুজরাটের ভয়াবহ ভুমিকম্পে প্রায় ২০ হাজার লোক নিহত হয়৷ রিখ্টার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭.ঌ৷ এই ভূমিকম্পের কারণে শুধু ভারত নয় পাকিস্তানেরও বেশকিছু অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৷ এমনকি ঐ ভূমিকম্প বাংলাদেশের বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা এলাকাতেও মৃদুভাবে অনুভূত হয়৷
১ঌঌঌ সাল : জুলাই-আগস্ট মাসে মহেশখালী ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় প্রায় ৪ দফা ভূমিকম্প সংঘটিত হয়৷
১ঌঌ৭ সাল : ২১শে নভেম্বর ১ঌঌ৭ চট্টগ্রাম ও তত্সংলগ্ন এলাকায় এক প্রচন্ড ভূমিকম্পে আঘাত হানে সেসময় একটি পাঁচতলা ভবন মাটির নিচে ডেবে যায় ৷
১৮ঌ৭ সাল : প্রায় একশ বছর আগে ১৮ঌ৭ সালে এ দেশের পূর্বাঞ্চলে যে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল তা ভুলবার মতো নয়৷ এমন কি কোনো কোনো ভূমিকম্পে নদ-নদীর গতিপথ পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়ে গেছে৷
এছাড়া ভূমিকম্পের কারণে গত কয়েক বছরে তাইওয়ান, তুরস্ক, ভেনিজুয়েলা, জাপান, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের জনজীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে৷ কোনো কোনো জায়গায় বার বার ভুমিকম্পের ঘটনাও ঘটেছে৷ যেমন তাইওয়ানে একবার প্রচন্ড ভুমিকম্প হওয়ার পরই আবার ভূমিকম্প হয়েছে৷
বিগত দেড় শতাব্দীতে এ অঞ্চলে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্পগুলো
তারিখ ভূমিকম্পের নাম সংগঠিত অঞ্চল তীব্রতা (রিখটার) ক্ষয়ক্ষতি
১০ জানুয়ারি, ১৮৬ঌ কাছাড় ভূমিকম্প আসামের মণিপুর ও কাছাড় অঞ্চল (উত্পত্তি: আসামের জৈন্তিয়া পাহাড়) ৭.৫ আসামের মণিপুর, কাছাড় ও বর্তমান বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে প্রভূত ক্ষয়ক্ষতি হয়৷
১৪ জুলাই, ১৮৮৫ বেঙ্গল ভূমিকম্প জামালপুর, শেরপুর ও ময়মনসিংহ এলাকা (উত্পত্তি: বগুড়া অঞ্চলে) ৭.০ সিরাজগঞ্জ-বগুড়া অঞ্চল এবং জামালপুর, শেরপুর ও ময়মনসিংহ এলাকার ব্যাপক ক্ষতি হয়৷
১২ জুন, ১৮ঌ৭ গ্রেট ইন্ডিয়ান ভূমিকম্প সমগ্র আসাম এবং বাংলাদেশের সিলেট, ময়মনসিংহ এর উত্তর অঞ্চল এবং রংপুর অঞ্চলসমূহ (উত্পত্তি: আসামের শিলং মালভূমি) ৮.৭ সমগ্র আসাম এবং বাংলাদেশের সিলেট, ময়মনসিংহ এর উত্তর অঞ্চল এবং রংপুরের পূর্বাঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতি ছিল মারাত্মক৷
৮ জুলাই, ১ঌ১৮ শ্রীমঙ্গল ভূমিকম্প শ্রীমঙ্গল, আখাউড়া ও ঢাকা অঞ্চল (উত্পত্তি: শ্রীমঙ্গল সংলগ্ন বালিসেরা উপত্যকা) ৭.৬ শ্রীমঙ্গলে ক্ষয়ক্ষতির তীব্রতা ছিল খুব বেশি এবং ঢাকা পর্যন্ত তীব্রতা অনুভূত হয়৷ আখাউড়া রেল স্টেশনের পাকা অংশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয় এবং ভবনগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷
২ জুলাই, ১ঌ৩০ ধুবড়ি ভূমিকম্প রংপুর জেলার পূর্বাঞ্চল (উত্পত্তি : আসামের ধুবড়ি শহর এলাকা) ৭.১ রংপুর জেলার পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতি হয়৷
