রিযিক শব্দটা অনেক ব্যাপক। অনেকে রিযিক বলতে শুধু খাবার বোঝে। রিযিক শুধু খাবার না। এই যা কিছু বললাম, সব কিছু এর ভেতরে আছে। যত রকমের ব্যবহার, যত রকমের উপভোগ, জীবন চলার জন্য মানুষের যা কিছু প্রয়োজন সবই রিযিকের অন্তর্ভুক্ত। এজন্য রিযিকের সাথে হালাল এবং হারামের কথা বলা হয়।
মালয়েশিয়ার এক মন্ত্রী মজার কথা বলেছিলেন। কথাটা সঠিক। কয়েক মাস আগে কোনো কনফারেন্সে তিনি বলেছিলেন, আমরা খাবার খাওয়ার সময় হালাল খোঁজ করি- শুকর না গরু, তা যাচাই করি। শুকর হলে খাই না, গরু হলে, মুরগি হলে খাই। কিন্তু এ গরু আর মুরগি কীভাবে অর্জিত হয়েছে- বৈধ পন্থায় না অবৈধ পন্থায়- ওই পর্যন্ত আমরা হালাল-হারাম খোঁজ করতে যাই না। হালাল-হারামের শেষ স্তরটা দেখি। মুরগি কিনতে পারছি, এটা ঠিক আছে। মুরগিটার জবাই ঠিক মত হয়েছে কি না- এটা কেউ কেউ খোঁজ করি, কিন্তু মুরগি যে পয়সা দিয়ে কিনল সে পয়সাটা হালাল, না হারাম ওটা আমরা দেখি না। হালাল এবং হারাম একেবারে উৎস থেকে শুরু হয় এবং শেষ পর্যন্ত ধাপে ধাপে চলে।
হালাল-হারামের বিষয়ে হাদীসে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা রাসূলদের যে নির্দেশ দিয়েছেন, মুমিনদেরকেও সে নির্দেশ দিয়েছেন।
রাসূলদেরকে কী নিদের্শ দিয়েছেন-
یٰۤاَیُّهَا الرُّسُلُ كُلُوْا مِنَ الطَّیِّبٰتِ وَ اعْمَلُوْا صَالِحًا.
রাসূলদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন كُلُوْا مِنَ الطَّیِّبٰتِ অর্থাৎ পূতপবিত্র খাও! এবং এটা আগে বলেছেন। পরে বলেছেন- وَاعْمَلُوْا صَالِحًا।
ভোগ শব্দটা এখন খুব ব্যবহার হচ্ছে! আমার হাসিও আসে, দুঃখও লাগে। বাজেট পেশ করার সময় বলতে শোনা যায়, দেশ উন্নত হয়ে যাচ্ছে! উন্নত হয়ে যাচ্ছে!!
ভোগ বাড়লে মানুষের উন্নতি হয়ে যায় কীভাবে? হয়ত ভোগ বাড়ছে বলে বোঝাতে চাচ্ছেন যে, মানুষ বেশি কামাচ্ছে, আয় বেশি হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, ভোগটা বৈধ হচ্ছে কি না? খুব বেশি যারা ভোগ করছেন, তারা ক’জন শুদ্ধভাবে কামাই করে ভোগ করতে পারছেন? ক’জন অবৈধভাবে কামাই করে ভোগ করছেন? এ বিষয়গুলো ফরক করার দরকার আছে। একজন মুসলিমের জন্য, একজন মুমিনের জন্য, একজন মানুষের জন্য এ জিনিসগুলো পার্থক্য করার দরকার আছে।
ইসলামে কামাই করে খেতে মানুষকে বার বার উৎসাহিত করা হয়েছে। সাহাবায়ে কেরামের জিজ্ঞাসায় এসেছে, কোন্ খাবারটা ভালো, কোন্ কামাইটা ভালো। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন ভাষায় বলেছেন-
عمل الرجل بيده، كسب الرجل بيده.
অর্থাৎ নিজের উপার্জিত আয় ‘আতয়াব’, মানে অতি উত্তম, বেশি ভালো। অর্থাৎ ইসলাম মানুষকে অলস বসে থাকার, অন্যের ধন-সম্পদে নজর দেওয়ার, বেকার-ভাতা গ্রহণ করার জন্য বসে থাকার এবং দান-সদকা নির্ভর থাকার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেনি। এর বিপরীতটার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে। মানুষ কামাই করবে, খরচ করবে। এটার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে। শুধু উদ্বুদ্ধই করেনি, বাস্তবে দেখিয়ে দিয়েছে।