মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিল প্রসঙ্গে কিছু কথা (The daily Kalerkantho, 8.11.2018)

Author Topic: মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিল প্রসঙ্গে কিছু কথা (The daily Kalerkantho, 8.11.2018)  (Read 1363 times)

Offline kekbabu

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 78
  • Test
    • View Profile
    • https://daffodilvarsity.edu.bd/
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিল প্রসঙ্গে কিছু কথা
ড. কুদরাত-ই-খুদা বাবু
৮ নভেম্বর, ২০১৮

ইয়াবা, কোকেন, হেরোইন ও পেথিডিনজাতীয় মাদকের ব্যবহার, পরিবহন, চাষাবাদ, উৎপাদন, আমদানি-রপ্তানি বা বাজারজাত করার সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে গত ২৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিল ২০১৮ পাস হয়েছে। মাদকের পরিমাণ ২৫ গ্রাম বা তার বেশি হলেই এই সাজা দেওয়া যাবে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে বিলটি দ্রুতই আইনে পরিণত হবে বলে আশা করা যায়। আপাতদৃষ্টিতে এটিকে নিষ্ঠুর ও কঠোর আইন বলে মনে হলেও মাদকের সর্বনাশা ছোবল থেকে সমাজ, দেশ ও জাতিকে বাঁচাতে এ ধরনের একটি আইনের প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করা যায় না। তবে কোনোভাবেই যেন এ আইনের অপপ্রয়োগ করা না হয়, তা সর্বাগ্রে নিশ্চিত করা আবশ্যক। পাশাপাশি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে কিংবা নিরপরাধ-নিরীহ কোনো ব্যক্তির হাতে মাদক ধরিয়ে দিয়ে তাকে যেন এ আইনে ফাঁসিয়ে দেওয়া না হয় সে বিষয়গুলোও নিশ্চিত করতে হবে। দেশে প্রচলিত ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে বলা আছে, ৫০ গ্রাম মাদক পাওয়া গেলে তার শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। ১৯৯০ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৫৯৬ জনকে বিভিন্ন অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কারোরই মাদক আইনে মৃত্যুদণ্ড হয়নি। তবে সদ্য পাস হওয়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিলে (আইনে) ইয়াবার ব্যবহারের বিষয় এবং মাদকে অর্থলগ্নিকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনের ৯ ধারায় বলা হয়, অ্যালকোহল ছাড়া অন্যান্য মাদকদ্রব্যের উৎপাদন বা প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত হয় এমন কোনো দ্রব্য বা উদ্ভিদের চাষাবাদ, উৎপাদন, বহন, পরিবহন বা আমদানি-রপ্তানি, সরবরাহ, বিপণন, গুদামজাত, সেবন বা ব্যবহার, অর্থ বিনিয়োগ বা পৃষ্ঠপোষকতা করা যাবে না। বিলের ৩৬ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি আইনের এই বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। বিলের ১১ ধারায় বলা হয়েছে, অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তি অ্যালকোহল পান করতে পারবেন না। চিকিৎসার প্রয়োজনে সিভিল সার্জন বা সরকারি মেডিক্যাল কলেজের কমপক্ষে সহযোগী অধ্যাপকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো মুসলমানকে অ্যালকোহল পানের পারমিট দেওয়া যাবে না। তবে মুচি, মেথর, ডোম, চা শ্রমিক ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তাড়ি ও পঁচুই এবং পার্বত্য জেলা বা অন্যান্য অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ঐতিহ্যগতভাবে তৈরি করা মদ পান করার ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য হবে না। বিলের ২৪ ধারায় বলা হয়েছে, তদন্ত  কর্মকর্তার যদি এই মর্মে সন্দেহ হয় যে কোনো ব্যক্তি শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে মাদকদ্রব্য লুকিয়ে রেখেছেন, সে ক্ষেত্রে ওই কর্মকর্তা সন্দেহজনক ব্যক্তির শরীরে এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, এন্ডোসকপি এবং রক্ত ও মলমূত্র পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। আর বিলটির ৩৩ ধারায় বলা হয়, কোনো ব্যক্তি মাদকদ্রব্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত থেকে অবৈধ অর্থ ও সম্পদ সংগ্রহে লিপ্ত রয়েছেন—মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার এমন সন্দেহ হলে তিনি সন্দেহজনক ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব বা আয়কর নথি পরীক্ষার প্রয়োজনে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

