ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরের কিছু কিছু বাড়ি, কিছু কিছু ফ্ল্যাট মস্ত একলা। আর তার চেয়েও একা সেই বাড়িতে বা সেই ফ্ল্যাট এ থাকা একমাত্র মানুষটা । যে বাসাতে বাসা ভর্তি মানুষ থাকে সেখানে একজন আরেকজনের সাথে হাসে, কথা বলে, ঝগড়া করে, মান অভিমান চলে। কিন্তু সেই একা মানুষটা না হাসে,না কথা বলে, না ঝগড়া করে, না কারো উপর অভিমান করে। ব্যাপারটা ঠিক এমন না যে করে না,সে আসলে করতে পারে না। আদর হোক বা ঝগড়াই হোক, তার জন্য একটা মানুষ তো লাগে। সে মানুষ পাবে কই?
ড্রইং রুম টা ঠিক গোছানোই থাকে। সোফার কুশন গুলো ঠিক জায়গা মত। ঘরের বিছানার চাদর গুলো একদম টানটান করে বিছানো । তাই তো হবে। কেউ তো এই বিছানায় আয়েশ করে বসে গল্পের বই পড়ে না। আপেল কমলা গুলো পচে যায়। তুমি একবার আমি একবার বলে সেগুলো মুখে দেবার মানুষ নেই। ফ্রিজে প্রতিদিনের তরকারী বাটিতে জমে যায়। একা খেলে বুঝি অমৃত ও বিস্বাদ লাগে।
ফুল ভলিউম এ টিভি বা গান চলে। যাক অন্তত কেউ তো কিছু বলছে।মানুষ টাকে কেউ শুনতে না পেলেও সে তো কারো গলার আওয়াজ পায়। দিন গুলো কেটে যায় যেমন তেমন ভাবেই। কাজের ব্যাস্ততা ভালোই ভুলিয়ে রাখে সব। বাসায় থাকলেও বারান্দা কিংবা জানালা দিয়ে অন্তত কিছু মানুষ দেখা যায়,তাদের কথা শোনা যায়। বাবা তার সন্তান কে নিয়ে স্কুল এ যাচ্ছে বা সদ্য প্রেমে পড়া কোন যুবক যুবতি ই হয়তো রিকশা করে চলে যাচ্ছে। মানুষ গুলো হয়তো অন্য অনেক দিক দিয়ে অনেক কষ্টে আছে কিন্তু তাদের সবার যার যার মানুষ আছে। কিন্তু এই মানুষটার যে কেউ নেই।
রাত গুলো বড় অস্বস্তিকর। কাটতে চায় না। বালিশে মাথা রেখে এপাশ অপাশ করতে করতে বালিশ গুলো ও একসময় বিরক্ত হয়ে যায়... উফফ নিজে না ঘুমালে অন্তত আমাদের কে তো ঘুমাতে দাও।তুমি না হয় একা কিন্তু আমরা তো এক জোড়া। নিজেকে তার মাঝে মাঝে এই বালিশের চেয়েও অস্তিত্বহীন মনে হয়। তার থেকেও যারা নেই তারাও বালিশ কেনার সময় দুইটা বালিশ কেনে বা দুইটা কাভার বানায়। কিন্তু তার কথা কেউ ভাবে না।
ঘর ভর্তি দিনের আলো। সকাল হয়ে গেছে।জানালা খোলা, পর্দা টা টেনে দেয়া হয় নি। ঘরে অক্সিজেন কম থাকে তো। বিছানা ছাড়ার সময় আজকেও বালিশের ভেজা জায়গাটায় গাল টা লেগে গেলো। প্রতিদিন এসি থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। এবার অন্তত এই এসি টা ঠিক করার জন্য হলেও একটা মানুষ আনতে হবে।