মনে পড়ল ১৯৮৬ সালের কথা। বাবার সাথে গিয়েছিলাম পাবনা ক্যাডেট কলেজে। উঠেছিলাম শাহ মখদুম ফেরিটিতে। সেইসময় আরিচা - নগরবাড়ি নদী রুটে তখন চলত শাহ মখদুম, শাহ আলী, খান জাহান আলী এই ফেরি গুলো। ছুটিতে আসা ও ছুটি শেষে ফিরে যাওয়ার সময় দেখা হত ফেরি গুলোর সাথে।
১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত এই ফেরিগুলোর কোন একটা ফেরিতে চড়ে পার হতাম আরিচা - নগরবাড়ি নদীপথ।
আমাদের ১১ টার সময়ের বাসে উঠতে হত ঢাকার গাবতলী থেকে। এর পর দুপুর ১ টার দিকে আরিচা ঘাটে পৌছুতাম। আরিচা থেকে নগরবাড়ি
নদীপথ পার হতাম। ৩ - ৪ ঘন্টা কাটতো নদীতে। এর পর এক ঘন্টা লাগতো নগরবাড়ি থেকে কলেজে পৌছুতে।
যমুনা ব্রিজ তৈরি হওয়ার পর পাবনা সিরাজগঞ্জ সহ উত্তর বঙ্গের বাসগুলোর আর ফেরি পার হওয়া লাগে না। ব্রিজ দিয়েই পার হয় সব বাস।
আজকে দৌলদিয়া ফেরি ঘাটে সেই সময়ের ফেরি গুলো দেখে মনে পড়লো অনেক স্মৃতি। দেখলাম ফেরিগুলোর সেই একই নাম আছে। শাহ মখদুম, খান জাহান আলি। বাস ফেরিতে উঠার পর দেখলাম কোথা দিয়ে একেবারে উপরের তলায় যাওয়া যায় তা এখনও মুখস্থ আছে। কোথায় খাবারের ক্যান্টিন, কোথায় চালকেরা থাকে, একেবারে উপরে নামাজের জায়গা, লাইফ জ্যাকেটের স্তুপ সব স্পস্ট হয়ে আছে স্মৃতিতে। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে মিলিয়ে দেখতেছিলাম। সেই সব হুবুহু একই রকম আছে। ছুটি শেষে এই ফেরিতেই বাসা ছেড়ে আসায় দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে দেখতাম নদী আর নদী তীরের দৃশ্য। আবার ছুটির শুরুতে সেই কোন ভোরে আমরা বাসে করে এসে উঠতাম এই ফেরি গুলোতেই। ভোর সকালের যমুনা নদী দেখতাম। এক দঙ্গল বন্ধুবান্ধবের ভীরে ফেরির সময় গুলো কেটে যেত একসাথে। কখনো বাড়ি ছেড়ে আসার বেদনায়। কখনো বা আবার সবার সাথে দেখা হওয়ার আনন্দে। এই ফেরি গুলোতে আমাদের কত যে অজস্র স্মৃতি জড়িয়ে আছে তা শুধু আমরাই জানি।
মনে পড়ল বাবার কথা আর আমাদের সবার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের কথা। বাবা মারা গেছেন ২১ বছর আগে। ফেরিতে মাঝ নদীতে কেন যেন মনে মনে বলে উঠলাম - সারাজীবন তাদের কথা মেনে চলার চেষ্টা করেছি। আর বাকিটা জীবনও কাটাবো এই একইভাবে। যদিও এর মাঝেই অনেক নেগেটিভ অভিজ্ঞতা হয়েছে। হয়তো আরও হবে। তার পরও।
তারাই আমাকে শিখিয়েছেন - যার যার অন্যায় কাজের প্রশ্নের উত্তর তাকেই দিতে হবে। আর কাওকে নয়।