ইদানীং আমরা সব কাজ করি ছবি তোলার জন্য। বিয়ের অনুষ্ঠান করি ছবি তোলার জন্য, বেড়াতে যাই ছবি তোলার জন্য, কারো সাথে দেখা করি ছবি তোলার জন্য এবং এমনকি কিছু রান্না করি কিংবা কোথাও খেতেও যাই ছবি তোলার জন্য। এবং এই যে তোলা ছবিগুলো, স্মরণীয় কিংবা সহজেই ভুলে যাওয়ার মত মুহুর্তের ছবিগুলো, আমরা অতি অবশ্যই ফেসবুক বন্ধু বা সকলের সাথে শেয়ার করি। ছবি তোলা এবং শেয়ার করার বিষয়টা নিশ্চয়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ, নয়তো এমন গণহারে আমরা তা করছি কেন?
অমুক নান্দুস এ খাইতে গিয়া ছবি দিসিলো, আমিও তো আসছি... দিব না? নাইলে সবাই ভাব্বে আমি সারাদিন ঘরেই খাই! এইটা কিছু হইলো? একটা ইজ্জত আছে না...
আমি যে কক্সবাজার গিয়া বীচে বেকাইয়া বইসা ছিলাম, এইটা আমার জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মনে রাখার মত একটি ঘটনা। না হয় প্রতি বছর-ই আমি কক্সবাজার যাই, তাতে কি?
আমি শুধু নান্দুস না, কুদ্দুসের দোকানের সিংগাড়াও খাই। প্রতিদিন ভার্সিটির ফ্রেঞ্জদের সাথে আমার দেখা হয়। আমি প্রতিদিন তাদের সাথে ছবি তুলি এবং আপলোডাই। এ সকল ছবি ই আমার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি। কোন সমস্যা?
আমি দোকান থেকে এক প্যাকেট বোম্বে স্টিক্স কিনলেও সেইখানা হাতে লইয়া ছবি তুলি। কারন, উহাও একটি স্মরণীয় মুহুর্ত। জামা-কাপড় তো বটেই, এক খানা রুমাল কিনিলেও উহার ছবি তুলিয়া শেয়ার না দিলে আমার অস্বস্তি লাগে। তাই আমি ছবি তুলি এবং শেয়ার করি। টাকা-পয়সা তো লাগতেসে না ভাই...
প্রশ্ন হল, মানুষ ছবি তোলে কেন? এর মাজেজা কি? আমার ব্যক্তিগত ধারণা, কোন স্মরণীয় মুহুর্তের ছবি তোলা হয় মুহুর্তটা ধরে রাখার জন্য। অনেক বছর পর কোন এক দিন ছবিটা নিজে দেখে বা আপনজনকে দেখিয়ে পেছনে ফিরে যাওয়ার জন্য। স্মরনীয় মুহুর্ত নিশ্চয়ই খুব ঘন ঘন আমাদের জীবনে আসেনা। খুব সাধারণ ঘটনাও স্মরণীয় হতে পারে তা ঠিক, কিন্তু সেটা কোন নিয়মিত বা প্রাত্যহিক ঘটনা হতে পারে কী? সব মুহুর্তের ছবি তুলে আমরা সেই সব ছবিগুলোকে গুরুত্বহীন করে ফেলছি যেগুলো আসলে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারতো। আমরা স্মরণীয় মুহুর্তের ছবি তুলছি না বরং লোক দেখানোর জন্য ছবি তুলে সাধারণ কিছু মুহুর্তকে অসাধারণ বানাতে চাইছি যা আসলে সম্ভব নয়।
কেন আমাদের এই লোক দেখানো নেশা? অর্থহীন এই অনুকরণের অসারতা আমরা কেন বুঝি না? আমার আছে বলেই কি সব উজাড় করে দেখাতে হবে? হয়তো তাই... নইলে থাকার মূল্যটাই বা কি থাকলো...