দেশ থেকে যদি এখনই মাদকের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে নতুন প্রজন্মের মধ্যে সামাজিক অবক্ষয় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে, পারিবারিক কলহ, সন্তানের হাতে মা-বাবা খুন হওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পাবে। এ দেশে ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক সেবন একসময় উচ্চবিত্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু মাদক পাওয়া এখন সহজলভ্য হওয়ায় মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে সবার মধ্যে মাদকের বিস্তার ঘটছে রকেটের গতিতে। পুরুষের পাশাপাশি আজকাল মহিলাদের মধ্যেও মাদক গ্রহণের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদকের আগমন ও বিস্তারের পথ ছড়িয়ে পড়ছে শহর-বন্দর থেকে শুরু করে গ্রামের অলিগলি পর্যন্ত। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, দেশের কারাগারের মধ্যে বন্দি থেকেও অনেক আসামি বা কয়েদি মাদকের সঙ্গে যুক্ত। তারা হয় মাদক গ্রহণ করে, না হয় এর কারবারের সঙ্গে যুক্ত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কারাগারের মধ্যে বন্দি থেকেও কিভাবে মাদক কারবার কিংবা মাদক গ্রহণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়? এ ক্ষেত্রে দায়ী যে কে বা কারা, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অবস্থানগত কারণেই বাংলাদেশকে পঞ্চাশের দশক থেকে আজ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্র বা মাদকের গডফাদাররা মাদক চোরাচালানের উপযুক্ত ট্রানজিট বা করিডর হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। মাদকদ্রব্য উৎপাদনকারী থাইল্যান্ড, লাওস, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, তুরস্ক, নেপাল, ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তের নিকটতম প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ। ফলে মাদক কারবারি ও চোরাকারবারিরা এ দেশকে পুরোপুরি ব্যবহার করতে সক্ষম হচ্ছে। বাংলাদেশকে টার্গেট করে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে গড়ে ওঠা কারখানায় উৎপাদিত ফেনসিডিল আর ইয়াবা ঠেলে দেওয়া হচ্ছে আমাদের দেশে। এ ক্ষেত্রে সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যদি দুর্নীতিমুক্ত হয়ে সত্যিকার অর্থেই দেশের স্বার্থে, দেশের জনগণের স্বার্থে মাদকপাচার রোধে কাজ করে থাকেন, তাহলে দেশের মধ্যে মাদক প্রবেশ করা কি সম্ভব? নিশ্চয়ই সম্ভব নয়।

মাদকদ্রব্যের অবৈধ ব্যবহারজনিত সব কর্মতৎপরতায় জড়িত লোকজন ধরা পড়ছে প্রতিনিয়ত। তাদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলাও হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কিছুদিন পর এসব মাদক কারবারি ও মাদকাসক্ত আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে আবার মাদক কারবার ও মাদক গ্রহণের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশ থেকে কখনো মাদক নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে মনে হয় না। মাদক কারবারি বা মাদকাসক্তরা যেন সহজেই জামিন না পায় কিংবা সহজেই ছাড় না পায়, সেদিকটায় খেয়াল রাখা উচিত। কারণ তারা সমাজ, দেশ ও জাতির শত্রু। মাদক কারবারিদের শক্তির উৎসগুলো শনাক্ত এবং তাদের রাজনৈতিক পরিচয় বাদ দিয়ে ওই শক্তির উৎসগুলো যেকোনো মূল্যে বন্ধ করা আবশ্যক। দেশ থেকে মাদক নির্মূলে আইনের সঠিক প্রয়োগ অপরিহার্য। মাদক মানুষের অতীব মূল্যবান জীবনকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয়। নীরব ঘাতকের মতো মাদকাসক্তি প্রসার লাভ করছে আমাদের সমাজে। মাদকাসক্তি কর্মশক্তির বড় একটি অংশ গ্রাস করছে প্রতিনিয়ত। নষ্ট হচ্ছে যুবসমাজের সম্ভাবনাময় শক্তি। মাদকাসক্তদের নানা ধরনের শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি মানসিক বিকৃতিও ঘটে। মাদকের ফলে জাতি হাঁটছে অন্ধকারের দিকে, মৃত্যুর দিকে হাঁটছে নৈতিক মূল্যবোধ এবং জন্ম নিচ্ছে ঐশীর মতো মা-বাবা হত্যাকারী সন্তান। তাই সমাজ ও জাতির স্বার্থে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। প্রয়োজন মাদক নামক মরণ নেশা প্রতিরোধে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা। মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকার, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গণমাধ্যম, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, নাগরিক সমাজ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ সবার সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে প্রয়োজন এ বিষয়ে ব্যাপক হারে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। মাদককে ‘না’ বলুন—ঘরে ঘরে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করাও জরুরি। যে যুবসমাজের ওপর দেশের শিক্ষা-দীক্ষা, উন্নতি-অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল, তারাই যদি মাদকের ফলে পথভ্রষ্ট হয়ে যায়, তাহলে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তাই মাদকের এই ভয়ংকর অভিশাপ ও সর্বনাশা ছোবল থেকে দেশ, জাতিকে বাঁচাতে সরকারসহ আমাদের সবারই একযোগে দ্রুত এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি; অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আন্তর্জাতিক সদস্য
kekbabu@yahoo.com

Link: http://www.kalerkantho.com/print-edition/muktadhara/2018/11/08/701034
Dr. Kudrat-E-Khuda (Babu).
Associate Professor (Dept. of Law), Daffodil International University;
International Member of Amnesty International;
Climate Activist of Greenpeace International; Column Writer;
Mobile Phone: +8801716472306
E-mail: kekbabu.law@diu.edu.bd


Offline Sharminte

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 352
  • Test
    • View Profile
Sharmin Akter
Lecturer
Department of Textile Engineering
Permanent Campus
Email: sharmin.te@diu.edu.bd