মুঠোফোনে জ্বলবে সড়কবাতি:
মুঠোফোনের সিম থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে সড়কবাতি। সিমের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ে এই বাতিগুলো জ্বালানো ও নেভানো যাবে। এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন উত্তরা এলাকায়।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘সোলার স্ট্রিট লাইটিং প্রোগ্রাম ইন সিটি করপোরেশন’ প্রকল্পের আওতায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে উত্তরার বিভিন্ন সড়কে ১ হাজার ৯৭৬টি এলইডি সড়কবাতি বসানো হচ্ছে। এই সড়কবাতিগুলোই মুঠোফোনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কর্মকর্তারা জানান, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে এই প্রকল্প শুরু হয়। তবে গত আগস্ট থেকে সড়কবাতিগুলো বসানোর কাজ শুরু হয়। ডিসেম্বর নাগাদ শেষ হতে পারে সড়কবাতি বসানোর কাজ।
প্রকল্পটির পরিচালক ডিএনসিসি প্রকৌশল বিভাগের (বিদ্যুৎ সার্কেল) নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, নতুন এলইডি বাতির পরিচালনা ব্যবস্থা টাইমার (সময়) নির্ভর। সময় হলেই বাতি জ্বলবে এবং নিভবে। আর এই সময় নিয়ন্ত্রণ করা হবে মুঠোফোনের সিমের মাধ্যমে। তিনি বলেন, প্রকল্পের ‘স্মার্ট লাইটিং কন্ট্রোলের’ মাধ্যমে প্রয়োজনে বাতির আলো কমানো যাবে। বিশেষভাবে রাস্তায় যানবাহন কম থাকলে কিংবা গভীর রাতে বাতিগুলোর আলো প্রয়োজনমাফিক কমানো যাবে। এতে বিদ্যুৎ খরচ কমবে।
প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, নতুন করে লাগানো প্রতিটি এলইডি বাতিতে থাকবে লাইট কন্ট্রোল ইউনিট (এলসিইউ)। এলসিইউ যুক্ত হবে ডেটা কন্ট্রোল ইউনিটের (ডিসিইউ) সঙ্গে। ৪০ থেকে ৬০টি এলসিইউ মিলিয়ে হবে একটি ডিসিইউ। প্রতিটি ডিসিইউ জন্য একটি করে সিমকার্ড থাকবে। এতে ইন্টারনেটের ডেটা থাকবে। সিমের মাধ্যমেই ডিএনসিসির প্রধান কার্যালয়ে স্থাপন করা মূল সার্ভার থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে সব কটি সড়কবাতি।
জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে গ্রামীণফোন থেকে ৪৫টি সিম নেওয়া হচ্ছে। এক একটি সিমের জন্য প্রতি মাসে দেড় গিগাবাইট (জিবি) ইন্টারনেট ডেটা বরাদ্দ থাকবে। ভ্যাট, ট্যাক্সসহ সিম প্রতি মাসে ১৮৩ টাকা ব্যয় হবে। দুই বছর পর্যন্ত প্রকল্প থেকেই এই ব্যয় বহন করা হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিমানবন্দর থেকে আবদুল্লাহপুর অংশ, জসীমউদ্দীন সড়ক, রবীন্দ্র সরণি, ঈশা খাঁ অ্যাভিনিউ, আলাওল অ্যাভিনিউ, সোনারগাঁও জনপথ, রানাভোলা অ্যাভিনিউসহ উত্তরার কয়েকটি সেক্টরের অভ্যন্তরীণ সড়কে নতুন এলইডি সড়কবাতি বসানো হয়েছে। বেশ কয়েকটি সড়কে চলছে খুঁটি বসানোর কাজ। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি সড়কে বসানো নতুন বাতিগুলোও চালু করে দেওয়া হয়েছে।
তবে কিছু সড়কে নতুন বসানো এলইডি বাতিগুলো জ্বলছে না। সন্ধ্যার পরেই অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে রাস্তাঘাট। এ বিষয়ে প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা বলেন, সড়কে বাতি বসানো হলেও সব জায়গার বাতি চালু করা হয়নি। তা ছাড়া কারিগরি ত্রুটির কারণে কিছু সড়কবাতি সঠিক সময়ে জ্বলছে না।
প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, প্রাথমিকভাবে প্রচলিত পদ্ধতিতেই সড়কবাতিগুলো জ্বালানো-নেভানো হচ্ছে। পরে সিমের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। ডিএনসিসি প্রকৌশল বিভাগ (বিদ্যুৎ সার্কেল) সূত্রে, উত্তরায় মোট ১ হাজার ৯৭৬টি সড়কবাতি বসানো হচ্ছে। এতে প্রায় দেড় হাজার খুঁটি প্রয়োজন।
সংস্থাটির উপসহকারী প্রকৌশলী আমিনুর রহমান বলেন, দেড় হাজারের বেশি বাতি বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। বাকি বাতি বসানোর কাজও চলছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ করে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলকে এর দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
আমিনুর রহমান বলেন, ১ হাজার ৯৭৬টি বাতি ৪৫টি ডিসিইউ বক্সের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। একটি ডিসিইউ ৪০ থেকে ৮০টি বাতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা থাকলেও প্রতিটি বক্সে গড়ে ৪৩টি বাতি থাকবে। তিনি বলেন, মোট বক্সের মধ্যে প্রায় ৩৮টির কাজ শেষ। এখন সেখানে মুঠোফোনের সিমের সংযোগ দিলেই হবে।