অামি পড়েছি -- আপনারাও পড়ে দেখুন না

Author Topic: অামি পড়েছি -- আপনারাও পড়ে দেখুন না  (Read 1664 times)

Offline liza Sharmin

  • Newbie
  • *
  • Posts: 33
  • Test
    • View Profile
অামি পড়েছি --
আপনারাও পড়ে দেখুন না :

লোকটি একটি আন্তর্জাতিক মানের স্কুলের সুবিন্যস্ত বাগানের গাছগুলিতে পানি দিচ্ছিল । রোদের উত্তাপ ও বাতাসের ধুলো সম্ভবত তাকে কাবু করতে পারেনি ।

'গঙ্গা দাস, প্রিন্সিপাল ম্যাডাম তোমাকে ডাকছেন - এক্ষুনি -'
বিষয়টি খুব বেশী বেশী গুরুত্বপূর্ন এটা বোঝাতে পিয়ন তার শেষ শব্দটার অনেক বেশি জোর দিয়েছিল ।

লোকটি তাড়াতাড়ি পানির পাইপ বন্ধ করে ভালভাবে হাত ধুয়ে গামছায় হাত মুছে প্রিন্সিপাল ম্যাডামের চেম্বারের দিকে ছুটল ।
বাগান থেকে স্কুলের অফিস ঘরের দূরত্ব পার হওয়ার সময়টা তার কাছে অন্তহীন মনে হচ্ছিল, তার বুকের খাঁচার ভিতর থেকে হৃৎপিন্ডটা যেন লাফিয়ে বের হয়ে আসতে চাইছিল ।

সে মনে মনে নানা অঙ্ক কষে চলছিল কি এমন ভুল সে করে ফেলেছে যাতে প্রিন্সিপাল ম্যাডাম তাকে অবিলম্বে ডেকে পাঠিয়েছেন ।
সে খুব দায়িত্বশীল কর্মচারী ছিল, এবং কাজে কখনো ফাঁকি দেয়নি ।

সে প্রিন্সিপাল ম্যাডামের চেম্বারের দরজায় ঠক ঠক করল ।
'ম্যাডাম, আমাকে ডেকেছেন ? '
'ভিতরে এস । 'গম্ভীর আওয়াজ শুনে সে আরো ঘাবড়ে গেল ।

ম্যাডামের চুল ঈষৎ লালচে উঁচু করে বাঁধা, হালকা নক্সা যুক্ত সুন্দর শাড়ি পরনে, নাকের একটু উপরে চশমাটা আটকে আছে ।

টেবিলের উপরে রাখা একটা কাগজের দিকে নির্দেশ করে তিনি বললেন :
'ওটা পড় । '

' কি .. কিন্তু ম্যাডাম, আমি মুখ্যু মানুষ ।..
আমি ইংরেজি পড়তে পারি না । ...
ম্যাডাম দয়া করে আমাকে ক্ষমা করুন । না জেনে হয়তো কোন ভুল করে ফেলেছি ... আমাকে আর একবার সুযোগ দিন ।....
আপনি আমার মেয়েকে বিনা খরচে এই স্কুলে পড়বার সুযোগ দিয়েছেন ।,.. সে জন্য আমি চির ঋণী হয়ে আছি ।... আমার মেয়ের জন্য এমন সুযোগ আমি স্বপ্নেও ভাবি নি । '

লোকটি প্রায় বাকরুদ্ধ হয়ে ভেঙে পড়ল ।

' থাম থাম, তুমি অনেক কিছু ভেবে ফেলেছ ... আমরা তোমার মেয়েকে সুযোগ দিয়েছি কারন সে খুব মেধাবী আর তুমি আমাদের বিশ্বাসী কর্মচারী .. এখন আমি একজন শিক্ষিকাকে ডেকে পাঠাচ্ছি ... তিনি ওই কাগজটা পড়ে অর্থটা তোমাকে বলে দেবেন ... ওটি তোমার মেয়ের লেখা ..আমি চাই তুমি সেটা পড় ।

একটু পরেই একজন শিক্ষিকা সেখানে এসে উপস্থিত হল । প্রিন্সিপাল ম্যাডামের অনুরোধে তিনি কাগজটা নিয়ে পড়লেন এবং অনুবাদ করে শোনালেন ।

কাগজটায় লেখা ছিল .....

