উচ্চশিক্ষিত, কিন্তু কেন কাজে মধ্যম?

Author Topic: উচ্চশিক্ষিত, কিন্তু কেন কাজে মধ্যম?  (Read 947 times)

Offline 750000045

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 279
  • Test
    • View Profile
আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষার সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা কী? কেন এত এত শিক্ষিত লোকজন থাকতেও সকাল-বিকেল বিদেশ থেকে মানুষ আমদানি করতে হয়? কেন আমাদের ছেলেমেয়েরা দেশে অথবা বিদেশে গিয়েও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কাজকর্ম পায় না?

এই প্রশ্নের উত্তর হতে পারে নানা রকম: ‘আমাদের পড়াশোনার মান খারাপ’, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা কাজে সিরিয়াস না’ অথবা ‘অদক্ষ’ ইত্যাদি ইত্যাদি! কিন্তু আজ যদি আমরা এগুলোকে বাদ দিয়ে এর প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করি ‘ভাষা’ এবং ভাষাকেই, দেখি না কেমন হয় আলোচনাটা!

হয়তো ভাবছেন প্রথমেই আসবে ‘ইংরেজি’। ইংরেজির যে অবস্থা, তাতে উচ্চতর জ্ঞানের জগতে প্রবেশ করার দরজা একেবারেই সংকীর্ণ! ধরে নিচ্ছি, ইংরেজি জানা বা না জানা বিষয়টিও এ ক্ষেত্রে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাহলে বিষয়টি কী দাঁড়াল? উচ্চশিক্ষার ভাষার খোঁজে আমরা কোথায় যাব?

একটু দায়িত্ব নিয়ে খোলা মনে ভাবুন, দেখবেন আমাদের সর্বনাশটা শুরু হয়েছে যখন থেকে, বিশেষ করে ইংরেজ শাসন আমল থেকে আমরা ইংরেজিকে উচ্চশিক্ষার একমাত্র সিঁড়ি হিসেবে দেখতে শুরু করেছি। অথচ পৃথিবীর বহু উন্নত দেশের মানুষ আমাদের চেয়ে অনেক কম ইংরেজি জানেন। কিন্তু উন্নতিতে অগণিত ইংরেজি ভাষাভাষী মানুষের চেয়ে তারা অগ্রগামী। সে বিবেচনায় বলাই যায়, ইংরেজি হলো উচ্চশিক্ষা গ্রহণের এবং বিতরণের কয়েকটি ভাষার মধ্যে একটি মাত্র!

একজন দরজিকে ডেকে একটি কাপড় দেখিয়ে একই রকম কাপড় এনে দিতে বললে তিনি হয়তো একটা ছবি তুলে বাজার ঘুরে সেই রকম অথবা তার কাছাকাছি একটি রঙের কাপড় এনে দেবেন। কিন্তু একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার সেই একই কাজ করবেন বিজ্ঞানের ভাষায়। রঙের মিশ্রণ এবং তার কেমিক্যাল কম্পোজিশন ঠিক করে তৈরি করে ফেলবে কেমিস্ট্রির ফর্মুলা, যে ফর্মুলায় ওই রং মিলবে শতভাগ—পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে। তার মানে হলো, এ ক্ষেত্রে একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারের ভাষা ‘কেমিস্ট্রি’ তথা রসায়ন!

একটু খেয়াল করলে মনে পড়বে কয়েক বছর আগের সংবাদপত্র ও বাজেট–পরবর্তী প্রকাশনার কথা। একগাদা কাগজে ছাপা হতো বাজেটের ক্রোড়পত্র, যা বেশির ভাগ মানুষ পড়ার জ্ঞান অথবা ধৈর্য কোনোটাই রাখত না। অথচ সেই সাংবাদিকেরাই আজ দুটো ছবি বা পাই চার্ট দিয়ে বাজেট বুঝিয়ে দেন—কত সহজে, সবাইকে। তার মানে হলো, এ ক্ষেত্রে একজন সাংবাদিকের সবচেয়ে বোধগম্য ভাষা হলো পরিসংখ্যান বা গণিত।

এভাবে ভাবতে থাকলে একে একে সব বিষয়ের মধ্যেই বিজ্ঞানের সব শাখার উপস্থিতি আমরা দেখতে পাই অপরিহার্য রূপে অথচ প্রায় ক্ষেত্রে আমরা এগুলোকে করে রেখেছি নন-ডিপার্টমেন্টাল কোর্স! চলতি বাজার ধরতে গিয়ে কোর্স প্রণয়ন পঠন–পাঠন মূল্যায়নে বিজ্ঞানের মূল শাখাগুলোকে অবমূল্যায়ন করে নিজেদেরই মূল্যহীন করে দেওয়ার ইঙ্গিত দেখতে পাই!

