দেড় শতাধিক পণ্যের স্বত্ব দাবি করতে পারছে না বাংলাদেশ

Author Topic: দেড় শতাধিক পণ্যের স্বত্ব দাবি করতে পারছে না বাংলাদেশ  (Read 1035 times)

Offline shuvoparna chanda

  • Newbie
  • *
  • Posts: 3
  • Test
    • View Profile
ইলিশসদৃশ মাছ অনেক দেশেই আছে। কিন্তু পদ্মার রুপালি ইলিশের স্বাদ ও ঘ্রাণ অন্য কোনো দেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমনকি ভারতীয় অংশ গঙ্গায় যে ইলিশ পাওয়া যায়, তা-ও স্বাদে-গন্ধে পদ্মার ইলিশের ধারেকাছে নেই। তাই তো বাংলাদেশের রুপালি ইলিশের কদর বিশ্বজুড়ে। প্রকৃতিগতভাবে পাওয়া ইলিশ মাছ ভৌগোলিক নির্দেশক (জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেটর-জিআই) পণ্য হিসেবে এ দেশের অন্যতম পরিচায়ক। কিন্তু কার্যকর আইন না থাকায় বিশ্বব্যাপী এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে না।
প্রকৃতি ও ঐতিহাসিকভাবে পাওয়া ইলিশের পাশাপাশি রয়েছে কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত পণ্য। যেসব পণ্যের রয়েছে স্বতন্ত্র ও অনন্য বৈশিষ্ট্য। কিন্তু বাংলাদেশি পণ্য হিসেবে সেসব পণ্যের স্বীকৃতি নেই। সে রকম একটি পণ্যের নাম টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ীর চমচম। অতুলনীয় স্বাদ আর সুগন্ধের কারণে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ব্যাপক সুনাম রয়েছে ঐতিহ্যবাহী এই পণ্যের। ঢাকার জামদানি ও মসলিনের বুননশৈলীর জন্য সুখ্যাতি রয়েছে বিশ্বব্যাপী। নাটোরের কাঁচাগোল্লা, বগুড়ার দই, কুমিল্লার রসমালাই, রাজশাহীর সিল্ক- এমন অনেক ঐতিহ্যবাহী বিখ্যাত পণ্য রয়েছে, যেগুলো যুগ যুগ ধরে দেশের সুনাম বহন করে চলেছে। এসব পণ্য জিআই হিসেবে নিবন্ধিত ও সুরক্ষা পাওয়ার দাবি রাখলেও তা করা যাচ্ছে না। কারণ ওই একটাই- আইনের অভাব।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় উৎপাদিত হয় এমন দেড় শতাধিক পণ্যের তালিকা পাওয়া গেছে, যেগুলো ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে নিবন্ধন ও সুরক্ষার দাবি রাখে। বছরখানেক আগে ৬৪ জেলার প্রশাসকদের পক্ষ থেকে এসব জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী পণ্যের তালিকা তৈরি করে ডিপিডিটিতে পাঠানো হয়েছে। তালিকায় রয়েছে পদ্মার ইলিশ, ঢাকার জামদানি, টাঙ্গাইলের চমচম, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, বগুড়ার দই, কুমিল্লার রসমালাই। প্রক্রিয়াজাত পণ্যের মধ্যে রয়েছে- মসলিন, মিরপুরের কাতান, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি, কুমিল্লার খাদি কাপড় ও মণিপুরী শাল। এসব পণ্য নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দেশের ঐতিহ্য ও সুনাম বহন করে চলেছে। এ ছাড়া রয়েছে চট্টগ্রামের শুঁটকি, সিলেটের সাতকরা, রাজশাহীর সিল্ক, দিনাজপুরের লিচু, রাজশাহীর ফজলি আম ও পাট। পাশাপাশি নিম, কালিজিরা, লক্ষ্মণভোগ আম, ক্ষীরসাপাতি আম, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, ভৌগোলিক পণ্য নির্দেশকের তালিকায় রয়েছে। তবে আইন ও বিধিমালা