' আজকে আমাদের মাতৃ দিবস সম্পর্কে লিখতে বলা হয়েছে।

বিহারের একটা ছোট গ্রামে আমার বাড়ী যেখানে চিকিৎসা ও শিক্ষা একটা দূর গ্রহের স্বপ্ন বলে মনে হয় । অনেক মহিলা সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে যখন তখন মারা যায় । আমার মাও তাদের মত একজন যিনি আমাকে কোলে নিতেও পারেন নি । প্রথমে আমার বাবাই আমাকে কোলে তুলে নিয়েছিলেন এবং সম্ভবত তিনি একমাত্র পুরুষ যিনি আমাকে কোলে নিয়েছিলেন ।

প্রত্যেকেই মনে দুঃখ পেয়েছিল কারন আমি মেয়ে হয়ে জন্মেছিলেন আর জন্ম নেবার পরেই আমার মাকে খেয়ে ফেলেছিলাম ।

আমার বাবাকে আবার বিয়ে করতে বলা হয়েছিল , কিন্তু তিনি রাজী হননি ।
আমার ঠাকুরদা ও ঠাকুরমা নানা যুক্তি দিয়ে ও চাপ দিয়ে বাবাকে রাজী করাতে চেয়েছিলেন কিন্তু তাকে ভাঙতে পারেননি ।

আমার ঠাকুরদা ঠাকুরমা বংশধর হিসাবে একটি নাতি চেয়েছিলেন এবং বাবাকে ভয় দেখিয়েছিলেন যদি তিনি পুররায় বিয়ে না করেন তবে তাকে পারিবারিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হবে ।

বাবা দ্বিতীয়বার ভেবে দেখেন নি .. কয়েক একর জমি , সাজনো ঘরবাড়ী, সুখী জীবনযাত্রা, অসংখ্যা গবাদি পশু এবং গ্রামে সুখী জীবন যাপনের জন্য যা কিছু প্রয়োজন তার সব কিছুই তিনি ত্যাগ করেছিলেন ।

তিনি একেবারে শূন্য হাতে শুধু আমাকে কোলে নিয়ে এই বড় শহরে চলে এসেছিলেন । এখানে জীবন খুব কঠিন, কিন্তু তিনি দিন রাত কঠোর পরিশ্রম করে কোমল ভালোবাসা আর অসীম যত্ন দিয়ে আমাকে বড় করে তুলেছেন ।

এখন বুঝতে পারি আমি যে খাবার খুব পছন্দ করি সেটা পাতে এক পিস মাত্র থাকলে হঠাৎ কেন তিনি সেটাকে অপছন্দ করতে শুরু করেন .. তিনি বলেন ওই খাবার খেতে তিনি খুব অপছন্দ করেন । আমিই যেন সেটা খেয়ে নিই । কিন্তু আমি বড় হয়েছি , তাই আসল কারণটা বুঝতে পারি ।

তিনি তার সাধ্যের বাইরে গিয়েও আমাকে যতটা সম্ভব আরামে রাখার চেষ্টা করেন ।
স্কুল ওনাকে একটা থাকার জায়গা দিয়েছে , শ্রদ্ধা দিয়েছে আর তার মেয়েকে স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দিয়ে সবচেয়ে বড় উপহারটা দিয়েছে ।

যদি ভালবাসা ও যত্ন মায়ের সমার্থক হয় তবে আমার বাবাও সেটার জন্য উপযুক্ত ...
যদি মায়ের সংজ্ঞা হয় সহমর্মিতা তবে আমার বাবা সেটার জন্যও যথাযথ..
যদি মায়ের সংজ্ঞা হয় ত্যাগ তবে আমার বাবার ক্ষেত্রেও সেটা খাটে ...

