সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

Author Topic: সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ  (Read 1017 times)

Offline kekbabu

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 78
  • Test
    • View Profile
    • https://daffodilvarsity.edu.bd/
সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ    (দৈনিক কালের কণ্ঠ, তারিখ: ১১ জুলাই, '১৮; পৃ. ১৪)
ড. কুদরাত-ই-খুদা বাবু

দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে তথা সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ২৫ জুন ছয়টি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। এসব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে দূরপাল্লার গাড়িতে বিকল্প চালক রাখা, একজন চালকের পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাড়ি না চালানো, গাড়ির চালক ও তাঁর সহকারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, নির্দিষ্ট দূরত্বে সড়কের পাশে সার্ভিস সেন্টার বা বিশ্রামাগার তৈরি, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে রাস্তা পারাপার বন্ধ করা বা সিগন্যাল মেনে পথচারী পারাপারে জেব্রাক্রসিং ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট বাঁধা নিশ্চিত করা।

এ দেশে সড়ক দুর্ঘটনা নতুন কোনো বিষয় নয়। পত্রিকার পাতা খুললে কিংবা টিভি চ্যানেলের সংবাদের দিকে চোখ রাখলে প্রায় প্রতিদিনই চোখে পড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহত হওয়ার খবরাখবর। দেশে প্রতিনিয়ত মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে চললেও এখন পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে প্রায় প্রতিনিয়তই ঘটে চলছে সড়ক দুর্ঘটনা। ঘটে চলছে হতাহতের ঘটনা। এক হিসাবে দেখা গেছে, প্রতিবছর এ দেশে প্রায় সাড়ে সাত হাজার সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। আর এতে প্রায় সমানসংখ্যক মানুষ মারা যায়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব অনুযায়ী ১৯৯৪ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৭২ হাজার ৭৪৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৫২ হাজার ৬৮৪ জন আহত হয়েছেন। এ হিসাব অনুযায়ী দেশে প্রতিদিন গড়ে ১০ জন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে তিন হাজার ২৫৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তিন হাজার ৭৭০ জন। ২০১৫ সালে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় আট হাজার ৬৪২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২১ হাজার ৮৫৫ জন। মোট দুর্ঘটনা হয়েছে ছয় হাজার ৫৮১টি। আর ২০১৬ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ছয় হাজার ৫৫ জন নিহত হয়েছেন অর্থাৎ দিনে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ৯১৪ জন। দেশে যেভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে, তাতে মনে হয় দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো নিরাপদে চলার পথ না হয়ে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হচ্ছে। সড়ক-মহাসড়কে এখন যাত্রা করা মানেই জীবন বাজি রাখা।

দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে নিয়মিতভাবে ঘটে চলা দুর্ঘটনাগুলো কি এ দেশের জনগণের কপালের লিখন? নিশ্চয়ই না। উন্নত দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার এ দেশের তুলনায় অনেক কম। সুতরাং এ দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে নিয়মিতভাবে ঘটে চলা দুর্ঘটনা জনগণের কপালের লিখন নয়। এ ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো বিদেশের সঙ্গে পার্থক্যের সৃষ্টি করছে তা হচ্ছে, সার্বিক যোগাযোগব্যবস্থার ধরন, চালকদের দক্ষতা, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, চালকদের ওভারটেকিং করার মানসিকতা ড্রাইভিং লাইসেন্সপ্রাপ্তিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব, জনগণের সচেতনতার অভাব, ট্রাফিক আইন কিংবা রাস্তায় চলাচলের নিয়ম না মানা প্রভৃতি। এক হিসাবে দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, গত দেড় বছরে শুধু ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন অন্তত ২০০ জন। আহত হয়েছেন সহস্রাধিক। সরকারি হিসাবে গত ১০ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ মারা যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। অবশ্য বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা অনেক বেশি।