না থাকায় এখনই এসব পণ্য ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। আইন ও বিধিমালা চূড়ান্ত হওয়ার পরই পণ্যগুলোকে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে নিবন্ধন করা যাবে বলে জানিয়েছেন ডিপিডিটির কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিপিডিটির ডেপুটি রেজিস্ট্রার লাবলুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, বিভিন্ন জেলা থেকে পাওয়া দেড় শতাধিক পণ্যের তালিকায় কৃষিজাত, প্রকৃতিগত ও প্রক্রিয়াজাত পণ্য রয়েছে। তবে জিআই করার ক্ষেত্রে এই তালিকা কিছুটা এদিক-ওদিক হতে পারে। কিন্তু আইন ও বিধিমালা না থাকায় এখনই এসব পণ্যকে নিবন্ধন ও সুরক্ষা দেওয়া যাচ্ছে না। লাবলুর রহমান বলেন, গত বছর সংসদে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য আইন পাস হয়েছে। সেই আইনের আলোকে এসব পণ্যের পেটেন্ট করতে হলে সংগঠন বা সমিতির মাধ্যমে করতে হবে। এককভাবে কেউ পণ্যের নিবন্ধন করতে পারবে না।
জানা যায়, ভারত তাদের জন্য ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য আইন সংসদে পাস করেছে ২০০৩ সালে। দেশটি জিআই আইনের অধীনে এরই মধ্যে জামদানি শাড়ি, নকশিকাঁথা ও ফজলি আমের পেটেন্ট বা স্বত্ব নিজেদের করে নিয়েছে। বাংলাদেশের হাজার বছরের ঐতিহ্য জামদানি শাড়ির স্বত্ব ২০০৯ সালে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ নিজেদের মালিকানায় নিয়ে গেছে। অন্ধ্র প্রদেশে উপাদা জামদানি নামে এর নিবন্ধন করা হয়েছে।
ট্রেড রিলেটেড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস (টিআরআইপিএস) চুক্তির আওতায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডাব্লিউটিও) সদস্য দেশগুলো তাদের দেশের পণ্য নিবন্ধন করতে পারে। ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট চুক্তির ২২, ২৩ ও ২৪ ধারা অনুযায়ী, ডাব্লিউটিওর সদস্য প্রতিটি দেশের নিজেদের জনপ্রিয়, ঐতিহ্যবাহী ও বিখ্যাত পণ্য সংরক্ষণের অধিকার রয়েছে। এই চুক্তির আওতায় ভারত ইতিমধ্যে দুই শতাধিক পণ্যের পেটেন্ট করিয়েছে। তারা আরো ১৫৮টি পণ্যের তালিকা তৈরি করেছে পেটেন্ট করার জন্য। অথচ বাংলাদেশ সরকার এখনো আইন ও বিধিমালাই চূড়ান্ত করতে পারেনি, পণ্যের ভৌগোলিক নির্দেশক নিবন্ধন তো দূরের কথা।
ডিপিডিটি সূত্রে জানা যায়, জনপ্রিয় ও স্বতন্ত্র পণ্যের সুরক্ষা দিতে শিল্প মন্ত্রণালয় আইন করার উদ্যোগ নেয় ২০০৯ সালে। পাঁচ বছর পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন ২০১৩ সংসদে পাস হয়েছে। কিন্তু সেই আইন এখনো অসম্পূর্ণ। বিধিমালাও চূড়ান্ত হয়নি। কবে নাগাদ বিধিমালা চূড়ান্ত হবে জানতে চাইলে ডিপিডিটির উপসচিব হাসনা জাহান খানম কালের কণ্ঠকে বলেন, বিধিমালার ওপর সবার মতামত নেওয়া হচ্ছে। এখনো অনেক মন্ত্রণালয় তাদের মতামত পাঠায়নি। সবার মতামত পাওয়ার পর আগামী আগস্টের মধ্যে বিধিমালা চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করেছেন, আইন না থাকার কারণে বাংলাদেশের জামদানি শাড়ি, নকশিকাঁথা ও ফজলি আমের মালিকানা হাতছাড়া হয়েছে। ওই সব পণ্যের মালিকানা স্বত্ব নিয়ে নিয়েছে ভারত। আরো অনেক পণ্যের মালিকানাও হাতছাড়া হতে চলেছে। কিন্তু সরকার পণ্যগুলো নিজের করে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যত দ্রুত সম্ভব আইনের বিধিমালা চূড়ান্ত করে হারানো পণ্যের মালিকানা স্বত্ব ফিরে পেতে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন তাঁরা।