সুতরাং, এক কথায় বলতে গেলে যদি মা ভালোবাসা যত্ন সহমর্মিতা আর ত্যাগ দিয়ে তৈরি হয় তবে আমার বাবাই হল জগতের শ্ৰেষ্ঠ মা ।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অভিভাবক হওয়ার জন্য আমি আমার বাবাকে মাতৃ দিবসের শুভেচ্ছা জানাতে চাই । আমি তাকে অভিবাদন জানাই এবং গর্বের সঙ্গে বলতে চাই যে স্কুলের পরিশ্রমী মালী ই হল আমার বাবা ।
আমি জানি শিক্ষিকা আমার এই লেখাটি পড়ার পরে আমি হয়তো এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারব না কিন্তু আমার বাবার মত একজন নিঃস্বার্থ মানুষের ভালোবাসাকে শ্রদ্ধা জানানোর ক্ষেত্রে সেটা আমার কাছে অকিঞ্চিতকর হবে ।'

ঘরের মধ্যে অসীম নিঃশব্দতা বিরাজ করতে লাগল ... শুধুমাত্র গঙ্গা দাসের অস্ফুট কান্নার শব্দ পাওয়া গেল ...
সূর্যের উত্তাপ জনিত ঘামে তার পরনের পোশাককে ভেজাতে পারেনি কিন্তু নিজের মেয়ের কোমল ভাষায় লেখা চিঠির বক্তব্য শুনে চোখের জলে তার বুক সিক্ত হয়ে গেল ... সে জোড় হস্তে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকল ।

সে শিক্ষিকার হাত থেকে কাগজটা নিয়ে বুকের কাছে ধরে ফোঁফাতে লাগল ।
প্রিসিপাল তাকে একটা চেয়ারে ও এক গ্লাস জল এগিয়ে দিলেন ।
কিন্তু কথা বলার সময় আশ্চর্যজনক ভাবে তার কন্ঠস্বরে গাম্ভীর্যের পরিবর্তে মৃদু ও মাধুর্যমন্ডিত হয়ে উঠল ।

গঙ্গা দাস, তোমার মেয়ে এই প্রবন্ধ লেখার পরীক্ষায় দশে দশ নম্বর পেয়েছে । এ স্কুলের ইতিহাসে মাতৃ দিবস সম্পর্কিত এ পর্যন্ত যত রচনা লেখা হয়েছে, এটা তাদের মধ্যে সেরা । আগামীকাল আমাদের স্কুলে মাতৃ দিবস উপলক্ষে একটা বড় অনুষ্ঠান হবে যাতে স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে তোমাকে প্রধান অতিথির হিসাবে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ।
একজন মানুষ যেভাবে ভালোবাসা ও ত্যাগ দিয়ে নিজের মেয়েকে মানুষ করেছে এটার মাধ্যমে তাকে সম্মান জানানো হচ্ছে আর এটাও দেখানো হচ্ছে যে আদর্শ অভিভাবক হওয়ার জন্য একজন আদর্শ মা হওয়ার দরকার নেই ।

আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার এই যে তোমার মেয়ের মধ্যে যে দৃঢ় বিশ্বাস, স্বীকৃতি দানের প্রবল আগ্রহ আছে সেটা তোমার মধ্যে সঞ্চারিত করা যাতে তোমার মেয়ে গর্ববোধ করতে পারে, সেইসঙ্গে তোমার মেয়ের বিস্বাস মতে সমস্ত পৃথিবীর মধ্যে সেরা অভিভাবক আমাদের স্কুলেই আছে বলে গোটা স্কুল যাতে গর্ববোধ করতে পারে ।

তুমি প্রকৃত অর্থেই একজন মালি, যে শুধু স্কুলের গাছপালার যত্ন নেয় না এমন সুন্দর উপায়ে তার জীবনের সবথেকে মূল্যবান ফুলটির ও দেখাশোনা করে ।

সুতরাং , গঙ্গা দাস , তুমি আমাদের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হতে রাজি আছ তো ?
---------------------------------------

(সংগৃহিত)
Liza Sharmin
Associate Professor
Department of English, PC
Daffodil International University

Offline hussainuzaman

  • Newbie
  • *
  • Posts: 23
  • পরিবর্তন আসবেই!
    • View Profile
    • Website
একেবারে হৃদয় ছুঁয়ে গেল ...

ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
Miah M. Hussainuzzaman, Dept. of CE.
ব্লগ: ১। পরিবেশ প্রকৌশলীর প্যাচাল, ২। খিচুড়ী ব্লগ

Offline Mizanur Rahman (GED)

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 216
  • Change in a person leads to a change in a nation
    • View Profile
Mizanur Rahman
Lecturer of Mathematics
Department of General Educational Development
Faculty of Science and Information Technology
Daffodil International University
Parmanent Campus