জাগতিক ব্যস্ততা তোমাকে একেবারে এতটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে

Author Topic: জাগতিক ব্যস্ততা তোমাকে একেবারে এতটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে  (Read 1002 times)

Offline mdashraful.eee

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 230
  • তুমি যদি দৃশ্যমান মানুষকে'ই ভালবাসতে না পারো তাহলে
    • View Profile
অল্পেতুষ্টি মানে আল্লাহ তাআলা আমাকে যা দিয়েছেন তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকা। যা পেলাম, যদ্দুর হয়েছে তাতেই আমি সন্তুষ্ট আলহামদু লিল্লাহ-আল্লাহ্র শোকর। তো এই অল্পতে তুষ্ট থাকা এবং আল্লাহ্র শোকর আদায় করা- এটা গুরুত্বপূর্ণ একটা গুণ। একজন মুমিনের মধ্যে এই গুণটা থাকা দরকার। কিন্তু এই অল্পেতুষ্টির ক্ষেত্রটা কী?

 হাদীসের শিক্ষা হল- তুমি জাগতিক বিষয়ে অল্পতে তুষ্ট হয়ে আলহামদু লিল্লাহ বল-শোকর আদায় কর; বাকি সময়টা বেশি বেশি দ্বীন-ঈমানের কাজে ব্যয় কর। তারপরও নিষেধ করা হয়নি; ঠিক আছে, জাগতিক ব্যস্ততা বাড়াও। নিষেধ করা হয়নি যে, জাগতিক ব্যস্ততা তোমাকে একেবারে এতটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে; ছাড় আছে। কিন্তু এই ছাড়ের মানে কি ফরয নামায ছেড়ে দিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা ছেড়ে দিব, ফরয রোযাতে অবহেলা করব? এই ছাড়ের মানে কি হালাল-হারামের তারতম্য রাখব না? আল্লাহ তো অনেক ছাড় দিয়েছেন। আল্লাহ্র সেই ছাড় গ্রহণ করে আমাকে আল্লাহ্র শোকর আদায় করতে হবে। সেই শোকর কীভাবে? দুনিয়ার ক্ষেত্রে অল্পেতুষ্টির পরে শোকর আর দ্বীন-ঈমানের ক্ষেত্রে শোকর আদায় করে ক্ষান্ত হব না; বরং অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করতে থাকব। আরো অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করতে থাকব। এটা হল হাদীসের শিক্ষা।

এ বিষয়টি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়ে দিয়েছেন। এর পদ্ধতিও শিখিয়ে দিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ একটা হাদীস, আপনারা শুনেছেন-

انْظُرُوا إِلى مَنْ أَسْفَلَ مِنْكُمْ، وَلَا تَنْظُرُوا إِلَى مَنْ هُوَ فَوْقَكُمْ، فَهُوَ أَجْدَرُ أَنْ لَا تَزْدَرُوا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ.

তোমাদের চেয়ে যারা গরীব-দুঃখী তাদেরকে দেখো তোমাদের চেয়ে যারা সুখী-সচ্ছল তাদেরকে নয়। এটা হবে তোমাদের জন্য আল্লাহ-প্রদত্ত নিআমতের শোকরগোযারির পক্ষে অধিক সহায়ক ও সম্ভাবনাপূর্ণ। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯৬৩; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৫১৩

জাগতিক বিষয়ে তোমার চেয়ে তুলনামূলকভাবে যার অবস্থা নি¤œমানের তার দিকে তাকাও আর দ্বীন-ঈমানের বিষয়ে তোমার চেয়ে যার অবস্থা উন্নত তার দিকে তাকাও। জাগতিক বিষয়ে তোমার চেয়ে দুর্বল যে তার দিকে তাকাও, তাহলে আল্লাহ্র শোকর আদায় করতে পারবে- আমার তো যাক তাও একটা ঘর আছে আরেকজনের তো ঘর নেই, কোনোরকম একটা ছাপরা করে আছে। তোমার চাইতে জাগতিক দিক থেকে দুর্বল, বৈষয়িক দিক থেকে দুর্বল তার দিকে তাকাও যে, আল্লাহ তো তার থেকে আমাকে অনেক ভালো রেখেছেন। এরকম তো সবাই খুঁজে পাবে- তার চেয়ে আরো নি¤œমানের অবস্থা, দুর্বল অবস্থা- কে খুঁজে পাবে না বলুন? নিজের থেকে দুর্বলের দিকে তাকাও, তাকে একটু সাহায্য করতে পার কি না। দেখ আর আল্লাহ্র শোকর আদায় কর; আল্লাহ আমাকে ভালো রেখেছেন-