অবশ্য ডিপিডিটির কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতের যেসব অঞ্চলে জামদানি, নকশিকাঁথা ও ফজলি আম উৎপাদিত হয়, সেসব অঞ্চলের নাম দিয়েই তারা পেটেন্ট করিয়েছে। বাংলাদেশের যে স্থানে ইলিশ উৎপাদিত হয়, সে স্থানের নামে পেটেন্ট করা হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশের নিজস্ব আইনে পণ্যের নিবন্ধন হবে। একই কথা জামদানি ও আমের বেলায়ও প্রযোজ্য হবে। তাঁর মতে, জিআইয়ের অন্যতম শর্তই হলো পণ্যের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে। পাশাপাশি স্থানের নাম থাকতে হবে। সেই হিসাবে জামদানির নিবন্ধন করতে হলে তা ঢাকার জামদানি, ইলিশের নিবন্ধন করতে হলে পদ্মার ইলিশ নামেই করতে হবে।
আইন অনুযায়ী, কৃষি, প্রকৃতিজাত ও হস্তশিল্পজাত কোনো পণ্যকে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে নিবন্ধন করতে হলে সংগঠন ও সমবায়ের মাধ্যমে ডিপিডিটির রেজিস্ট্রার বরাবর ফি দিয়ে আবেদন করতে হবে। তবে ওই সব পণ্যের অবশ্যই ভৌগোলিক নির্দেশক, সুনাম ও গুণাগুণ থাকতে হবে। রেজিস্ট্রার যদি মনে করেন পণ্যটি জিআই হিসেবে নিবন্ধনের দাবি রাখে, তখন তিনি ওই পণ্যের নিবন্ধন অনুমোদন করবেন।
জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য তত্ত্বাবধান ও উদারীকরণের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার ২৩টি চুক্তির একটি হচ্ছে বাণিজ্য সম্পর্কিত মেধাস্বত্ব অধিকার চুক্তি বা ট্রিপস। এই চুক্তিতে পৃথিবীর সব প্রকৃতিগত, কৃষি ও শিল্পজাত পণ্যের ওপর পেটেন্ট করার বৈধ অধিকার রাখা হয়েছে। বিভিন্ন দেশে যেসব প্রাকৃতিক, মানুষের তৈরি এবং কৃষিজাত পণ্য দীর্ঘকাল ধরে উৎপাদিত হয়ে আসছে, তার ওপর সংশ্লিষ্ট দেশের মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য জিআই আইন করে নিবন্ধনের বিধান রয়েছে ওই চুক্তিতে।
উইকিপিডিয়ার মতে, জিআই হলো একটি প্রতীক বা চিহ্ন, যা পণ্য বা সেবার উৎস, গুণাগুণ এবং সুনাম ধারণ ও প্রচার করে। এগুলোই জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃত। জিআইয়ের মাধ্যমে একটি পণ্য ভৌগোলিক এলাকার পরিচিতি বহন করে। জিআই উৎপাদকদের তাঁদের পণ্যের স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে, যাতে অন্য দেশের সমজাতীয় পণ্য থেকে তাঁদের পণ্য আলাদাভাবে চেনা যায়। এতে করে তাঁদের পণ্যের আলাদা সম্মান ও মর্যাদা সৃষ্টি হয়। এর ফলে বিশ্ববাজারে তাঁরা তাঁদের পণ্যের ভালো দাম পান।
source: http://kalerkantho.com/print-edition/last-page/2014/07/09/104998

Offline Raisa

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 908
  • Sky is the limit
    • View Profile
:)