Faculties and Departments > Faculty Sections

আমরা পেরেছি

(1/2) > >>

mosfiqur.ns:
ত কয়েক বছর আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও) বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা খুব ভালো ফল পেলেও স্বর্ণপদকটা অধরাই থেকে যাচ্ছিল। এবার সেই পদক এসেছে চট্টগ্রামের ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল ও কলেজের ছাত্র আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরীর হাত ধরে। রোমানিয়ার ক্লুজ-নাপোকা শহরে বসেছিল ৫৯তম আইএমওর আসর। স্বপ্ন নিয়ের জন্য স্বর্ণপদক জয়ের পেছনের গল্প লিখেছে

ডাচ–বাংলা ব্যাংক–প্রথম আলো গণিত উৎসবে যখন প্রথম অংশ নিই, তখন আমি সবে মাত্র ক্লাস ফাইভ থেকে সিক্সে উঠেছি। গণিতের সমস্যাগুলো সেই সময় থেকেই খুব ভালো লাগত। ৫০০ মজার সমস্যা কিংবা প্রাণের মাঝে গণিত বাজে—এই বইগুলো খুব আনন্দ নিয়ে পড়তাম। কিন্তু গণিত অলিম্পিয়াডে এসেই প্রথম বুঝতে পারলাম, আমি যতটা ভেবেছি, গণিতের জগৎ তার চেয়ে অনেক বড়। ‘সেরাদের সেরা’ হওয়ার সুবাদে সেবার আমি প্রাথমিক গণিত ক্যাম্পে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাই। গণিতের জগতের মতো আমার জগৎটাও বড় হতে থাকে। গণিতের মাধ্যমে কত বন্ধু বানানো যায়, মজা করা যায়, একটু একটু করে আমি বুঝতে পারি।

নবম-দশম শ্রেণির গণিত বইয়ের সমস্যাগুলো সে সময়ই সমাধান করে ফেলেছিলাম। এ ক্ষেত্রে মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের গণিত এবং আরো গণিত বইটা খুব কাজে এসেছে। ক্লাস এইটে পড়ার সময় যখন আবার গণিত ক্যাম্পে যাওয়ার সুযোগ হলো তখন বুঝলাম, আমার যাত্রা কেবল শুরু। দ্য আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফট অব প্রবলেম সলভিং বইটা তখন অসম্ভব ভালো লেগেছিল। খুব সাধারণ ভাষায় লেখা এত অসাধারণ বই আমি আগে হাতে পাইনি। এ ছাড়া প্রবলেম সলভিং স্ট্র্যাটেজিস, জিওম্যাট্রি রিভিজিটেড, ওয়ান হান্ড্রেড ফোর নাম্বার থিওরি প্রবলেমস; বইগুলো পড়ে অনেক কিছু শিখেছি। আনন্দ পেয়েছি।

আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে সুযোগ পাওয়ার পর দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে অনুশীলন করতে করতে আরও অনেক কিছু শিখলাম। আর্ট অব প্রবলেম সলভিং-এর ওয়েবসাইটে (artofproblemsolving.com) বিভিন্ন দেশের গণিত অলিম্পিয়াডে দল নির্বাচনের জন্য যে পরীক্ষা নেওয়া হয়, সেসব পরীক্ষার প্রশ্ন পাওয়া যায়। এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে করতে আমার অভিজ্ঞতা আরও বাড়ল। বিশেষ করে আইএমওর পুরোনো প্রশ্ন, আমেরিকা, রাশিয়া, ইরান ও চীনের গণিত অলিম্পিয়াডের প্রশ্নগুলো আমার খুব কাজে এসেছে।


চট্টগ্রাম ম্যাথ সার্কেলের সঙ্গে ছিলাম। সেখানে ক্লাস নিতে নিতে ও ক্যাম্পের আয়োজন করতে করতে নিজের দক্ষতা যাচাই করা শিখেছি। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে জাতীয় গণিত ক্যাম্পে আমি প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করি। ক্যাম্পে সমবয়সী, ছোট, বড় ভাইদের সঙ্গে অনুশীলন করার সুযোগ আমাকে সবচেয়ে সাহায্য করেছে। উন্নতিটা যে একটু একটু করে হয়েছে, সেটা আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে আমার ফল দেখলেও বোঝা যায়—২০১৬ সালে ব্রোঞ্জ, ২০১৭ সালে রুপা আর সব শেষে ২০১৮ সালে এল স্বর্ণপদক।