সড়ক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেক সময় ভাঙচুর ও নৈরাজ্যের ঘটনা ঘটছে এবং এর ফলে সাধারণ মানুষ যে কঠিন ভোগান্তি আর হয়রানির শিকার হচ্ছে সেসব বিষয় অস্বীকার করার উপায় নেই। দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোয় যেভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে এবং দুর্ঘটনার সংখ্যা দিনে দিনে যে হারে বাড়ছে তা যদি অতিদ্রুত রোধ করার ব্যাপারে বাস্তবমুখী  পদক্ষেপ গ্রহণ ও যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন না করা হয়, তাহলে যে ভবিষ্যতেও ভয়াবহ ও মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটার পাশাপাশি জনগণ আহত-নিহত হতেই থাকবে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ছয় দফা নির্দেশনা দিয়েছেন, তা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনার অন্যান্য কারণও চিহ্নিত করা প্রয়োজন। সড়ক দুর্ঘটনার অন্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে অনুপযুক্ত সড়ক-মহাসড়ক, নির্দিষ্ট লেন ধরে গাড়ি না চালিয়ে সড়কের মাঝ দিয়ে চালকদের গাড়ি চালানো, রাস্তায় বিপজ্জনক বাঁক থাকা, রাস্তার ত্রুটিপূর্ণ নকশা থাকা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চালানো, মাদক সেবন করে গাড়ি চালানো, চালকদের বেপরোয়া গতিসহ ভুলপথে বেপরোয়া গাড়ি চালানো, বেশি গতির বড় গাড়িগুলোর অপেক্ষাকৃত কম গতির ছোট গাড়িগুলোকে ওভারটেকিং করার প্রবণতা, রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী যাত্রী বা পথচারীদের ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা, ফুটপাত ব্যবহার না করে রাস্তার মাঝখান দিয়ে চলাচল করা, রাস্তা পারাপারের জন্য অনেক সময় ওভারব্রিজ থাকলেও ব্যবহার না করা, রাস্তার ওপর ও ফুটপাতে দোকানপাট সাজিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা, দুর্বল ও দুর্নীতিগ্রস্ত ট্রাফিক ব্যবস্থা এবং সর্বোপরি রাস্তায় চলাচলের জন্য যেসব নিয়ম-কানুন রয়েছে তা না মানা।

অস্বীকার করার উপায় নেই, আমাদের দেশের সড়ক ব্যবস্থাপনার চিত্র অত্যন্ত ভয়াবহ। এককথায় করুণ, ঝুঁকিপূর্ণ ও অব্যবস্থাপনাজনিত কারণে পরিপূর্ণ। আর এর মধ্য দিয়েই যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে গলা কাটা ভাড়া সড়ক দুর্ঘটনা অপ্রতিরোধ্য বিষয় নয়। এ জন্য দরকার সরকার ও জনগণের ইতিবাচক চিন্তা এবং সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার উপযুক্ত বাস্তবায়ন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে স্মরণে রাখতে হবে, দেশের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি মানে শুধু রাস্তা নির্মাণ নয়, বরং সড়ক-মহাসড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে মানুষের অমূল্য জীবন দুর্ঘটনামুক্ত রাখাটা। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে চালকদের হতে হবে বেশি দক্ষ, হতে হবে সতর্ক। পাশাপাশি জনগণকেও ট্রাফিক আইন ও রাস্তায় চলাচলের আইন-কানুন যথারীতি মেনে চলতে হবে। এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট কঠোরতার সঙ্গে ট্রাফিক আইনের প্রয়োগ অপরিহার্য। মাদক সেবন করে গাড়ি চালানো এবং গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বলাসহ চালকদের ‘ওভারটেকিং’ করার মানসিকতাও পরিহার করা প্রয়োজন। তা ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা রোধে দেশের সার্বিক সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানোসহ চালকদের দক্ষতা বিচার করে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে যেন কোনো ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতি না ঘটে সে বিষয়টিও সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। আর সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের রাজনৈতিক পরিচয় বাদ দিয়ে কঠোর জবাবদিহির আওতায় আনা বা শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা থাকাও আবশ্যক। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বিভিন্ন গণমাধ্যম, সুধীসমাজ, সরকারসহ আপামর জনগণকে একযোগে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি; অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আন্তর্জাতিক সদস্য
kekbabu@yahoo.com

Link: http://www.kalerkantho.com/print-edition/sub-editorial/2018/07/11/656585
Dr. Kudrat-E-Khuda (Babu).
Associate Professor (Dept. of Law), Daffodil International University;
International Member of Amnesty International;
Climate Activist of Greenpeace International; Column Writer;
Mobile Phone: +8801716472306
E-mail: kekbabu.law@diu.edu.bd