১৫ জানুয়ারি, ১ঌ৩৪ বিহার-নেপাল ভূমিকম্প বিহার, নেপাল ও উত্তর প্রদেশ (উত্পত্তি : দারভাঙ্গার উত্তরে) ৮.৩ বিহার, নেপাল ও উত্তর প্রদেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়৷
১৫ আগস্ট, ১ঌ৫০ আসাম ভূমিকম্প সমগ্র বাংলাদেশ (উত্পত্তি আসামের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অরুণাচল প্রদেশ) ৮.৫ পৃথিবীর প্রচন্ড ভূমিকম্পগুলোর অন্যতম৷ সমগ্র বাংলাদেশে এর তীব্রতা অনুভূত হয়৷
সুত্র : দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বু্রো,২০০১:৪১
সহায়ক গ্রন্থাবলী : দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা ব্যুরো (২০০১): ভূমিকম্প বিষয়ে গণসচেতনতা
চিত্রসুত্র: ©জfহিদুর রহমান/ ডি.নেট
ভূমিকম্প হলে আমাদের যেসব ক্ষতি হতে পারে
building_crash.jpg
চিত্র: ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি
© জাহিদুর রহমান/ ডি.নেট
আমাদের মনে রাখা দরকার যে, অন্যান্য প্রাকৃতিক দুযোগ যেমন ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা ইত্যাদির মতো ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেয়ার কোনো পদ্ধতি এখনও আবিষ্কৃত হয়নি৷ এটা অত্যন্ত আকস্মিকভাবে ঘটে এবং এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও তুলনামূলকভাবে বেশি৷ ভূমিকম্পের কারণে যেধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে তা হলো :
বিভিন্ন পাকা ভবন ও ঘরবাড়ির নিচে চাপা পড়ে বহুসংখ্যক মানুষ মৃতু᐀বরণ করে,
অনেকে আহত হয় ও পঙ্গু হয়ে যায়৷ ঘরবাড়ির নিচে বহু লোক আটকা পড়ে৷
ঘরবাড়ি, ধনসম্পদ ও যাতায়াত ব্যবস্থা বিনষ্ট হয়৷
চুলার আগুনে, বৈদু᐀তিক শর্টসার্কিট হওয়ায়, পেট্রোল-কেরোসিন ইত্যাদি বা রাসায়নিক পদার্থসমূহের মিশ্রণে আগুন লেগে অগ্নিকান্ডের সৃষ্টি হয় এবং তাতে বহুসংখ্যক মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়, এমনকি মারাও যায়৷
গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগী ব্যাপকভাবে মৃতু᐀বরণ করে এবং গাছপালা ও ক্ষেতের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়৷
রাস্তা-ঘাটের ক্ষতি; ব্রিজ-কালভার্ট-সেতু ইত্যাদি ধ্বংস হয় এবং রাস্তা-ঘাটে গাছপালা, লাইটপোস্ট ইত্যাদি পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়৷
বৈদু᐀তিক তার বিচ্ছিন্ন হয়ে, বৈদু᐀তিক খুঁটি পড়ে বা ভেঙ্গে গিয়ে, টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে আলোর স্বল্পতা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার মারাত্মক ক্ষতি হয়৷
হাসপাতাল, ক্লিনিক ইত্যাদি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে চিকিত্সা ও সেবা কাজ বিঘ্নিত হয় এবং পরিবহণ গাড়ি ও যন্ত্রাদি ধ্বংস হয়ে পরিবহণ ব্যবস্থার মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে৷
অনেক সময় সমুদ্র উপকূল ও বড় নদী-তীরে জলোচ্ছ্বাস হয়৷
অনেক সময় নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয় এবং পুকুর, নদী-নালা শুকিয়ে যায়৷
