ছোটবেলায় অনেকেই থাকে অস্থির চিত্তের। হড়বড় করে কথা বলে যায় মুহূর্তের মধ্যে। আবার কেউ থাকে যাকে অনেক প্রশ্ন করে পেটের কথা বের করতে হয়। ইনফরমেশন মানুষের জীবিকাকে কত প্রখর ভাবে প্রভাবিত করে তা আমরা সবাই জানি। আন্ডার গ্রাজুয়েট পর্যন্ত আমরা আসলে বিভিন্ন বিষয়ের পরিচিতি মূলক তথ্য জানতে পারি। আর আমাদের রেজাল্ট নির্ভর করে কে কত সার্থক ভাবে এই তথ্য গুলো প্রকাশ করতে পারি - তার উপর। কখনো পরীক্ষার খাতায় লিখে - কখনোবা মৌখিক ভাবে।
আমাদের জীবনে বিভিন্ন জন নিজেকে কিভাবে প্রকাশ করে - তাই নিয়ে ভাবতেছিলাম।
কেউ কেউ থাকে বাকপটু। তারা অনর্গল কথা বলতে পারে। খেলাধুলা, রাজনীতি, মুভি এমন কোন জিনিষ নাই যা তারা জানেনা। যদিও এদেরকে অনেকেই চাপাবাজ বলেন। এদের সাথেই আবার অনেককে দেখা যায় যারা আসলে চাপাবাজদের থেকে বেশী জানেন - কিন্তু একেবারেই কথা বলতে জানেন না। কেউ থাকে বেশী মানুষ থাকলে ভড়কে যান। কেউ কেউ বেশী মানুষের মাঝেই কথা বলার জোশ খুঁজে পান। কেউ থাকে সব কিছুই খুব মজা করে বলতে পারেন। আবার কেউ কেউ থাকেন কিভাবে জানি সব কথাই একই টপিকে নিয়ে যান। কখনো পুরানো দিনে। কখনো বা বিদেশে। কখনো বা কোন আদর্শের কথায় তারা ঘুরে চলেন।
আমি দেখেছি অনেকেকেই কিছু জিজ্ঞেস করার সাথে সাথে উত্তর দিতে পারেন। সব কিছুর খুটিনাটি তারা জানেন। কিন্তু যা বলতেছেন তাই যদি লিখতে বলা হয় - তারা আর তা পারেন না। আবার উত্তর জানা আছে কিন্তু ভাষার অভাবে অনেকেই পরীক্ষার খাতায় লিখতে পারেন না। বিশেষতঃ যদি বাংলা ছাড়া অন্য কোন ভাষায় উত্তর দিতে হয়।
শ্রমজীবী মানুষ ছাড়া আর সব মানুষকেই জীবিকার জন্য ভাষার সাহায্য নিতে হয়। কখনো মুখের কথায়, কখনো ফাইলে কখনোবা ইমেইলে। (তবে শ্রমজীবীদের জন্যও মুখের ভাষা দরকার পড়ে।)
যারা মুখের ভাষায় বেশী কথা বলেন - তারা খুব তাড়াতাড়ি বুঝে ফেলেন কোনটার পর কি বলতে হবে - কিভাবে বলতে হবে। লেখার সময়ও এই জিনিসটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আগে ভাল খবরটা দিবেন না খারাপ খবর দিবেন তা নিয়ে অনেক সময়ই মনে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।
মানুষ সব থেকে বেশী চিন্তা করে নিজেকে প্রকাশ করে অফিসে নিজের বসের সামনে। ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের সাথে আর রাজনীতিবিদেরা মিডিয়ার সামনে সব থেকে ভেবে কথা বলে। বিচার করতে গেলে সঠিক ভাষার প্রয়োগ করতে হয়। যা কিনা ঠিক মত করা না গেলে অনেক কঠিন অবস্থা তৈরি করে।
কথা দিয়েই বন্ধুত্ব শুরু হয় আবার কথা দিয়েই তৈরি হয় শত্রুতা। বোবার কোন শত্রু নাই এইটা অনেক পুরাতন কথা।
কেউ সারাজীবন কাটায় নিজের কথা সঠিক ভাবে প্রকাশ করতে। কেউ সব কিছুর মাঝে ধোঁয়াশা তৈরি করে সার্থকতা খুঁজে। নিজেকে প্রকাশ করতে পারে না তাই কেউ সারাজীবন দুর্ভোগ পোহায়। আবার কেউ পরিস্কার জিনিষ ঘোলা করে জীবিকা নির্বাহ করে।
নিজেকে প্রকাশ করার সাথে প্রতিটা মানুষের ব্যক্তিত্ব জড়িত। যে যেভাবে নিজেকে প্রকাশ করে তার মাধ্যমেই তার পরিচয় স্থাপিত হয়ে যায়। হাতের লেখার সাথে মানুষের মনের কাঠামোর যেমন যোগাযোগ আছে ঠিক তেমনি মানুষের বাচন ভঙ্গি ও শব্দ চয়নের মাঝেও একেক জনের ব্যক্ততিত্তের ছাপ স্পস্ট ভাবে ফুটে উঠে।