আমার আজকের সাফল্যের পেছনে অনেকের অবদান আছে। ধন্যবাদ জানাব মাহবুব স্যার (বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড দলের কোচ মাহবুব মজুমদার) ও মুনির স্যারকে (বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান), যাঁদের ছাড়া বাংলাদেশ আইএমওতে যেতে পারত না। অবশ্যই বলতে হয় প্রথম আলো,বন্ধুসভা ও গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির কথা। মুভার্স (গণিত অলিম্পিয়াডের স্বেচ্ছাসেবক দল) ভাইদের পরিচালনা আমাদের ক্যাম্পকে সফল করে। তা ছাড়া যাঁদের দেখানো পথে হেঁটে আমি এত দূর এসেছি—মুগ্ধ ভাই, ধনঞ্জয় ভাই, সৌরভ ভাই, মাহি ভাই, আদিব ভাই, সানজিদ ভাই, তূর্য ভাই—ধন্যবাদ জানাই তাঁদের সবাইকে। আসিফ-ই-এলাহী ভাইয়ের কথাও বলতেই হয়, স্বর্ণপদক জয়ের স্বপ্ন দেখার সাহস পেয়েছি তাঁকে দেখেই। সব শেষে বলব আমার দলের সদস্যদের কথা। তারা ছিল বলেই গত কয়েকটা বছর অসাধারণ কেটেছে!

এই পদক গুরুত্বপূর্ণ কেন?

মাহবুব মজুমদার

দেশ হিসেবে আমরা এখনো তরুণ। আমাদের শিক্ষার সঠিক অবকাঠামো নেই। দশটা আইআইটি নেই। এমআইটি বা হার্ভার্ড নেই। আমাদের সবচেয়ে মেধাবী মানুষেরা বিদেশে চলে যায় এবং আর ফিরে আসে না। আমরা বিশ্বে সেরা হতে পারি, এই আত্মবিশ্বাস আমাদের মধ্যে নেই।

কিন্তু গণিত অলিম্পিয়াডের আয়োজন আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাতেও আমরা ধারাবাহিকভাবে বিশ্বসেরাদের কাতারে থাকতে পারি। এ বছর আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে যত শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে, তাদের মধ্যে সেরা ৩.৫ শতাংশের একজন আমাদের আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী। ১০৭টি দেশের ৫৯৭ জন শিক্ষার্থীর তালিকায় ওর অবস্থান ২৭তম। একেকটি দেশের সেরা ছয়জন আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে সুযোগ পায়।

বাংলাদেশে যখন গণিত অলিম্পিয়াড শুরু হলো, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের প্রশ্ন দেখে দেশের অনেক বিখ্যাত গণিতবিদ বলেছিলেন, আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা কোনো দিন স্বর্ণপদক পাবে না। এমনকি ৬টি প্রশ্নের মধ্যে ১টিও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সমাধান করতে পারবে কি না, সে ব্যাপারেও সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন কেউ কেউ।

জাওয়াদের স্বর্ণপদক প্রমাণ করে দিয়েছে, আমাদের ছেলেমেয়েদের ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি জাওয়াদ যে বিরল মেধাবীদের একজন, তা–ও নয়। গত দুই বছরেও মাত্র ১ নম্বরের ব্যবধানের জন্য আমরা স্বর্ণপদক পাইনি। ভবিষ্যতে আরও অনেক জাওয়াদ, আরও অনেক আসিফ-ই-এলাহীর প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি।

জাওয়াদসহ গণিত অলিম্পিয়াডের অন্য শিক্ষার্থীরা দেশের সবার জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে। তারা প্রমাণ করেছে, বাংলাদেশও সেরা হতে পারে। নীতিনির্ধারক, শিক্ষক, ক্ষমতায় থাকা মানুষেরা আমাদের যে মানের সেবা দেন, তাতে আমরা বড় কিছু প্রত্যাশা করতেও ভুলে গেছি। জাওয়াদের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই আমরা সব ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মানের সেবা দাবি করতে পারি। শিক্ষা, শিক্ষার অবকাঠামো কিংবা অন্য যেকোনো খাতেই এই দাবিতে অনড় থাকা উচিত।

স্বেচ্ছাসেবক, তরুণ এবং কিছু নিরহংকার মানুষের পরিশ্রমে বাংলাদেশে গণিত অলিম্পিয়াড পরিচালিত হয়। মানের দিক থেকে কোনো ছাড় দেওয়া হয় না বলেই দেশসেরা মানুষেরা এই আয়োজনের সঙ্গে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেন। উদ্যমী মানুষদের কাজে লাগাতে পারলেই জাতি হিসেবে আমরা অনেক দূর যেতে পারব।

লেখক: বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড দলের কোচ

Abdus Sattar:
Thanks for sharing.

Nusrat Jahan Bristy:
 :)

mominur:
We are proud for the achievement.........

rakib.cse:
Really a great achievement ...

Navigation

[0] Message Index

[#] Next page

Go to full version