الحَمْدُ لِلهِ الّذِي عَافَانِي مِمّا ابْتَلاَكَ بِهِ، وَفَضّلَنِي عَلَى كَثِيرٍ مِمّنْ خَلَقَ تَفْضِيلاً.

সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তোমাকে যে বিষয়ে আক্রান্ত করেছেন আমাকে তা থেকে নিরাপদ রেখেছেন আর তাঁর সব মাখলুকের উপর আমাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৪৩১

আল্লাহ তোমাকে ভালো রেখেছেন তো আল্লাহ্র শোকর আদায় কর। আর দ্বীন-ঈমানের বিষয়ে যারা তোমার চেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে তাদের দিকে তাকাও- সে তাহাজ্জুদের জন্য নিয়মিত ওঠে, আমি তো মাসে একবার দুইবার জাগি, আর না হয় শুয়েই থাকি; কোনোরকম ফরযে যাই, ফজরের জামাতে শরীক হই। তো এখন আমি ফযরের নামায পড়ি, কিন্তু মসজিদের জামাতে আসি না; আমি খোশ! কেন? বলে, আরে কতজন তো ফজরের নামাযের জন্য ওঠেই না। ঐ আটটা-নয়টার দিকে যখন ওঠে, গোসল করে ফজরের কাযা আদায় করলে করল বা না করেই অফিসে রওয়ানা হয়ে গেল। যার যেই কাজ, কর্মস্থলে চলে গেল, ফযরের নামায বাদ!

এখন বলে, সে তো ফজরের নামাযই  ছেড়ে দিল। আমি তো পড়ি, সময়মতো সূর্য ওঠার আগে আগে ফযরের নামায পড়ি। এজন্য আমি খোশ্। কেন? আমি অন্যদের দিকে তাকাচ্ছি, ঈমান আমলের দিক থেকে আমার চেয়ে যে দুর্বল অবস্থায় আছে তার দিকে তাকাচ্ছি। ও তো ফজর পড়েই না, আমি পড়ি। সেজন্য আমি খোশ! আমি চিন্তা করি না যে, আরে আমার পাশেই তো মসজিদ, মসজিদে যে দুই কাতার মুসল্লি এরা সবাই তো ফজরের নামায জামাতে পড়ছে, আমি তো জামাতে যাচ্ছি না, মসজিদে যাচ্ছি না, জামাতে পড়ছি না; আমার অবস্থা তো তাদের চেয়ে খারাপ, আমাকে আরো ভালো হতে হবে। আমি তো শুধু মাগরিবের নামায মসজিদে জামাতে পড়ি, বাকি চার ওয়াক্ত পড়ি না। অন্যরা তো দেখি পাঁচ ওয়াক্ত পড়ে, আমি তো তাদের থেকে পেছনে পড়ে আছি; আমাকে অগ্রসর হতে হবে।

তো দ্বীন-ঈমানের ক্ষেত্রে নিজের চেয়ে ভালো যারা, ওদের দিকে তাকাও, তাহলে তোমার মধ্যে একটু অনুশোচনা আসবে- আহা! আমি তো পেছনে পড়ে আছি, আমাকে অগ্রসর হতে হবে। জাগতিক বিষয়ে তোমার চেয়ে  দুর্বল যারা ওদের দিকে তাকাও- আমাকে তো আল্লাহ ওদের চেয়ে ভালো রেখেছেন, আলহামদু লিল্লাহ-আল্লাহ্র শোকর।রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীস শরীফে বলে দিয়েছেন, যদি তুমি জাগতিক বিষয়ে তোমার চেয়ে ভালো যে তার দিকে তাকাও তুমি নিআমতের শোকর আদায় করতে পারবে না। আহা! ওর তো গুলশানে বাড়ী আছে, আমার গুলশানে বাড়ী নেই। ধানম-িতে আছে বহুত বড় সুন্দর বাড়ী, তাও শোকর আসে না; কেন? গুলশানে নেই। এজন্য শোকর আসে না। এটা অন্যায়। আল্লাহ্র শোকর আদায় করা উচিত, যা আল্লাহ দিয়েছেন এটার উপর আল্লাহ্র শোকর আদায় করা। যা নিআমত আমি অর্জন করেছি তা আল্লাহ্র দান। একথা মনে রাখতে হবে পাশাপাশি লক্ষ্য রাখতে হবে কোন্ সূত্রে আমি সম্পদ হাসিল করেছি? অবৈধ পন্থায় যদি কোনো কিছু হাসিল করে থাকি ওটা শুধরিয়ে নেওয়া, পাক করে ফেলা।

