বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনাময় দেশ। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ খুব দ্রুতই সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও তাইওয়ানের চেয়ে উন্নত দেশে পরিণত হবে বলে মনে করেন মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল। এ জন্য নিজের প্রবল ইচ্ছাশক্তি, মেধা ও পরিশ্রমকে ব্যবহার করতে তরুণ শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এই শিল্পোদ্যোক্তা।
গতকাল সোমবার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মিলনায়তনে ‘উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ক ডিআইইউ ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়া বক্তৃতামালা’ অনুষ্ঠানের ১৩তম পর্বের বক্তৃতায় প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কোরিয়া দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি চো মিং ইয়ং, মেঘনা গ্রুপের পরিচালক ও মোস্তফা কামালের বড় মেয়ে তাহমিনা মোস্তফা, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. ইউসুফ এম ইসলাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের পরিচালক মো. আবু তাহের খান।
উদ্যোক্তা হওয়ার পথে দীর্ঘ সংগ্রামের গল্প বলতে গিয়ে মোস্তফা কামাল বলেন, ‘মাত্র ১৭৫ টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসায় নেমেছিলাম। এখন মেঘনা গ্রুপের বার্ষিক টার্নওভার দুই বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এই সফলতার পথ মোটেও মসৃণ ছিল না। কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। দিনে ১৮ ঘণ্টারও বেশি কাজ করেছি।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মোস্তফা কামাল বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে হাতের নাগালেই সব পাওয়া যায়। ঘরে বসেই অক্সফোর্ড, হার্ভার্ড, কেমব্রিজের বই পড়া যায়। অথচ আমাদের সময় ভালো বই ছিল দুর্লভ। বড় ভাইদের কাছ থেকে বই ধার নিয়ে পড়তে হতো। পড়ালেখার জন্য হেঁটে যেত হতো সাত মাইল দূরের স্কুলে। এখন প্রযুক্তি তোমাদের হাতের মধ্যে অনেক সুযোগ-সুবিধা এনে দিয়েছে। এসব সুযোগকে কাজে লাগাও। তাহলে সফল হতে পারবে।
কাজ করার ইচ্ছাই প্রধান উল্লেখ করে দেশবরেণ্য এই উদ্যোক্তা আরো বলেন, উদ্যোক্তা হতে হলে প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে। ইচ্ছার ওপর ভর করে সাহসিকতার সঙ্গে ঝুঁকি নিতে হবে। ব্যর্থ হওয়ার ভয়ে কাজ করা থেকে বিরত থাকলে কখনো সফল হওয়া যাবে না। নিজেই নিজের শিক্ষক হতে হবে এবং নিজেকে গাইড করতে হবে। এ সময় তিনি উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের তিনটি পরামর্শ দিয়ে বলেন, কথা দিয়ে কথা রাখা, সততা এবং মানুষকে সম্মান করতে জানলে সফলতা আপনা-আপনি চলে আসে।
বাবার সম্পর্কে বলতে গিয়ে বড় মেয়ে তাহমিনা মোস্তফা বলেন, ‘বাবাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। তিনি কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে আমাদের বড় করেছেন। সেই ছোটবেলায় নিয়মগুলো অসহ্য মনে হলেও এখন বুঝতে পারি ওই নিয়মগুলো আমার জীবনে সফলতা এনে দিয়েছে।’
তাহমিনা মোস্তফা আরো বলেন, ‘বাবা যেকোনো পরিস্থিতে স্বাভাবিক থাকেন। কোনো কিছুতেই বিচলিত হন না। এই বিরল গুণ আয়ত্ত করা খুবই কঠিন।’ বাবার এই বিরল গুণ তিনি আয়ত্তে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে জানান।
স্বাগত বক্তৃতায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান বলেন, ‘বিশ্বের উন্নত দেশগুলো তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ দেশের সফল উদ্যোক্তাদের নানাভাবে সম্পৃক্ত রাখে। কিন্তু আমাদের এই সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় চেষ্টা করছে এই সংস্কৃতি গড়ে তোলার।’ কারণ হিসেবে ড. মো. সবুর খান বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে আমাদের দেশের সফল উদ্যোক্তাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া আমাদেরই দায়িত্ব। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। তারা কিভাবে উদ্যোক্তা হলেন সেই গল্প শুনলে তরুণরা অনুপ্রাণিত হবে। এই উদ্দেশ্য থেকেই ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়া লেকচার সিরিজ আয়োজন করে আসছে।’
ড. মো. সবুর খান আরো বলেন, ‘ইন্ডাস্ট্রি যে ধরনের লোকবল চায়, সে ধরনের লোকবল আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরবরাহ করতে পারছে না। কারণ ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোনো সম্পর্ক নেই। এই সম্পর্ক তৈরি করতে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি কাজ করছে।’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়া লেকচার সিরিজের বক্তব্যগুলো নিয়ে পরবর্তী সময়ে একটি বই প্রকাশিত হবে। লেকচার সিরিজে আমন্ত্রিত উদ্যোক্তাদের ওপর ডিআইইউ থেকে প্রামাণ্য চিত্রও নির্মিত হবে।
Source:
http://www.amardesh.com/daily-kalerkantho-bangla-newspaper.php