অনেক সময় উঁচুভূমি ডেবে গিয়ে জলাশয়ে পরিণত হয় এবং মাঠে ফাটল সৃষ্টি হয়৷
ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে কি করতে পারি
বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকা ভূমিকম্প জোনে অবস্থিত তাই সর্বদা এদেশে ভূমিকম্পের আশন্কা রয়েছে৷ এজন্য আমাদের ভূমিকম্পের ব্যাপারে সচেতন হওয়া দরকার৷ আমরা ভূমিকম্পকে ঠেকাতে না পারলেও এর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারি৷ দুইভাবে এই প্রস্তুতি নেয়া যায়-
১) ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায় এবং
২) সরকারি ও বেসরকারি পর্যায় ৷
ভূমিকম্প মোকাবেলায় ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পর্যায়ে করণীয় পূর্বপ্রস্তুতিসমূহ :
ভূমিকম্প সম্পর্কে ধারণা করুন;
আপনার ঘরবাড়ি শক্ত করে তৈরি করুন;
building_repair.jpg
© জাহিদুর রহমান/ ডি.নেট
পুরানো ঘরের খুঁটি ও ভিত মেরামত করুন;
শক্ত মাটিতে ঘর বা ভবন নির্মাণ করুন৷
কখনই গর্ত বা নরম মাটির উপর বাড়ি বা ভবন নির্মাণ করবেন না;
পাকা ভবনের শক্ত ভিত দিন এবং প্রয়োজনে দালান বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীর পরামর্শ প্রহণ করুন৷
ভবনের উচ্চতা ও লোডের হিসাব অনুযায়ী ভবনের ভিত্তি দিন৷ এমএস রড ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করুন ;
অবকাঠামোতে রিইনফোর্সড কংক্রিট ব্যবহার করুন;
আপনার বাড়ি বা ভবনটি পার্শ্ববর্তী বাড়ি বা ভবন থেকে নিরাপদ দূরত্বে নির্মাণ করুন;
বাড়িতে বৈদু᐀তিক লাইন ও গ্যাস লাইন অত্যন্ত নিরাপদ ও সতর্কভাবে লাগান;
গ্যাসের চুলা ব্যবহারের পর নিভিয়ে ফেলুন এবং ভূমিকম্পের সময় গ্যাসের চুলা বন্ধ রাখুন কেননা ভূমিকম্পের সময় চুলা উল্টে আগুন ধরে যেতে পারে;
chula.jpg
চিত্র: ভূমিকম্পের সময় গ্যাসের চুলা বন্ধ রাখুন
© জাহিদুর রহমান/ ডি.নেট
বাড়িতে সদস্যের সংখ্যানুযায়ী মাথার হেলমেট কিনে রাখুন যাতে ভূমিকম্পের সময় ব্যবহার করা যায়;
খাট, টেবিল ইত্যাদি শক্ত করে তৈরি করুন যাতে বিপদের সময় তার নিচে আশ্রয় নেওয়া যায়;
ঘর বা পাকা ভবনের একাধিক দরজা রাখুন যাতে বিপদের সময় দ্রুত বের হওয়া যায়;
ব্যাটারিচালিত রেডিও, টর্চলাইট ও প্রাথমিক চিকিত্সার সরঞ্জাম হাতের কাছে রাখুন;
পরিবারের সবাইকে বিদু᐀তের মেইন সুইচ,গ্যাসের চুলা,বাল্ব ইত্যাদি বন্ধ করা শেখান;
টিনের ঘর হলে চারের টুঁই - এর সাথে কয়েকটি লম্বা ও শক্ত দড়ি বেঁধে রাখুন যাতে প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারেন;
ভারী কোনো জিনিস উপরে তুলে না রেখে মেঝের কাছাকাছি রাখুন;
পরিবারের সকল সদস্যকে ভূমিকম্পের ঝুঁকি ও করণীয় সম্পর্কে অবহিত রাখুন;
awearness.jpg
চিত্র: ভূমিকম্পের ঝুকি ও করণীয় সম্পকেᐂ পরিবারের সকলে জেনে নিন চিত্রসুত্র: © জাহিদুর রহমান/ ডি.নেট
সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে ভূমিকম্প সম্পর্কিত প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করুন এবং অপরকেও অংশগ্রহণ করতে বলুন;
ভূমিকম্প সংক্রান্ত স্থানীয় স্বেচ্