أَرْبَعٌ إِذَا كُنّ فِيكَ فَلَا عَلَيْكَ مَا فَاتَكَ مِنَ الدّنْيَا: حِفْظُ أَمَانَةٍ، وَصِدْقُ حَدِيثٍ، وَحُسْنُ خَلِيقَةٍ، وَعِفّةٌ فِي طُعْمَةٍ.

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াসাল্লাম বলেছেন, চারটা সিফাত, চারটা গুণ যদি তোমার মধ্যে থাকে, তাহলে কী আছে, কী নেই এটা নিয়ে আর পেরেশান হওয়ার দরকার নেই :

১. আমানত রক্ষা করা। খিয়ানত না করা।

২. সত্য বলা; সত্য কথা বলব, মিথ্যা বলব না।

৩. আখলাক সুন্দর, চরিত্র পবিত্র হওয়া এবং ব্যবহার সুন্দর হওয়া।

৪. খাবার হালাল হওয়া। রিযিকটা হালাল হওয়া। (দ্র. মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ৬৬৫২; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৪৪৬৩; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৮৭৬)

তো চারটা গুণ অর্জন করতে হবে। কী কী?

১. حِفْظُ أَمَانَةٍ আমানত রক্ষা করা। যে কোনো ধরনের খেয়ানত, দুর্নীতি, ভেজাল এবং ধোঁকা সবকিছু থেকে বেঁচে থাকতে হবে।

২. صِدْقُ حَدِيثٍ সত্য বলা, মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকা।

৩. حُسْنُ خَلِيقَةٍ ভালো ব্যবহার এবং দিলের উত্তম অবস্থা। আরবী خليقة বা خلق শব্দের মধ্যে দুইটা দিক আছে :

ক. দিলের অবস্থা ভালো থাকা; দিলের যেই ব্যাধিগুলো আছে সেগুলো থেকে দিলকে পাক করা। দুনিয়ার মুহাব্বত, দুনিয়ার মোহ, এটা একটা আত্মিক রোগ, আত্মিক ব্যাধি। কিব্র-অহংকার, উজ্ব, উজ্ব মানে নিজের সবকিছু নিজের কাছে ভালো লাগে, অপরের কোনোটাই ভালো লাগে না। নিজেরটাই সবচেয়ে ভালো; আমার কাছে আমার কথা সুন্দর, চাল-চলন সুন্দর, আমার সবকিছু সুন্দর। অপরের কোনোটাই ভালো লাগে না। এটা ব্যাধি, রোগ। এইসমস্ত অন্তরের রোগগুলো থেকে অন্তর পাক-সাফ থাকা এটাকে বলে حُسْنُ خَلِيقَةٍ।

খ. আর মানুষের সাথে কথা-বার্তা, চাল-চলন, উঠা-বসা এগুলো ভালো করা। সবার সাথে, রিক্সাওয়ালা ভাইয়ের সাথে, বাসের হেলপারের সাথে, তোমার ঘরের যে খাদেম আছে, কাজের লোক আছে তাদের সাথে ভালো ব্যাবহার করা আর নিজের স্ত্রী-সন্তান সবার সাথে তো বটেই। আমরা অনেক সময় করি কী, বাইরের লোকদের সাথে ভালো ব্যবহার করি, আমার বসের সাথে আমি ভালো ব্যবহার করি, কিন্তু আমার অধীনের যারা, তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করি না। বাইরে ভালো ব্যবহার করি, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ভালো ব্যবহার করি, কিন্তু ঘরে গেলে স্ত্রী-সন্তানদের সাথে সুন্দর করে কথা বলি না, ধমকের সুরে কথা বলি।  এটা অন্যায়।