বর্তমান প্রেক্ষাপটে জোর গলায় বলাই যায়, উচ্চশিক্ষার ভাষা হিসেবে যদি আমরা বিজ্ঞানের সব শাখাকে কাজে না লাগাই, তাহলে উচ্চশিক্ষার নিম্ন মান কোনোভাবেই ঠেকানো যাবে না।

মাতৃভাষা ভুলে গেলে যেমন মানুষ নিজেকে প্রকাশ করতে পারে না, একইভাবে গণিত, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা ইত্যাদিকে আজীবন ধারণ করার বদলে শুধু পাস করে পার হওয়ার ধান্দায় থাকলেও আমাদের উচ্চশিক্ষিতরা নিচের স্তরে থেকে যাবে অনন্তকাল। তখন খাতা–কলমে শিক্ষিত হয়ে আমরা দেশকে ও দেশের সামগ্রিক উন্নতির বদলে অবনতিই ঘটাব। কেননা, জ্ঞান–বিজ্ঞান চর্চা এবং প্রয়োগের ভাষা এগুলো সবই।

ব্যবসায় থেকে শুরু করে চারু-কারুকলা, শিল্প-সাহিত্য-চলচ্চিত্র কোথায় নেই এসব? মঞ্চের আলো, সাউন্ড সিস্টেম, ক্যামেরা ও চোখ ঝলসানো, হৃদয় মাতানো সব উৎসবে বিজ্ঞানের এসব বিষয়ের দক্ষতারই তো প্রতিফলন, নাকি?

কিছুদিন আগে বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচকে বাংলাদেশের চরমভাবে পিছিয়ে পড়ার প্রধান কারণও বিজ্ঞানের প্রধান বিষয়গুলোর প্রতি অনীহা এবং ক্ষেত্রবিশেষে অবজ্ঞা! সৃষ্টিশীলতা ও উদ্ভাবন এক নয়। সৃষ্টিশীলতা বা ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিয়ে উদ্ভাবনময় হয়ে উঠতে হলে প্রয়োজন কাজটা সত্যি সত্যি করে ফেলবার যোগ্যতা, যা বিজ্ঞানের জ্ঞানের প্রয়োগ ছাড়া সম্ভব নয়।

একই সঙ্গে প্রয়োজন কিছু শব্দ, যেমন: গণতন্ত্র, সুশাসন, জেন্ডার, অর্থনীতির বিভিন্ন ঘরানার ধারণার সঙ্গে আত্মিক যোগাযোগ এবং উপলব্ধির পরিচয়। সর্বোপরি নিজের বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে ভাবতে শেখা এবং কর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ার মানসিক শক্তি। শিক্ষা তখনই হয়ে ওঠে জাতীয় প্রবৃদ্ধির অংশ!

ওডিশার কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজির (কেআইআইটি) অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, তারা যেভাবে নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের প্রথম এক বছরে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য তৈরি করে, সেটি আমাদের কাছে বিবেচনাযোগ্য। দেশের নানা জায়গা থেকে আসা নানা ভাষার এবং বিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন ভাষাভাষীর কয়েক হাজার শিক্ষার্থীকে একটি নির্দিষ্ট ক্যাম্পাসে রেখে লিবারেল আর্টস, ন্যাচারাল সায়েন্সেস, সমাজবিজ্ঞানের নানা বিষয়ে যত্নের সঙ্গে দক্ষ করে তোলা হয়। একই সঙ্গে সেখানে পূর্বের কোনো পঠন-পাঠনের ত্রুটি থাকলে তা কাটিয়ে পুরো প্রস্তুত করা হয় অর্থনীতিবিদ, প্রকৌশলী কিংবা সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে গড়ে উঠতে। মানুষ গড়ার কারিগর বরেণ্য শিক্ষাবিদ ডক্টর অচ্যুয়ত সামান্তের গড়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক কিছুই আমাদের কাছে গবেষণার ও শিক্ষার বিষয় হতে পারে।

আসলে পণ্য বেচাকেনার ব্যবসাটা বুঝলেও পণ্য তৈরির ব্যবসাটা আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে দিন দিন। এভাবে চলতে থাকলে অন্যের উৎপাদিত পণ্যের ফেরিওয়ালা হয়েই খুশি থাকতে হবে আমাদের। অর্থনীতির ছাত্র হিসেবে যেখানে থাকতে আমি প্রচণ্ড নারাজ...অন্যদের অবস্থান জানতেও খুব ইচ্ছা করে!

মনে রাখা দরকার, কীভাবে শিখতে হয়, সেটি যেমন শেখার বিষয়, ঠিক তেমনি শেখা উচিত কীভাবে শেখাতে হয়, সেটিও কালবিলম্ব না করে! শেখানোর যোগ্যতা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা শিক্ষাব্যবস্থা এগোতে পারে না, বরং কয়েক গুণ পিছিয়ে যায়। পৃথিবীতে একজন কৃষকও নেই, যিনি অপ্রস্তুত জমিতে বীজ বপন করে ভালো ফসলের আশা করেন।

সৈয়দ রাজু: শিক্ষক, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

Offline tokiyeasir

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 905
  • Test
    • View Profile

Offline mosfiqur.ns

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 297
  • Test
    • View Profile
Md. Mosfiqur Rahman
Sr.Lecturer in Mathematics
Dept. of GED