তো حُسْنُ خَلِيقَةٍ -এর মধ্যে এই দুইটা বিষয় শামিল।

৪. عِفّةٌ فِي طُعْمَةٍ তোমার রিযিক হালাল হতে হবে। বাসস্থান, তোমার খাবার, এই যে লোকমা যাচ্ছে, এই লোকমাটার সাথে ইবাদতের সম্পর্ক আছে। এটা হালাল হতে হবে।

তো চারটা জিনিস- আমানত রক্ষা করা, খেয়ানত  থেকে বেঁচে থাকা, সত্য বলা, আখলাক ভালো হওয়া, চরিত্র ভালো হওয়া, মানুষের সাথে আচার-ব্যবহার ভালো হওয়া, আর রিযিক হালাল হওয়া, পানাহার-বাসস্থান হালাল হওয়া। এগুলোতে যদি আমার মধ্যে ত্রুটি থাকে, আমার রিযিক যদি সন্দেহযুক্ত হয়ে থাকে, হারামের সাথে মিশে গিয়ে থাকে তাহলে হবে না।

আর একটা কথা বলেই শেষ করছি, শুরুতে যে বললাম অল্পেতুষ্টির কথা, সে বিষয়ে আরেকটি কথা-

আল্লাহ হজে¦র তাওফীক দিয়েছেন। এখন মুখে দাড়ি এসে গেছে, নামায ঠিকমতো আদায় করছি, অনেক আমল ঠিক হয়ে গেছে বা তাবলীগের চিল্লায় গেলাম, চিল্লা থেকে আসার পর অনেক কিছু সংশোধন হয়ে গেছে বা কোনো আল্লাহওয়ালার সান্নিধ্যে গেলাম ওখান থেকে আমার মাঝে বড় পরিবর্তন এসে গেছে- এটা খুশির বিষয় না? খুশির বিষয়, আল্লাহ্র শোকর আদায় করার বিষয়। এসকল পরিবর্তন তো আমার মাঝে এসেছে, কিন্তু পিছনের কাফফারা আদায় করি না। পিছনের ভুলগুলোর, পেছনের জিন্দেগীর কাফফারা আদায় করি না। পিছনের জিন্দেগীর কাফফারা কী? কারো হক নষ্ট করেছি, এটা আদায় করি। বোনদের হক দেইনি, এখন বোনদের মিরাছ দিয়ে দেই। অনেক পাওনাদার আছে, ওদের পাওনা আদায় করিনি, ওরা চাইতে চাইতে বিরক্ত হয়ে চুপ করে গেছে। যত দ্রুত সম্ভব আদায় করে দেই।

তো পিছনের যামানার কাফফারা করা এটা খুব জরুরি। যদি এটা না করি তাহলে এটা তো কঠিন ধরনের অল্পেতুষ্টি হয়ে গেল, (অন্যায়ের উপর তুষ্টি) যেটা একেবারে গুনাহ, পাপ। আল্লাহ আমার মধ্যে পরিবর্তন এনেছেন এই পরিবর্তনের হক আদায় করতে হবে আমাকে। এই পরিবর্তনের হক এবং এর শোকর হল পিছনের জিন্দেগীর যা যা কাফফারা সম্ভব আমার দ্বারা তা আদায় করা।

কাউকে খামোখা অন্যায়ভাবে থাপ্পর মেরেছি, খুব ধমক দিয়ে কথা বলেছি, গালি দিয়েছি, এখন গিয়ে ক্ষমা চাই। ক্ষমা চাই তার কাছে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে নিজেদের পিছনের জিন্দেগীর কাফফারা আদায় করার তাওফীক নসীব করুন, শুধরাবার তাওফীক নসীব করুন। দুনিয়ার বিষয়ে অল্পেতুষ্টির গুণ দান করুন; আখেরাতের বিষয়ে আরো আগে বাড়ার তাওফীক দিন।

وآخر دعوانا أن الحمد الله رب العالمين.
Kind Regards,

Md. Ashraful Haque
Assistant Professor
Department of (EEE)
Daffodil International University, (DIU)
Permanent Campus